somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুগে যুগে শিরকের বিবর্তন ধারা

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১ম মানব আদম আঃ সৃষ্টির পূর্বে শিরক ছিল অন্য ধরনের । তখন আল্লাহ সুবঃ তাঁর ইবাদতের জন্য শুধু জ্বীন জাতিকেই সৃষ্টি করেছিলেন কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে ফিতনা ফাসাদ যুদ্ধ বিগ্রহ রক্তপাত করে সৃষ্টির মাঝে চরম বিপর্যয় এনে দিয়েছিল , এর কারন বোধ হয় তারা নিজেদের ইচ্ছা (হাওয়া)কে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছিল, তখনও কিন্তু ধোকা দেয়ার জন্য আলাদা সত্ত্বা ইবলিসের জন্ম হয়নি । জ্বিনেরা নিজেদের খেয়াল খুশিকেই ইলাহ বানিয়ে নেয়ায় জ্বীনরুপী নবী রসুলদের হত্যা করত এবং নিজেদের মন পছন্দ অনুযায়ি চলত এবং অন্যের সাথে শক্তি ক্ষমতার দাপট দেখাত অর্থাৎ তখনকার সময়ে জ্বীনদের যখন ধংস করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তখন থেকে শুরু করে ১ম মানব আদম আঃ সৃষ্টির পর পর্যন্তও শিরক ছিল নিজের কামনা-বাসনার পুজা বা নিজের নফসের প্রাধান্য দেয়া, আর আদম আঃ কে সিজদা না করে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের কথা নিজেই রবের কাছে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরে ইবলিস যে অহংকার করল তার মুলেও রয়েছে নিজের ইচ্ছাকেই ইলাহ বানিয়ে নেয়া অর্থাৎ শিরক । এরপর আদম আঃ ও মা হাওয়ার দুনিয়াতে আসার পর কাবিল সম্ভবত আল্লাহর মুর্তি তৈরীর রীতি প্রবর্তিত করে একেও আল্লাহর আকারের ক্ষেত্রে শিরক বলা যায়। এই ফিতনা সম্ভবত শীষ আঃ আসার পর দুরিভুত হয়েছিল কিন্তু নুহ আঃ এর সময় পুন্যবান মানুষের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য চেয়ে আবার সমস্ত মানুষ শিরকে লিপ্ত হল। একেও আল্লাহ সুবহানা তায়ালা গজব দিয়ে দূর করে দিলেন এই মহাপ্লাবনের কথা এব্রাহেমিক ধর্ম ছাড়া অন্নান্য ধর্মেও উল্লেখ আছে এমনকি হিন্দু ধর্মে সত্যব্রতের সময় মৎস্য অবতার হিসেবে উল্লেখ আছে তারপরে সনাতন ধর্মানুযায়ি নৃসিংহ অবতারের সময় এবং ইব্রাহিম আঃ এর সময় হতে আবার ১ ধরনের মুর্তি পুজো এবং রাজা বাদশাদের নিজকে রব বা পালনকর্তা মানার শিরক শুরু হয়ে গেল একই ধরনের শিরক মুসা আঃ এর যুগে ফেরাউনের মাঝেও বিদ্যমান ছিল তবে সে নিজেকে ইলাহ, রব দুটোই দাবী করত এবং বনী ইসরাইল ধার্মীকদের নিপীড়ন বেশি করত একই রকম কাজ আবার উপমহাদেশের রাজা কংসের বেলাতেও করতে দেখা যায় এগুলোকেও প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহ সুবঃ সমুলে উৎপাটন