somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য গল্পঃ কালো বিড়ালের ঘড়ি (পৈশাচিক বিনোদন সুনিশ্চিত) B-)) B-)) B-))

১৮ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এ জার্নি ইন এ বার্নিং ট্রেন

কয়েকদিন পরের কথা।মিসেস আবুল আইমিন আমাদের তথ্যমন্ত্রীর স্ত্রী সুস্থ হয়ে উঠেছেন।হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে তার আর ভাল লাগছিল না।তার আবুল পদ্মা সেতু আইমিন পুলসেরাত বিস্ফোরিত হয়ে জাহান্নামের বুকে পড়ে আছে।প্রান ভোমরার জন্য কিছু করা দরকার।সুতরাং তিনি ডেকে পাঠালেন ফেরেশতাকে।
একটু পর দরজার ফাকে ফেরেশতাকে দেখা গেল।
-আমায় ডেকেছেন?
-হ্যা।
-কেন?
-আমার আর হাসপাতালে থাকতে ভাল লাগছে না।
-কেন?
-আরে ভাই আমরা হলাম পলিটিশিয়ানের স্ত্রী।আমরা রাজপথে বা বক্তৃতার মঞ্চে বসে থাকতে পারি অন্তহীন সময়।কিন্তু হাসপাতালে আসলে এভাবে বসে থাকা যায় না কোন কাজ ছাড়া।
ফেরেশতাকে চিন্তিত দেখাল।
-আপনি তাহলে চলে যেতে চান?
-হুম।
-আসল কথাটা বলুন তো।
-মানে?
-মানে আপনি হলেন আবুল হোসেনের স্ত্রী।আর আবুল হোসেন হলেন ব্যবসায়ী, নট রাজনীতিবিদ।আপনারা রাজপথে বা বক্তৃতার মঞ্চে না, এসি অফিস আর কিটি পার্টিতে ঘন্টার পর ঘন্টা অকারনে নষ্ট করতে পারেন।আপনার এই যুক্তি অসার। সুতরাং আসল সত্য কথাটা বলুন।
উনার মুখ কালো হয়ে গেল।
-আসলে আমার জানু আবুলের জন্য মনটা কেমন যেন করছে।জানিনা জাহান্নামে বেচারা কেমন আছে।
হো হো করে হেসে উঠল ফেরেশতা।
-এই কথা? আগে বলবেন তো।
-আগে বললে কি হত?
-তার আগে বলুন আপনি আবুল হোসেনের জন্য কি করতে চান?
-আমি জাহান্নামে গিয়ে ওর সাথে দেখা করতে চাই।
-সেটা সম্ভব না।
-কেন?
-কাউকে জাহান্নামে ট্যূর করার অনুমতি দেয়া হয় না।
-তাহলে?
-একটা উপায় আছে।
-কি?
-দুদিন পর আবার পুলসেরাতকে পদ্মাসেতুর আদলে সাজানো হবে।পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন যাবে আর যেসব জাহান্নামীর কারনে পদ্মাসেতু হতে পারে নাই তারা দূর থেকে পদ্মা সেতু দেখার সুযোগ পাবে।
-তো?
-তো সেসব জাহান্নামীদের মধ্যে আপনার প্রিয় আবুল সোনা থাকবে।যদি সেই ট্রেনে চড়েন, তবে দূর থেকে হলেও আপনার আবুল সোনাকে একবার দেখতে পাবেন।রাজি?
শুকনো মুখে তিনি বললেন, রাজি।


০২.


