somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাবাস মাহমুদুর রহমান স্যার

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওরা মানুষ নয় ওরা শিবির
মাহমুদুর রহমান

ইতিহাসে পড়েছি প্রাচীন ভারতে রাজন্যবর্গ অমাত্য, সৈন্যসামন্ত সমভিব্যহারে বন্যপ্রাণী শিকারে বের হতেন। সৈন্যসামন্তের কাজ ছিল দল বেঁধে শিকারটিকে তাড়িয়ে রাজার সামনে এনে দেয়া। রাজামশাই তারপর সেই শ্রান্ত-ক্লান্ত প্রাণীটিকে বধ করে তার অসীম বীরত্ব প্রদর্শন করতেন। অপ্রয়োজনে বন্যপ্রাণী হত্যার মতো নিষ্ঠুর কাজে ব্যাপৃত থাকলেও তাদের রোমান্টিক মন আবার সুন্দরী রমণীদের খোঁজেও থাকত। বন-জঙ্গলে লালিত ঋষিকন্যার রাজার মন জয় করার চিত্তাকর্ষক কাহিনী অনেক পাঠকেরই জানা। গত ক?দিন ধরে বাংলাদেশে শিবিরকর্মী ধরতে যে তথাকথিত চিরুনি অভিযান চলছে তার পরিপ্রেক্ষিতেই পুরাকালে রাজ-রাজড়াদের আনন্দ-মৃগয়ার গল্প মনে পড়ল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তার আদেশ শিরোধার্য করেই দেশের তাবত্ পুলিশকে দলীয় ঠ্যাঙারে বাহিনীর মতো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার লক্ষ্যে চিরুনি অভিযান চালাতে হবে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে, শিবির ধরা অভিযানে ছাত্রলীগ কর্মীরা পুলিশকে সহায়তা করছে। পুলিশ এবং ছাত্রলীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এই যৌথ অভিযান সংবিধানের কোন ধারা অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে, তার জবাব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীই ভালো দিতে পারবেন। প্রতিমন্ত্রী মহোদয় দেশ থেকে জামায়াত-শিবির একেবারে উত্খাতের ঘোষণা দিয়েছেন। এসব নির্দেশ এবং ঘোষণা যে সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, ?স্বাধীন আদালতের? যুগে সরকার তার পরোয়া করার কোনো প্রয়োজন বোধ করছে না। সংবিধানের আলোচনার আগে সরকারপন্থী মিডিয়ার ভূমিকা পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। শিবিরের বিরুদ্ধে পুলিশ-ছাত্রলীগের যৌথ অভিযান সম্পর্কে দুটি চিহ্নিত সংবাদপত্রের একই দিনের শিরোনাম যথাক্রমে??শিবির পালাচ্ছে? এবং ?শিবিরের তাণ্ডব?। বাংলাদেশের একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে পত্রিকা দুটির শিরোনাম পড়ে আমি যারপরনাই বিভ্রান্ত হয়েছি। যে পালায় সে-ই আবার তাণ্ডব চালায় কী করে?এই ধাঁধার উত্তর আমার জানা নেই। অপসাংবাদিকতার একটা সীমা থাকা দরকার। উভয় পত্রিকাই সরকারের মুখপত্র হওয়ার প্রতিযোগিতায় রত এবং সম্পাদকদ্বয় মাস কয়েক আগেই দিল্লি সফর করে এসেছেন। যতদূর জানি, একটি পত্রিকার মালিকের ব্যাংকে বিপুল অংকের খেলাপি ঋণ সমস্যা রয়েছে এবং অন্য মালিক ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই?র প্রেসিডেন্ট পদটি পেতে আগ্রহী।

