somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সালমান স্মরণেঃ তাঁর শেষ ফিল্মগুলো

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(এই পোস্ট সালমান শাহের মৃত্যুর মাসে দেয়ার ইচ্ছা ছিল । কিন্তু লেখার সময় পাই কি না পাই সে চিন্তায় আগেই লিখে ফেলেছিলাম লেখাটি । জুন মাসে লেখা এই সিরিজটি আজ একসাথে পোস্ট করে দিলাম । )


নব্বই দশকের নিয়মিত সিনেমা দর্শকরা বলেন, সেই সময় নাকি সালমান শাহের একটা সিনেমা হলে আসলে মিনিমাম ৩-৪ সপ্তাহ একটানা চলতই । এমনও রেকর্ড নাকি আছে তিনমাস হাউস্ফুল চলার পর পরে হল থেকে নামিয়ে কিছুদিন পর আবার ঐ সিনেমা চালালে আবার ১ মাস হাউসফুল । একই সিনেমা একই সাথে দুইটা সিনেমা হলে রিলিজ দেয়া হলেও নাকি দর্শকের ঢল কমত না । কিন্তু এখন সেই সালমানও নেই, সেই আমেজও নেই ।
সালমানের শেষদিকের ফিল্মগুলো নিয়ে তেমন কোন আলোচনা হয় না । আমার কাছে ব্যাপারটা একটা রহস্যের মত ছিল । তাঁর জীবদ্দশায় মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বশেষ সিনেমা ছিল “স্বপ্নের পৃথিবী” । প্রেম-ভালবাসা, নাচ-গান, ড্রামা, একশন মিলিয়ে সবদিক দিয়েই পুরোপুরি বাণিজ্যিক ছবি ছিল এটি । এর পরের প্রায় প্রতিটি সিনেমায় অদ্ভুত কিছু না কিছু ছিলই ।
১৯৯৬ এর সেপ্টেম্বরে সালমান শাহের মৃত্যুর পর মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বপ্রথম সিনেমা “সত্যের মৃত্যু নেই” । এই ফিল্মটা যদিও আমার ভাল করে তেমন একটা দেখা হয়নি তবুও এটুকু জানি যে সিনেমাটিতে সালমানের অভিনীত “জয়” চরিত্রটিকে মিথ্যা খুনের মামলায় আসামী হিসেবে দেখানো হয়েছিল । এবং ছবিতে জয়ের ন্যায়পরায়ণ মা(শাবানা) ছেলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যাওয়ায় ফাঁসির আদেশ দেন । এরপর জেলে সালমানের দুর্দান্ত অভিনীত “চিঠি এল জেলখানাতে……” গান দেখে অশ্রুসজল হয়ে পড়ে সদ্যমৃত নায়কের ফ্যানরা । এই সিনেমাতে নাকি ফাঁসির আগে গোসল করানোর একটি দৃশ্যও নাকি আছে । আপনারা যারা যার সিনেমাটি হলে গিয়ে দেখতে পেরেছেন তারা একটু কষ্ট করে ঐ সময়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করুন প্লিজ……এই সিনেমাটিতে দেখানো হয়েছে জয়(সালমান) এর চেয়ে তার ভাই রানার প্রতি মায়ের বেশি খেয়াল । রানা ব্যারিস্টারি পাশ করেছে শুনে বাবা আলমগীর সালমানকে বলেন, “থ্রি চিয়ার্সটা তোমার জন্য করতে পারলে আরো বেশি খুশি হতাম……” এই শুনে সালমান অভিমানী মন্তব্য করে বলে তোমরা রানার কাছ থেকেই বেশি আশা করেছ আর তাই পেয়েছ……এই বলে একটু আগে ইংরেজী একটা ছড়া বলে খুশি মনে সাইকেল চালিয়ে বাসায় ঢোকা সালমান কাঁপা কাঁপা গলায় ঐ একই রাইম বলে সাইকেল কাঁধে নিয়ে উপরে উঠে যায়……আমি অবাক হয়ে বসে ভাবতে থাকি, “এইটা আমি কোন মাত্রার এক্টিং দেখলাম!!!”

