somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: দৃশ্যাবলী {পর্ব-১}

১৯ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক।
দুপুর একটা।

ক্লাস শেষ।বাইরে বেরিয়ে এলাম।
হঠাৎ সায়মা ডাক দিলো।এই।
আমি ঘুরে তাকাই।কি?
-বিকালে ফ্রি আছ?
-কেন?
-আজকে কেএফসি যাব।
আমি একটু মাথা চুলকে নিলাম।-আজকে বাদ দেয়া যায় না?
ও রেগে যায়।কোমরে হাত দিয়ে বলে, কেন?
-আরে ভাই মাসের শেষ সপ্তাহ চলে।হাত একদম খালি।
সায়মার মুখ রাগে লাল হয়ে যায়।
আমি বলি, কি?
-আমি কি খালি তোমার টাকায় খাই?আমি কখনো তোমাকে খাওয়াতে পারি না?
-তা পার।কিন্তু হঠাৎ?
সায়মা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।বুঝতে পারি ওর রাগ বাড়ছে।কিন্তু কারনটা কি?আমি কি কিছু ভুলে যাচ্ছি?
-কি?আমি আবার জানতে চাই।
-আজ কত তারিখ?
আজ কত তারিখ?ওহ শিট।আজ ২৪শে জুন।এইদিন আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল।
শিট।শিট।শিট।আমি ভুলে গেলাম কি করে?
পাশে তাকিয়ে দেখি সায়মা নেই।বাসার পথে হাটা শুরু করেছে।
-সায়মা।আমি ডাকি।
ও হাটতেই থাকে।
-এই সায়মা।
এবারও কোন জবাব নেই।
আমি ওকে কল দেই।ও কেটে দেয়।
নিজের ওপর ভয়ানক রাগ লাগে।ধুর শালা।
ওকে ম্যাসেজ পাঠাই।খালি দুটো ওয়ার্ড।সরি জান।

দুই।


সায়মার সাথে আমার প্রথম পরিচয় বাসে।আব্বুর সাথে রাগারাগি করে হাতখরচের টাকা নেয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম।এদিকে টাকা ছাড়া চলেও না।
এক বন্ধুকে বলে যোগাড় করলাম টিউশানী।বাসে করে প্রথম দিন যাচ্ছিলাম টিউশানীতে।বাসে ও আমার পাশে বসেছিল।বাইরে ছিল ব্যাপক বৃষ্টি।আমার স্টপেজ এসে গেল।
আমি ওকে বললাম,আপু শুনছেন?
ও অবাক হয়ে বলল,আমাকে বলছেন?
-জ্বি।
-আমি কি আপনাকে চিনি?
-না।
-আপনি কি আমাদের এলাকায় থাকেন?
-না।
-আপনি কি আমার আত্মীয়?
-না।
-তাহলে আমার সাথে কি কথা?
-না মানে বলছিলাম বাইরে তো খুব বৃষ্টি।
-তো?
-আমার কোন ছাতা নাই।
-তো?ছাতা ছাড়া বের হলেন কেন?
-আসলে তাড়াহুড়ায় খেয়াল করা হয়নি।
-তো?
-আমি টিউশানীতে যাব।
-যান।আমিতো আপনাকে ধরে রাখিনি।
-তা রাখেননি।কিন্তু একটা সমস্যা।
-কি?
-আমি তো ভিজে যাব।
-একদিন নাহয় ভিজলেন।
-আমাকে তো ঐ ভেজা কাপড় নিয়ে পড়াতে হবে।
-পড়াবেন।এ আর এমন কি?
-আমার আবার ঠান্ডার ধাত।বুঝতেই পারছেন ভিজলেই টনসিল ফুলবে।
-তো আমি কি করব?আমি কি ডাক্তার?
-না বলছিলাম যদি আপনার ছাতাটা আমাকে ধার দিতেন।
-আহা।শখ কত।তাহলে আমি ভিজে যাব না?
-বৃষ্টি বোধহয় থেমে যাবে।
-ফাজলামি পাইছেন?আমার ছাতা ফেরত পাব কিভাবে?
-আপনার ফোন নম্বরটা যদি দেন।
ভেবেছিলাম ও আমাকে থাপ্পড় দেবে।কিন্তু অবাক করে ও আমাকে নম্বর দিয়েছিল।অনেকদিন পর ওর কাছে কারণ জানতে চেয়েছিলাম।ও কিছু বলেনি।
শুধুই হেসেছিল।

তিন।
দুপুর ১.১০।

আববুর সাথে রাগারাগি না হলে হয়ত সেদিন সায়মার দেখা পেতাম না।কিন্তু আজকের গোলমালটাও আব্বুর জন্যই।
ঘটনা হল কয়েকদিন আগে ছিল সায়মার জন্মদিন।সারাদিন দুজন মিলে ঘুরলাম।আমি ওকে ট্রিট দিলাম।সমস্যা হল আব্বুর এক বন্ধু আমাদের দেখে ফেলল।এবং যথারীতি আব্বুকে বলে দিল।ফলাফল:আব্বুর সাথে রাগারাগি।মাথা ছিল গরম।রাতে ঘুমালাম দেরীতে।ফল: আজ সকালে ক্লাস মিস আর সায়মার সাথে গ্যান্জাম।
এসবই ভাবছিলাম।হঠাৎ দেখি শরিফ ডাকে।ওই।
-কি?
-অ্যাসাইনমেন্ট কখন করবি?
-রাতে বাসায় আসিস।
-ওকে।
শরিফ চলে যাচ্ছিল হঠাৎ ঘুরে দাড়ায়।শোন।
-বল।
-সায়মার সাথে তোর কোন সমস্যা হচ্ছে?
-কেন?
-তখন দেখলাম সায়মা একা চলে গেল।তুই এগিয়ে দিলি না।
-না।আর কিছু?
-হ্যা।
-একটু আগে তোর চাচা ফোন করেছিলেন।
-তোকে?
-হ্যা।
-কখন?
-ধর ঘন্টাখানেক আগে।
-হুম।কি বলল?
-বলল তোকে ফোনে পাচ্ছে না।
-আমি তো ক্লাসে ফোন বন্ধ রাখি।
-তোর চাচা হয়ত সেটা জানেনা।
-তাই হবে।
-তোকে কল ব্যাক করতে বলছে।
-আচ্ছা।
-গেলাম তাহলে।
-ওক্কে।
শরিফ চলে যায়।আমি চাচা মিয়ার নম্বর ঘোরাই।
-চাচা মিয়া নাকি?
-কই তুই?
-ক্যাম্পাসে?
-এখনও?
-হ্যা।মাত্র ক্লাস শেষ হল।
-তুই কিছু জানিস না?চাচার কন্ঠ বিস্ময়মাখা।
-কোন ব্যাপারে?
-তোর আব্বা স্ট্রোক করছে।এখন সিসিইউতে আছে।
-হোয়াট?মুখ দিয়ে শুধু একটা শব্দই বের হয়।
মুহূর্তে রাতে আব্বুর সাথে ঝগড়ার কথা মাথা থেকে দুর হয়ে যায়।আমি হাসপাতালের দিকে দৌড় দেই।

চলবে।
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×