ক?দিন আগে টেলিভিশনের টকশো?তে বাংলাদেশের অপর এক প্রখ্যাত সম্পাদকের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে মন্তব্য শুনে বিস্মিত হয়েছি। ভদ্রলোকের রাজনৈতিক আদর্শ যাই হোক না কেন, তাকে এতদিন মানবাধিকারের পক্ষশক্তি হিসেবেই বিবেচনা করতাম। তিনি বললেন, শিবিরের মানসিকতায় ঐতিহ্যগতভাবে যে মধ্যযুগীয় বর্বরতা রয়েছে তারই বহিঃপ্রকাশ নাকি ঘটেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির কর্তৃক ছাত্রলীগ কর্মী হত্যার মধ্য দিয়ে। তিনি সম্ভবত হতভাগ্য ছাত্রটিকে কেবল হত্যা করেই ক্ষান্ত না হয়ে তার মৃতদেহ ম্যানহোলে ফেলে দেয়ার নির্মমতা লক্ষ্য করেই মন্তব্যটি করেছেন। কিন্তু, আমার বিবেচনায় সব হত্যাকাণ্ডই বর্বরতা। শিবির কাউকে হত্যা করলে সেই ঘটনাকে মধ্যযুগীয় বর্বরতা বলব, আর ছাত্রলীগ অথবা ছাত্রদল একই নির্মমতা প্রদর্শন করলে সেটি ডিজিটাল অথবা আধুনিক হত্যাকাণ্ড হয়ে যাবে?এমন সরলীকরণের পক্ষে যুক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন। রাজশাহীর একজন ছাত্রের হত্যাকাণ্ডকে যদি আমরা মধ্যযুগীয় বর্বরতা আখ্যা দেই, তাহলে ২৮ অক্টোবর দিনে-দুপুরে টেলিভিশন ক্যামেরা এবং শত শত পুলিশের সামনে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করে তাদের মৃতদেহের ওপর উল্লসিত আওয়ামী লীগ কর্মীদের লাফালাফিকে সম্পাদক মহোদয় কী বিশেষণ দেবেন তা আমার জানা নেই। অথবা ইঙ্গ-মার্কিন জল্লাদ বাহিনী প্রায় এক দশক ধরে ইরাক এবং আফগানিস্তানে যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, তাকে আমরা কী বলব? ইসরাইলি সামরিক বাহিনী প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতাকামী জনগোষ্ঠীকে যে প্রক্রিয়ায় বিগত ষাট বছর ধরে হত্যা করছে, তাকেই বা কোন বিশেষণে অভিহিত করা হবে? ভারতীয় বাহিনী আমাদের সীমান্তে বছরের পর বছর ধরে যেভাবে বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা করে চলেছে, তাকে মধ্যযুগীয় বলব নাকি আধুনিক পদ্ধতিতে গুলি করে অথবা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা অভিহিত করে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাজনিত কৃতজ্ঞতার ঋণ শোধ করব? ফ্যাসিবাদ নিয়ে যতটুকু পড়াশোনা করেছি তাতে জনপ্রিয় সম্পাদকের সেদিনের বক্তব্যে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি ফ্যাসিবাদেরই গন্ধ পেয়েছি। একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা চালানো এবং রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক তাদের ওপর নির্যাতনের পর সেটিকে বৈধতার প্রলেপ দেয়ার অপচেষ্টা আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে ফ্যাসিবাদের সংজ্ঞাতেই পড়ে।

এবার বেচারা সংবিধানের দিকে দৃষ্টি ফেরানো যাক। সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩৭ এবং ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদগুলো উদ্ধৃত করছি যাতে বর্তমান সরকারের সব মৌলিক অধিকার এবং দেশের প্রচলিত আইনবিরোধী কার্যকলাপের ভয়ঙ্কর চিত্রটি পাঠক সহজেই অনুধাবন করতে পারেন :
?অনুচ্ছেদ-২৭ : আইনের দৃষ্টিতে সমতা।?সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।
অনুচ্ছেদ-৩১ : আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার।?আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহারলাভ যে কোন স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষত আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।
অনুচ্ছেদ-৩৭ : সমাবেশের স্বাধীনতা।?জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।
অনুচ্ছেদ-৩৮ : সংগঠনের স্বাধীনতা।?জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে সমিতি বা সঙ্ঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।?

