somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চোরঞ্জিত-ইলিয়াস-সোহেল তাজের সাম্প্রতিক রাজনীতি এবং চরম ত্যক্তবিরক্ত আমি তুমি আমরা

২৩ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পোস্ট শুরু করব একটা কোটি টাকার প্রশ্ন দিয়েঃ বলুনতো দেশে পরপর তিন দিন হরতাল কেন?

বলবেন ইলিয়াস আলীর জন্য বিএনপি হরতাল করেছে।

জ্বি না। উত্তর ভুল।কারন সম্ভবত খালেদা জিয়ার নাতনি এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।বেচারির প্রিপারেশন খারাপ।এদিকে বোর্ড পরীক্ষাতো আর বুয়েট এক্সাম না যে ইচ্ছে হল আর মিছিল করে পরীক্ষা পিছিয়ে দিলাম।

তাহলে কি উপায়?

সিম্পল।নাতনি নানী গিয়ে বলল, ও নানি।প্রপারেশন খারাপ।পরীক্ষা দিতে পারতাম না।

খালেদা বলল, নো চিন্তা। হরতাল আছে না।পরীক্ষা খালি তোর না, দেশের প্রতিটা পরীক্ষার্থীর পিছিয়ে যাবে।

জানি আমার পোস্টের এমন থার্ডক্লাস স্টার্টিং দেখে অনেকেই বিরক্ত।ভাবছেন একজন মানুষকে প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে পাওয়া যাচ্ছে না।তার পরিবারের দিন কাটছে চরম উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে। লোকটাকে জীবিত খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা তার কোন গ্যারান্টি নাই আর আমি বসে বসে নিম্ন মানের জোক মারছি।

তবে সত্যি কথা হল বাংলাদেশের শোল কোটি জনগণের সবাই আজ আমরা একটা বিশাল জোকে পরিনত হয়েছি।কেননা আমরাই এসব রাজনৈতিক দল ও তাদের সমর্থকদের গালি দেই, আবার আমরাই এদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করি।তাহলে আমাদের গালির মূল্য কোথায়? আর ভোটেরই-বা মূল্য কোথায়?

প্রসঙ্গে ফিরে আসি।ইলিয়াস আলী গুম হয়েছেন বেশ কিছুদিন হল।

কেন গুম হলেন তিনি?আসুন তার কয়েকদিন আগের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ দেখে নেই।

চোরঞ্জিত আইমিন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রাজনীতি করেন প্রায় ৫৫ বছর ধরে আর আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেন '৯৬ থেকে।'৯৬-এ আওয়ামীলীগে যোগ দিলেও মন্ত্রীত্ব পাননি।আর ২০০৮ -এ এসে মন্ত্রীত্ব পাননি তথাকথিত সংস্কারবাদী হওয়ার কারনে।মন্ত্রীত্ব না পাওয়ার দুঃখে গত কয়েকমাস আগে হঠাত করেই বেফাস কথাবার্তা বলতে শুরু করেন। বাধ্য হয়েই শেখ হাসিনা নতুন রেল মন্ত্রনালয় গঠন করে সুরঞ্জিতকে তার দায়িত্ব দেন।

সুরঞ্জিত এসেই ঘোষনা কালো বিড়াল ধরা হবে।কিন্তু এই ইদুর-বিড়াল খেলায় তিনি নিজেই ধরা খাবেন- তা কে জানত।

সাক্ষীসাবুদ ইঙ্গিত করছিল টাকা যাচ্ছিল সুরঞ্জিতের কাছেই। ফলাফল স্বরুপ এপিএসের ড্রাইভারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, এপিএস ফারুক-জিএম মৃধা-এনামূলের চাকরী গেল আর সুরঞ্জিত হারালেন মন্ত্রীত্ব।


রেল মন্ত্রনালয় তদন্ত শুরু করল, তদন্ত শুরু করল দুদক। মিডিয়াও এ নিয়ে সোচ্চার।দারুন গ্যারাকলে সরকার।

কি করা যায় এখন?

এমন সময় গুম হয়ে গেলেন বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও তার ড্রাইভার, পরিত্যাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেল তার গাড়ি আর মোবাইল।নতুন খবর পেয়ে মিডিয়া নতুন উদ্যমে ঝাপিয়ে পড়ল, জনগনেরও চোখ ঘুরে গেল সেদিকে। টম এন্ড জেরী নিয়ে আর কোন উচ্চবাচ্য থাকল না।সরকারের distraction & diversion নীতি সফল হল।

এবার আসুন দেখি ঘটনার প্রতিক্রিয়া।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন সরকার ইলিয়াসকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।প্রতিমন্ত্রী বললেন, সরকার বিব্রত। আর এমন সময় স্বভাবসুলভ বোমা ফাটালেন গনতন্ত্রের মানসকন্যা(!)।বললেন, হত্যা-গুমের রাজনীতি তার দল করে না, করে বিএনপি আর ইলিয়াস নাকি নেত্রীর নির্দেশেই লুকিয়ে আছে। এর আগে সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের পর বলেছিলেন, সরকার কারো বেডরুমের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে পারবে না।

