somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদৃশ্য সঙ্গী(গল্প)

২০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(১ )
মোবাশ্বের সাহেব চুপচাপ বারন্দার কোণে একটা চেয়ারে বসে আছেন। সকাল বেলা। কিছুক্ষণ আগে নাস্তা সেরেছেন। নাস্তা শেষে একমগ চা খেয়েছেন। এখন বাজে সকাল আটটা ত্রিশ। গ্রীষ্মের আগুন ঝরা সোনালী রোদে চারিদিক ভেসে যাচ্ছে। মোবাশ্বের সাহেব মোটামোটি ঘেমে গেছেন। এরপরও তিনি বারন্দা ছাড়ছেন না। এই সকালবেলা বারন্দার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে রাস্তার ওপাশের লেকটা দেখে তিনি খুব শান্তি পান। কিছুক্ষণ বাদে বাদে কয়েকটা রিক্সা টুং টাং বেল বাজিয়ে এদিক ওদিক চলে যাচ্ছে। বেশিরভাগ রিক্সার যাত্রী অভিভাবক সহ স্কুলকলেজের ইউনিফর্ম পরা বাচ্চা-কাচ্চারা। অনেকে বলতে পারেন কলেজের ছেলে মেয়েরা কিভাবে বাচ্চাকাচ্চা হয়? বলা বাহুল্য মোবাশ্বের সাহেবের বয়স ঊনআশি। তার কাছে স্কুল কলেজ এমনকি ইউনিভার্সিটির ছেলেপুলেরাও বাচ্চা কাচ্চা। তবে বয়সের ভারে তিনি মোটেও নুইয়ে পড়েন নি। এখনও দিন রাত দৌড়া দৌড়ি করে কাজ করার ক্ষমতা রাখেন।

মোবাশ্বের সাহেবের বসবাস ধানমন্ডি এলাকায়, বাড়িটা তার নিজের। বারান্দার সাথে লাগোয়া পাশের ঘরটিতে মীরা থাকেন। মীরা মোবাশ্বের সাহেবের বড় নাতনী। ক্লাশ টেনে পড়ে। খুব পড়ুয়া , ভাল মেয়ে। নাতি পুতিদের মাঝে মীরাকেই তিনি সবচেয়ে বেশি আদর করেন। তবে ছোট নাতীটাকে তিনি বেশ ভয় পান। দুষ্টের একশেষ। লুঙ্গি টানাটানি তার সবচেয়ে প্রিয় খেলার কাজ। তাই সে বাড়িতে বেড়াতে আসা মাত্র মোবাশ্বের সাহেব লুঙ্গি পাল্টিয়ে প্যান্ট পড়েন। সবার সামনে লুঙ্গি খুলে গেলে মান ইজ্জত নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে।

রাস্তার ওপাশে একটা মটর সাইকেল এসে থামে, একটা ছেলে সেটা থেকে নেমে পড়ে। দেখে বোঝা যায় যে ভাল ঘরের ছেলে। সানগ্লাস পরা, আর পরনে টি-শার্ট ও জিন্সের প্যান্ট। চুলগুলা মাঝারি ধাঁচের বড়, পরিপাটি করে ব্যাক ব্রাশ করা। ছেলেটা এরপর হনহন করে হেঁটে পার্কের ভেতরে ঢুকে যায়। পুরাতন ভাঙা বটগাছ তলার বেঞ্চটাতে গিয়ে চুপচাপ বসে। এরপর কথা বলা শুরু করে দেয়। নিশ্চয় কানের সাথে ব্লুটুথ হেডফোন লাগান আছে। আজকাল অনেকেই এটা ব্যবহার করে। ছেলেটা অর্নগল কথা বলেই যেতে থাকে। মাঝে মাঝে একটু চুপ হয়। মাঝে মাঝে হেসে কুটিকুটি হয়। ছেলেটার যোগাযোগের সঙ্গীকে মোবাশ্বের সাহেবের দেখতে ইচ্ছা করে। সাধারণ কিউরিসিটি মাত্র।

মোবাশ্বের সাহেব বিগত দেড় মাস যাবত ছেলেটাকে পার্কে নিয়মিত দেখছেন। সম্ভবত এপাড়াতে থেকে। আলালের ঘরের দুলাল বলে সম্ভবত কাজটাজ কিছু করা লাগে না। মোবাশ্বের সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। তার অবস্থান একসময় ছিল খুব ক্ষুদ্র। এরপর তিলেতিলে পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ভাগ্যের চাকাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে উপরে তুলেছেন। তিনি এখন কোটিপতি। সেই জন্যই ধানমণ্ডি লেক পাড়ে এত সুন্দর একটা বাসা বানাতে পেরেছেন।

