somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং খাতে ধ্বসঃ আরেকটি অর্থনৈতিক মহামন্দা কি আসতে চলেছে?

১৬ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবিঃ financialtimes.com

গত ১ সপ্তাহের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটো ব্যাংক সরকার বন্ধ করে দিয়েছে।তার মধ্যে একটি হচ্ছে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (১০ মার্চ) এবং তার তিন দিনের মাথায় বন্ধ হয়েছে সিগনেচার ব্যাংক। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ২০০৮ সালে লেহম্যান ব্যাংক বন্ধ হওয়ার পর প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ও তার ফলশ্রুতিতে বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা ছড়িয়ে পড়েছিল, এবারও কি তাহলে একই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে? আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক, ব্লগার আমি তুমি আমরা, আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমার আজকের পোস্টে।

এই ব্যাংক ক্রাইসিসের পুরো বিষয়টা বুঝতে হলে আমাদেরকে প্রথমে বুঝতে হবে ব্যাংক কিভাবে কাজ করে? ব্যাংকের প্রথম কাজ হচ্ছে আমানত সংগ্রহ করা। এই আমানত বিভিন্ন ফর্মে জমা রাখা হতে পারে, যেমন ধরুন সঞ্চয় হিসাব কিংবা চলতি হিসেবে জমা রাখা টাকা, বিভিন্ন মেয়াদের ফিক্সড ডিপোজিট বা ডিপিএস ইত্যাদি।

প্রশ্ন হচ্ছে জনগণ কেন ব্যাংকের কাছে তার তার নিজের টাকা আমানত হিসেবে জমা রাখবে? এই জমা রাখার পুরস্কার হিসেবে ব্যাংক তার গ্রাহকদেরকে দেয় প্রচলিত ভাষায় সুদ কিংবা ইসলামী অর্থনীতির ভাষায় মুনাফা।

যেহেতু ব্যাংককে সুদ কিংবা মুনাফা পরিশোধ করতে হবে, সুতরাং আমানত খাটিয়েই ব্যাংককে এই মুনাফা কামিয়ে নিতে হবে। ব্যাংক মূলত দুইভাবে মুনাফা অর্জন করে। প্রথমত ঋণ বা লোন দিয়ে, আর দ্বিতীয়ত বিভিন্ন জায়গায় ইনভেস্টমেন্ট করে।

বাংলাদেশে আইন অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে তার মোট আমানত বা মোট সম্পদের একটি নূন্যতম অংশ বাধ্যতামুলকভাবে বিভিন্ন সরকারি বা ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে হয়। বিভিন্ন ধরনের সরকারি বা ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগগুলো সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী এবং তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হয়ে থাকে। তাই এই বন্ডেগুলোর সাধারণত সুদের হারও অনেক কম থাকে, ক্ষেত্রবিশেষে এই হার মূল্যস্ফীতি হার থেকেও কম হয়ে থাকে।

এর বাইরেও ব্যাংক সরাসরি নিজে অথবা তার কোন সাবসিডিআরি এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসায় অথবা প্রজেক্টে সরাসরি শেয়ার হোল্ডার বা ইনভেস্টর হিসেবে বিনিয়োগ করতে পারে।

প্রদত্ত লোন আর বিভিন্ন ইনভেস্টমেন্ট থেকে ব্যাংকের যে সুদ আয় ও লাভ হয়, তার থেকে ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় (operation cost) আর গ্রাহকের আমানত ও সুদ ব্যয় বাদ দিলে যেটা থাকে সেটাই দিনশেষে ব্যাংকের লাভ।

আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে আমানতকারীরা সাধারণত ব্যাংকে টাকা জমা রাখেন স্বল্প মেয়াদের জন্য। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো যে ঋণ বিতরণ করে বা বিভিন্ন সেক্টরে যে ইনভেস্টমেন্ট বা বিনিয়োগ করে সেগুলো সবগুলোই হয় সাধারণত দীর্ঘমেয়াদে। ফলে সংগ্রহ করা আমানত আর বিতরণ করা ঋণ ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব বিনিয়োগ করা হচ্ছে তাদের ম্যাচুরিটির মধ্যে একটা বড় পার্থক্য তৈরি হয়। যেহেতু সল্পকালীন আমানত সংগ্রহ করে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণ বা বিনিয়োগ করতে হচ্ছে, তাই আমানত দায় পরিশোধ করতে গিয়ে ব্যাংকগুলো অনেক সময় লিকুইডিটি ক্রাইসিস বা তারল সংকটে পড়ে যায়।

স্বাভাবিকভাবেই একটি ব্যাংকের আমানত যত বেশি হবে তাকে তত বেশি ঋণ বিতরণ করতে হবে এবং বিভিন্ন সেক্টরে ইনভেস্টমেন্ট বা বিনিয়োগ করতে হবে। মনে রাখতে হবে ব্যাংকের আমানত এবং বিনিয়োগের পোর্টফোলিও যত বেশি ডাইভারসিফাইড হবে ব্যাংক ততটাই নিরাপদ থাকবে। শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট শ্রেণী থেকে আমানত সংগ্রহ করে অথবা একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীকে ঋণ বিতরণ করে একটি ব্যাংকের জন্য মুনাফা অর্জন করা শুধুমাত্র কষ্টকরই নয় বরং তার অস্তিত্বের জন্যও একটি হুমকি তৈরি করে।

প্রিয় পাঠক আপনি যদি এতটুকু পড়ে থাকেন তাহলে আমাদের আজকের পোস্টের মূল বিষয়বস্তু বোঝার জন্য আপনার যে প্রাথমিক জ্ঞানটুকু থাকা প্রয়োজন সেটা আপনি ইতিমধ্যে অর্জন করে ফেলেছেন।

গত এক সপ্তাহের মধ্যে আমেরিকার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ যে দুটো ব্যাংক বন্ধ করে দিয়েছে তার প্রথমটি হচ্ছে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (SVB)। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ১৯৮৩ সালে আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত হয়।

নাম শুনেই বুঝতে পারছেন সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক মূলত বিভিন্ন ধরনের স্টার্টআপ কে লোন দিয়ে থাকে। স্টার্টআপ বলতে মূলত বিভিন্ন ধরনের আনকনভেনশনাল বা অপ্রচলিত ব্যবসার আইডিয়াকে বোঝায়, যেগুলো লং টাইমে প্রকৃতপক্ষে ব্যবসা হিসেবে দাঁড়াতে পারবে কিনা তা এখনো প্রমাণিত নয়। যেহেতু প্রচলিত ব্যাংকগুলো স্টার্টআপে বিনিয়োগ করার ঝুঁকি নিতে চায় না, তাই এদিক থেকে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ছিল অন্যতম ব্যতিক্রম। তবে যেহেতু স্টার্টআপ গুলোর বিজনেস মডেল লং টার্মের সারভাইভ করতে পারবে কিনা তা আগে থেকেই ধারণা করা যায় না, তাই এ ধরনের যেকোনো প্রজেক্টে বিনিয়োগ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

তবে এই ঝুঁকি নিয়েই সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক প্রায় ৪০ বছর ব্যবসা করে গেছে সাফল্যের সাথেই। বন্ধ হওয়ার আগে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের বিভিন্ন সম্পদের মোট মার্কেট ভ্যালুয়েশন ছিল প্রায় ২০৯ থেকে ২১১ বিলিয়ন ডলার। এক বিলিয়ন ডলার মানে ১০০ কোটি ডলার আর বর্তমানে প্রতি ডলারের বিপরীতে বাজারে বাংলাদেশী মুদ্রায় ১০০ টাকার বেশি পাওয়া যায়। তাহলে ধারণা করে দেখুন বন্ধ হওয়ার আগে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের কি বিপুল পরিমাণ সম্পদ ছিল।

সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের ব্যাড লোন ছিল কিংবা তাদের প্রতিষ্ঠানে সুশাসনের অভাব ছিল এমন অভিযোগ শোনা যায়নি। তারপরও কেন সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ধ করে দেয়া হলো?

এখানেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে পোর্টফলিও ডাইভারসিফিকেশন। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক মূলতম সিলিকন ভ্যালিতে অবস্থিত বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত সংগ্রহ করে থাকে, আবার সিলিকন ভ্যালির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং প্রযুক্তি স্টার্টআপগুলোকে ঋণ দিয়ে থাকে।

যেহেতু ঋণ নিলে সেই ঋণের বিপরীতে সুদ গুনতে হচ্ছে, তাই স্টার্টআপ গুলোর কাছে ব্যাংক ঋণের চেয়ে ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টদের করা বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ অনেক বেশি লোভনীয়। জানিয়ে রাখি, ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট বলা হয় মূলত তাদেরকেই যারা বিভিন্ন নামকরা বা সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে স্টার্টআপগুলোতে শেয়ারের বিনিময়ে বড় অংক বিনিয়োগ করে থাকেন।

আবার সুদব্যয় এড়ানোর জন্য অল্প কিংবা সুপ্রতিষ্ঠিত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোও ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে শেয়ার মার্কেট থেকে বিনিয়োগ সংগ্রহ করাটাকে অধিকতর লাভজনক বলে গণ্য করে।

ফলে স্বাভাবিকভাবেই সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক তার বিশাল আমানত থেকে ঋণ বিতরণ করার সুযোগ পাচ্ছিল না। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের যে ২০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদ রয়েছে তার মধ্য থেকে মাত্র ৭০ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি তারা ঋণ হিসেবে বিতরণ করতে পেরেছিল।

কিন্তু এই বাকি টাকাতো ফেলে রাখার কোন সুযোগ নেই। কারণ ঋণ বিতরণ হোক বা না হোক, এই টাকার বিপরীতেও তাকে আমানতকারীকে সুদ দিতে হবে। হলে বাধ্য হয়েই সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক তার অবশিষ্ট টাকা বিনিয়োগ করেছিল বিভিন্ন ধরনের সরকারি বা ট্রেজারি বন্ডে, যাদের সুদ হার অত্যন্ত কম এবং ম্যাচিউরিটি প্রায় ১০ থেকে ৩০ বছর।

এবার আসি কাহিনীর মূল টুইস্ট-এ। ২০২২ সালের শুরুতে আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদ হার ছিল প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ফেডারেল রিজার্ভ তাদের নীতি সুদ হার বাড়াতে শুরু করে। এখন পর্যন্ত ইতিমধ্যে আটবার সুদ হার বাড়ানো হয়েছে। এই নীতি সুদ হার বৃদ্ধির ফলাফল হচ্ছে ঋণ আর বন্ডেও সুদ হার বেড়ে যাওয়া। বন্ডগুলোর সুদ হার বেড়ে যাওয়ার ফলে আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে তাদের আমানত তুলে নিয়ে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বিকল্প বন্ডে বিনিয়োগ করছেন। ফলে আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে গিয়ে ব্যাংকগুলোকে বন্ডে থাকা নিজেদের বিনিয়োগ তুলে নিতে হচ্ছে।

দেখা যাচ্ছে যেখানে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক মাত্র ৭০ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি ঋণ হিসেবে বিতরণ করতে পেরেছিল সেখানে বিভিন্ন ধরনের সরকারি বা ট্রেজারি বন্ডে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল প্রায় ৯১ বিলিয়ন ডলার।

ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদ হার বাড়ানোর পর নতুন করে যেসব ট্রেজারি বন্ড ইস্যু করা হয়েছে, পুরনো বন্ডগুলোর সুদ হার তার চেয়ে অনেক কম। সুদের হার কম হওয়ায় পুরনো বন্ড গুলোর মার্কেট ভ্যালু তাদের ফেস ভ্যালুর চাইতে অনেক কমে গিয়েছিল। অন্যদিকে ম্যাচিউরিটির আগে বন্ড ভাঙ্গালেও তারা সুদ এবং আসল মিলিয়ে পুরো টাকাটা পেত না। এক রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের হাতে থাকা ৯১ বিলিয়ন ডলার ট্রেজারি বন্ডের মার্কেট ভ্যালু কমে এসে দাঁড়িয়েছিল ৭৬ বিলিয়ন ডলারে।