বাংলাদেশ সরকার যেহেতু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার কোনো ঘোষণা দেয়নি, কাজেই উদ্ধৃত চারটি অনুচ্ছেদে প্রদত্ত অধিকার সংগঠনদ্বয়ের প্রতিটি নেতাকর্মী সংরক্ষণ করে। এই বাস্তবতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শিবির উত্খাতের ঘোষণা সংবিধান পরিপন্থী ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার জ্বলন্ত প্রমাণ। রাষ্ট্রযন্ত্রের এই জাতীয় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ থাকলেও ?স্বাধীন আদালতে? ন্যায়বিচার কতটা পাওয়া যায় তার অতি সাম্প্রতিক বিরূপ অভিজ্ঞতা আমারই রয়েছে। সে সম্পর্কে গতকালের আমার দেশ পত্রিকায় একটি সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। সংবিধান, আইন ও আদালতের কোনো তোয়াক্কা বর্তমান সরকার যে করে না তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আরও একটি বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে। ১২ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় এক সমাবেশে তিনি বলেছেন, ?রাজশাহীতে আমাদের এক ভাইকে খুন করেছে। অনেকের হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। শিবির সারাদেশে ছাত্রলীগের ভাইদের হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরকে আর ছাড় দেয়া হবে না। তাদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।? জার্মানির এডলফ্ হিটলার যখন সেদেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নির্মূলের জন্য কমিউনিস্টবিরোধী এবং ইহুদিদের বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান (Ethnic Cleansing) চালিয়েছিলেন, ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের মুখে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের মতোই ভাষা পাওয়া যাবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের যে কোনো ছাত্রই রাইখস্ট্যাগের সাজানো নাটক সম্পর্কে পড়েছেন। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিটলারের আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত কিনা সেই তথ্য অবশ্য আমার অজানা। তবে, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কয়েকটি প্রশ্ন না করে পারা যাচ্ছে না। আপনার বক্তব্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যকার সব পুরুষ প্রজাতিকে আপনি যে ভাই হিসেবে বিবেচনা করেন সেটি অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ। প্রশ্ন হলো, দলনিরপেক্ষ এবং বিরোধী মতের সবাইকে আপনি বৈমাত্রেয় ভাই বা বোন বিবেচনা করে তাদের প্রতি আজন্মলালিত কোনো আক্রোশ অনুভব করেন কি-না? নইলে দরিদ্র পরিবারের সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবুবকর যখন আপনার ভাইদের আধিপত্য বিস্তারের যুদ্ধের বলি হয়, সেটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে আপনি উপহাস করেন কী করে? তখন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আপনার চিরুনি অভিযান কোথায় যায়? মন্ত্রীর শপথ গ্রহণ করার সময় আপনি নিশ্চয়ই উচ্চারণ করেছিলেন, ?কোনো অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হইয়া আমি কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিব না।? রাজশাহী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই প্রকৃতির হত্যাকাণ্ডে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার মাধ্যমে আপনি সেই শপথ ভঙ্গ করেছেন কি-না? সংবিধানের ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদে সব নাগরিককে আইনের দৃষ্টিতে যে সমান ঘোষণা করা হয়েছে, সংবিধানের সেই নির্দেশনা আপনি মান্য করেন কি-না?

বাংলাদেশে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বাকশাল আমল ছাড়া সর্বকালের সীমা অতিক্রম করলেও গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ধ্বজাধারী সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এবং এদেশীয় দালালশ্রেণী কেবল নীরবতাই অবলম্বন করছে না , উপরন্তু, তাদের মুখপত্রগুলো এই অন্যায় আচরণকে বৈধতা দেয়ার নির্লজ্জ চেষ্টা চালাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে পুরনো আহমদিয়া ইস্যুর কথা মনে পড়ে গেল। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে একদল অতি বিপ্লবী ইসলামপন্থীর আবির্ভাব ঘটেছিল, যারা আহমদিয়াদের বিরুদ্ধে কিছুদিন পরপরই বেশ বড় বড় জঙ্গি বিক্ষোভ মিছিল বের করে ওদের উপাসনালয়ে আক্রমণের চেষ্টা চালাত। চারদলীয় জোটের পুরোটা সময় ধরেই এই আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ড চালালেও বিগত সাড়ে তিন বছর তারা এক প্রকার পর্দার অন্তরালেই অবস্থান করছে। সেই সময় কে তাদের অর্থায়ন এবং পৃষ্ঠপোষকতা করত, সেই রহস্যের আজও কিনারা হয়নি। যাই হোক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এই আহমদিয়া ইস্যুটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিল এবং সেই সময় সরকারের সঙ্গে মানবাধিকার ও সংখ্যালঘু সংক্রান্ত যে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনায় তারা অবধারিতভাবে আহমদিয়া প্রসঙ্গ উত্থাপন করত। পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর কর্তাব্যক্তিদের বাংলাদেশ সফরের সময় আহমদিয়াদের উপাসনালয়ে গিয়ে তাদের খোঁজখবর নেয়াটা নির্দিষ্ট রুটিনে পরিণত হয়েছিল। আগেই উল্লেখ করেছি, এখন আর দেশে আহমদিয়াবিরোধী আন্দোলনের কোনো নাম-নিশানা নেই। তবে সরকার সম্প্রতি যে চণ্ডমূর্তি ধারণ করে জামায়াত-শিবিরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে, সেটি এদেশে এক নতুন অভিজ্ঞতা।