এর পরের মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি “জীবন সংসার” । এই মুভিতে আমার তেমন কোন অসঙ্গতি চোখে পড়েনাই । তবে মনে পড়ার মত একটা জিনিস বলতে পারি । শাবনূর সালমানকে ইমোশনাল ব্ল্যাক্মেল করার জন্য বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করার নাটক করে । এমন সময় সালমান ব্যাকুল হয়ে নিজের করা “মদ্যপ” নাটকের জন্য বারবার কৈফিয়ত দিতে থাকে । নায়ক নায়িকার মৃত্যু যাতে না হয়, সেইজন্য ব্যাকুল হয়ে আছে অথচ নায়ক নিজেই আর নেই……জানি না সিনেমা হলের দর্শকদের কেমন লেগেছিল ।

এর পরের ছবি “মায়ের অধিকার” । এই মুভিটির সবচেয়ে বড় অদ্ভুত অসঙ্গতি হল এক দৃশ্য থেকে আরেক দৃশ্যে সালমানের চুলের স্টাইল । ছোট চুলের সালমান ক্যাপ পড়ে ফাইটিং করছে অথচ একটু পরেই দেখা যায় তাঁর ববি দেওলের সমান চুল! মনে হয় এই সমস্যাটা সালমানের সিডিউলের কারণে হয়েছে । এরপর সিনেমাটির বেশ কয়েকটি জায়গায় এমন অসঙ্গতি দেখা গেছে । বাড়িতে ঢোকার সময় চুল একরকম, বাড়িতে ঢোকার সময় চুল আরেক রকম । যাই হোক, সিনেমাটির শুটিং-ডাবিং সালমান কোনক্রমে শেষ করেছিল বলেই আমার ধারণা । সালমানের সাথে হুমায়ুন ফরিদীর মামা-ভাগ্নে কেমিস্ট্রি দারুণ জমেছিল । এসব এখন পুরোপুরি ইতিহাস!......

এরপরের ছবি “চাওয়া থেকে পাওয়া” । সিনেমাটা দেখতে তেমন একটা ভাল লাগেনি । একারণে শেষ পর্যন্ত দেখার ইচ্ছাও হয়নি । সালমান ছবিটিতে বেপরোয়া প্রেমিকের রোলে অভিনয় করেছিলেন । এই মুভিতে দর্শক এক নতুন সালমানকে আবিস্কার করে । যদিও এই সালমানকে আমার তেমন একটা পছন্দ না……কারণ এসমস্ত হতাশাপূর্ণ একটিং দেখলে মানুষটার দুর্ভাগ্যের কথাই বেশি মনে পড়ে । মুভিটি সম্পর্কে আপনাদের কোন অভিজ্ঞতা থাকলে বলতে পারেন ।

১৯৯৭ সালের ১৮ এপ্রিল মুক্তি পায় “প্রেম পিয়াসী” সিনেমাটি । ছবিটির কাজ অসমাপ্ত ছিল । ছবিটির একটা গানেও সালমান অংশ নিতে পারেননি । গানের দৃশ্যে সালমানের ডামি ব্যবহার করা হয়েছে । এমনকি পুরোপুরি শুটিং ও শেষ হয়নি । স্টাইলিশ সালমান তো ছিলেনই, আর সেইসাথে ছিল নায়ক-নায়িকার চিরাচরিত ব্যাক্তিত্বের সংঘাত । বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, “প্রেমপিয়াসী” ছবির ডাবিং এর কিছু অংশ ছিল সালমানের শেষ চলচ্চিত্র সম্পর্কিত কোন কাজ । সিনেমাটা দেখতে গিয়ে দেখি, যেই অংশে সালমানের কণ্ঠ শেষবারের মত শোনা যায় সেই অংশটি কিছুটা হলেও কমিক । শাবনূরের রাগী রাগী কথা বেপরোয়া প্রেমিক সালমানের প্রেম ভাঙ্গাতে পারছেনা এবং সালমানের এক একটা চটুল কথা নায়িকার গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে । এখন প্রশ্ন, ডাবিংটা যেহেতু অভিনয়ের একটা অংশ তাহলে ধরে নেয়া যায় এই অংশের ডাবিং হওয়ার সময় চটুল মেজাজে থাকাই স্বাভাবিক । এফডিসির সাউন্ড কমপ্লেক্সে এই দৃশ্য থেকেই সালমান-সামিরার দাম্পত্য কলহ নতুন করে শুরু হয়েছিল? কে জানে? “প্রেম পিয়াসী” ছবিটিতে সালমানের শেষ দিকের অভিনয় দুর্দান্ত ছিল । সিনেমাটির শেষে নায়ক-নায়িকা দুইজনকেই সুইসাইড করতে দেখানো হয়েছে ।
(চলবে)



