somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী কেবল ভোগ্য পণ্য, নারী আর মা কিংবা বোন নেই-১

১৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কতদিন পর আবার লিখতে বসলাম তার কোন হিসাব নাই। মূলত ফেসবুকেই লেখালেখি করি। সামহোয়ারকে ভুলে গেছি অনেকদিন হলো। আজ কি মনে করে আবার সামহোয়ারে লিখতে ইচ্ছে হলো!

বাসে বসে মানুষের অনেক অভিজ্ঞতাই হয়। আমারও বিচিত্র রকমের অভিজ্ঞতা আছে। তার মধ্যে একটি অনেকটা এরকম, একদিন বাসে বসে দূরের পথে যাচ্ছি। যানজটে পড়ে জীবনটা ওষ্ঠাগত। ৫ টাকা দিয়ে একটি পত্রিকা কিনলাম। সেখানে বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট জয়ী নিশাত মজুমদার ও ওয়াসফিয়া নাজরিনকে নিয়ে লেখা একটা ফিচারে নজর পড়ল।

আমার পাশের ভদ্রলোককে আড়চোখে দেখলাম আমার সাথে তিনিও পড়ছেন। পড়তে পড়তে আমাকে বললেন, এ দুজন কে?

আমি বললাম, দুইজন বাংলাদেশি প্রথম নারী এভারেস্ট জয়ী। তিনি বললেন, ও! তো এরা ঘর ফেলায়া এভারেস্টে গেছে কেন?

কথাটা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম। ঘর ফেলায়া এভারেস্টে গেছে মানে?

তিনি বলছেন, মেয়েদের কাজ ঘরে থাকা, রান্না করা, স্বামী সন্তানদের দেখভাল করা, তারা আবার এসব করতে যায় কেন? এইজন্যেই তো আমাদের সমাজটা ধ্বংস হচ্ছে। আর সরকারও আছে সমঅধিকার সমঅধিকার করে চিল্লায়!

কথাগুলো শুনে মনে মনে প্রচন্ড বিরক্তি বোধ করছিলাম। আমি বললাম, কেন? মেয়েরা কি ঘরের জিনিস শুধু? তাদের স্বাদ আহলাদ বলে কিছু থাকতে নাই? তাদের কোন আশা বা ইচ্ছার কোন দাম নাই?

লোকটি আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। তিনি বোধহয় আমার মুখ থেকে এমন কোন কথা শুনবেন বলে আশা করেন নাই।

সে বলল, হ! স্বাদ আহলাদের দাম আছে বইলাই তো স্বামী সন্তান ছাইড়া যায়গা আজকাল। কত দেখতেছিনা, যার তার সাথে সম্পর্ক, প্রেম, পরকীয়া...

'এইগুলা পুরুষ মানুষে করে না?'- প্রশ্নটা শুনে বাসের আরও তিন চারখানা চোখ আমার দিকে সন্দিগ্নভাবে তাকাল।

তর্ক চলেছিল তার সাথে যতক্ষণনা আমার নামার জায়গাটি আসে। তিনি মেয়েদের পড়াশোনা, বাইরে যাওয়া সবকিছুর মধ্যেই অবৈধ সম্পর্ক আর সেক্স দেখতে পাচ্ছিলেন।

একজন মধ্যবয়স্ক লোকের মুখে কথাগুলো শুনে সত্যি আতকে উঠেছিলাম।

পরের ঘটনা একটি পেট্রোল পাম্পে। তেল নিতে দাড়িয়েছি। এমন সময় দেখি পাম্পের একটি ছেলে ওয়াজ শুনছিল। মনমুগ্ধ হয়ে সে ওয়াজ শুনছে।

ওয়াজে বলছে, "(সুর করে) খলিফা বাজারে যেয়ে দেখতে পেলেন মেয়েরা শাড়ি পড়ে নগ্ন পেট নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে, (চিৎকার করে) হে আল্লাহ! তুমি এই মেয়ে মানুষদেরকে দোজখে নিক্ষেপ করো, হে আল্লাহ! তুমি মেয়েদের কু-প্রস্তাব আর কু-নজর থেকে আমাদেরকে রক্ষা কর"।

