পর্ব-২২
নাস্তিক ঃ এবং আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি, তাতে তোমরা যদি সন্দিহান হও তবে তৎ সদৃশ একটি 'সুরা' তৈরি করে নিয়ে এসো এবং আল্লাহ্ ব্যতীত তোমাদের সাহায্যকারীদেরকেও ডেকে নাও; যদি তোমরা সত্যবাদী হও।" (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৩)
ব্যাখ্যা: এই দাবীটি নিয়ে মুসলমানরা এমন কোন হীন পন্থা নেই যা তারা অবলম্বন করে না। তারা বারবার এই দাবীটি তুলে বুঝাতে চায় কুরআনের মতো প্রাচীন এবং অজ্ঞতাপূর্ণ একটি গ্রন্থ পৃথিবীর কেউ লিখতে পারবে না। কিন্তু তারা কিছুতেই বুঝতে পারে না এই একটি দাবীই কুরআন যে কোন অতিজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তার বাণী নয় তার প্রমাণ বহন করে। কারণ কোন অতিজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তা এমন একটি ফালতু, নির্লজ্জ চ্যালেঞ্জ জানাবে না। কারণ অতি জ্ঞানী কেউ কখনই অতি জ্ঞানহীন তুচ্ছ কারো প্রতি এমন চ্যালেঞ্জ জানাবে না। একজন জগত বিখ্যাত বিজ্ঞানী কখনই একজন মূর্খকে চ্যালেঞ্জ জানাবে না তার কোন থিউরীর মতো কোন থিউরী আবিষ্কার করার। কোন বিজ্ঞানী যদি তার কোন থিউরীর প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয় এবং তার থিউরীটিকে সত্য বলে উপস্থাপন করতে একজন মূর্খ মানুষকে চ্যালেঞ্জ জানায় তবে যেমন হাস্যকর শুনায় ঠিক কুরআনের লেখক এমনই এক হাস্যকর দাবী করেছে।
সূরা নাসের ছন্দটি খুবই নিম্ন মানের, যেমন, নাস, নাস, নাস, অর্থাৎ সবগুলোর শেষে নাস শব্দটি দেওয়া।
বরং এই সূরাটির অনুরুপ সুরা বা কবিতাটি হবে এরকম,
গরু খেতে ভালোবাসে ঘাস।
কাঁচা কাঁচা ঘাস।
তাজা তাজা ঘাস।
কাঁচি নিয়ে মাঠে যাবো কাটতে ঘাস।
সারা মাঠ চষে আনবো কেটে ঘাস।
গরু তুই মজা করে পেট ভরে খাস!
সুরা নাস এবং আমার লেখা কবিতাটির মান একই রকম।
কুরআনের এই আয়াতটি একটি প্রতারণামূলক আয়াত। কারণ যখন মক্কার মানুষ মুহাম্মদের কাছে তার নবুয়তের দাবীর প্রমাণ চাইতো তখন মুহাম্মদ কোন প্রকার প্রমাণই দিতে পারতো না। উপরন্তু তাদেরকে অন্ধভাবে তাকে নবী হিসেবে বিশ্বাস করতে বলতো। কিন্তু সেই দেড় হাজার বছর আগের মক্কাবাসীরাও প্রমাণ ছাড়া কোন কিছুতে বিশ্বাস করতে চাইতো না। স্বয়ং কুরআন সাক্ষি হয়ে আছে মক্কার কুরাইশরা মুহাম্মদের কাছে বারবার তার নবীয়তীর প্রমান চেয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই মুহাম্মদ প্রমান না দিয়ে নানা রকম কুযুক্তির অবতারণা করেছে। তারা বাইবেলে বর্ণিত নবীদের অলৌকিক ক্ষমতা দেখানোর মতো মুহাম্মদকে চ্যালেঞ্জ জানাতো কোন অলৌকিক ক্ষমতা প্রদর্শনের। কিন্তু মুহাম্মদ নানা অযুহাতে সেসব চ্যালেঞ্জকে পাশ কাটিয়ে যেতো। বরং মুহাম্মদ প্রতারণার চরম উদাহরণ রেখেছে কুরাইশদের করা নবীয়তীর প্রমানের চ্যালেঞ্জে হেরে গিয়ে উল্টো তাদেরকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে কুরআনের মতো সুরা লিখে আনার। কত বড় ধূর্তবাজ ছিল এই কুরআন লেখক। নিজে কোন প্রমাণ না দিয়ে উল্টো তাকে অবিশ্বাস করায় অবিশ্বাসকারীদের চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে।