গত বছর প্রথম আলোতে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড নিয়ে "ইসলামী ব্যাংকে একটি ভয়ংকর নভেম্বর" শিরোনামে রিপোর্ট প্রকাশের কথা মনে আছে? বলা হয়েছিল, ইসলামী ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণের আড়ালে বড় অংকের টাকা বের করে নেয়া হয়েছে আর ইসলামী ব্যাংক যেসব ইসলামী ভাবধারার দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দিয়েছে, সেই ব্যাংকগুলো এখন আর ধারের টাকা-ই পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে ইসলামী ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে আর ইসলামী ব্যাংক তার নিজের গ্রাহকদেরকে টাকা দিতে পারছে না।

যদিও সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকেরএই ক্ষতির পুরোটাই ছিল আনিরালাইজড লস, তারপরও খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। নিজেদের আমানত তুলে নেয়ার জন্য ইসলামী ব্যাংকে যেভাবে হঠাৎ করে গ্রাহকের ভিড় বেড়ে গিয়েছিল, ঠিক সেভাবেই সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকেও আতঙ্কিত গ্রাহকের ভিড় বেড়ে যায়। সবার একটাই লক্ষ্য ছিল নিজের আমানতের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। তারল্য সংকটের কারণে তখন বাধ্য হয়েই সিলিকন ভ্যালি ব্যাংককে ২১ বিলিয়ন ডলারের ট্রেজারি বিক্রি করতে হয় ১.৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েই। কারণ এই বন্ড বিক্রি করে তারা সুদ পেয়েছে ১.৯ শতাংশ হারে, অথচ ১০ বছর পর মেয়াদ পূর্তিতে এই বন্ড বিক্রি করলে তারা সুদ পেতো ৩.৯ শতাংশ হারে।(Click This Link)

এরপরেও আমানতকারীদের মধ্যেকার আতঙ্ক দূর না হলে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বাধ্য হয়ে ২.২৫ বিলিয়ন ডলার নতুন তহবিল সংগ্রহ করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু সেই তহবিল সংগ্রহ করার আগেই আমেরিকান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ফেডারেল ডিপোজিট ইস্যুরেন্স কর্পোরেশন সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ধ করে দেয় বা বলা ভালো, নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়।

ফেডারেল ডিপোজিট ইন্সুরেন্স কর্পোরেশন ন্যাশনাল সান্টা ক্লারা ব্যাংক নামে একটি নতুন ব্যাংক তৈরি করে এবং তাতে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের সমস্ত সম্পদ ও দায় (Asset & Liability) ট্রান্সফার করে। ফেডারেল ডিপোজিট ইন্সুরেন্স কর্পোরেশন বা এফডিআইসি আমানতকারীদেরকে সর্বোচ্চ আড়াই লক্ষ ডলারের চেক নিয়ে সোমবার ব্যাংকে আসার জন্য অনুরোধ জানায়। বলা হয় একাউন্টে যত টাকাই থাকুক না কেন বর্তমানে গ্রাহকরা সর্বোচ্চ আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত নগদ তুলতে পারবেন।

জেনে রাখা ভালো, আমেরিকাতে কোন ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেলে সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেক আমানতকারীকে সর্বোচ্চ আড়াই লক্ষ ডলার পর্যন্ত ফেরত দেয়া হয় বা আড়াই লক্ষ ডলার সুরক্ষা দেয়া হয়। বাংলাদেশে এই সীমা সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা। তার মানে হচ্ছে ব্যাংকের সম্পদ আর দায়ের হিসাব চূড়ান্ত করার পর ওই ব্যাংকে একজন আমানতকারীর আড়াই লাখ ডলারের বেশি টাকা থাকলেও তিনি সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা চূড়ান্ত সেটেলমেন্ট হিসেবে বুঝে পাবেন।