"প্রেম পিয়াসী" ছবিতে সালমান


খুনসুটিময় সেই অংশটি


স্ট্রাইপ টি-শার্ট পরা লোকটি সালমান নয়, কারণ কোনভাবেই মুখ ভালভাবে দেখানো হয়নি.........


এরপরে ১৯৯৭ সালের মুক্তি পায় “স্বপ্নের নায়ক” ছবিটি । মুভিটিতে সালমানের স্টাইল বাংলা সিনেমার জন্য ছিল একেবারেই অন্যরকম । যদিও প্রথমে গরীব ঘরের মেধাবী সন্তান হিসেবে দেখানো হয়েছিল সালমানকে, কাহিনীর পরের দিকে সালমানকে ভিলেন এটিএম সামসুজ্জামান আর নাসির খানের ষড়যন্ত্রে ফেঁসে যেতে দেখানো হয় । বড়লোকের বিদেশ ফেরত ছেলে হিসেবে ধোঁকার খেলা খেলতে নিরুপায় হয়ে সালমান শাবনূরের বাড়িতে আসে । সালমানের পনিটেইল চুল, গোল-রিমের চশমা, ছোট হ্যাট, কন্টাক্টলেন্স দর্শকের আফসোস কেবল বাড়িয়েই দিয়েছিল । সালমানের এই ডিফরেন্ট লুক প্রথম ভালোভাবে দেখা গিয়েছিল “চাওয়া থেকে পাওয়া” মুভিতে । আর এমনিতে “তোমাকে চাই” মুভিটির গল্পের অংশে সালমানের ছোট চুল থাকলেও “তোমাকে চাই” ও “কনগ্রাচুলেশন এন্ড সেলিব্রেশন” গানটিতে আরো আধুনিক সালমানকে আবিস্কার করে দর্শক । অনেকে হয়ত আগামী সিনেমাগুলোতে সালমানের এই সাজ আরো ভালভাবে দেখতে পারবেন বলে মনে মনে রোমাঞ্চিত হচ্ছিলেন । এ থেকে স্পষ্ট হয়, নিজের সেলুলয়েড এপিয়ারেন্স নিয়ে সালমান এক্সপেরিমেন্ট করা শুরু করে দিয়েছিলেন মাত্র যা তাঁর সময়ের কোন অভিনেতাই(বলিউড, হলিউড যাই বলুন) করে দেখাতে পারেননি । কিন্তু তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার আগেই, সব কিছুর মায়া কাটিয়ে সালমান অন্য দুনিয়ার বাসিন্দা হয়ে যান । তারই ধারাবাহিকতায় “স্বপ্নের নায়ক” মুভিটিতে সালমানের চরিত্রটির মৃত্যু ঘটিয়ে আমিন খানকে দিয়ে সিনেমাটি শেষ করা হয় ।

১৯৯৭ সালের ১৮ই জুলাই মুক্তি পায় “শুধু তুমি” ছবিটি । ২ঘণ্টা ২৫মিনিটের এই মুভিটিতে সালমানের উপস্থিতি খুবই কম । নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, সিনেমাটি হলে দেখতে গিয়ে বিপুলসংখ্যক দর্শক সালমানের ডামিকে দেখে হতাশ হয়েছেন এবং আগামী বছরগুলোতে সালমান ছাড়া ইন্ড্রাস্টির যে কি দশা হতে পারে তা কল্পনা করে মনে মনে শিউড়ে উঠেছেন । তারপরও অনেকে হয়ত সিনেমাটি মনে চাইবেন কিছু কারণে । সিনেমাটি আমি মনে রাখব কিছু বিশেষ কারণে ।

