somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এরই কি নাম স্বাধীনতা?????

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাস্তায় আবর্জনার পাশে ছোট্ট মেয়েটি বসে কাদছিল। বয়স পাচ বছরের বেশি হবেনা। শরীরে কেবল একটি মাত্র ছোট্ট লাল হাফ প্যান্ট। আর কিচ্ছু নেই। এই শীতে অনেক উষ্ণ কাপড় পড়েও আমাদের ঠান্ডা নিবারন হয়না, ভেবে পাচ্ছিনা এই বাচ্চাটা কীভাবে টিকে আছে?
কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,
--আম্মু, কাদছ কেন?
--আম্মা নাই… (কান্না শুরু করে দিল বাচ্চাটা)
আমি বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিলাম। আশেপাশের মানুষগুলো অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার ওদিকে পরোয়া নেই। আমি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। আমি বিজয়কে ভালবাসি।
পরম আদরে চোখের পানি মুছে দিয়ে মেয়েটিকে আবার জিজ্ঞাসা করলাম,
--কই গেছে আম্মু?
--জানিনা, পাইনা…
একটু পরই আরেকটা ছোট্ট ছেলে দৌড়ে এল। তার পরনে নোংরা হাফ প্যান্ট আর একটা গেঞ্জি। আমাকে দেখেই আমার কোল থেকে বাচ্চা মেয়েটিকে জোর করে নামিয়ে নিল। আমি বুঝতে পারলাম না কী হচ্ছে? ছেলেটা এমন করছে কেন?
আমি ছেলেটিকে বললাম,
--কী হলো বাবু, কে তুমি? তুমি একে চিনো?
ছেলেটি আমার দিকে ভয়ালো দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।
বুঝছে পারলাম হয়তো কোন কারনে ভয় পেয়েছে। আমি তাদের ভয় কাটানোর জন্য আমার সাইড ব্যাগ থেকে আমার টিফিন বাটি বের করে আমার লাঞ্চের খাবারটা তাদের দিকে এগিয়ে দিলাম।
বাচ্চা মেয়েটার চোখ চকচক করে উঠল। কিন্তু ছেলেটা খাবারটা নাড়তেও দিলোনা। আমি এবার সত্যিই বিস্মিত।
মেয়েটি কাদছে। ছেলেটা মেয়েটার কানে কানে কী যেন বললো। মেয়েটির মুখ শুকিয়ে গেছে। সেও আমার দিকে ভীত নয়নে তাকাতে তাকাতে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠল, "দাদা, এটা ছেলে ধরা?"
কথাটা শুনেই নিজের উপর ধীক্কার চলে এল। রাস্তার অনাথ শিশুরাও আজ জেনে গেছে। এই সমাজে ভদ্র ড্রেস পরিহিত মানুষেরা ভাল নয়, এরা ছেলে ধরা। আর এই জন্য সাধারন মানুষেরাও তাদের জন্য কিছু করতে পারেনা। আজ তারা চরম ভাবে হতাশা গ্রস্থ।
আমার বিজয় আর স্বাধীনতার গর্ব মাটিতে লুন্ঠিত হলো।
************/***********
বাসে করে কর্মস্থলে যাচ্ছি। ট্রাফিক জ্যাম আর ব্যস্ত শহরে বাস ধীরে গতিতে এগিয়ে চলছে। হঠাত পিছন থেকে একটি শব্দ পেলাম। তাকিয়ে দেখি একটি ছেলে গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আর একজন ভদ্র ড্রেস পরিহিত স্বাস্থবান ভদ্রলোক রাগে কিরমির করছে। অগ্নিময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছেলেটির দিকে। কিচ্ছু বুঝলাম না। তবে এতটুকু জানি, ছেলেটিকে অবশ্যই খুব সামান্য অপরাধের কারনেই মার খেতে হয়েছে।