পদ্মাসেতু আইমিন পুলসেরাতের ওপর দিয়ে চলেছে ট্রেন।
মিসেস আবুল বসে আছেন চেয়ার কোচে।চারদিকে সব বিনা টিকেটের যাত্রী।জিজ্ঞেস করলে বলে, স্ট্যান্ডিং টিকেট আছে।বাল আমার।এসব নষ্টামি ধ্যাষ্টামিই দেশটাকে খেল।মনে মনে ভাবলেন মিসেস আবুল।
হঠাৎ একজন তার গায়ের ওপর এসে পড়ল।
-সমস্যা কি তোর?খেকিয়ে উঠলেন মিসেস আবুল।
-মাফ করবেন।ব্যাটা মাফ চাইল।
-এই ফেরেশতা।চিৎকার করে ডাকলেন মিসেস আবুল।
কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে এল ফেরেশতা।
-চেচান কেন?
-এই বিনা টিকেটের যাত্রীটা আমার গায়ের ওপর এসে পড়ে কেন?
ফেরেশতা রাগান্বিত চোখে ব্যাটার দিকে তাকাল।লোকটা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
-এই ব্যাটা, কি সমস্যা তোর?
-নৌকা থুক্কু ট্রেন দুলতেছিল।ব্যালান্স রাখতে পারি নাই।
-মেয়ে দেখলে আর ব্যালান্স থাকে না?
-ছিঃ ছিঃ, কি যে কন।
-টিকেট দেখা।
-স্ট্যান্ডিং টিকেট।
-দেখা।
ব্যাটা পকেট থেকে মানি ব্যাগ বের করে টিকেট খোজার অভিনয় করল কিছুক্ষন।
-মনে হয় ভুলে বাসায় ফেলে আসছি।
ফেরেশতা এবার একটা প্রচন্ড থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন লোকটার গালে।ব্যালান্স হারিয়ে লোকটা পড়ে গেল ফ্লোরে।
-টিকেট না, ঘরে ফালায় আসছস তোর নৈতিকতা আর সততা। শালার আবুল হোসেন আর চোরঞ্জিত পুরা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলছে।
এই কথা শুনে ক্ষেপে গেলেন মিসেস আবুল।
-এই ফেরেশতা।
-বলেন।
-এইটা কি বললি?
-যা বললাম তা তো শুনলেনই।
-আবুল আর চোরঞ্জিত পুরা যোগাযোগ ব্যবস্থা খেয়েছে? তা তোরা বুঝি নিষ্পাপ ফেরেশতা???
ফেরেশতা অবাক হয়ে বলল, আমি ফেরেশতা নাতো কি??? পেয়াজ বেরেশতা???!!!
ফেরেশতার এই জবাব শুনে মিসেস আবুল বলার কিছু খুজে পেলেন না। এই ব্যাটাতো আসলেই ফেরেশতা।
ফেরেশতা একট পর বলল, আপনি এখানে অপেক্ষা করেন। দেখি আমি আপনার জন্য এসি কম্পার্টম্যান্টে কোন সিটের ব্যবস্থা করতে পারি কিনা।ওখানে বিনা টিকেটের যাত্রী থাকে না।
মিসেস আবুল অপেক্ষা করতে লাগলেন। একটু পর ফেরেশতা এসে বলল, আসুন। এসি বগি না, আপনার জন্য একেবারে স্লিপিং বার্থের ব্যবস্থা করেছি।
মিসেস আবুল রওয়ানা দিলেন।




০৩.






