জেরির আর দেরি সহ্য হচ্ছেনা কিছুতেই। বাড়ির ড্রয়িং রুমের সোফার তুলতুলে গদিটাতে প্রতি রাতে আয়েস করে ঘুমায় টম। টানা প্রায় ৫ বছরের মত টেস্ট ম্যাচ খেলেও টমকে তার আসন থেকে এক চুল সরাতে পারেনি জেরি। তাদের এ টেস্ট ম্যাচে হার জিতের মধ্যেই নিহিত রয়েছে সোফায় আরাম করে নাকে তেল দিয়ে ঘুমানোর স্বত্বাধিকার। কিন্তু টেস্ট ম্যাচ হলে কি হবে, স্লগ ওভারে এখন টি-২০ এর আমেজ। টমের ফার্স্ট বলের বিপরীতে জেরির স্পিন জাদুতে বেশ জমে উঠেছে সোফাস্বত্ব হস্তগতের দুর্দান্ত লড়াই। কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান। উভয়ের মুখে একই কথা- বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সুচাগ্র মেদিনী।
কিন্তু টি -২০ এর বিশ্বায়নের এ যুগে টেস্ট ম্যাচ বড্ড সেকেলে। তাই টম আর জেরি মিলে সিদ্ধান্ত নেয়- টেস্ট ম্যাচের দিন শেষ, এখন থেকে শুধুই টি-২০ ; কিন্তু ম্যাচ আম্পায়ার সিলেকশান নিয়ে বাঁধল ফ্যাঁকড়া। টম চায় তার স্বগোত্রিয় কেউ নিক আম্পায়ারিং এর দায়িত্ব, এ লক্ষ্যে টম কৌশলে আম্পায়ার নির্বাচনের নীতিমালাকে পাল্টে ফেলে রাতারাতি। জেরি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখল। কিন্তু টি -২০ ম্যাচ কিছুতেই জেরি নতুন নীতিমালার আলোকে খেলতে চায়না। কারন অনেক দিন নরম তুলতুলে সোফায় ঘুমাতে না পেরে তার পিঠটা বড্ড ব্যাথা করছে। তাই সে চায় টম কিংবা জেরি সমাজের কেউ নয়, নিরপেক্ষ কেউ টি-২০ আম্পায়ারিংএর দায়িত্ব নিলে ভাল হয়। টম জেরিকে প্রস্তাব দিল উভয় গোত্র থেকে আম্পায়ার, থার্ড আম্পায়ার, ম্যাচ রেফারি নির্বাচিত হোক; কিন্তু মেইন আম্পায়ার হবে টম নিজেই! কিন্তু টমের এ মামা বাড়ির আবদার জেরির মোটেও মনঃপুত হল না( উল্টো মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত অবস্থা! তবে কি হবেনা ঘুমানো আর সেই তুলতুলে মোলায়েম বিছানায়?)এ দিকে টম যতই ফর্মুলার মূলা ঝুলিয়ে রাখুক, জেরি কি আর তাতে মুখ দেয়? বরং জেরিও কাউন্টার ফর্মুলা দিয়ে এ যাত্রা মুলো ভক্ষণ থেকে নিজেকে বিরত রাখে।
এ দিকে মুলোয় কাজ হচ্ছেনা দেখে টম ভয়ানক চিন্তিত। এতদিন তাকে খাওয়া দাওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হতোনা; ড্রয়িং রুমের লাগোয়া ডাইনিং থেকে পাওয়া যেত নানা পদের মুখ রোচক খাবার- কাচ্চি, পোলাও, কোর্মা , কাবাব। অথচ টেস্ট ম্যাচ সমাপ্তির দিকে হলেও টি -২০ নিয়ে জেরির সাথে এখনো কোন সমঝোতায় আসা গেল না। কিন্তু খেলার যে আর মাত্র শেষ ২৫ ওভার বাকি। ২৫ তম ওভারে এসে জয় পরাজয় নিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠল টম আর জেরি। জেরিকে চাপে ফেলতে টম শুরু করে টাইট বোলিং, একের পর এক বাউন্সারে চেষ্টা করে জেরিকে কুপোকাত করার। হঠাৎ টম সিদ্ধান্ত নেয় জেরিকে পরের তিন বল আর খেলতে দেওয়া হবেনা। মাঠে কৃত্রিম ব্ল্যাক আউটএর ফলে জেরির ব্যাটিং অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কিন্তু জেরির ঝুলিতে লুকানো আছে হ্যামিলনের বাঁশি। এ বাঁশিতে ফুঁ দিলে সমগ্র জেরি জাতি ধেয়ে আসতে পারে টমকে লক্ষ্য করে। কিন্তু এত দিনের আরাম আয়েশে টমের শরীরে বেশ চেকনাই হয়েছে, ভারি হয়েছে বপু। জেরিদের দৌড়ানি কি শরীরে আর সইবে কভু? এসব ভেবে চিন্তে ছক্কা মারা যাবে না –এই শর্তে ২৫ ওভারের শেষ পর্যন্ত জেরিকে ব্যাটিং করতে দেয় টম। জেরির দৃঢ় ব্যাটিং এর জোরে কোন প্রকার অঘটন ছাড়াই সমাপ্ত হয় ২৫ তম ওভারের খেলা। কিন্তু খেলার ফলাফল – ম্যাড় ম্যাড়ে ড্র
জেরি ভাবল, এভাবে খেলা চললে টেস্ট ম্যাচের মত টি২০- তে ও কোন ফায়দা হবেনা। অতএব, খেলতে হবে পিলো পাসিং। তাই জেরি ঘোষণা দেয়- ‘ টেস্ট ম্যাচ, টি -২০ বুঝিনা, অন্য কোন খেলা ( কিন্তু খেলাটা যে কি তা জানেনা জেরিও) দিয়েই নির্ধারিত হোক নরম সোফার মালিকানা। আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এ ব্যাপারে আলোচনা শুরু করা না হলে টমকে ড্রয়িং রুমে অবরুদ্ধ করে রাখা হবে লাগাতার ৬০ ঘন্টা!’ আল্টিমেটাম দিয়েই জেরি পিলোটা পাস করে দিল টমের কাছে। টম ও কম যায়না, আল্টিমেটামের মেয়াদ শেষ হবার আগেই –
ক্রিং ক্রিং টেলিফোন হ্যালো হ্যালো হ্যালো………..
কে তুমি কাকে চাও , বল বল বল।
আমি টম ব্ল্যাক ক্যাট জেরিকে চাই।
এখন তো লাঞ্চ টাইম, ফোন করার আর কি আর সময় পাও নাই?
অতপরঃ সন্ধ্যায় জেরিকে আবার ফোন দিয়ে টম বলে –
তুমি এস আমার বাড়ি…………
তোমায় বসতে দিব পিঁড়ি।
(ইহা একটি কাল্পনিক আষাঢ়ে গল্প, জীবিত বা মৃত কোন ঘটনার সাথে এর সামান্যতম মিল খুঁজে পাওয়া গেলে ইহা কাকতাল মাত্র)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৬