প্রথম দিকে মোবাশ্বের সাহেবের মনে হয়েছিল বুঝি ছেলেটা মীরার পিছে লেগেছে। তাকে দেখে পার্কে যাবার ভান ধরে মাত্র। তিনি বেশ কিছুদিন আড়ালে আবডালে থেকে পরীক্ষা করেন। তার ধারণার ফলাফল শূন্যে পর্যবসিত হয়। ছেলেটা আসলে পার্কেই আসে সঙ্গীর সাথে কথা বলার জন্য। মোবশ্বের সাহেবের বাড়ির দিকে তার কোন নজর নেই। তবে ছেলেটা কখনই মোবাইল ফোন বের করে কথা বলে না। সে ব্লুটুথ স্পিকারে কথা বলে। অন্তত তাই মনে হয় মোবাশ্বের সাহেবের কাছে। একটু মোবাইলটা বের করে কথা বললে কি সমস্যা , সেটা মোবাশ্বের সাহেবের বুঝে আসে না ।

(২)
আজ রোববার। মোবাশ্বের সাহেব নাস্তা সেরে বারান্দায় পায়চারি করছেন। মোবাশ্বের সাহেবের স্ত্রী সামিরা বেগম বারান্দার দরজায় এসে দাঁড়ালেন।

“ এই শুনছ? তুমি কি একটু বিদ্যুৎ অফিসে যাবে ? কারেন্টের প্রি-পেইড মিটারে নাকি কি সমস্যা হয়েছে, লোকমান বলল।” লোকমানও সামিরা বেগমের পিছনে এসে দাঁড়াল।

“ খালাম্মা কিছু বাজার সদাই করলে ভাল হয়। খালু আমি তাইলে রিক্সা ডাকি। “-লোকমান পেছন থেকে বলল।

লোকমান মোবাশ্বের সাহেবের বাসায় থাকে। টুকটাক সব কাজ করে। ওর বয়স চৌদ্দ কি পনের হবে বড় জোর। তবে ভীষণ চালাক-চতুর কিন্তু খুব বিশ্বস্ত। এজন্য মোবাশ্বের সাহেব ওকে খুব স্নেহ করেন।

মোবাশ্বের সাহেব লোকমানকে সাথে নিয়ে একটা রিক্সা করে বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে হাজির হন। সেখানে গিয়ে তার মেজাজটা বিগড়ে যায়। অফিসের লোকজন এমন সব সমস্যার কথা বলল যেগুলার মাথা মুন্ডু কিছুই মোবাশ্বের সাহবের মাথায় ঢুকল না। এরপরও বিদ্যুৎ অফিস সামলে বাজার করতে গেলেন। মাছের বাজারে গিয়ে ওনার আবারও মেজাজ খারাপ হল। দুই দোকানে একই জাতের মাছ, কিন্তু দামের পার্থক্য আশি থেকে একশ বিশ টাকা। অবশেষে একটা বড় রুই মাছ আর কিছু বাজার সদাই করে লোকমানকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

রিক্সা এসে থামে বাড়ির গেটের সামনে । মোবাশ্বের সাহেব রিক্সা থেকে নামেন। লোকমান বাজার সদাই নিয়ে গেটের ভেতরে চলে যায়। মোবাশ্বের সাহেবর চোখ গিয়ে পড়ে লেকপাড়ের বট গাছটার নিচের বেঞ্চটায়। সেই ছেলেটা বসে আছে। আজ পরনে সাদা পাঞ্জাবী। মোবাশ্বের সাহেব কিছুক্ষণ ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। আজ ছেলেটা সানগ্লাস পরে নেই। পাঞ্জাবীতে কি চমৎকার মানিয়েছে। হঠাত নিজের ছোট ছেলেটার কথা মনে পড়ল মোবাশ্বের সাহেবের। সেই যে ছেলেটা কানাডায় পড়তে গেল আর এলো না। এখন সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, একটা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।

“ এই বাচ্চূ এদিকে আয় তো।”-বাড়ির দারোয়ানকে মোবাশ্বের সাহেব ডাকলেন।

“ জ্বী স্যার।”

“ ওই যে ছেলেটা বসে আছে বটগাছটার নিচে, ওই যে বেঞ্চিতে, চিনিস নাকিরে ?”