করে দিলেন। সবশেষে কল্কি অবতার নবী মুহাম্মদ সাঃ এর সময়েও দেখা যায় যে মুর্তি পুজার মাধ্যমে আরেক ধরনের শিরকের উৎপন্ন হয়েছে । আর তা হল আল্লাহ সুবঃ কে পরম ঈশ্বর বানিয়ে তাঁর ফেরেশতা এবং বিভিন্ন পুন্যবান ধার্মিক শক্তিশালী জ্বীনদেরকেও ইশ্বর বানিয়ে পুজো এবং আল্লাহ সুবঃ কে অকেজো ঈশ্বর বা শুধুই স্রষ্টা বানিয়ে দেয়া হল আর পুজোনীয় ইলাহ বিভিন্ন দেব দেবীকে বানানো হল এর পাশাপাশি সমাজ অধিপতি এবং রাজা বাদশাকেও পরিচালক বিধান দাতা মানা হত আর মনের পুজা তো ছিলই অর্থাৎ অতীতের প্রায় সব শিরকই সেসময় উপস্থিত ছিল কম বেশী হলেও। সেগুলোকে তিনি আল কুরানের আলোর মাধ্যমে এবং অনেক কাফের মুর্তিপুজারী মুশরিকদের ধংসের মাধ্যমে আবারও শিরক দুরিভুত করা শুরু করলেন ।
এই দুরিভুতকরন চলতেই ছিল কিন্তু বিগত কয়েক শতাব্দী হল সমস্ত মানব জাতির মাঝে শিরকের আবারও বিবর্তন চলে এসেছে। এখন আর কোন মানুষ মুর্তি পুজো বা আল্লাহ ভীন্ন কোন সত্ত্বাকে মন থেকে পুর্বের মত ইলাহ বানায় না। মুর্তি পুজো বা নিজেদের ধর্মীয় আচার আচরন করে শুধুমাত্র তাদের বাহ্যিক সংস্কৃতি রক্ষার্থে কিন্তু সব মানুষেরই মনে সেই কাল্পনিক মুর্তির ইশ্বর আর আগের মত বাস করে না। বর্তমান বিশ্বে এখন মানুষের মনে ঈশ্বর হিসেবে বাস করে মানুষেরাই অর্থাৎ মানুষ আজ মানুষেরই পুজো করে । আরো ভালোভাবে বললে মানুষ আজ মানুষের জ্ঞানকে পুজো করছে তাই বর্তমান যুগে শিরক হল মানুষের পুজো । প্রশ্ন হল- মানুষ হয়ে মানুষকে কিভাবে ঈশ্বর মানতে পারে ? সাধারনত ঈশ্বর এর মানুষের উপর যে ধরনের অধিকার বা হক্ব রয়েছে সেই ধরনের অধিকার বা হক্ব যদি কোন মানুষকে দেয়া হয় তবে ঈশ্বরের সাথে ঐ মানুষকে শিরক করা হল বা তাকেও পুজো করা হল অথবা ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে তাকেই ঈশ্বর মানা হল। যেমনঃ ঈশ্বরের অধিকার এবং হক্ব যে তার সৃষ্ট জীব মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য তিনিই জীবন বিধান দিবেন এবং দিয়েছেনও তাই কিন্তু আমরা সেই জীবন বিধান বা দ্বীনুল ইসলাম পাওয়ার পরও যদি জীবন পরিচালনার জন্য আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে বা পেছনে ফেলে মানুষের তৈরী বিধান মানি তবে এখানে আমি আল্লাহ সুবঃ কে বিধান দাতা বা ধর্মের স্রষ্টা হিসেবে না মেনে মানুষকে বিধান দাতা বা দ্বীনের স্রষ্টা হিসেবে মানলাম । তার মানে আমি আল্লাহর জ্ঞানের সাথে মানুষের জ্ঞানের শিরক করলাম । আমার জীবনের কোন ১টি ছোট ক্ষেত্রেও যদি আল্লাহর দেয়া বিধানের চেয়ে মানুষের তৈরী বা অন্য কারো তৈরী বিধানকে বেশী