আমি “শুধু তুমি” মুভিটি দেখেছি খুব সম্প্রতি, হুমায়ূন ফরিদী মারা যাওয়ার কিছুদিন পর । সিনেমার শুরুতে দেখানো হয় খাটিয়ায় করে হুমায়ূন ফরিদীকে কবর দিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আমির চাকলাদার(হুমায়ূন ফরিদী) এর কর্মচারীরা সবাই কান্নাকাটি করছে । লাশ কবর দেয়া হল । লাশ কবর দিয়ে কেউ চলে না গিয়ে সবাই অপেক্ষা করছে কিছু একটার জন্য । এমন সময় দেখি আচমকা কবরে একটা বিস্ফোরণ মত কিছু একটা হল । মাটি, কাফন(এইখানে একটা ভুল আছে, কাফন ধবধবে সাদা, কিছু মাটি মিশায়ে রাখা উচিত ছিল) এইসব বিদীর্ণ করে আমির চাকলাদার ওরফে হুমায়ূন ফরিদী কবর থেকে উঠে এসে বলতে থাকেন, “অসম্ভব!......জ্যান্ত অবস্থায় কবরের কবরের ভিতর থাকা…(নাকের ফুটো থেকে তুলো বের করে)…একদম অসম্ভব……” পাঠক, ল্যাপটপের সামনে বসে থাকা আমার মনের অবস্থাটা ভাবুন একবার!


"শুধু তুমি" সিনেমার স্টার্টিং

সালমান যেহেতু সিনেমাটির বেশিরভাগ অংশে অনুপস্থিত কাজেই এই মুভিটির প্রাণ ছিল হুমায়ূন ফরিদীর কৌতুক মেশানো খল-চরিত্র । এই মুভিতে সালমানের নায়িকা ছিল শামা, এই সিনেমা দিয়ে তার অভিষেক হয়েছিল । পরবর্তীতে জাহিদ হাসানের সাথে এই শামার একটি সিনেমা হয়েছিল । চলচ্চিত্র অভিষেকের দুই বছরের মাথায় মেয়েটি বখে যায় । ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে রহস্যজনক কারণে মদ্যপ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে শামা । সেই হিসেবে বলা যায়, “শুধু তুমি” সিনেমাটির নায়ক, নায়িকা, ভিলেন, কৌতুক অভিনেতা কেউই বর্তমানে বেঁচে নেই । এ হিসেবে ঢালিউডের একটি অদ্ভুতুড়ে সিনেমার নাম “শুধু তুমি” ।


শুধু তুমি ছবিতে সালমান ও শামা

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকালে নাকি সালমানের “তুমি শুধু তুমি” সিনেমার সেটে যাওয়ার কথা ছিল । সেদিন সেটে গেলে হয়ত কাজের চাপে সালমানের মন খারাপ ভাবটা দূর হয়ে যেত । এভাবে চলে যেতেন না তিনি । কিন্তু সেদিন বেলা এগারোটার দিকে সালমান তাঁকে ডিস্টার্ব না করার কথা বলে রুমে চলে যান । তারপরের কাহিনীটা তো সবার জানাই আছে । পরে "তুমি শুধু তুমি" মুভিটা রিয়াজ ও অমিত হাসানকে দিয়ে শেষ করা হয় । (তথ্যটি দিয়েছেন ব্লগার হাবিবউল্ল্যাহ)