অবিশ্বাস্য।পৃথিবীর আর কোন দেশের সরকার প্রধান এতটা নির্লজ্জ, দায়িত্বহীন আর দাম্ভিকতাপূর্ন কথা বলতে পারেন বলে আমার জানা নেই।

এরপর বিএনপি জেগে উঠল(!)।যতদিন ইলিয়াসকে খুঁজে পাওয়া যাবে না ততদিন লাগাতার হরতাল।

আশ্চর্য।বিরোধী দল এমন গনবিরোধী হয় কি করে? শুক্র-শনি বন্ধ গেল, রবি-সোম হরতাল গেল। কাল আবার হরতাল।দেশে এইচেসসি পরীক্ষা চলছে আর তাদের হরতালের কারণে প্রতিদিনের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যাচ্ছে- সেদিকে তাদের কোন খেয়াল নাই। তাদের খেয়াল নাই সেইসব গরীব মানুষের দিকে যাদের কাছে একদিন হরতাল মানেই সারাদিনের উপবাস।

'৯৬-এ এম এস কিবরিয়া হিসাব দিয়েছিলেন একদিনের হরতাল মানে দেশের কমপক্ষে ৩৮৬ কোটি টাকার ক্ষতি। সন্দেহ নেই ২০১২ সালে এসে ক্ষতির পরিমানটা বেড়েছে বই কমেনি।আমি নিজে হরতালের মত ধ্বংসাত্মক কর্মসূচীর বিপক্ষে।ব্লগ আর ফেসবুক দেখে মনে হল সংখ্যাগুরুর দলেই আছি।

বিএনপির এমন কর্মকান্ড দেখে সত্যিই তাদের দেশপ্রেম নিয়ে সন্দেহ জাগে।নইলে সীমান্তে হত্যাকান্ড-বালের পরড়াষ্ট্রনীতি-শেয়ারবাজার-জাতীয় শত্রু লোটা কামাল-বিএনপির হাতে ইস্যু কম ছিল না।তাদের চেচামেচি এক ইলিয়াস আলী নিয়ে।এসব দেখে বিএনপি নেতাদের রাজনৈতিক পরিপক্কতা নিয়েও সন্দেহ জাগে।

শুধু দেশপ্রেম বা রাজনৈতিক পরিপক্কতা নয়- মাথায় প্রশ্ন জাগছে বিএনপি তার কর্মীদের প্রতি কতটুকু তা নিয়েও।নাহলে থানায় নিয়ে ছাত্রদল কর্মীদের নির্যাতন করা হল- যদ্দূর জানি বিএনপি তা নিয়ে অফিসিয়ালি কোন বক্তব্য দেয়নি, কোন নেতা এসব কর্মীদের বাসায় গিয়ে সান্ত্বনা জানায়নি বা তাদের ছাড়ানোর কোন ব্যবস্থাও করেনি।মুখে বলছে ইলিয়াসকে পাওয়া না গেলে লাগাতার হরতাল- অথচ আজ বনানীতে ইলিয়াসের বাসায় খালেদা জিয়ার যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি যাননি।

রাজনীতি মানুষকে কতটা নিচে নামিয়ে দেয়।আফসোস।

এবার আসি পোস্টের শেষ অংশে। সোহেল তাজ সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।এটাই ছিল আজকের ব্রেকিং নিউজ।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে- তাই জানি না এটাও আওয়ামীলীগের distraction & diversion নীতির অংশ কিনা।মিডিয়া নতুন খবরের পিছে ছুটবে, জনগনের চোখও সেদিকে ঘুরে যাবে আর ইলিয়াস বিস্মৃতির মাঝে হারিয়ে যাবে এই কি সরকার চাইছে?

কোথাও কোথাও দেখলাম সোহেল তাজের প্রশংসা করা হয়েছে তিনি পদত্যাগ করায়।বলা হয়েছে তিনি সৎ ও সাহসী।তার খোলা চিঠি পড়লাম।বলেছেন অনেক অপ্রকাশিত সত্য আছে।তার উদ্দেশ্যেই বলব, সত্য প্রকাশের সাহস না থাকলে আপনি কি করে সৎ? কি করে দেশপ্রেমিক? জনগনের প্রতি আপনার দায়বদ্ধতা কোথায়?

বলেছেন পদের লোভে রাজনীতি না করে নীতি ও আদর্শের রাজনীতি করতে। তা সত্য প্রকাশ না করে তিনি কোন আদর্শের রাজনীতি করলেন?তিন বছর ধরে আছেন বিদেশে, কিন্তু সংসদ সদস্যের পদটা ছাড়েন নি এতদিন। তাহলে নিজের এলাকার লোকের সামনে কি আদর্শ স্থাপন করলেন? আমাকে নির্বাচিত কর, আমি তোমাদের ছেড়ে চলে যাব- এই কি তার আদর্শের রাজনীতি?

জানিনা সোহেল তাজের পদত্যাগ জনগনের দৃষ্টি ইলিয়াস ইস্যু থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য করা হয়েছে কিনা।তবে সব দেখে মনে হচ্ছে এই বালের গনতন্ত্র আর চাই না। এর চেয়ে সামরিক শাসন বা রাজতন্ত্র-ই শ্রেয়তর।
২৫টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×