বাচ্চূ কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলল,” স্যার ওইটা তো পাগল, মনে মনে কথা বলে। হের বাপ-মা দুইজন এক্সিডেন্টে মারা পড়ে। এরপর থেইক্যা হের মাথা বিগড়ায় গেছে। ইনভারসিটিতে নাকি পড়ত।”

“ কোথায় থাকে বলতে পারবি?”

“ বাড়ির নম্বর বলতে পারব না, তবে মনে হয় লেকের ওই পাড়ের কোন বাসায়।”

“ ও যে পাগল সেটা কে বলল।”

“ মাইনসে কয় আরকি। খালি নিজে নিজে কথা কয়। ”

মোবাশ্বের সাহেব ছেলেটাকে কিছুক্ষণ দেখে বাসার ভেতর চলে যান। লিফট দিয়ে ওঠার সময় তাঁর মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। মানসিক বিকারগ্রস্ত এতিম একটা ছেলে। তার সম্বন্ধে কি ছাইপাশ না ভেবেছিলেন। জীবন কি বিচিত্র। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাসার কলিং বেলটা চাপ দেন। লোকমান দরজা খুলে দিলে ভেতরে চলে যান।

(৩)

মঙ্গলবার সকালে নাস্তা খেয়ে মোবাশ্বের সাহেব বারন্দায় এসে দাঁড়ালেন। আজ একটু দেরী করে ঘুম থেকে উঠেছেন। এখন বেলা পৌনে এগারটা। বটগাছের নীচের বেঞ্চিটাতে সেই ছেলেটা বসে আছে। কথা বলেই চলেছে। ছেলেটাতো মানসিক বিকার গ্রস্ত। স্বাভাবিকভাবে দেখে বোঝার উপায় নেই। মোবাশ্বের সাহেব হঠাত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন ছেলেটার সাথে কথা বলবেন। সাথে লোকমান কিংবা বাচ্চুকে সাথে রাখবেন।

আবশেষে মোবাশ্বের সাহেব লোকমানকে সাথে নিয়ে পার্কের ভেতরে ঢুকলেন। এ নিয়ে বাসার কাউকে কিছু জানিয়ে আসা সমীচীন মনে করলেন না। লোকমানকে আগে থেকেই সতর্ক করে দিয়েছেন যে উটকো কোন ঝামেলা পাকা মাত্র তারা দৌড়ে বাড়ি চলে আসবে।

ছেলেটা বক বক করেই চলেছে। মোবাশ্বের সাহেব আস্তে এসে ছেলেটার পাশে বসলেন। পেছনে লোকমান রয়েছে। মোবাশ্বের সাহেব বেঞ্চিতে বসা মাত্র ছেলেটা কথা বলা থামিয়ে দিল। তবে সাথে সাথে তার দিকে তাকাল না। একটু পর পাশ ফিরে তাকাল, দৃষ্টিতে রাজ্যের বিরক্তি। তাকে কিছুক্ষণ দেখে মুখটা ফিরিয়ে নিল। মোবাশ্বের সাহেব ও লোকমান মনে মনে প্রস্তুত থাকল, কিছু হলেই তারা দৌড় দিবে।

মোবাশ্বের সাহেব মিনিট সাতেকের মত চুপচাপ বসে থাকলেন। লোকমান টু শব্দটি করল না। আজ আকাশে মেঘ। শীতল বাতাস বইছে। বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে গাছের পাতাগুলা নৃত্যের মাধ্যমে শোঁ শোঁ ধ্বনিতে চারিদিকে শান্ত কলরব তুলছে। নৃত্যের সেই মুক্ত আনন্দ লেকপাড়ের প্রত্যকের হৃদয় ছুয়ে যাচ্ছে।

“ কি সুন্দর আবহাওয়া।”- মোবাশ্বের সাহেব ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললেন। সে চট করে মোবাশ্বের সাহেবের দিকে ফিরে চাইল, মুখে ভদ্রতার কিঞ্চিত হাসি, মুখে এখন বিরক্তি ভাব নেই।

“ তা বাবাজী কি এই দিকে থাক?”

“ জ্বী আঙ্কেল ওই তো ঐ দিকে আমাদের বাসা। “ ছেলেটা যে কোন দিক বলল মোবাশ্বের সাহেব ধরতে পারলেন না।

“ নিজের বাসা ?”

“ জ্বী আঙ্কেল।” ছেলেটার ভদ্রটায় মোবাশ্বের সাহেব মুগ্ধ। কি চমৎকার ছেলে, দুধে আলতা গায়ের রং। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! এমন সোনার টুকরা ছেলে নাকি পাগল!