নায়কের মৃত্যুতে এক অভূতপূর্ব সমস্যায় পড়েন নির্মাতারা । এজন্যই বোধহয় এই সিনেমাতে হুমায়ূন ফরিদীর এত প্রাধান্য । ফরিদীর ডায়লগগুলো মনে রাখার মত ছিল । সিনেমার শেষে হুমায়ূন ফরিদী আত্নহত্যা করার আগে বলে, “সাইজটা বুঝিনাই……আমি চাকলাদার আইজ পর্যন্ত সারেনডার করতে শিখিনাই………আমি সারাজীবন আমার মনের সব ইচ্ছা পূরণ করসি……কিন্তু একটা ইচ্ছার কথা সারাজীবন মুখে বলসি……তা পূরণ হয়নাই……আইজ তা পূরণ হবে……একটা গুলি কইরা নিজের মাথার খুলিটা উড়ায়ে দিমু……”



১৯৯৭ সালের ১ আগস্ট সালমানের “আনন্দ অশ্রু” মুক্তি পায় । মুভিটিতে সালমান বড়লোকের সংস্কৃতিমনা তরুণ খসরু দেওয়ানের রোলে অভিনয় করে । মুভিটিতে সালমানের ডাবিং এ কিছুটা সমস্যা ছিল বোধহয় । কারণ একটা সময়ে মনে হয় আমি খল অভিনেতা ডনের গলা শুনেছি । একারণে মুভির প্রথম দিকে কেমন জানি অদ্ভুত অদ্ভুত লাগছিল সব কিছু । যাই হোক, এরপরে ভিলেন দেওয়ান(হূমায়ূন ফরিদী) এর ষড়যন্ত্রে খসরুকে পাগল বানিয়ে দেওয়া হয় । এরপরে শুরু হয় আসল মুভি । মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তরুণের রোলে সালমানের অভিনয় অবাক হয়ে যাওয়ার মত ছিল । “আমি দেওয়ানগঞ্জ দৌড়ে গিয়ে পান্তা ভাত খাব……” এইরকম একটা ডায়লগও ছিল বোধহয় । একপর্যায়ে খসরুকে পাগলা গারদে নিয়ে যাওয়া হয় । মনে হয় নির্মাতাদের নায়ককে নায়িকার সেবায় সুস্থ করে তোলারই পরিকল্পনা ছিল । কিন্তু সালমানের মৃত্যুতে নায়ক-নায়িকার ট্রাজিক মৃত্যু দিয়ে শেষ করা হয় । সিনেমাটির “তুমি আমার এমনই একজন……” ও “তুমি মোর জীবনের ভাবনা……” গান দুটি অল টাইম ক্লাসিক বলে আমার মনে হয় । “আনন্দ অশ্রু” সিনেমায় অসাধারণ অভিনয়ের জন্য সালমান জাতীয় পুরস্কারও পায় ।

১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তি পায় সালমানের সর্বশেষ মুভি “বুকের ভিতর আগুন” । মুভিটিতে সালমানের অভিনয়ের কিছুটা আড়ষ্টতা আছে বলে মনে হয়েছে আমার । হয়ত সেই সময়ের মানসিক চাপের কারণে এমনটি হয়ে থাকতে পারে । “বুকের ভিতর আগুন” সিনেমাটি অভিনয়ের জন্য তেমন উল্লেখযোগ্য না হলেও সালমানের মৃত্যুর কারণে কাহিনীতে অভিনব এক পরিবর্তন আনেন নির্মাতারা । মুভির প্রথমার্ধে আগুন(সালমান?)কে নায়িকার ভাইরা মেরে ফেলার চেষ্টা করে । আগুনের মুখ পুড়িয়ে দেয়া হয় । ডাক্তাররা আগুনের মুখে প্লাস্টিক সার্জারি করে । এক পর্যায়ে আগুনের মুখের ব্যান্ডেজ খুলে দেয়া হয় । তখন থেকে “আগুন” চরিত্রে রুপদান করতে থাকে পরবর্তীকালে দুই বাংলায় সমাদৃত অভিনেতা “ফেরদৌস” । আগুন(ফেরদোউস) নিজের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার কথা বুঝতে পেরে মুষড়ে পড়ে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত অবশ্য হ্যাপি এন্ডিং ই হয় । মুভিটিতে রাজীব ইতিবাচক রোলে অভিনয় করেছিলেন । কিন্তু তার ছেলে দুইজন(মিশা-ডন সম্ভবত) এর নাম ছিল জয়-বিজয়, এই জিনিসটা আমার দৃষ্টিকটু লেগেছে । কারণ এই দুটি নাম হল রাজীবের পানিতে ডুবে মারা যাওয়া দুই ছেলের নাম । এছাড়া এই মুভিতে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না ।