আস্তিকঃ- আসলে আপনার ধারনাটা সৃষ্ট মানুষদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল কিন্তু ঈশ্বরের ক্ষেত্রে নয় কারন ঈশ্বরের ধারনা আপনাদের খুবই কম। যেমন- ঈশ্বর তো সবই জানবেন তাই যাদেরকে সুরা লেখার চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন তাদের যদি সেই পরিমান জ্ঞানও পূর্বেই দিতেন আর এরপর তারা ঠিকই সেই সুরা লিখে ঈশ্বরকে ভুল প্রমান করত অথচ ঈশ্বর সঠিকই ছিলেন। তারমানে ঈশ্বর নিজেই হেরে যাবেন? হে হে হে। তারচেয়ে এটাই উত্তম যে মূর্খদের এটা বুঝানো যে তারা এমনটি পারবে না সুতারাং মেনে নিক। তাছারা বাস্তবেই কিন্তু মানুষরা চ্যালেঞ্জ ছুরে তাদেরকেই যাদের সমর্থ অনেক কম, তাছারা আপনি কি বাংগালীদের মাঝে এমন চ্যালেঞ্জ ছুরবেন যে '' কে আছে আমার মত অনর্গল বাংলায় কথা বলবে ?" কক্ষনই না বরং বাংলাদেশে এমন চ্যালেঞ্জ করলে আপনাকে পাগল বলবে তবে অবাংগালীদের মাঝে এমন চ্যালেঞ্জ করে ১ম আপনার জেতার সম্ভাবনা বেশি থাকবে পাশাপাশি বাংলাভাষার প্রতি তাদের আকর্ষনও বাড়াতে পারবেন আর জেতা ছাড়া শুধু এজন্যই যদি চ্যালেঞ্জ ছুরেন তবে আপনার উদ্দেশ্যকে সবাই সাধুবাদ জানাবে এবং বুদ্ধিমানও বলবে, কেউ ই বোকার মত বলবে না যে, অবাংগালীদের মাঝে এই চ্যালেঞ্জ ছুরা অবিচারকের কর্ম হয়েছে ঠিকই একই ভাবে ঈশ্বরেরও মানুষকে এই চ্যালেঞ্জ ছুরেছিল জিতার উদ্দেশ্য নয় বরং কুরান শিক্ষার উদ্দেশ্য ছুরেছিল। তাছারা আপনি নিচে সুরা নাসের মত একটি ঘাস মার্কা যে অহেতুক একটি ছন্দ মিলিয়ে ছরা তৈরী করেছেন এতে বুঝা যায় আপনার কাব্য আর সাহিত্যিক জ্ঞান কতটুকু? আসলে কুরানের আয়াত আর সুরা হল কবিতার ন্যায় ছন্দময় এমন এক ধরনের ঈশ্বরের বানী যেখানে শুধুই শব্দের বিন্যাসে ছন্দই থাকে না, থাকে অনেক কিছু যা আপনার জ্ঞানে না থাকলেও ততকালীন মক্কার কবিদের ঠিকই ছিল তাই তারা হার মেনে নিয়েছিল, আর ঈশ্বর শুধু মক্কার কাফেরদেরকেই এই চ্যালেঞ্জ ছুরে দেননি বরং সমস্ত মানব জাতিসহ জ্বিন জাতি সকলকে মিলেই এই চ্যালেঞ্জ ছুরেছিলেন। আর আপনি বার বার বলছেন মুহাম্মদ সাঃ কোন প্রমান দেখাননি , অথচ তিনি অসংখ্য প্রমান দেখিয়েছেন যেমন- তারা বলেছিল চন্দ্রকে দিখন্ডিত করে দেখালে আমরা বিশ্বাস করব, তখন এটি করে দেখানোর পর এমনকি চন্দ্রকে আবারও পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার পরও তারা জাদুকর আখ্যা দিয়ে চলে গিয়েছিল।
নাস্তিকঃ- ১৪শত বছর পূর্বে আরব দেশের একজন ছন্দ মিলিয়ে মানুষের নীতি-নৈতিকতা সন্মন্ধিয় কিছু কাব্য রচনা করে তাকে কাল্পনিক এক ঈশ্বরের বানী বলতে লাগল এবং তার নাম দিল কুরান আর সে নিজেকে নবী পরিচয় দিতে লাগল ফলে তখনকার সমাজে কিছু বোকা মানুষ তার অনুসরন করতে লাগল। অথচ বর্তমান যুগেও তো অনেক কবি-সাহিত্যিক, দার্শনিক-বিজ্ঞানীরা আছেন যাদের যোগ্যতাও কোন অংশে কম নয়, তারা কিন্তু মানুষের কাছে থেকে সুবিধা পাবার জন্য নিজেকে এমন আধ্যাত্যিক কেউ বলে প্রচার করেনি? তারপরেও মানুষ তাদের সম্মান করে আর তারা সকলেই মানবতার জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছেন। স্বীকার করি নবী মুহাম্মদ তখনকার যুগের একজন কবি-দার্শনিকের মত ব্যাক্তিত্ব ছিল, তাই বলে এতকাল পরেও এই আধুনিক সভ্যতার যুগেও তাকে অন্ধভাবে মানতে হবে? সেকালের লোকজন না হয় মুর্খ্য আর বোকা ছিল কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দিতে এসেও মধ্যযুগে পরে থাকতে হবে? সে কুরানে আর কিই বা লিখেছিল? বর্তমানের কবি-সাহিত্যিকগণ নীতি-নৈতিকতা সন্মন্ধিয় তার চাইতে আরও বেশি লিখেছে, ইংরেজিতে সেক্সপিয়র আর বাংলায় রবিন্দ্র নাথের ভূমিকা তার চাইতে অনেক বেশি বলে আমি মনে করি। এক রবিন্দ্র নাথ ঠাকুরই বাংলা সাহিত্যে যা দিয়েছে তা সত্যিই ভূলবার মত নয় অথচ তার নবীদের মত কোন দেবদূত বা ফেরেশতার প্রয়োজন পরেনি তারপরেও তারা মানুষকে সুপথ প্রদর্শন করে গেছে।