মোবাশ্বের সাহেব আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন, না জানি কোন পাগলামি শুরু করে কিনা।

সে রকম কিছুই দেখা গেল না। মোবাশ্বের সাহেব তাকে আবার জিজ্ঞাস করলেন,” তা বাবা, একা একা এত কথা কার সাথে বল ?”

এবার ছেলেটা চমকে মোবাশ্বের সাহেবের দিকে ফিরে চাইল। মোবাশ্বের সাহেব ভয় পেয়ে গেলেন। ছেলেটা কিছুক্ষণ অদ্ভুত দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে রইল। এরপর একটা প্রাণ খোলা হাসি তার মুখে ঝিলিক দিয়ে উঠল।

“ আঙ্কেল আমি তো আমার বান্ধবীর সাথে কথা বলি।”

মোবাশ্বের সাহেব কিছুক্ষণ হাঁ করে রইলেন। এরপর জিজ্ঞাস করলেন, “ কই তোমার বান্ধবী ?”

ছেলেটা মোবাশ্বের সাহবকে বট গাছের একটা ডালের দিকে ইঙ্গিত করে।

“ কই বাবাজী আমি তো কিছু দেখি না।”

“ আঙ্কেল আপনি দেখবেন কি করে, ওতো মানুষ নয়, ওতো পরী। জ্বীনের কন্যা। “

“ ও আচ্ছা।”

মোবাশ্বের সাহেব চুপ মেরে গেলেন। তার কাছে পরিষ্কার যে বেচারা মানসিক বিকার গ্রস্ত। এরপর মোবাশ্বের সাহেব বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলেন। ছেলেটার জন্য মনটা খারাপ হয়ে রইল।

“ তা বাবাজী আমি তাহলে এখন আসি। অন্য দিন দেখা হবে নে কেমন।”

“ জ্বী আঙ্কেল , ভাল থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।”

“ ওয়ালাইকুমুস সালাম ,বাবা।”

মোবাশ্বের সাহেব বসায় ফিরে আবার বারান্দায় আসলেন। সেখান থেকে ছেলেটাকে দেখলেন। বেচারা বক বক করেই চলেছে। মা-বাবার মৃত্যুর পর সম্ভবত শকটা নিতে পারেনি । হায়রে দুনিয়া। একটা ভারী দীর্ঘশ্বাস তার বুক চিরে বেরিয়ে এল।

(৪)

শুক্রবারের ঘটনা প্রবাহ একটু আলাদা। মোবাশ্বের সাহেব নাস্তা সেরে সাড়ে দশটা নাগাদ বারান্দায় এসে বসেছেন। একটা সাদা এম্বুলেন্স লেকপাড়ে এসে থামল কোন সাইরেন বাজানো ছাড়াই। ষান্ডা মার্কা তিনজন লোক বেরিয়ে এসে পার্কে ঢুকল। এম্বুলেন্সের সামনের সিটে সাদা পোষাক পড়া ড্রাইভার বসা। সে নির্লিপ্ত ভঙ্গীতে অন্য তিনজনের দিকে তাকিয়ে আছে, যেন মনে হচ্ছে প্রায়ঃশই এই একই ধরণের ঘটনা দেখে সে অভ্যস্ত। মোবাশ্বের সাহেবের মনে খটকা লাগল। তিনি কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখলেন ষন্ডা মার্কা লোক তিনটা বেঞ্চিতে বসা ছেলেটাকে জাপটে ধরছে।ছেলেটা সাথে সাথে চিৎকার করতে লাগল।

“ আমাকে ছাড়, আমকে ছাড়, ইউ সান অফ আ বিচ।”

মোবাশ্বের সাহেব হতভম্ব হয়ে রইলেন। চিৎকার করে বাচ্চুকে ডাকলেন ,” বাচ্চু ছেলেটাকে যেতে দিস না। ওদের ধর ধর। “ মোবাশ্বের সাহেব দৌড়ে সিড়ি দিয়েই নামলেন , লিফট ব্যবহার করলেন না। নিচে নামতেই বাচ্চু মোবাশ্বের সাহেবকে ধরল।

“স্যার উনারা হাসপাতালের লোক। পোলাডারে নিতে আইসে।”

এরপরও মোবাশ্বের সাহেব গেট খুলে বের হয়ে এলেন। সামনেই এম্বুলেন্সের ড্রাইভারকে পেলেন।

