ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল খুবই ছোট একটা ঘটনা থেকে । কুরবানী ঈদের কয়েকদিন আগে পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ সচিবের চেম্বার থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি সম্বলিত একটি ব্রিফকেস হারিয়ে যায় । তাতে গরুর সংক্রামক রোগ “ফুট এন্ড মাউথ” সম্পর্কে আসন্ন মহামারীর আভাস দেওয়া হয়েছিল । ব্রিফকেস হারানোর ব্যাপারটা টের পেয়ে সচিব খয়রাত খাঁ সাহেবের গোস্ত খাওয়া ব্যাতিরেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিল । কারণ ঐ ব্রিফকেসে থাকা ইনফরমেশন ফাঁস হয়ে পড়লে ঈদের আগে আগে গরু ব্যাপারীদের ১২টা বেজে যাবে । তখন তারা মন্ত্রীকে কথা শোনাবে, আর মন্ত্রী সচিবকে বাঁশ দেবেন । কাজেই খায়রাত খাঁ সাহেব ব্রিফকেস চুরি হওয়ার ব্যাপারটা বেমালুম চেপে গেলেন ।
ঐদিকে, ঐ ব্রিফকেস চুরি করেছে যেই চোর তার নাম লিকুইড পাটোয়ারী(কিভাবে চুরি করা হইসে সেটা আমি বলব না, শুধু শুধু পাঠকদের স্বভাব খারাপ কেন হতে দিব আমি?) । পাটোয়ারীর ইচ্ছা ছিল এই গুরুত্বপূর্ণ কনফিডেনশিয়াল(মানে যে শিয়াল অপরাধ করে জীবিকা নির্বাহ করে) তথ্য দিয়ে গরুব্যাবসায়ীদেরকে ব্ল্যাকমেল করবে । কিন্তু তার কপাল মন্দ, পথের মাঝেই ছিন্তাইকারীর কবলে পড়ে লিকুইড । তার চোখে সলিড মলম দিয়ে নথির বাক্স নিয়ে ছিনতাইকারীরা চম্পট দেয় । কিন্তু ব্রিফকেস খোলার পর অশিক্ষিত ছিনতাইকারিরা কাগজপত্রের বিষ্ফোরণমূল্য বুঝতে পারল না । মেজাজ খারাপ করে তারা বড় রাস্তার মাঝখানেই ব্রিফকেস ফেলেই চলে গেল । দিনে-দুপুরে বিশাল রাস্তার মাঝখানে মালিক ছাড়া একটি ব্রিফকেস সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করল । কিছু সময় গুজব ছড়িয়ে পড়ল, এই ব্রিফকেসে বোম প্লান্ট করে যাওয়া হয়েছে । পুরো দেশে এই খবর দাবানল……না না দাবাপাইপের মত ছড়িয়ে পড়ল । তারপর কিছুক্ষণের মাঝেই RAB-পুলিশের গাড়িতে পুরো এলাকা সয়লাব হয়ে গেল । বোম স্কোয়াড পাঠানোর সিদ্ধান্ত হল ব্রিফকেসটির কাছে । বিস্ফোরক এক্সপার্টরা পরিবার-পরিজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ব্রিফকেসটির কাছে গেল । ব্রিফকেস খুলতেই কিছু কাগজপত্র দেখতে পেয়ে সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচল । কিন্তু সেই কাগজপত্রের লেখা পড়েই সেই ছেড়ে দেওয়া হাঁফ শুধু পুরো নয়, পুরোপুরি চারগুণ হয়ে ফেরত এল । ব্রিফকেসের কাগজপত্র যা জানাল তাতে গরু ব্যবসায়ীরা তো বটেই, পুরো দেশের মানুষ একসাথে “চোদ” হয়ে গেল । বেশিরভাগ মানুষ গরু কিনার চিন্তা বাদ দিল ।
গরু ব্যবসায়ীরা দেখল, এত মহা বিপদ! তাই নিরুপায় হয়ে তারা চোখের জল গোবরে ফেলে তাদের গরু কমদামেই বেঁচা শুরু করল । যে গরুর দাম ৪ লাখ হওয়ার কথা তা দেড় লাখে বিকে গেল, যে গরুর দাম দেড় লাখ তা ৫০ হাজারে বিক্রি হল, যে গরুর দাম ৫০ হাজার তা ২০ হাজারে বিক্রি হল……আর যে গরুর দাম ২০ হাজার সেগুলো তাদের মালিকেরাই কোরবানী দিয়ে দিল ।
এক পর্যায়ে দেখা গেল, যেখানে “ফুট এন্ড মাউথ” আতঙ্কে গরু কেনা একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, সেখানে যারা যারা কোরবানী দিবে বলে প্রস্তুতি নিয়েছিল তারা তো কিনেছেই……এমনকি যারা টাকা-পয়সার সংকটে গরু কিনবেনা বলে ঠিক করেছিল তারা পর্যন্ত গরু কিনে বসেছে! এই অবস্থা দেখে দেশের তথাকথিত নীতিনির্ধারকরা(পড়ুন, আবাল-বাচাল-টাকলু-কালু-খাটাশ-চাপাবাজ-চাটার-কুত্তাসমগ্র ও পালের গোদা) সবাই গদগদ হয়ে বলতে লাগল, “দেশের জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কেমন বেড়ে গেছে দেখেছেন?”