আরব দেশের নবী যেভাবে কাব্যিক আকারে মানুষের নীতি-নৈতিকতা সন্মন্ধিয় কুরান লিখেছে এবং এর মাধ্যমে সমাজে সংস্কার করার চেষ্টা করেছে যুগে যুগে বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিকগণও একই কাজই করেছে বিশেষ করে তাদের লেখনির দ্বারা অথচ তাদের আমরা নবী মানি না তাহলে নবী মুহাম্মদকে কেন নবীর আসনে বসিয়ে পুজো করতে হবে? কবি-সাহিত্যিকগনের চাইতে তার বিশেষত্ব কোন দিক দিয়ে বেশি হল? তাছারা মানুষের নীতি-নৈতিকতা সন্মন্ধিয় বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থ কোন ফেরেশতার সাহায্য ছারাই বর্তমানের লেখকগন কিভাবে লিখতে পারছে? নবীদের মত কবি-সাহিত্যিকদেরও এমন যোগ্যতা এটাই প্রমান করে যে সে আসলে নবী ছিল না বরং তখনকার যুগের একজন কবি-দার্শনিক টাইপেরই একজন ছিল কিন্তু সে ধর্মকে পুজি করে নিজেকে নবী সাজিয়ে সমাজ সংস্কার করতে চেয়েছে মাত্র।
আস্তিকঃ- আপনার সকল কথার সারমর্ম হল কবি-সাহিত্যিকগণও কাব্যিক আকারে মানুষের নীতি-নৈতিকতা সন্মন্ধিয় নবীদের মতই বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করতে পারে তাই নবী ও তারা একই শ্রেনীর হওয়া সত্ত্বেও নবীদের মানুষ অনেক বেশি অন্ধভক্তি করে চলেছে অথচ অতিরিক্ত এই ভক্তি তাদের প্রাপ্য নয় কেননা তারা একদিক দিয়ে কবি-সাহিত্যিকদের সম-পর্যায়ের অন্যদিক দিয়ে আবার মানুষের কাছে নিজেদের নবী প্রচার করে ভন্ডামীও করেছে সুতারাং এসকল বিচারে নবীদের চেয়ে কবি-সাহিত্যিকগনই উত্তম ও সৎ ব্যাক্তিদের অন্তর্ভুক্ত। আসলে এ ধরনের চিন্তাধারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা মানবিক বা কলা নিয়ে পড়াশুনা করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের মাথায় আসতেই পারে কিন্তু এর পরিপূর্ন সদুত্তর অনেকের কাছেই পাওয়া যায় না। এখানে আমি এ ব্যাপারে ইনশাহ আল্লাহ বিস্তারিত আলোচনা করব। সাধারনত নবী-রাসুল বা অবতারগনের সাথে কবি-সাহিত্যিক, দার্শনিক এমনকি বিজ্ঞানীদেরও অনেক মিল রয়েছে আবার অনেক অমিলের পাশাপাশি তারা আসলে কিন্তু পরস্পর বিরোধী ব্যাক্তিত্ব যা একটু পরেই ক্লিয়ার হবে। আর অবশ্যই এখানে আলোচনা করা হবে এই মহাবিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস এবং মানুষের পাঠ্য বিষয়ক বিভিন্ন পুস্তক সন্মন্ধীয় আলোচনাসহ সাহিত্য, কবিতা, উপন্যাস, ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান ইত্যাদি নিয়ে যদিও তারপূর্বে কবি-সাহিত্যিক ও অবতারগণ সন্মন্ধেও জানতে হবে। সাধারণত কবি-সাহিত্যিক, দার্শনিক ও বিজ্ঞানীগন সর্বদাই বিভিন্ন বই-পুস্তক হতে জ্ঞানার্জন করে থাকে যদিও কেউ কেউ সরাসরি বিদ্যালয়ে না গিয়ে ঘরে বসেই শিক্ষা অর্জন করে শিক্ষক বা গুরু-ওস্তাদের নিকট কিন্তু নবী মুহাম্মদ সঃ হতে শুরু করে ঈসা মুসা আঃ গৌতম বুদ্ধ এবং রাম কৃষ্ণ এর মত মহাপুরুষগনের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই ছিল না বিশেষ করে শেষ নবী মুহাম্মদ সঃ এমনি নিরক্ষর ছিলেন যে ইচ্ছে থাকলেও কখনই কোন বই-পুস্তকাদি পড়া সম্ভব হত না। ……। ইনশাহ আল্লাহ(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১:২৬