“ স্যার ভয়ের কিছু নাই। আমারা ধানমন্ডি হাসপাতালের থেকে আসছি। উনি ডক্টর খালেদা বেগমের পেসেন্ট। সাইক্রিয়াটিস্ট।”

ছেলেটা মোবাশ্বের সাহবেকে দেখা মাত্রই চেঁচাতে লাগল,” আঙ্কেল প্লিজ হেল্প। এই আমাকে ছাড় তোরা। ইউ সান অফ আ বিচ......ছাড়......”। লোক তিনটা ছেলেটাকে এম্বুলেন্সে উঠাতে যাবে এই সময় কোথা থেকে একটা ঢিল এসে পড়ল। ষান্ডা মার্কা একটা লোক মাথায় হাত দিয়ে আহ করে উঠল। ক্ষণিক পরে একসাথে বড় বড় তিনটা ঢিল এসে পড়ল এম্বুলেন্সের গায়ে। রাস্তার আশে পাশে যাতায়াতকারী সব লোক জন অবাক হয়ে থেমে দাঁড়াল। এরপর অদ্ভুত এক কান্ড শুরু হল। ঝাঁকে ঝাঁকে ঢিল এম্বুলেন্সের দিকে উড়ে আসতে লাগল। ঘটনার আকস্মিকতায় এম্বুলেন্সের লোকেরা হতবুদ্ধ হয়ে গেল। সেই সাথে তারা বেশ ভয়ও পেয়ে গেল। মানুষজন এদিক সেদিক ছুটতে লাগল। মোবাশ্বের সাহেবের স্ত্রী আতংকে বারান্দা থেকে চিৎকার দিল।
ঢিলগুলা লেকের দিক থেকে ছুটে আসছে কিন্তু কে যে ছুঁড়ে মারছে সেটা বুঝার উপায় নেই। বাচ্চু মোবাশ্বের সাহেবকে ধরে গেইটের ভেতরে নিয়ে গেল। একটা ভয়ংকর কান্ড ঘটতে লাগল। এম্বুলেন্সটা খুব দ্রুত সাইরেন বাজিয়ে চলে গেল। সেটার বেশ কয়েকটা গ্লাস ভেঙ্গে গেছে। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হল এম্বুলেন্সটা ছেলেটাকে নিয়ে সরে পরার সাথে সাথে ঢিল ছোঁড়া বন্ধ হয়ে গেল।

মোবাশ্বের সাহেব জুম্মার নামায পড়তে যাবার সময় দেখলেন তার বাসার সামনে পুলিশ এসে চেকপোস্ট বসিয়েছে। লেক পার্কের এদিক ওদিক পুলিশ সদস্যরা ঘুরাফেরা করছে। কাউকে সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

মোবাশ্বের সাহেব জুম্মার সালাত আদায় করে বাসা ফেরার সময়ও দেখেন পুলিশেরা পাহাড়ায় আছে।তাদের ধারণা সম্ভবত
টেররিস্ট এক্টিভিটি । বাসার গেইটে ঢুকার সময় মোবাশ্বের সাহেবের দৃষ্টি পার্কের ঐ খালি বেঞ্চিটাতে গিয়ে পড়ল, যেটাতে ওই ছেলেটা বসে থাকত। মোবাশ্বের সাহেবের খুব খারাপ লাগল। তিনি বাসায় না গিয়ে পার্কের ওই বেঞ্চিটাতে গিয়ে বসলেন। বেঞ্চির আশপাশ নীরব। দূরে কয়েকজন পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে আছে। মোবাশ্বের সাহবের হঠাৎ মনে হল কেউ যেন তার নাম ধরে ডাক দিচ্ছে।

“ মোবাশ্বের সাহেব , এই মোবাশ্বের সাহেব...”

হঠৎ তার দৃষ্টি বট গাছের একটা মোটা ডালে আটকে গেল। সেখানে অপরূপ সুন্দরী একটা মেয়ে বসে আছে। তার সারা গায়ে সাদা কাপড় জড়ান। মুখে বিদ্রুপের হাসি। দৃশ্যটায় কেমন যেন একটা অস্বস্তিকর ভাব রয়েছে।

“ মোবাশ্বের সাহেব কেমন আছেন?”

মোবাশ্বের সাহেব কি করবেন বুঝতে পারছেন না। হঠাৎ মেয়েটার গলাটা লম্বা হতে লাগল। সেটা এগিয়ে আসতে লাগল তার দিকে। একটা আর্তচিৎকার দিয়ে তিনি জ্ঞান হারালেন। কয়েকজন পুলিশ সদস্য তার দিকে দৌঁড়ে গেল।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:০৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×