স্লিপিং বার্থে ঢুকেই মিসেস আবুল অবাক হয়ে গেলেন।আগে থেকেই এখানে একজন বসে আছে।
তিনি ফেরেশতাকে বললেন, সেকি, এখানেতো আগে থেকেই এক ব্যাটা বসে আছে। আমি একজন মহিলা, আমারতো এই পরপুরুষের সামনে কোন প্রিভেসিই থাকবে না।
ফেরেশতা মুখ বাকাল।
-কি হল? মুখ বাকাস কেন ব্যাটা?
-এই বার্থটা উনার নামেই বুক করা। উনাকে অনুরোধ করে আপনাকে ওই বিনা টিকেটের যাত্রীদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে এনেছি।আর এখনোতো উনার মুখ দেখেননি। উনি কে তা জানলে আর এমন কথা বলতেন না। উনি আপনার স্বামীর বিশিষ্ট বন্ধু। পৃথিবীতে থাকতে উনারা একসাথে রাজনীতি করতেন।
মিসেস আবুল খুশি হয়ে বললেন, তাই নাকি? তা কে উনি?
-নিজেই দেখে নিন।
-এইযে, শুনছেন?
লোকটা বাইরে উদাস হয়ে প্রকৃতি দেখছিলেন। মিসেস আবুলের ডাক শুনে ফিরে তাকালেন।আরে এ যে আর কেউ নয়, স্বয়ং চোরঞ্জিত।
মিসেস আবুল খুশিতে গদগদ হয়ে গেলেন।চেচিয়ে উঠলেন, আরে আমার কি সৌভাগ্য।স্বয়ং রেল্মন্ত্রীর সাথে এক বার্থে ভ্রমন করার সুযোগ আর কজন পায়???
চোরঞ্জিত হাসলেন। কিন্তু সে হাসি কেমন যেন মলিন দেখাল।
-কেমন আছেন?
-ভাল।
-তা আপনি হঠাৎ এই ট্রেনে?
-আজ শুনলাম যাদের জন্য পদ্মাসেতু হতে পারে নাই তারা সব কাছ থেকে এই ট্রেন দেখার সুযোগ পাবে। আমি এসেছি আমার আবুল সোনাকে দেখতে।
-বলেন কি? আবুল ভাই জাহান্নামে?
-হ্যা।
-কিভাবে?
-আর বলবেন না। সব বিরোধী দলের চক্রান্ত।আমার আবুল নিষ্পাপ।
এই কথা শুনে ফেরেশতা হো হো করে হেসে উঠল।
মিসেস আবুল খেকিয়ে উঠলেন, এই ব্যাটা বদ, হাসলি কেন?
-শোকর করুন করুন খালি রাজনীতিবিদের নামেই ঘড়ি বরাদ্দ থাকে, তাদের স্ত্রীদের নামে থাকে না।নাহলে এতক্ষনে এই ট্রেন বিস্ফোরিত হয়ে আমরা সব ওই পাড়ে চলে যেতাম।
মিসেস আবুল ক্ষেপে গিয়ে বললেন, আমরা সব ওই পাড়েই আছি।
মিসেস আবুল আর চোরঞ্জিতের রুদ্রমূর্তি দেখে ফেরেশতা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। কি বলা যায় ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখল বার্থে একটা লোক ঢুকল। কাধে একটা বিশাল বস্তা।
ফেরেশতা বলল, এই ব্যাটা, কি চাস?
লোকটা চোরঞ্জিতের দিকে তাকিয়ে রইল।
-কি হল? জবাব দে।
এমন সময় একজন স্যুটেড বুটেড লোক এসে ঢুকল।
ফেরেশতা জানতে চাইল, আপনি আবার ক্যাডা?
লোকটা চোরঞ্জিতের দিকে ইঙ্গিত করে বলল, জ্বি, আমার স্যারের এপিএস।
-তা এই বস্তা সম্পর্কে কি জানেন?
-এটা আমিই স্যারের জন্য নিয়ে এসেছি।
ফেরেশতা মুখ বাকাল, তাই নাকি?
-জ্বি।
-তা কি আছে এই বস্তায়?
-তেমন কিছু না।কয়টা কাঠাল কেবল।
-তাই?
-জ্বি।
-নভেম্বর মাসে কাঠাল? আমার সাথে মশকারী? সত্যি বল নাহয় তোকেই কাঠাল বানিয়ে কাচা খেয়ে ফেলব।
লোকটা ভয় পেয়ে চোরঞ্জিতের দিকে চেয়ে বলল, স্যার, বেহেশ্তের পুলিশগুলা পুরা ট্রেনের তল্লাশী নিচ্ছে।এই বস্তাটা কই লুকাবো?
ফেরেশতা চোরঞ্জিতকে জিজ্ঞেস করল, বাবু মশাই, এই বস্তায়ও কি কাঠাল নাকি? তা কাঠাল পাতা নেই? আপনার কেপি টেস্টটাও হয়ে যাক।
চোরঞ্জিত হঠাৎ ভয় পেয়ে কিছু একটা বললেন।
সাথে সাথে যা হওয়ার তাই হল।প্রচন্ড শব্দে কেপে উঠল ট্রেন আর পুরো পদ্মাসেতু।


বিস্ফোরনের সময় চোরঞ্জিতকে রেখেই এপিএস এর পলায়ন।


০৪.


হাসপাতাল।
বেডে অসুস্থ হয়ে শুয়ে আছেন মিসেস আবুল। বেডের পাশের চেয়ারে বসে আছে ফেরেশতা।
মিসেস আবুল বললেন, খালি একটা প্রশ্ন।কোন ডায়লগের কারনে ঘড়ির সময় এগোল আর বিস্ফোরনটা ঘটল?
ফেরেশতা জবাব দিল, বস্তা দেখেই চোরঞ্জিত বাবু বলে উঠেছিলেন,না না, আমি কিছু জানি না। আমি নিষ্পাপ।

============================================

** গল্পে বর্নিত সমস্ত ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবের কারো সাথে মিলে গেলে তা আমার অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র, এজন্য লেখক কোনভাবেই দায়ী নয়। B-)) B-)) B-))

============================================


সিরিজের আগের গল্পসমুহঃ

রম্য গল্পঃ তথ্যমন্ত্রীর ঘড়ি

রম্য গল্পঃ সাহারা খাতুনের ঘড়ি

রম্য গল্পঃ আবুল হোসেনের ঘড়ি


অন্যান্য রম্য গল্পসমূহঃ

টিভি অথবা একজন নোয়াখাইল্যার গল্প

হাসিনা-খালেদা-এরশাদের স্বর্গযাত্রা






সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৬
৩০টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×