দেশের অধিকাংশ সংবাদপত্র সরকারপন্থী হওয়ার সুযোগে মানবাধিকারকে পদদলিত করতে প্রশাসনের কোনো সমস্যাই পোহাতে হচ্ছে না। যে একটি-দুটি পত্রিকা নিতান্তই ব্যতিক্রম হিসেবে এই দমননীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ক্ষমতাসীনদের নির্যাতন অথবা দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করার ঝুঁকি নিচ্ছে, তারাই রাষ্ট্রযন্ত্রের সব ধরনের দমন-পীড়নের শিকারে পরিণত হচ্ছে। ইঙ্গ-মার্কিন-ভারত-ইসরাইল কৌশলগত মৈত্রী যতদিন অব্যাহত থাকবে ততদিন বাংলাদেশের ভারতপন্থী সরকারের এসব অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তথাকথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কোনো প্রতিবাদ আসার সম্ভাবনা আমি অন্তত দেখি না। সেরকম কোনো আশঙ্কা থাকলে শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (Bangladesh Development Forum) ঢাকা বৈঠকের সময় দেশকে এ ধরনের অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে নেয়ার ঝুঁকি কোনো অবস্থাতেই নিত না। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এ জাতীয় আন্তর্জাতিক বৈঠকের প্রাক্কালে সরকার পারতপক্ষে বিরোধী পক্ষের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চায় না। সব বিবেচনাতেই আমরা এক ব্যতিক্রমধর্মী সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে পাচ্ছি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দিন যে সত্যিই বদল করতে পেরেছে, তাতে আর সন্দেহ কী?

জনগণের জন্য অধিকতর বিপদের কারণ হলো, প্রধান বিরোধী দলও অনেকটা আপস করেই কোনোক্রমে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করার কৌশল গ্রহণ করেছে। এতদিন সংসদ বর্জন করে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকের ঠিক দিন কয়েক আগে সংসদে প্রত্যাবর্তনের আকস্মিক সিদ্ধান্ত কেন তারা গ্রহণ করলেন তা তারাই ভালো জানেন। তবে কেবল বিদেশিদের সন্তুষ্টি অর্জন অথবা তাদের সহানুভূতি কুড়ানোর জন্যই যদি বিনাশর্তে এই ছাড় দেয়া হয়ে থাকে তাহলে এর মধ্য দিয়ে বিরোধী দলের রাজনৈতিক দীনতা, অন্তর্নিহিত দুর্বলতা এবং জনগণের শক্তির ওপর আস্থাহীনতা প্রকাশ পেয়েছে। সরকারি দলের শিষ্টাচারবহির্ভূত, অসংসদীয় আচরণ অব্যাহত রাখা দেখে দেশবাসী এটাও বুঝতে পেরেছে যে, ক্ষমতাসীনরা বিরোধী পক্ষকে শক্তিহীন এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক বিবেচনা করছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, প্রতিদিন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা সংসদে যাচ্ছেন এবং তাদের জীবিত অথবা মৃত শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশে সরকারি দলের অবমাননাকর কুত্সা হজম করে ওয়াক আউট করছেন, পরের দিনের একই নাটকে অংশ নেয়ার জন্য। এর ফলে তারা যে জনগণের কাছে নিজেদের ক্রমেই হাসির পাত্র করে তুলছেন সে বিষয়টি নীতিনির্ধারকরা বোঝেন কিনা আমার জানা নেই। ক্ষমতাসীনদের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান ফ্যাসিবাদী প্রবণতা জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ এবং রাজপথের আন্দোলন ছাড়া যে রোখা যাবে না, এই সহজ সত্যটি বিরুদ্ধ মতাবলম্বীরা যত দ্রুত উপলব্ধি করবেন ততই দেশের মঙ্গল। পৃথিবীর ইতিহাসে যে কোনো আপসকামিতা বার বার ফ্যাসিবাদকেই উত্সাহিত করেছে। উটের মতো বালিতে মাথা গুঁজে আত্মরক্ষা কিংবা দেশরক্ষা শেষ পর্যন্ত কোনোটাই হবে না।

[সুত্র, আমারদেশ, ১৬/০২/২০১০]
১৬টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×