উপাদেয় মনে হয় বা ভাল লাগে তবুও আমি আল্লাহর জ্ঞানকে খাটো এবং মানুষের জ্ঞানকে বড় ভাবলাম ফলে অপ্রকাশ্যভাবে হলেও আমি শিরকই করলাম আর তা যদি আমি বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করি তখনি আমি প্রকাশ্য শিরকেও লিপ্ত হলাম। আর যদি এটা হয় যে আল্লাহর বিধানই বড় বা ভাল তা মনে প্রানে স্বিকারও করি এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা মেনেও চলি কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে বাধ্য না হয়েও মানতে পারলাম না বা মানলাম না তবে তা কিন্তু শিরক হবে না কিন্তু না মানার কারনে পাপ হবে। আর যদি সে বর্তমান সমাজে প্রচলিত ভোটে অংশগ্রহনের মাধ্যমে তার ব্যাক্তিগত ও সমস্ত রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে জীবন বিধান হিসেবে গনতন্ত্র/সমাজতন্ত্র বা মানুষের তৈরী কোন তন্ত্রকে মেনে নেয় তবে সে প্রকাশ্য শিরক করল আর ভোটে অংশগ্রহন না করেও যদি এই গনতান্ত্রিক সিস্টেমকে তার ভাল লেগে থাকে তবেও সে মুশরিক।
শুধু তাই না আমি যদি কুরান শরিফ মার্কায় কোন ইসলামিক দলকেও ভোট দিই তবু আমি জনগনকে ঈশ্বর মানতে বাধ্য থাকছি । যদিও আমি ভাবি যে ঐ দল জনগনের সর্বচ্চ ক্ষমতার মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আল্লাহর আইনই বাস্তবায়ন করবে তবুও কারন জনগন চাইছে বলেই সে আল্লাহর আইন ফলাতে পারবে নচেৎ নয় । কিন্তু আল্লাহরই ভুমিতে আল্লাহর আইনকে জনগনের চাওয়ার উপর নির্ভর করে ফলানোর চেষ্টা করলে আল্লাহর চাওয়ার উপর জনগনের চাওয়াকেই প্রাধান্য দেয়া হবে বলে এটাও শিরক। আবার অনেকে দ্বীনুল ইসলামকে শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত নামাজ, রোজার মধ্যে সীমিত মনে করে এবং সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনেও যে ইসলামের পূর্নাংগ বিধান আছে এবং এগুলোও মানতে হবে তা অনেকে জানেই না এবং মনে করে ধর্ম ব্যক্তিগত আমল আর রাষ্ট্রীয় বিষয় মানুষ আল্লাহর দেয়া জ্ঞান খাটিয়ে যা করবে সেটাই মানতে হবে, তাই যদি হত তবে শয়তানের ধোকা দেবার শক্তি এবং জ্ঞানও আল্লাহর দেয়া তবে শয়তানের কথা মানাও পুন্যের কাজ হত । এভাবে এরা মানুষের জ্ঞান পুজা না জেনে করলেও তাও শিরকের অন্তর্ভুক্ত হবে কেননা শিরক জেনে করুক বা না জেনে করুক শিরক ঠিকই হয় এবং শিরক থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে তওবা না করে মারা গেলে আজীবন জাহান্নামী। তবে বর্তমান যুগে মানুষের জ্ঞান পুজাই সবচেয়ে বড় শিরক হয়ে দারালেও মুর্তি পুজার মত অন্যান্ন শিরক যে একেবারেই কম তা কিন্তু