(নোটঃ বাংলাদেশে বিদ্যমান বীমা আমানত আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক যদি বন্ধ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ১৮০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীকে ১ লাখ টাকা দিয়ে দেবে। বাকি টাকা পরবর্তী সময়ে বন্ধ হওয়া ব্যাংকের সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীকে পরিশোধ করা হবে।

আমি যদ্দূর বুঝতে পারলাম, তাতে মনে হচ্ছে কোন ব্যাংক দেউলিয়া/অবসায়িত হলে তার আমানতের বিপরীতে থাকা বীমা থেকে আমানতকারীরা সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকা পাবেন। এই টাকা প্রদানের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। গ্রাহকের প্রাপ্য অবশিষ্ট টাকা ব্যাংকের সম্পদ বিক্রি করে সমন্বয় করা হবে। )

প্রশ্ন হচ্ছে যেহেতু আমানতকারীরা তাদের আমানতের পুরোটা এই মুহূর্তে হাতে পাচ্ছেন না কিংবা এক্সেস করতে পারছেন না, তাহলে এর আপাতত ফলাফল কি হবে?

আগেই বলেছি সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক সিলিকন ভ্যালিতে অবস্থিত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং অধিকাংশ সিলিকন ভ্যালি প্রতিষ্ঠানেরই এই ব্যাংকে একাউন্ট রয়েছে। যেহেতু আমানতকারীরা বর্তমানে আড়াই লক্ষ ডলারের বেশি টাকা এক্সেস করতে পারছেন না, ফলে তাদের একাউন্টে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার থাকলেও, এই মুহূর্তে বেতন-ভাতাদি, ভাড়া বা অন্য যেকোনো প্রয়োজনে খরচ করার মতো টাকা তারা হাতে পাচ্ছেন না। যদি পুরো বিষয়টা সেটেলমেন্ট করতে federal deposit insurance corporation দীর্ঘ সময় লাগিয়ে ফেলে, তাহলে একাউন্টে টাকা সত্বেও প্রয়োজনের সময় হাতে টাকা না পাওয়ার কারণে অনেক কোম্পানি কর্মী ছাটাই করতে বা ব্যয় সংকোচন করতে বাধ্য হতে পারে, এমনকি বন্ধও হয়ে যেতে পারে। তার মানে এই মুহূর্তে ব্যাংকের অনেক আমানতকারী তাদের অস্তিত্বের সংকটে পড়ে গেছে।

তাছাড়া ফেডারেল ডিপোজিট ইন্সুরেন্স কর্পোরেশন এখনো ক্রস বর্ডার ট্রান্সফার বন্ধ রেখেছে বিধায় যে সব বিদেশি প্রতিষ্ঠানের এই ব্যাংকে একাউন্ট রয়েছে, তারাও তাদের টাকা অ্যাক্সেস করতে পারছেনা। ফলে যে সব বিদেশি স্টার্টআপ বা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের এই ব্যাংকে একাউন্ট রয়েছে এবং তাতে বড় ধরনের আমানত রয়েছে, তারাও এর ফলে বড় ধরনের বিপদে পড়বে।

এছাড়াও যেসব গ্রাহক তাদের লোনে টাকা এই ব্যাংকে জমা রেখেছিলেন, তারাও তাদের টাকা অ্যাক্সেস করতে না পারলেও ঠিকই লোনের সুদের টাকা পরিশোধ করতে হবে। তাই মনে হয় এটাকেই বলে মরার উপর খড়ার ঘা।

সুতরাং একটা বিষয় পরিষ্কার, সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ধ হওয়ার ফলে আমেরিকার বাইরের অনেক প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

প্রত্যেক ব্যাংকেই নিজস্ব হিসাব থাকে প্রতিদিন তার কাছে কি পরিমান টাকা জমা হচ্ছে আর কি পরিমান টাকা উত্তোলন হচ্ছে। ব্যাংকগুলো সাধারণত তাদের রেগুলেটরি বডির বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আর তাদের দৈনিক টাকা জমা-উত্তোলনের চাহিদার কথা মাথায় রেখে অতিরিক্ত টাকা ঋণ হিসেবে বিতরণ করে অথবা বিভিন্নখাতে বিনিয়োগ করে।