এত এত গরু, আর তাদের অনেক অনেক গোস্ত খেয়ে খেয়ে দেশে “ফুট এন্ড মাউথ”এর বদলে মহামারী আকারে “কষা”র প্রাডোর ভাব……ইয়ে থুড়ি……প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হল । কোঁথে কোঁথে ঘরে ঘরের বাথরুম অনির্দিষ্ট কালের জন্য ভাইব্রেটিং মুডে চলে গেল । রাস্তাঘাটে ইতঃস্তত ভাবে ছড়ানো-ছিটানো বদনাগুলো গড়াগড়ি খেতে দেখা যেতে লাগল । একপর্যায়ে দেশে পানির অভাব দেখা দিল কারণ সবাই “পাতলা” করতে পানি খেত প্রচুর আর “পাতলা” করে পানিও নিত প্রচুর…… প্রতিটি পাটক্ষেত, ধানক্ষেত, জঙ্গল, বনাঞ্চল, লেক, নদী-নালা, খাল-বিল দুর্গন্ধে ওয়াক-ওয়াক করতে লাগল । নাকে কাপড় বেঁধে চলাফেরা করতে শুরু করল সবাই, কিন্তু সেটাও কয়েকদিন পর অসম্ভব হয়ে দাঁড়াল কারণ পানির অভাবে কাপড় ধোয়া যাচ্ছে না……নাকে মুখে বাঁধলে আগেই উলটানো নাড়ি-ভুড়ি আবার সোজা হয়ে যেতে চাইছে । এত গন্ধের কারণে একপর্যায়ে সবার নাক ফুলে যেতে শুরু করল ।
একপর্যায়ে গন্ধের পঙ্খীরাজ ভারতেও চলে গেল । দাদাবাবুরা আশঙ্কা করে বসলেন বাংলাদেশ বুঝি ভারতের বিরুদ্ধে পরমাণু যুদ্ধ ঘোষণা করে বসেছে । তারা কঠিন ভাষায় আবাল-বাচাল-টাকলু-কালু-খাটাশ-চাপাবাজ-চাটার-কুত্তাসমগ্র ও পালের গোদা দেরকে এর পরিণাম সম্পর্কে জানিয়ে দিল । পাবলিক ততক্ষণে লিক করতে করতে এমনিতেই অনেক অতিষ্ট ছিল, দাদাবাবুদের হুমকি পেয়ে বাংলাদেশীদের পিছনের আগুন মাথায় চলে গেল । যে যা পায় তাই নিয়ে ইন্ডিয়ার দিকে রওয়ানা দিল………একটি দল গেল ফারাক্কার দিকে……আরেকটি দল গেল গজলডোবার দিকে………পৌঁছানোর পর বিক্ষুদ্ধ বাংলাদেশীরা কিছুক্ষণের মাঝেই ভারতবর্ষের বিটলামীর নিদর্শন পুরাপুরি ডিলিট করে দিল ।