somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯৭১, একজন শহীদ জুয়েল এবং আমাদের আজকের ক্রিকেটারগন

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক।

আজ এই একটু আগে দুর্দান্ত এক কাজ করে ফেলেছেন এক বাঘের বাচ্চা । দেবব্রত মুখোপাধ্যায়। ক্রীড়া সাংবাদিক, লেখক । আজ পাকিস্তানের কোচ ম্যানেজার যখন সংবাদ সম্মেলনে এসেছিল তখন হঠাত্‍ ই উঠে দাড়িয়ে যান এই তরুন । পাকিস্তানের কোচ-ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্য করে বললেন, আজ আমাদের বিজয়ের ৪০ বছর পূর্তি । তোমরা আমাদের অভিনন্দন জানাবে না?

মুহুর্তে কালো হয়ে যায় পাকিস্তানি দের মুখ ।একজন তরুণ সাংবাদিকের মুখে প্রশ্নটি শুনে কিছুটা বিব্রত হলেন মিসবাহ উল হক। আমতা আমতা করছিলেন। পাশ থেকে দলের সহযোগী ব্যবস্থাপক নওশাদ আলীর হস্তক্ষেপে পরিবেশ হালকা হয়,‘এখানে ক্রিকেট নিয়ে বললে ভালো হয়’।

কিন্তু, সংবাদ সম্মেলন শেষে ম্যানেজার উঠে দাড়ান । তিনি একজন সাবেক মেজর । ধরা গলায় বলেন, পাকিস্তান ক্রিকেট দল এবং পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এবং বাংলাদেশের সব মানুষকে বিজয়ের শুভেচ্ছা ।পাকিস্তানের একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক জান্তার মুখে কথাগুলো শোনার পর অনেকেরই বিশ্বাস হচ্ছিলো না। একজন জানতেও চাইলেন, কিসের অভিনন্দন, পরিষ্কার হলো না তো। পাকিস্তানের কোচ, অধিনায়ক এবং সহযোগী ব্যবস্থাপক ততক্ষণে চলে গেছেন। থাকলে হয়তো পাল্টা প্রশ্নের মুখে পড়তে হতো। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষ এবং ক্রিকেট দলকে তিনি যে বিজয় দিবসের অভিনন্দন জানিয়েছেন বুঝতে বাকি থাকলো না।

অপসরপ্রাপ্ত এই কর্নেল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রেসক্রসের ময়দানে ছিলেন কি না জানা নেই। ক্রিকেট দলের সঙ্গে থাকায় তাকে প্রশ্নটা করাও হয়নি। এসব আলোচনা পাড়তে যে ধরনের ঘনিষ্ঠতা দরকার হয়, তাও নওশাদ আলীর সঙ্গে গড়ে উঠেনি। তারপরেও পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি যে বাংলাদেশের মানুষকে বিজয় দিবসের অভিনন্দন দিলেন সেটাও কম নয়।


যদিও পাকিস্তান থেকে আগত জিও টিভির একজন সাংবাদিক শঙ্কা প্রকাশ করছেন, পাকিস্তানের নীতিনির্ধারক মহলে এনিয়ে প্রতিক্রিয়া হতে পারে। ওসব নিয়ে ভাবার সময় নেই বাংলাদেশের মানুষের। ১৯৭১ সালে এই দেশের মানুষের ওপর তাদের সামরিক সরকার অবৈধ ভাবে যে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিলো, তার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করলে হয়তো আরও ভালো করতেন।


দুই।

দাতমুখ খিচে একটি অভিনন্দন বার্তা দিয়েছেন মাত্র। সেই নৃশংসতার কাছে এতো খুব সামান্যই। ক্রিকেট মাঠের তাজাপ্রাণ শহীদ জুয়েলকে তো যুদ্ধের ময়দানেই নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলো পাক হানাদার বাহিনী।



শহীদ আব্দুল হালিম চৌধুরী জুয়েল।ক্রিকেট খেলতে ভালবাসতেন, তার চেয়েও বেশি ভালবাসতেন তাঁর মা কে। মায়ের নাম বাংলাদেশ। আজাদ বয়েজ ক্লাবের ওপেনিং ব্যাটসম্যান জুয়েল সময়ের তুলনায় ছিলেন ভীষণ স্টাইলিশ আক্রমনাত্মক ক্রিকেটার।পূর্ব পাকিস্তান তথা সমগ্র পাকিস্তানের সেরা ব্যাটসম্যান । মুক্তিযুদ্ধে গেরিলার ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন তিনি । আলতাফ মাহমুদের বাসায় অবস্থানকালে তিনি পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে ধরা পড়েন । পরবর্তীতে ক্যাম্পে পাকিস্তানি আর্মি তার তার দুই হাতের বুড়ো আঙুল কেটে নেয় ।১৫ ডিসেম্বর পাকিস্তানি জারজদের হাতে শহীদ হন তিনি। আমরা হারিয়েছি আমাদের একজন অকুতোভয় দেশপ্রেমিককে, হারিয়েছি একজন প্রথম সারির ক্রিকেটারকে।


তিন।

২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১। ঢাকা স্টেডিয়ামে শুরু হলো চারদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ। পাকিস্তান ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড দলের প্রতিপক্ষ কমনওয়েল্থ একাদশ। পাকিস্তানের হয়ে ইনিংস ওপেন করতে নামলেন ১৮ বছর বয়সী বাঙালি ব্যাটসম্যান রকিবুল হাসান। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের একমাত্র বাঙালি সদস্য।

পাকিস্তান দলের সব ব্যাটসম্যানের ব্যাটেই সোর্ড [তলোয়ার] স্টিকার। যা জুলফিকার আলী ভুট্টোর নির্বাচনী প্রতীক। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু একজন। তিনি রকিবুল হাসান। তিনি মাঠে নামলেন ব্যাটে জয় বাংলা স্টিকার লাগিয়ে, পাশে বাংলাদেশের ম্যাপ!


চার।

যে স্টেডিয়ামে শনিবার থেকে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান ক্রিকেট দল, সেই মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একটি গ্যালরি শহীদ জুয়েলের নামে। আজাদ বয়েজের একজন ক্রিকেট কর্মকর্তা মুস্তাক আহমেদকেও হত্যা করেছিলো হানাদার বাহিনী। পকিস্তান ক্রিকেট দল যে ভিউইং অঞ্চলে খেলার সময় বসেন তার পাশের গ্যালারিটি শহীদ মুস্তাক স্ট্যান্ড। আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া টেস্টে ১৬ ডিসেম্বরের প্রেরণা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে কিঞ্চিৎ হলেও থাকবে।

আশা করছি এই দেশপ্রেমিক ক্রিকেটারদের মত আরো অনেকেই আসবেন বাংলাদেশ দলে যাদের পারফর্ম্যান্সে আর ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানীদের কাছে পরাজয় দেখতে হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:৪৫
২৩টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×