কোন কারণে এই হিসেবের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা জমা হলে সব ব্যাংকের সমস্যা হয় না, কিন্তু কখনো অতিরিক্ত টাকা উত্তোলনের চাপ এসে গেলেই এর পক্ষে মুহূর্তের মধ্যেই বড় অঙ্কের নগদ অর্থ গ্রাহককে দেওয়া সম্ভব হয় না। এটাকেই বলে মূলত লিকুইরিটি ক্রাইসিস বা তারল্য সংকট।

আতঙ্ক বা প্যানিক সবসময় খুব দ্রুত ছড়ায়। স্বাভাবিকভাবেই যেসব আমানতকারীর সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকে কোন টাকা নেই কিন্তু অন্য ব্যাংকে টাকা আছে তারাও এই ঘটনা থেকে ভয় পেয়ে গেছেন। ফলে অন্য ব্যাংকের আমানতকারীরাও নিজ তাদের নিজেদের ব্যাংকে দৌড়ে গেছেন টাকা তুলে ফেলার জন্য।


Image source: financial news london

মূলত গ্রাহকের চাপ থেকেই এই দারুন সংকটে পড়ে যায় আমেরিকার আরেকটি ব্যাংক যার নাম "সিগনেচার ব্যাংক"। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক যেমন স্টার্ট আপ এবং প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক গুলোকে লোন দিত বা আমানত নিতে, একইভাবে সিগনেচার ব্যাংক কাজ করতো মূলত অবসান খাত নিয়ে। ছাড়া ক্রিপ্টো কারেন্সি গ্রাহকদের টানার জন্য তারা বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিল বলে জানা যায়।

তাছাড়া সিগনেচার ব্যাংকের মূল সমস্যা ছিল তাদের মোট আমানতের ৮৯ ভাগেরই কোন ইন্সুরেন্স বা বিমা ছিল না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য করের টাকা ব্যবহার করা হবে না। আমানতের বিপরীতে যে বীমা রাখা হয় তা থেকেই আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেয়া হবে। তারমানে বেইল আউটের সুযোগ আপাতত থাকছে না। (https://www.prothomalo.com/business/ub9l1aljd9)

তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আর তার জামাতা জ্যারাড কুষ্নার এই ব্যাংকেরই ঋণগ্রহীতা ছিলেন। (Click This Link)

সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ও সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে গত ৪ কর্ম দিবসে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কমেছে প্রায় ১৯ হাজার কোটি বা ১৯০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে শুধুমাত্র সোমবারেই ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দাম কমেছে প্রায় ৯০০০ কোটি বা ৯০ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি চাপে রয়েছে আঞ্চলিক ব্যাংক সমূহ। ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক ইতিমধ্যেই তার শেয়ারদরের ৬০% এরও বেশি হারিয়েছে। ইতিমধ্যেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক সহ আরো কিছু ছোট এবং মধ্যমমানের ব্যাংককে নজরদারিতে রাখছে।(Click This Link)

একটি ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেলে বা দেউলিয়া হয়ে গেলে তার প্রভাবে যদি অন্য ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায়, তখন পুরো প্রক্রিয়াটিকে বলে সিস্টেমেটিক ফেলিওর। প্রশ্ন হচ্ছে প্রথমে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক এবং তারপর সিগনেচার ব্যাংক যেহেতু বন্ধ হয়ে গেছে, তাহলে এবার এই দুটো ব্যাংকের দেখানো রাস্তা ধরে কি নতুন আরো অনেক ব্যাংক বন্ধ হবে?