নয় । তবে সব যুগেই বড় ধরনের শিরককে কেন্দ্র করেই মহান আল্লাহ উৎত্থান পতন ঘটিয়েছেন । আর বর্তমানে মানুষের জ্ঞান পুজাও হল সেই ধরনেরই শিরক যেটার পতন পরাক্রমশালী আল্লাহ অতি শীঘ্রই ঘটাবেন । তাছারা মানুষের জ্ঞান পুজাই বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড় শিরক কিনা তা বুঝতে হলে একটু ভাল করে লক্ষ্য করুন- মানুষ আজ কালেমার বানীর মত অনেকে উচ্চারিত করে – আমার ১ম পরিচয় আমি ১জন মানুষ, তাই মানবতাই আমার আসল ধর্ম , ব্যক্তিগতভাবে আমি যে ধর্মেরই হই না কেন (অর্থাৎ আমি সম্মিলিত মানবসৃষ্ট নতুন ধর্মে দিক্ষিত হলাম), মানুষ আজ নামাজের মতই জাতীর উদ্দেশ্য কয়েক মিনিট নীরবতা পালনকে বেশী উল্লেখযোগ্য মনে করে , রোজা রেখে আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার চেয়ে অনশন করে জাতির কাছে চাওয়া বেশী ফলদায়ক মনে করে , সারাবিশ্বের মুসলিম নেতাদের যেখানে মুসলিমদের বাৎসরিক সম্মেলন হজ্ব এ হাজির হবার কথা সেখানে সমস্ত রাষ্ট্রের নেতারা বাৎসরিকভাবে জাতিসংঘে মিলিত হয়, আল্লাহর বিধান অনুযায়ি যেখানে শুধুমাত্র ধনীদের হতে সরকারের জাকাত নেয়া ফরজ ছিল আজ মানুষের জ্ঞানে নিয়ন্ত্রিত সরকার তা না করে মানুষের জ্ঞানে যত পরিমান ঠিক মনে হয় ততটুকু ট্যাক্স,ভ্যাট ধনী-গরীব সকলের কাছ থেকেই নিয়ে সেই অর্থ দিয়ে সুদ ও বিশ্বব্যাংকের ধার নিয়ে দেশ চালায় যা ইসলাম অনুযায়ি জগন্য পাপ । এখন একটু ভালভাবে লক্ষ্য করুন যে ৫টি মৌলিক জিনিসের উপর ভিত্তি করে ধর্ম দ্বরিয়ে আছে সেই ৫টি জিনিস কালেমা, নামাজ, রোজ়া , হজ়্ব ও যাকাত । সেই পাঁচটির বিকল্প ব্যাবস্থাও কিন্তু মানুষ আজ মানুষের জ্ঞান খাটিয়ে বের করে ফেলেছে, এরপরেও যদি কেউ বলে বর্তমানে সবচেয়ে বড় শিরক হল মুর্তি পুজা সে আসলে আদিম যুগেই পরে আছে । আর শুধুমাত্র মক্কা আর মদিনার জনগনের চাপে পরে সৌদি বাদশা কিছু ইসলামিক আইন জারি রেখেছে কিন্তু এছারা আজ সারা বিশ্বের কোন জায়গায় ঈশ্বরের বিধানকে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক ভাবে মানা হয় ? নাকি মানুষের জ্ঞান মাফিক বিভিন্ন তন্ত্রে বিশ্ব চলছে?
তাছারা উপমহাদেশের মুসলিমরা মনে করে আল্লাহ হলেন সৃষ্টিকর্তা আর তিনি আমাদের এজন্য সৃষ্টি করেছেন যে আমরা যা ইচ্ছা তাই করি না কেন! অবশ্যই তাঁর জন্য শারীরিক উপাসনা ইবাদত পুজা ইত্যাদি করা উচিৎ কিন্তু দৈনিক ৫ বার না হলেও ১ বার আর তা না পারলেও সপ্তাহে অন্তত্ব্য ১বার আর সেটাও যদি সম্ভব না হয় তবে বাৎসরিকভাবে কয়েকবার করে হলেও আপাদত ঈশ্বরের উপাসনা করতে করতে বৃদ্ধ বয়সে সকল কর্ম