somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাসুদ রানা থ্রিলার রিভিউ- 'ব্ল্যাক স্পাইডার'(১৯৭৪)

১৬ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরীক্ষা শেষ হওয়ার কয়রকদিন পরে “আউট বই” কেনার জন্য দোকানে গেলাম । সেখানে গিয়ে উচ্চমার্গীয় বই না কিনে ২১০টাকা দিয়ে চারটা মাসুদ রানা ভলিউম কিনে আনলাম । মাসুদ রানার ভলিউমগুলো হাতে আসলে পুরনোগুলো আগে পড়া শুরু করি, কারণ ১৯৬৬ থেকে ১৯৮০ সালের মাঝে প্রকাশিত হওয়া থ্রিলারগুলো কেমন জানি ক্লাসিকের মত মনে হয় । এই সিরিজের একটা জিনিসই আমার খারাপ লাগে, সেটা হল মাসুদ রানার অতিরিক্ত নারীপ্রিয়তা । এসব বিদেশী স্পাই থ্রিলারের অনুকরণে দেয়া হলেও মনে রাখা উচিত, হাজার হোক মাসুদ রানা একটি বাঙ্গালী চরিত্র । একটি আদর্শ চরিত্র হিসেবে মাসুদ রানাকে উপস্থাপন করা যেত । কিন্তু যে কারণেই হোক, লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন তা করেননি ।

প্রথমে যে বইটা পড়েছি তার নাম “ব্ল্যাক স্পাইডার” । ১৯৭৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে এই বইটি প্রকাশিত হয় । কাহিনীর পটভূমি বাংলাদেশের ঢাকা আর ভারতের মুম্বাই । ঘটনাচক্র শুরু হয় ঢাকার মগজার এলাকার একটি কুখ্যাত হোটেল ব্যাম্বিনোতে । ২২-২৩বছরের একটি কেতাদুরস্ত মেয়ে আরতি লাহিড়ী যে কিনা আসলে একটি উদীয়মান সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সদস্য ঢাকা এসে হাজির হয় । ব্যাটম্যান সিরিজের টু ফেস হার্ভি ডেন্টের মত বীভতস দেখতে ঢাকার এক কুখ্যত অপরাধী মোস্তাককে বাংলাদেশের ধনী ব্যাবসায়ী জহিরুল হকের কাছে থেকে টাকা আদায় করার দায়িত্ব দেয়া হয় । টাকা না দিলে খুন করার নির্দেশ দেয়া হয় মোস্তাককের ভাড়াটে খুনিকে । যেই ভাবা সেই কাজ, মুক্তিপণ দাবি করা হল ।

জহিরুল হকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মাসুদ রানা টাকা চাওয়ার খবর জানতে পেরে খবরটা নিয়ে যাতে বেশি হইচই না হয় সে পরামর্শ দেয় । কিন্তু যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা স্বত্তেও জহিরুল হকের সামান্য অসত্ররকতার কারণে তিনি খুন হয়ে যান । রান খেপে উঠে । বাঘের মত অনুসরণ করতে থাক খুনী আলিবাবাকে । খুঁজতে খুঁজিতে একসময় আরতি লাহিড়ীর কাছাকাছি এসে পড়ে রানা । আরতি লাহিড়ির আত্মবিশ্বাসে চির ধরে যায় । তাড়াতাড়ি মুম্বাই ফিরে যাবার চেষ্টা করে আরতি । বাংলাদেশের আরেক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আসফ খানের ছদ্মবেশে আরতির পিছু নেয় রানা । গিলটি মিয়া আর সালমাকে নিয়ে মুম্বাইয়ে ঘাঁটি গেড়ে বসে রানা ।

আরতির ভয় ক্রমে ক্রমে আর চাপা থাকল না । প্রথমে তার পার্টনার চিরঞ্জীব জানতে পারে । আরতি তাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে বলে । কিন্তু দুনিয়েজুড়ে সম্প্রসারিত হতে থাকা সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের দুই নাম্বার ক্ষমতাশালী ব্যক্তি চিরঞ্জীব তার সাপের মত ধূর্ত, নিষ্ঠুর বসকে যমের মত ভয় করে । তাই আরতির মুখে বিদ্রোহের কথা শুনে গালাগাল দিয়ে তাকে চুপ থাকতে বলে চিরঞ্জীব । চিরঞ্জীবের এই বসটিই হচ্ছে মাসুদ রানার আদি ও অকৃত্রিম শত্রু কবির চৌধুরী । ওদিকে আসফ খানের ছদ্মবেশে থাকা মাসুদ রানা কবির চৌধুরীর “এভিল লেয়ার” এ প্রবেশ করতে গেলে আটকা পড়ে যায় । আসফ খানের জন্য ১০ লাখ ডলার মুক্তিপণ দাবি করা হয় ।
এইদিকে আরতির সুস্থ জীবনে ফেরার আশা, চিরঞ্জীবের টিকে থাকার ভয়, মাসুদ রানার প্রতিশোধস্পৃহা, কবির চৌধুরীর ধূর্ততা ইত্যাদির মিশেলে এগিয়ে যেতে থাকে “ব্ল্যাক স্পাইডার” এর কাহিনী । রানার আসল পরিচয় একদম শেষ মূহুর্তে টের পায় কবির চৌধুরী । রানা ও অন্যদেরকে বন্দী করে চলে যায় পাগল বিজ্ঞানী । অদ্ভুতভাবে একের পর এক মারা যেতে থাকে আটককৃতরা । বহু কষ্টে বেঁচে বেড়িয়ে আসে রানা, আরতিকে পুলিশের কাছে না ধরিয়ে সুস্থ জীবনের ওয়াদা করিয়ে নেয় ।

কাহিনীর শেষ দেখানো হয়েছে মাসুদ রানা ও কবির চৌধুরীকে সামনাসামনি দাঁড় করিয়ে রেখে । কবির চৌধুরীর কোন পরিস্কার পরিণতির কথা বলা হয়নি । শুধু বলা হয়েছে, “………গুলি করল রানা……” এইটুকুই :|

থ্রিলারটি মোটামুটি উপভোগ্য । অনেকেই নিশ্চয়ই পড়ে ফেলেছেন । যারা পড়েননি তারা সময় কাটানোর জন্য পড়ে দেখতে পারেন । ভালোই লাগবে ।
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×