somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গ: পান্তা-ইলিশ

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মামা-বাড়ির পানের বরজে কাজ করতো
আকছু ভাই।তখন আমি চতুর্থ বা পঞ্চম
শ্রেণিতে পড়ি।প্রতিদিন ভোর ৬-৭ টার
দিকে আসতো বরজে কাজ করতে।মামা
বাড়ির দাদুর সাথে ভোরে হাঁটতে
হাঁটতে বরজে যেতাম।বরজের পিলে
পিলে হাঁটতাম।তখন পানের লতার
প্যাচানো জটিলতা সম্পর্কেও আমার
কোনো ধারণা ছিল না।প্রতিটা পানের
বেড়ে ওটায় আকছু ভাইয়ের কি শ্রম, কি
আন্তরিকতা, কি পরম মমতা; তা নিজেই
প্রত্যক্ষ করেছি।ভোর থেকে সন্ধ্যা
পর্যন্ত চলে আকছু ভাইয়ের পান-প্রীতি-
কর্ম ।
ভোরে সে ছোট্ট কুটির থেকে বের হয়
সরিষা তেল আর কাচা লংকা দিয়ে
পান্তা ভাত খেয়ে।তার দুপুরের খাওয়া
হতো মামা-বাড়িতেই।সন ্ধ্যা হলেই
সে তার ছোট্ট কুটিরে ফিরে যেত।
একদিন তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম:
আচ্ছা, তুমি প্রতিদিন ভোরে পান্তা
ভাত খাও কেন? পান্তা খেতে কি খুব
মজা?
আকছু ভাই কিছুক্ষণ পানের লতিতে উলু
বাধা বাদ দিয়ে আমার দিকে ফ্যাল
ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।মুহূর্তেই কখন
যে অঝরেই তার অশ্রু ঝরে গেলো টের
পেলাম না।শুধু টের পেলাম, তার গলার
স্বর পরিবর্তন হয়ে গেছে।সে মুখ নিচু
করে কথা বলছে।ভাঙা ভাঙা গলায় সে
বললো, 'আমাগের মতো গরীব মানষের
জন্যি পান্তা ভাতই ভালো।আমরা তো আর
তিন বেলা ভালো খাতি পারিনে।
তোমার মামাগে বরজে সারাদিন
খ্যাটে পায় ৪০ ট্যাহা।তিন ছ্যালে
ম্যায়ে আর বউ আচে বাড়ি।এই ট্যাহায়
বাজার করবো কি আর ওদের খাওয়াবো
কি? আমি তো দুপুরে তোমার মামাগে
ইহানে খায় বইলে এট্টু খরচ কইমে
যায়।তা না হলি তো পান্তাও জুটতো না।
আমাগে বাড়ি একবেলা উনুন (চুলো)
জ্বলে; বাকি দু'বেলা উনুন নিবানো
থ্যায়ে।বিয়ান বেলা আমাগে বাড়ির
সবাই পান্তা ভাত কাঁচা ঝাল (মরিচ)
দিয়েই খাইয়ে ফেলে।শুধু দুপুরে উনুন
জ্বালায় বউ।যা তরকারি কিনতি পারি,
তা আধ-পেটা করে দুপুরে আর রাত্রি
ব্যালায় খায়।বিয়ান ব্যালার জন্যি
আর কিছু থ্যাহে না।যা ভাত থ্যাহে তা
বউ পানিতে ভিজায়ে র্যাহে।বিয়ান
বেলায় বউ-ছ্যালে-ম্যায় ে সবাই
মিলে সরষের তেল আর ঝাল মাইখে সব
পান্তা খাইয়ে ফ্যালায়'।

আচ্ছা, প্রতিদিন যারা পান্তা খায়;
তারাও কি পহেলা বৈশাখে পান্তা
খাবে? বুঝলাম ওরাও এই বিশেষদিনে
পান্তা খাবে, কিন্তু ওরা কি ইলিশের
গন্ধটুকুও পাবে?
আমার কথা স্পষ্ট, বাংলা সনের প্রথম
দিনে বাঙালিপনা দেখাতে যদি
পান্তা ভাত খান, তবে অবশ্যই বাইরে
বের হবেন ছেড়া লুঙ্গি বা ছেড়া ধুতি
পরে।কারণ, যে কৃষক প্রতিদিন ভোরে
পান্তা ভাত খায়; তার পরনে কিন্তু
দামি পাঞ্জাবি বা দামি ফতুয়া থাকে
না বা দামি জিন্স বা দামি পাজামা
থাকে না।থাকে ময়লা লুঙ্গি বা ছেড়া
লুঙ্গি অথবা ময়লা ধুতি বা ছেড়া ধুতি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×