বলা হচ্ছে, ২০০৮ সালের আর্থিক মন্দার পর আমেরিকার ব্যাংকিং সেক্টরে অনেক সংস্কার করা হয়েছে, যা নতুন কোন আর্থিক মন্দা বা দেউলীয়াত্ম মোকাবেলায় তাদেরকে সাহায্য করবে। তাছাড়া যেহেতু সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক মূলত স্টার্টআপ ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আর সিগনেচার মূলত কারেন্সি রিলেটেড প্রতিষ্ঠানদের নিয়েই কাজ করতো, তাই এই দুটো ব্যাংক বন্ধ হওয়ার মূলে রয়েছে বর্তমানে স্টার্টআপ আর ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ার্ল্ডের অস্থিরতা। যেসব ব্যাংক অনেক বড় (Too big to fail) বা যাদের পোর্টফলিও অনেক বেশি ড্রাইভারসিফাইড, তারা এই বিপদ থেকে হয়তোবা বেঁচে যাবে। যদিও আসলে কি হয় সেটা দেখার জন্য আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে।

এরই মধ্যে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ধ হওয়া নিয়ে বিচার বিভাগ তদন্ত করবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আলাদাভাবে এই পতন নিয়ে তদন্ত ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে।

তবে এই ঘটনায় কাউকে দোষী করা হবে কিনা সেটা এখনো নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের প্যারেন্ট কোম্পানি এসভিবি ফিনান্সিয়াল গ্রুপ ব্যাঙ্কটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে ব্যাংকের যে সব স্টক বিক্রি করেছিলেন তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। এছাড়াও শোনা যাচ্ছে ব্যাংকটি বন্ধ হওয়ার এক সপ্তাহ আগে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীও তার হাতে থাকা ব্যাংকের স্টক বিক্রি করেছিলেন।

এর বাইরেও সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের প্যারেন্ট প্রতিষ্ঠান এবং তার প্রধান দুই নির্বাহীর বিরুদ্ধে ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা মামলা করেছেন। তাদের অভিযোগ ব্যাংকটি যে এমন বিপদে পড়তে পারে, সে বিষয়ে তারা শেয়ারহোল্ডারদের কোন কিছুই জানতে দেননি। (Click This Link)

আরেকটা প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যাংকের এই দেউলিয়াত্ম বা পতনের এ ধারা কি আমেরিকার বাইরে ছড়িয়ে পড়বে?

বিষয়টি এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। তবে বিশ্বায়নের এই যুগে প্রতিটি দেশ পরস্পরের সাথে কম-বেশি সম্পর্কিত। ফলে এক দেশের ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা বা অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে, অন্য দেশের পক্ষে তা এড়িয়ে যাওয়া খুব একটা সহজ ব্যাপার নয়।

ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও ইউরোপ এবং উন্নত বিশ্বের ব্যাংক কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম পড়তে শুরু করেছে। সোমবার সকালে স্পেনের স্যানটানডার ও জার্মানির কমার্জ ব্যাংকের শেয়ারদর ১০ শতাংশের বেশি পড়েছে(Click This Link)। এ ছাড়া ইউরোপের স্টক্স ব্যাংকিং সূচকের পতন হয়েছে ৫.৭ শতাংশ ও ক্রেডিট সুসির পতন হয়েছে ৯.৬ শতাংশ। এশিয়ায় জাপানের ব্যাংকিং উপসূচক ডটআইবিএনকেএস ডটটির পতন হয়েছে ৬.৭ শতাংশ।

তাছাড়া যেহেতু সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকে অনেক বিদেশি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বা স্টার্টআপ এর অ্যাকাউন্ট ছিল আর যেহেতু এখনো ক্রসবর্ডার ট্রানজেকশন চালু হয়নি, তাই যেসব প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট এখানে রয়েছে, তাদের পক্ষে নিজেদের টাকা এক্সেস করা কিংবা এটাকে কাজে লাগানো অনেক কষ্টকর হয়ে পড়বে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান বিপদে পড়লে সেসব দেশের জনগণ জনগণ আর অর্থনীতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

তাছাড়া আজকের ডেইলি স্টার থেকে দেখতে পেলাম, সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের যুক্ত রাজ্য শাখা এইচএসবিসি ব্যাংক কিনে নিয়েছে মাত্র ১ পাউন্ড বা ১.২ ডলারে(Click This Link)। পুরো ব্যাপারটাই ঘটেছে ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড বা যুক্তরাজ্যের কেন্দ্র ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে। তার মানে ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড নিজের দেশের অর্থনীতিকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে দিয়েছে।