ত্যাগ করে শুধুই উপাসনাই করব নয়ত বেশিরভাগ সময় শুধুই উপাসনাতে ব্যাস্ত থাকতে থাকতেই মৃত্যুবরন করে ঈশ্বরকে বাধ্য করব যাতে আমাকে কিছুতেই নরকে না দিতে পারে । যদিও এই ধরনের চিন্তা ধারা ঈশ্বরের সাথে চ্যালেঞ্জে যাবার সামিল আর আল্লাহ কাউকে স্বর্গে দিতে বাধ্য নয় বরং ইলাহ হিসেবে একমাত্র তাঁকেই মেনে নিলে হয়ত তিনি ক্ষমা করে দয়াবসত স্বর্গে দিবেন এই সম্ভাবনাই বেশী কিন্তু বাধ্য নয় এমনকি কারো আমলের মাধ্যমেও। তাছারা তিনি কারও আমল ইবাদতের মুখাপেক্ষীও নন তিনি ইচ্ছে করলে সকলেই তাঁরই ইবাদত করত আর অসংখ্য ফেরেশতারা তার ইবাদতে সর্বদাই মশগুল থাকে। কিন্তু মানুষ পার্ট টাইম কিছু উপাসনা করবে আর বাদবাকি সময় নিজের পছন্দমত যা খুশি তাই করবে নিজেকে সম্পূর্ন স্বাধীন ভেবে, মূলত এটাই হল নিজে মনের ইচ্ছাকে ইলাহ মানা, এমন হলে সে তখন আর মুসলিম থাকছে না কেননা মুসলিম অর্থ আল্লাহর কাছে পুরোপুরিই আত্মসমর্থন তাঁর নীতি বা বিধানের দ্বারা । সুতারাং যারা মুসলিম তারা কখনই স্বাধীন নয় আবার অন্যের কাছেও পরাধীন নয় বরং তারা আল্লাহর অধীন অর্থাৎ সর্বদা এবং সর্বক্ষেত্রেই দ্বীন ইসলাম মান্যের আশা-আকাংখার কারনে তারা মুসলিম এবং অবশ্যই শান্তিকামী প্রতিনিধি বা খলিফা । যদিও মুসলিমরা মস্তিস্ক দিয়ে চিন্তাভাবনা করার ক্ষেত্রে শুধু স্বাধীনই নয় বরং মনের গুনাহও আল্লাহ মাফ করে দিবেন আর তা শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্যই, তাই মিথ্যে স্বাধীন দাবীদার মানবধর্মীদের চাইতে মুসলিমরাই বেশী স্বাধীন এবং মনে মনে শান্তিতেও থাকে।

উপমহাদেশের হিন্দ দেশের মানুষেরা মুসলিম হবার পূর্বে পার্ট টাইম বিভিন্ন মূর্তির উপাসনা করত আর উপাসনার সময় বাদে প্রায় বেশিরভাগ সময়ই পুরোহিতদের গোলামী করত কিন্তু মুসলিম হবার পর এরাই আবার পার্ট টাইম শুধুমাত্র নামাজ,রোজা ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর উপাসনা শুরু করে আর বেশিরভাগ সময় মুসলমান পুরোহিত/ধর্ম ব্যাবসায়ী তথা হুজুরদেরকে – জী হুজুর- জী হুজুর সন্মোধন করে তাদের সকল কথাই অন্ধের মতন মেনে চলা শুরু করে পরকালে পার পাবার আশায়। আর এরকমভাবে শুধুমাত্র নামাজের সময়ই আল্লাহকে উপাসনার মাধ্যমে ইলাহ মেনে আবার নামাজ শেষেই হুজুরদের কথা অন্ধভাবে মেনে চলে তাদের গোলাম/বান্দা/আবদ হওয়ার মাধ্যমেই আল্লাহর সাথে হুজুর সম্প্রদায়কেও শরিক করা হল কেননা মুসলিম সর্বদাই আল্লাহর গোলামী করবে শুধু তাঁরই দাসত্ব করবে। কারন যখন আল্লাহ সুবঃ নবী সাঃ এর উপর কুরানের এই আয়াত নাজিল করলেন যে- আহলে বায়াতের অনেকে তাদের আলেম