জীবনে প্রথম জানতে পেরেছিলাম, মেয়েরা কু-নজরও দেয়, আবার কু-প্রস্তাবও দেয় এবং আরবের নারীরা শাড়িও পড়ে।

শুনেছি নর্থ কোরিয়াতে নাকি জোর করে ঘরে ঘরে মাইক লাগিয়ে কিম জং উন টুন এর প্রশংসা শোনানো হয়। তারাও সেটা মেনে নিয়েছে। আর আমাদের এখানে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে মানুষকে মিথ্যা কথা শোনানো হচ্ছে। এ সমস্ত কথা মেয়েদেরকে ভোগ্য পণ্যই ভাবতে শেখায়। ওয়াজ মাহফিলের একটা বিশাল অংশ জুড়ে থাকে মেয়েদেরকে নিয়ে আলোচনা। হুজুর ব্যাঙ্গ করে মেয়েদের নিয়ে কথা বলেন, যেন তারা ব্যাঙ্গ করারই বস্তু বিশেষ!

আমাদের সমাজে অবাক হয়ে লক্ষ্য করি, মেয়েদেরকে ঘৃণার চোখে দেখার একটা প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। ফেসবুকে ভিডিও ছাড়া হচ্ছে নারী নির্যাতন করে। সেটা আবার হাজার লোকজন লাইকও দিচ্ছেন।

এসমস্ত সামাজিক বিশৃংখলার মধ্যে যখন শুনি বন্ধু বান্ধব কেউ একজন মেয়ে সন্তানের জনক বা জননী হয়েছে তখন আঁতকে উঠি সদ্য ভূমিষ্ঠ মেয়েটার ভবিষ্যৎ দুর্বিসহ জীবনের কথা ভেবে। কে জানে তার ভবিষ্যৎ কি!

আমার এক বন্ধু একদিন আরেক বন্ধুকে বলছিল, মেয়েরা হলো সব থেকে খারাপ জাত বুঝলি। মেয়েদের জন্যই ছেলেরা নষ্ট হয়।

চরমভাবে আরোপিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা আমাদেরকে কি দিন দিন নারী বিমুখী করে তুলছে না? আমাদের ধর্মীয় গোড়ামি কি আমাদের মেয়েদের সমস্ত স্বপ্ন ধুলিসাত করে দিচ্ছে না?

ভাবি, "একটি মেয়ের পেটে করেই তো এই পৃথিবীর আলো দেখস তোরা, আবার সেই মেয়েরই পেটে লাথি দ্যাস! তোদের জাহান্নাম তো সন্নিকটেই!"

আবারও বাসে ফিরে আসি। সেদিন একটি মেয়ে বাসে উঠে তার জন্য নির্ধারিত সিটটিতে বসতে সেখানে বসে থাকা এক লোককে বললেন, এটা মহিলা সিট।

লোকটি প্রতিউত্তরে বলল, হ! এটা প্রতিবন্ধী সিট। এমন একটি বাজে কথা বলার পরও পুরো বাস জুড়ে কেউ একটি কথাও বলল না। আর ঐ লোকটি গড়িমসি করে সিটটি ছেড়েছিলো ঠিকই, কিন্তু মেয়েটাকে যে আঘাত সে দিয়ে উঠেছিল হয়ত মেয়েটির জীবনে আর বাসে উঠতে ইচ্ছা করবে না। তাহলে দাড়ালো এই যে আমাদের সমাজের মেয়েরা হলো প্রতিবন্ধীর মত।

সেদিন একজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনার স্বামী যদি আরও তিনটা বিবাহ করে, তাহলে আপনার আপত্তি আছে কি নেই?

তিনি উত্তরে বললেন, আমার স্বামী যদি আরও তিনজনকে ম্যানেজ করতে পারে তাহলে আমার কি সমস্যা থাকতে পারে!

সুতরাং মেয়েদেরকে দমাতে আমরা সক্ষম! সাব্বাস বাংলার দামাল ছেলেরা!
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×