বাংলাদেশের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সিলিকন ব্যাংক বা সিগনেচার ব্যাংক এ ঠিক কি পরিমাণ আমানত আছে?- এই বিষয়ে কোনো তথ্য আমি পাইনি। ফলে বাংলাদেশী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কি পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বা এটা সরাসরি কিভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আঘাত করছে সেটা সম্পর্কে এখনই নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে এতটুকু নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, যেহেতু আমেরিকা আমাদের পোষাক রপ্তানির অন্যতম গন্তব্য, তাই আমেরিকাতে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে তা সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে আমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

সিস্টেমেটিক ফেইলিওর এর কারনে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ও সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ও ফেডারেল ডিপোজিট ইন্সুরেন্স কর্পোরেশন এক যৌথ বিবৃতিতে আমানতকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছে, আমানতকারীরা তাদের আমানত ফেরত পাবেন। ১৩ মার্চ থেকে ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ক্ষতি বহন করা হবে না। সিগনেচার ব্যাংকের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, আমেরিকার এই ব্যাংকিং খাতের ধস থেকে বাংলাদেশ কি শিক্ষা নিতে পারে?

জবাব দেয়ার জন্য আবার চলে যাচ্ছি ডেইলি স্টারের আরো একটি রিপোর্ট এর কাছে (Click This Link)। এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অনেক ব্যাংকে দীর্ঘদিন ধরে ঋণ কেলেঙ্কারি ও করপোরেট সুশাসনের সংকটে আছে। এসব ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনায় বড় ধরনের সংকটে থাকলেও, তাদের অবসায়নের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এ ধরনের পরিস্থিতি পুরো আর্থিকখাতের জন্য নেতিবাচক।

বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে মার্কিন পন্থা অনুসরণ করা উচিত। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত দুর্বল ব্যাংকগুলো অবসায়ন করার সুযোগ থাকা উচিত। এই ধরনের সুযোগ অর্থনীতির জন্য ভালো।'

তাদের মতে দুর্বল ব্যাংকগুলো অবসান করা হলে ব্যাংক মালিক বা পরিচালকের আগে আমানতকারীর স্বার্থ সুরক্ষা থেকে সরকারকে নজর দিতে হবে।

সর্বশেষ প্রশ্ন হচ্ছে, একজন সাধারণ আমানতকারী হিসেবে ঠিক এই মুহূর্তে আমাদের কি করা উচিত?

শুনতে ভালো না শোনালেও বেশি সুদ বা মুনাফার পাওয়া গেলেও এই মুহূর্তে ছোট এবং দুর্বল ব্যাংক থেকে আমানত উঠিয়ে নেয়াটাই ভালো। কারণ সিস্টেমেটিক ফেলিওর শুরু হলে সবার আগে বন্ধ হবে এই দুর্বল এবং ছোট ব্যাংকগুলোই। বড় ব্যাংকগুলোর মাঝে সরকারি ব্যাংক বেছে নেয়াটাকে আমি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ মনে করি। কারণ সরকারি ব্যাংক রক্ষার জন্য সরকার বাধ্য হয়ে বেইল আউট প্যাকেজ নেবে। বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে এটা নাও হতে পারে।

ব্যাংকে টাকা রাখতে না চাইলে আরেকটা অপশন হতে পারে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ। তবে যেহেতু বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটেও জুয়ারিদের দৌরাত্ম আর সুশাসনের অভাব রয়েছে, তাই এই মার্কেট কতটা নিরাপদ হবে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ।

আরেকটা অপশন হতে পারে নিজেই কোন ব্যবসা শুরু করে দেয়া অথবা হাতে অতটাকা থাকলে তা কোন রকম সম্পদে (ঘর-বাড়ি/গাড়ি/জমি/গহনা) এসবে বদলে ফেলা।

আজকের জন্য এ পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকুন, শুভরাত্রি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১২:৫৫
২০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×