বুজুর্গদের প্রভু মানে। তখন তারা নবী সাঃ এর কাছে গিয়ে অভিযোগ করল যে আমরা তো আমাদের আলেমদের উপাসনা করি না তবে কিভাবে আমরা তাদের প্রভু মানি তখন নবী সাঃ বললেন- তোমাদের আলেমদের তোমরা সরাসরি পুজা না করলেও তারা যা হালাল ও হারাম বলে আদেশ করে তোমরা অন্ধের মত তাই মেনে চলার কারনে তাদেরকেও প্রভু মেনে শিরক করছ। তাই অন্ধভাবে যতবড়ই আলেম আল্লাহর ওলী হোক না কেন কারও কথা মানা যাবে না তবে আর হুজুরদের গোলামী করা হবে না।

আল্লাহ সুবঃ এর অনেক গুনবাচক নাম রয়েছে যেমন কুরানে প্রায় ৯৯টির মত নাম আছে- আলিম(জ্ঞানী), শাফি(রোগ হতে আরোগ্যদাতা), ক্বাজী(বিচারক), হাক্বিম(বুদ্ধিমান), রহমান(দয়াশীল) ইত্যাদি। এখন কেউ যদি ঐসব ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মানে বা আল্লাহর সমকক্ষ করে অথবা তাঁর ঐসকল গুনের সাথে কোন সৃষ্টিকে অংশিদার বানায় তবেও শিরক হবে । কিন্তু বাস্তব জীবনে এমনও বলা যাবে এবং মানাও যাবে যে- অমুককে আল্লাহ খুব দয়াবান বানিয়েছেন বা অমুককে তিনি খুব জ্ঞান দিয়েছেন কিন্তু একমাত্র আসল দয়াবান ও জ্ঞানী তিনিই। হিন্দু ধর্মের মত মুর্তি পুজার ধর্মে আল্লাহর যতগুলো গুনবাচক নাম আছে তাদের ধর্মেও ঠিক ততোগুলোই বা তারচেয়েও বেশী গুনসম্পন্ন দেবদা আছে এদেরকে ঈষ্ট দেবতা বলে অর্থাৎ যার জ্ঞানের প্রয়োজন সে গনেশের পুজো করে তার কাছে থেকে জ্ঞান প্রার্থনা করে নিবে যার ধন দৌলত দরকার সে লক্ষীর পূজা করবে যদিও তারাও মানে যে স্রষ্টা একজনই কিন্তু তারা পাশাপাশি এটা শরিক করছে যে বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন দেবদার সৃষ্টি করে কাজগুলো ভাগ করে দিয়েছেন এখন যার যেটা দরকার সেই সেই দেবতার কাছে গেলেই হল আর এতেই একমাত্র স্রষ্টাও সন্তুষ্টি হবেন ভেবে থাকে কিন্তু মুসলিমরা জানে সবকিছুর পরিচালক একমাত্র ঈশ্বর আল্লাহ অর্থাৎ তিনিই রব আর তার কাছে চাইলে ফেরেশতারা তা করতে বাধ্য। তবে সবচেয়ে মারাত্বক ব্যাপার হল বিগত কয়েক শতাব্দী হল মুসলমান সমাজেও এরকম আল্লাহ ভিন্ন অন্যদেরকে রব ইলাহ ভাবা শুরু হয়েছে যেমন- শিক্ষা, চিকিৎসা, সমাজ ও রাষ্ট্র চালনা, প্রতিপালন ইত্যাদি ক্ষেত্রেও আল্লাহ প্রদত্ত রীতি বাদ দিয়ে মানবসৃষ্ট বিধান দ্বারা পরিচালনা করা হচ্ছে আর যার বিধান দ্বারা এসব পরিচালিত হচ্ছে তাকেই ঈশ্বর ইলাহ রব মানা হচ্ছে। তাই সর্বশেষ ভরসা হিসেবে যারা সেসব ডাক্তারের স্বরনাপন্ন হচ্ছে যারা কিনা অনইসলামিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করবে তাদেরকেও কিন্তু আশ শাফি(শেফাদানকর্তা) এর ক্ষেত্রে শিরক হচ্ছে কিন্তু সাধারন মানুষ মনে করে ধর্মের সাথে চিকিৎসার কোন সম্পর্কই নাই ধর্ম মানেই হল উপাসানালয়ে কিছু রসম রেওয়াজের মাধ্যমে উপাসনা করা যা হুজুরদের শিখানো ইসলাম জানার কারনে এমন ধারনা হয়েছে।
