somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের বিকৃত সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন ও জাগো ফাউন্ডেশন

০৫ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ৮:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছরের জীবনে কোন বিদেশি স্টুডেন্ট দেখিনি। দুই একটা ইরানী দেখা গেলেও সেই অর্থে বিদেশি নেই। ভিজিট করতেও কেউ আসে না।

তবে, বিবিএ শেষ করার মুহুর্তে একটা ঘটনা ঘটল। এক দল বিদেশি স্টুডেন্ট এসে হানা দিল আমাদের ফ্যাকাল্টিতে। এরা এসেছে, জার্মানি থেকে। ছেলে মেয়ে একসাথে। একেকটা মেয়ে অপরূপা সুন্দরী। আর লম্বা। তাদের পোশাক আশাক, নিতান্তই ইউরোপীয়। টিশার্টের সাথে টাইট জিন্স প্যান্ট। টিনা নামে এক মেয়ের টিশার্ট একটু ঢিলা। গলার পাশ দিয়ে তার ব্রা এর ফিতা দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশের মেয়েদেরটা অনিচ্ছাকৃত ভাবে বের হয়। আর ওদেরটা দেখেই মনে হলো ইচ্ছাকৃত।

আমি সবার সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বললাম, হাসি ঠাট্টা করলাম। তবে বেশির ভাগের চোখ, টিনা মেয়েটির বেড়িয়ে থাকা ব্রা এর ফিতার দিকে। ওদের কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে চাচ্ছি, জার্মানিতে পড়াশোনার সুযোগ কেমন, কিভাবে সেখানে যাওয়া যায়, আর কিভাবেই স্কোলার্সিপের জন্য এপ্লাই করা যায় ইত্যাদি ইত্যাদি।

এর মধ্যে আমার এক বন্ধু আগনেস নামক এক মেয়েকে জিজ্ঞেস করল, ওদের ওখানে হলে কি ছেলে মেয়ে এক সাথে থাকে? মেয়েটা খানিক বিচলিত মনে হলো। তারপর বলল, হ্যা এক সাথে থাকে। আমার বন্ধু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, একই রুমে কি ছেলেমেয়ে এক সাথে থাকে কিনা।

মেয়েটি প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছিল। তার উত্তর দেবার ভঙ্গি দেখে মনে হলো, সে বিরক্তির সাথে প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যেতে চাইছে।

অবাক করা বিষয় হলো, এই বিদেশিনীদের পোশাক আশাকের ফাঁক ফোকড়ে কি আছে, আমরা যেন সেইটা নিয়েই ব্যাস্ত। কার কোন অঙ্গটা কিরকম, সেগুলো নিয়েই কালচার বেশি করি। ছেলে মেয়ে হলে এক সাথে থাকে, মাই গড এতো ভয়াবহ ব্যাপার।

আমরা কি সেক্স ছাড়া কিছুই ভাবতে পারি না? আমাদেরকে ওদের কাছ থেকে দেখে শেখার বা জানতে চাওয়ার আর কিছুই ছিল না।

এ ঘটনার প্রায় এক মাসের মত অতিবাহিত হয়ে গেছে। আমি তখন থেকে চিন্তা করছি ব্যাপারটা নিয়ে।

জাগো ফাউন্ডেশন

জাগো ফাউন্ডেশন এর সাথে আমি জড়িত নই। তবে, একবার রায়ের বাজারে অবস্থিত ওদের একটা স্কুলে একুশে ফেব্রুয়ারীর একটা অনুষ্ঠানে যাবার ভাগ্য আমার হয়েছিল। ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলে-মেয়েরা সেখানে বস্তির ছেলে মেয়েদের ইংরেসজি মাধ্যমে শিক্ষা দেবার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নিজেই দেখলাম, ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলে মেয়েদের কাজ। তারা ক্লাস নিচ্ছে। কেউ একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানের স্টেজ সাজাজ্জে। অনুষ্ঠানটি কন্ডাক্ট কিন্তু কোন ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলে অথবা মেয়ে করল না। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে সবই বস্তির ছেলেমেয়ে। তারা গাইল, কেউ নাচল, কেউ বা বক্তব্য দিল।