কেননা এই সমাজ বড় বড় মানুষের বড় বড় অপরাধ দেখতে পারেনা। এরা ছোট ছোট মানুষের ছোট ছোট অপরাধগুলোর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাতে অনেক বেশি সক্রিয়।
**********/************
পয়চল্লিশ বছর আগের স্বাধীনতা বিরোধী, মানবতা বিরোধী হত্যা কান্ডের সুষ্ঠু বিচার কার্য চলছে। অবশ্যই এটা অনেক প্রশংসনীয় কাজ।
দেশদ্রোহীদের শাস্তি হোক এটা সবাই চায়।
কিন্তু, দুজন দেশপ্রেমিক কিছুদিন আগে মরেছে। তাদের মৃত্যুর কারন দেশপ্রেম বৈ কিছুই হতে পারেনা। কিন্তু তাদের হত্যাকারীকেই এখনো পাওয়া যায়নি।
জানিনা হয়তো সামনের চল্লিশ-পয়চল্লিশ বছর পরে এদের হত্যাকান্ডের বিচার হবে কিনা।
আমি সাগর-রুনির কথা বলছি।
এতেও কিন্তু আমার অহংকার খর্বিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
**********/**********
হাসপাতালে দুজন রোগী। একজন মেয়ে। বয়স বারো কিংবা তের্। ধর্ষিত হয়েছে। সারা গায়ে অনেক আচড়। গলায় রক্তাক্ত অবস্থা। কাপড় চোপড় ছিড়া।
অন্যজন একটা বৃদ্ধ মানুষ। চল্লিশোর্ধ। মাথায় বড় রকমের ক্ষত চিহ্ন। জিজ্ঞাসা করে জানা গেল বাস এক্সিডেন্টে এ অবস্থা।
ডাক্তার কারো চিকিতসা করাচ্ছেনা। কারন একটাই, এরা থানায় জিডি করেনি।
তাদের কাছে একজন মানুষের জীবনের চেয়েও একটা জিডির মুল্য বেশি।
অথচ মানুষ আল্লাহর পর ডাক্তারকে দ্বিতীয় জীবনদাতার স্থানে বসিয়েছে। হয়তো ভুল করে।
স্বাধীন দেশে এসব ভুল হয়েই থাকে হয়তো।
********/********
একটা কৌতুক বলি। অনেকেই হয়তো শুনেছেন। আরেকবার শুনেন।
একবার এক বাংলাদেশি মানুষ বিদেশে গিয়ে ফ্ল্যাট তৈরীর জন্য কিছু জায়গা কিনেছে। সে দেশে বাড়ির ছাদের উপর জায়গা বিক্রি করা হয় নির্দিষ্ট ফুটে। তারপর সেই ছাদের উপর আবার বাড়ি তৈরী হয়। তো বাংলাদেশি গিয়ে একটা বাড়ির ছাদের উপর দশ ফুট জায়গা কিনে মনে মনে ভাবলো আমার উপরে আর কাউকে বাড়ি বানাতে দিবোনা। তাই সে ছাদ থেকে উপরে সাড়ে নয় ফুট জায়গা ব্যাবহার করে বাড়ি বানালো।
এরপর নতুন করে যখন আবার কেউ বাড়ি বানাতে এল তখন বাংলাদেশি বলল, "আমার এরিয়া উপরে দশ ফুট পর্যন্ত। আমি কাজের জন্য উপরে হাফ ফিট রেখে দিয়েছি। তাই আপনি এই হাফ ফিট বাদ দিয়ে উপরে বাড়িটা বানান।
আপনারাই বলুন, তা কি আর সম্ভব??
কৌতুকটা বুঝে থাকলে নিশ্চয় খুব গর্ব হচ্ছে। ইশ! আমরা বাংগালিরা কত্ত বুদ্ধিমান! তাই না?