এছারা সকল কিছুই যে আল্লাহর আদেশ মত না হলেই পাপ হবে যে শুধু তাই না বরং সকল কাজেরই মূল উদ্দেশ্য একমাত্র আল্লাহ (সুবঃ) মুখিই হতে হবে, তাঁর জন্যই বাঁচতে হবে তাঁর জন্যই মরতে হবে, আর এমনভাবে যদি সকল কর্মের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহ(সুবঃ) হয় তবেই সত্যিকারের শান্তি মিলবে। উদাহরনস্বরুপ- শিক্ষার জন্য স্কুলকেই জ্ঞানের প্রধান উৎস মেনে শিক্ষকদের স্বরনাপন্ন হওয়া মানে হিন্দুদের মতন জ্ঞানার্জনের জন্য গনেশের কাছে যাওয়ার সমতূল্য তবে শিক্ষার জন্য কুরান-হাদিস শিক্ষা করলে কিন্তু আর শিরক হবে না। মোটকথা ইদানিং কিছু মানুষ দৈনিক পার্টটাইম উপাসনালয়ে উপাসনা করছে জাহিলিয়াতের মক্কার মুশরেকদের ন্যায় ঈশ্বরকে শুধুই স্রষ্টা ভেবে আবার এরাই অন্যসময়ে সমাজের বাদবাকী মানুষের ন্যায় নিজের কামনা বাসনাকে ইলাহের স্থানে বসিয়ে মন যা চাইছে তাই করছে আর মানুষের মন যা যা কামনা করতে পারে ঠিক তা দিয়েই মানবজাতিকে পূর্নাংগভাবে পরিচালনা করার চেষ্টা করছে একটি গোষ্ঠী যদিও তারাও নিজেদেরকে মনে মনে ইলাহ ভাবে কিন্তু মানুষের কাছে বলে আমরা তোমাদের দেশ পরিচালনা করি গনতন্ত্র এর মাধ্যমে সকলের স্বাধীনতা রক্ষার্ত্রে এবং আমরাই এই তন্ত্রের স্রষ্টা সুতারাং আমরাই হলাম তোমাদের পরিচালক আরবীতে যাকে বলে রব । সাধারনত দেখা যায় যারা নামাজ শেষে নিজেদের মন মত চলে তারাই ওদেরকে রব মেনে শিরক করছে কেননা পশ্চিমারা মানুষকে ঈশ্বরের বিধান দ্বারা পরিচালনা করছে না বরং তারা মানুষকে তাদের নিজস্ব তৈরী বিধানকে গনতন্ত্র নাম দিয়ে সারাবিশ্ব পরিচালনা করার চেষ্টা করছে বলে তারাও নিজেদেরকে পরিচালক বা রব দাবী করছে যেমনটি করেছিল ফেরাউনরা। এই নব্য ফেরাউন পশ্চীমারা শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত উপাসনায় স্বাধীনতা দিয়ে মানুষের সামাজিক রাষ্ট্রীয় সকল সামগ্রিক বিষয়গুলিই পরিপূর্নভাবে নিয়ন্ত্রন করে থাকে সারাবিশ্বব্যাপী। মনে রাখবেন ব্যাক্তিগত ব্যাপার গুলোও কিন্তু রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক বিধান দ্বারাই নিয়ন্ত্রীত হতে বাধ্য হয় । সুতারং সাবধান ! আসুন আমরা প্রথমে শিরক হতে বাঁচি । আল্লাহ সুবঃ আমাদের তৌফিক দিন- আমিন ।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৪৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×