আমার মেপেললিফের বান্ধবী (এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সহপাঠী) কাছ থেকে জানতে পারলাম, এরা প্রতিমাসে নিজেদের পকেট থেকে ৫০০ টাকা দেয়, আর অনেক বাড়ি থেকে ডোনেশন জোগাড় করে। ডোনেশনের টাকা দিয়ে স্কুল চলছে।

স্কুলটা আমার স্বচক্ষে দেখা।

আমি সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে মেট্রিক ইন্টার পাশ করি। বাংলা মিডিয়ামের স্টুডেন্ট। আমার কাছে জাগো ফাউন্ডেশনের কাজটা কিন্তু খারাপ লাগেনি। আমি ওদের অনেক উৎসাহ দিয়ে এসেছি। ভালো লেগেছে আমার সত্যি।

এরা কোত্থেকে ফান্ড পায়, সেটা আমেরিকা দেয় নাকি সৌদি-আরব দেয়, তাতে কি আসলো গেল? যারা এসব নিয়ে কথা বলছেন, নিজে কিছু করছেন তো? করছেন না, মানুষের ______ এর মধ্যে আঙ্গুল দিতে তো সব ওস্তাদ। আর আমেরিকা বৃটেনের ব্যাক থাকলে তো কথাই নাই। বস্তির ছেলে মেয়েরা যদি এই উছিলায় কিছু শিখে, তাতে কি কারও কমবে কিছু? কারও কোন ক্ষতি হবে?
জাগো ফাউন্ডেশনে ছেলে মেয়েদের ছবি দিয়ে, সব ইতররা সেক্সুয়াল থ্রিল অনুভব করছে, এটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। জাগোর মেয়েদের টিশার্ট নিয়ে কথা হচ্ছে, মেয়েদের হাসোজ্জ্বল ছবি নিয়ে কথা হচ্ছে...আমি তাজ্জব হয়ে গেলাম। ওরা তো আমাদের থেকে বয়সে অনেক ছোট। ওদের নিয়ে এরকম না ভাবলে সমস্যা কি হয়?
----------------------------------------------------------------------------------
জাগোর কার্যক্রম বা তাদের কর্মস্পৃহা-কে পাশ কাটিয়ে যেভাবে কিছু ছবিকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরীর চেষ্টা করা হচ্ছে দেখে দুঃখ লাগলো। ডিজুস জেনারেশন বলে অপবাদ দেওয়া হয় যাদের সেই তরুণ-তরুণীরা যে একটা উদ্যোগ হাতে নিয়েছে দেশের জন্য কিছু একটা করবে বলে জড়ো হয়েছে, যেখানে আর দশজন শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখে যাচ্ছে তখন এদের এই উদ্যোগকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখার কোন অধিকার ঐ নিন্দুকদের নেই। হোক না তা সামান্য কিছু, হোক না তাতে দেশের দশের বিরাট কোন উন্নতি হচ্ছেনা, কিন্তু এরা তো স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দেয় নি। নিজেদের উদ্যোগে, তারুণ্যে, কর্মচাঞ্চল্যে এরা স্বপ্ন দেখছে, দেখাচ্ছে। আমরা কজনই বা এমনটা করছি।

আমাদের এও ভুলে গেলে চলবে না বয়সে এরা প্রায় সবাই নবীণ। ছোটকাট ভুল তাদের হতেই পারে। কিন্তু সেটি এমন আহামরি কিছু না যে, তাদের স্বপ্ন দেখার শুরুটাতেই আমরা এমন করে বিদ্রুপ, কটাক্ষের কাঁটা তাদের পথে বিছিয়ে দিব। আমার ধারণা তাতে কেবল আমরা নিজেদেরই অকল্যাণ বয়ে আনবো।


- মেঘদূতের এই চমৎকার কমেন্টটি আমার পোস্টে এড করলাম!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ৯:২৪
৪১টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×