কিন্তু আমার গর্ব হচ্ছেনা। আমার লজ্জা হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন কৌতুকে নিজের বুদ্ধিমান প্রমান করতে গিয়ে সবার হাসির পাত্রে পরিনত হচ্ছি। এটা আমাদের বুদ্ধিমানের পরিচয় নয়, এটা হলো আমাদের ধুর্ততার পরিচয়। আমাদের চিটিং বাজির পরিচয়।
আপনারা জানেন, এতেও আমার অহংকার ধুলিস্যাত হয়।
**********/**********
সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের এক নম্বর খেলোয়ার্। বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার্। তার পরিচয়ে আজ বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপি সমাদৃত এটা নি:সন্দেহে মানতে হবে।
কিন্তু, তাকে নিয়ে পাপন কী খেলাটাই না খেলছে।
এবার প্রশ্ন জাতির কাছে, আপনার কেমন লাগছে?
***********/**********
এলাকার সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটি ছিল লিমা।
কিন্তু আজ……………
আজ তার দিকে তাকাতেও মানুষ ভয় পায়। তার দিকে ঘৃণা ভরা নয়নে তাকায়।
অথচ একদিন, তার পিছে পিছে কত ছেলেই না ঘুরতো! আজ কেউ ঘুরেনা, কারন…
বখাটেদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে যেদিন সে খুব প্রতিবাদ করার চেস্টা করেছিল তার পরদিনই তাকে ভয়ানক এসিড নিক্ষেপের স্বীকার হয়। তার চেহার আজ খুবই কদাকার……
আপনাদের প্রশ্ন করবোনা কিছুই। নিজ থেকেই বলবেন।
উপরে যে ঘটনাগুলোর কথা বলেছি তা হলো বাংলাদেশ নামক একটি দেশের কয়েক লক্ষ অপরাধ-অনিয়মের মধ্যে কয়েকটা মাত্র।
জাতির কাছে প্রশ্ন, এরপরেও কি আপনাদের মনে হয় আমরা স্বাধীন? আমার কি সত্যিই বিজয়ী?
অবশ্যই না। আমরা সবাই জানি, "স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।"
আমরা ভৌগলিক স্বাধীনতা পেয়েছি, কিন্তু সামাজিক, রাষ্ট্রীয় কিংবা ব্যাক্তিগত স্বাধীনতস আদৌ কি পেয়েছি?
ফেসবুকে সবাই মেতে উঠেছে এই বিজয়ের মাসে সবাই ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার লাল সবুজে ভরিয়ে তুলে রেকর্ড গড়বে।
কিসের তোমার রেকর্ড!
আগে দেশ ঠিক করো। লাল সবুজ অনেক কস্টে অর্জিত একটা রং। এটা শুধু উড়িয়ে দিলেই কিংবা প্রোফাইল পিকে সেট করলে দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়না।
খুব যদি দেশকে ভালবাসেন, তাহলে এই বিজয়ের মাসে খুব বেশি নয়, মাত্র একটা রাস্তার বাচ্চাকে গরম কাপড়ের ব্যাবস্থা করে দিন। আল্লাহর কসম করে বলছি, দেশের বিজয়ের অনেক বড় ভাগিদার হয়ে যাবেন আপনি।
আপনার মর্যাদা মতিউর, মুন্সি আব্দুর রউফ, মোস্তফা কামাল কিংবা হামিদুর রহমানের চেয়ে কোন অংশে কম হবেনা।
তাই আসুন, নিজেরাই দেশকে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয়ে হাত বাড়াই। গড়ে তুলি স্বপ্ন সোনার বাংলাদেশ। আর মেতে উঠি সত্যিকারের বিজয়োল্লাসে।
আর সমবেত কন্ঠে অন্তর থেকে গেয়ে উঠি,
"আমার সোনার বাংলা, আমি তোমার ভালবাসি……………"
আল্লাহর কসম করে বলছি, সেদিন আর প্রস্তুতি নিয়ে হবেনা। বিশ্ব রেকর্ড হয়ে যাবে আপনা-আপনিই।
আমরা টেরই পাবোনা।
এটাই, দেশের প্রতি ভালবাসা।

লেখক: jeffy mahin
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:০৭




মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…
১. প্রথমে বলেছেন মৃতদের পেটে কাটাছেড়ার ডাহা মিথ্যা। পরে স্বীকার করেছেন দাগ থাকে।
২. আশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেয়া হয় না। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×