অনেকে ভাবেন, সালমান কেবল রোমান্টিক নায়কের চরিত্রেই দুর্দান্ত ছিলেন । কিন্তু “বিচার হবে” তে গ্রামের সাধারণ যুবক থেকে হাল-ফ্যাশানের তরুণের রোলে, “কন্যাদান” মুভিতে পরিণত একটি রোলে, “আশা ভালোবাসা” ছবিতে গায়কের রোলে, “বিক্ষোভ” ছবিতে প্রতিবাদী ছাত্রের রোলে সহ কয়েকটি ছবিতে রোমান্টিক ধারার বাইরে গিয়েও অভিনয় করেছিলেন সালমান । “প্রেমপিয়াসী” ছবিতে মিথ্যা বলে নায়িকাকে প্রত্যাখ্যান করার অংশটুকুতে বুঝিয়ে দিয়েছেন, নেগেটিভ রোল করলে সেখানেও মাত করে দিতেন তিনি । টিভি নাটকেও সমান পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন । ১৯৯৬ সালের পরে ১৬ বছর পার হয়ে যাচ্ছে, এমন ভার্সেটাইল অভিনেতা আর পায়নি বাংলাদেশ ।




সালমানের সাথে প্রথম যেভাবে পরিচয়ঃ


আজ থেকে প্রায় ১৪-১৫ বছর আগের কথা । তখন ভিসিআরে ফিল্ম দেখার চল ছিল । একদিন ভিসিআরে এক স্মার্ট নায়ককে(তখন অবাক হইনাই, আমার মনে হয় ধারণা হয়েছিল বাংলাদেশের নায়কেরা এমনই হয়!) দেখি কার ওপর অভিমান করে যেন নিজের হাত টেবিলগুলোর ওপর রেখে আংগুলগুলোর মাঝখান দিয়ে বিপজ্জনকভাবে চাকু চালাচ্ছে । বাইরে নায়িকা দরজা ধাক্কাধাক্কি করছে । এক পর্যায়ে আঙ্গুল কেটে রক্ত বেরুলো সেই সাথে নায়িকা ভিতরে এসে আঙ্গুল বেঁধে দেয় । এই মুভিটা দেখার সময় আব্বুর কথায় জানতে পারি এই নায়ক নাকি মারা গেছে! যদিও আমি ফ্যান ছিলাম না, তবুও আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয়নি, কারণ ওইটুকু বয়সে আমি জানতাম কেবল বুড়ো মানুষেরাই মারা যায় । তরুণ নায়কের মৃত্যুর খবরে আমি অবাক হয়েছিলাম । কিন্তু সন্দেহ একটা ছিলই, এভাবে কেউ মরে নাকি??? জগতের বাস্তবতার অন্ধকার দিক আমার কাছে তখন উন্মোচিত হচ্ছিল । সোনার ডিম পাড়া হাসের গল্পের মতন স্বার্থান্বেসী মানুষেরা সালমানকে দুঃখজনক পরিণতির দিকে ঠেলে দেয় ।

১৯৯৮-১৯৯৯ সালের দিকে "বিয়ের ফুল" নামে একটি মুভি রিলিজ পায় । সেখানে "ঐ চাঁদ মুখে যেন লাগে না গ্রহণ......" গানটিতে শাকিল খানের আবেগী অভিনয় দেখে একইসাথে কনফিউজ ও আশাবাদি হয়ে যাই । আমি বলতে থাকি, এই তো সালমান!......তবে সবাই না বলে সে মারা গেছে!......কিন্তু কালক্রমে শাকিল খানও সেভাবে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেনাই এবং অল্প কিছুদিনের মাঝেই আমার ভ্রান্তি দূর হয় ।
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:২১
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×