somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই রিভিউ- "সিনেমাওয়ালা"-সমরেশ মজুমদার

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমরেশ মজুমদারের লেখার সাথে পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য সাহিত্যিকদের লেখা তুলনা করলে কিছু লক্ষণীয় পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাবে । অন্যরা যেখানে প্রায় সাধারণভাবে উপন্যাসের চরিত্রগুলোর জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে যান সেখানে সমরেশের লেখনীতে পাওয়া যায় থ্রিলারধর্মী আবহ । কাহিনী যা নিয়েই হোক না কেন সমরেশ রোমাঞ্চ মিশিয়ে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করেছেন । সম্প্রতি তাঁর “সিনেমাওয়ালা” বইটা পড়ার সুযোগ হয়েছে । সেটা নিয়েই আজ কথা বলব……থুড়ি, লেখব……

কাহিনীর শুরুতে মিলন নামের একজন পরিচালকের নতুন ছবির জন্য নায়িকা খুঁজছেন । প্রযোজক বলছেন, গ্রামের সাধারণ মানুষদের মাঝে বাংলাদেশী নায়িকাদের নাকি ভাল চাহিদা আছে । কিন্তু বাংলাদেশে নাকি শুনে শুনে ডায়লগ বলে আর্টিস্টরা কলকাতায় যেখানে মুখস্ত করে বলার নিয়ম । বাইরে থেকে নায়িকা এনে মুখস্ত করালে বেশি খরচ হবে বলে নতুন নায়িকা খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ।

অনেক পরিচালক নাকি আছেন যারা অনেকদিন ধরে ছবির কাজ করে লাইম্লাইটে থাকতে চান । কিন্তু মিলন বাবু এইসব ব্যাপারে খুব নীতিবান । সংসার চালানোর মত টাকা শেষ হয়ে আসছে, ছবিটা তাই তাড়াতাড়ি শুরু করা উচিত । নায়িকা খোঁজার কাজে অনেক হেনস্তা হওয়ার পর স্ত্রীর মারফতে এমন একটি মেয়ের খোঁজ পেয়ে যান যে কিনা নায়িকার রোলে একদম মানিয়ে যাবে । পেশায় সেলসগার্ল এই মেয়েটির নাম অদিতি ।

যথাসময়ে স্ক্রিণ টেস্ট হল । দৃশ্যটা ছিল যে, টেলিফোন বাজবে এবং অদিতি গিয়ে ফোন ধরে সংলাপ উচ্চারণ করবে । ফোনের কাছে যাবার সময় কানের পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়া ঘাম মুছল অদিতি, এই ছোট্ট ব্যাপারটা দেখেই ইউনিটের সবাই নবাগতা অভিনেত্রীর ভবিষ্যত খ্যাতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গেল । যথাসময়ে সিনেমার তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল ।

অদিতি মেস ছেড়ে ভাড়া ফ্ল্যাটে উঠল । ফটোশুটে অংশ নিল । পত্রিকায় সেসব ছবি ছাপা হলে এসে হাজির হল অদিতির আগের স্বামী কমলেন্দু । একটা সময়ে অদিতির কিছু অর্ধনগ্ন ছবি তুলেছিল কমলেন্দু, সেসব নষ্ট করেনি কমলেন্দু । অদিতিকে হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করতে চায় কমলেন্দু । প্রযোজক পরিচালক ও ঘটনা জেনে ফেলেন । পরে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এত টাকা দিয়ে এসব ছবি কেনার ক্ষমতা কলকাতার কোন ফিল্মি ম্যাগাজিনের আদতে নেই । জাল পেতে কমলেন্দুকে ধরা হয় । সিনেমা শেষ হয় এবং সুপার ডুপার হিট হয় ।


জয়ন্তের মন্ত্রী পিতা জয়ন্ত-অদিতির সম্পর্কের কথা টের পেয়ে ব্যাপক ক্ষেপে যান ।
এবার শুরু হয় আসল সমস্যা এবং উপন্যাসটির কিছুটা অযৌক্তিক অংশও এখান থেকেই শুরু । প্রভাবশালী মন্ত্রীর ছেলে জয়ন্ত অভিনেত্রী অদিতিকে মনে মনে পছন্দ করে ফেলে । এইটুকু পর্যন্ত ঠিকই ছিল । অদিতির ফিল্মি ব্যস্ততা বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে জয়ন্তের সাথে সখ্যতাও । একপর্যায়ে জয়ন্তের প্রতি অনুরক্ত হয়ে ফিল্ম ক্যারিয়ার শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় অদিতি । এত তাড়াতাড়ি কোন শীর্ষ অভিনেত্রী অবসর নিয়ে নেয় বলে শুনিনি ।

সমরেশ পাঠকদের একটা সাধারণ অভিযোগ আছে যে, তিনি পুরো কাহিনীতে গাঁথুনি বজায় রেখে এমনভাবে শেষ করেন যে তা অনেকের মনঃপুত হয় না । “সিনেমাওয়ালা”তে প্রাভাবশালী মন্ত্রী ও তার সাংগপাংগদের ক্রমাগত হুমকিতেও পিছু হটে না । জয়ন্তের বাবার ক্রোধ থেকে বাঁচতে কিছুদিন দৃশ্যের আড়ালে থাকার জন্য আমেরিকার বিমানে চেপে বসে । কিন্তু কতদিনের জন্য? জয়ন্ত পরবর্তীতে কি করবে? কিছু দিন গেলেই কি অদিতি মন্ত্রীর ক্রোধ থেকে বাঁচতে পারবে??? এই সমস্ত প্রশ্নের জবাব না দিয়েই “সিনেমাওয়ালা” শেষ হয় ।

বইটি সাধারণ পাঠকদের জন্য । চলচ্চিত্রের অন্তরমহল নিয়ে আগ্রহীরাও পড়তে পারেন ইচ্ছা করলে । বইটি একবার পড়া ধরলে এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলতে ইচ্ছা করবে । উপন্যাসটি বেশিরভাগ সময় আপনার আগ্রহ ধরে রাখবেই যদি আপনি উচ্চমার্গীয় সাহিত্যের কঠিন পাঠক না হয়ে থাকেন ।

সবাইকে ধন্যবাদ ।

১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×