somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি গল্প (দ্বিতীয় পর্ব)X(X(

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মাথাটা অতি খারাপ হয়ে আছে ইমরানের ।গত দু ঘন্টা যাবত অপেক্ষা করছে সে ,জনাব রিয়াদুল হকের জন্য ।উনার দেখা নাই ।উনার অফিসে ।রিসেপশনিষ্ট মেয়েটা অতি সুন্দর ।তবে তাকে এখন বিরক্তিকর সুন্দর লাগছে ইমরানের কাছে ।তার মাথায় এখন শুধু রিয়াদুল হক ।আনিকার বাবা ।

মেয়েটার সাথে কথা হয়েছে দু বার ।প্রথমবার অফিসে ঢুকার পর ।তখন অবশ্য মেয়েটাকে খুব ভালোই লেগেছিল তার ।বেশ ভাব নিয়ে হাসি মুখে তাকে দেখে বলেছিল ,

-আপনাকে কোন সাহায্য করতে পারি ??

-মনে হয় পারবেন ।জনাব রিয়াদুল হক কি এখানে চাকরি করেন ??

-জি ।

-উনাকে একটু প্রয়োজন ।

-আপনি অপেক্ষা করুন ।একটু পর আপনার সাথে দেখা হয়ে যাবে ।

-ধন্যবাদ ।

তারপরের বার কথা হয়েছিল আরো এক ঘন্টা পর ।কিছুটা মেজাজ গরম হয়েছিল তার ।

-আর কতক্ষণ ?

-আসলে উনি একটা জরুরী কাজে আটকে আছেন ।তাই আসতে পারছেন না ।

-জরুরী কাজে আটকে আছেন কেন ??

-অফিসেতো অনেক জরুরী কাজ থাকতে পারে ।তাই না !!দয়া করে আপনি ওয়েট করুন ।

ওয়েট সে করছে গত দু ঘন্টা যাবত ।আনিকার বাপরে পাইলে কি করা যায় ভাবছে ।কঠিন পদার্থ মার্কা একটা ঝাড়ি দিতে হবে ।আবারো গেল সে ঐ মেয়েটার কাছে ।

-উনি আসবেন ?

-জানি না ।

-মানে কি ??উনার জরুরী কাজ শেষ হবে না ।

-বলতে পারছি না ।

-কেন ??

-কারণ উনি এইখানে চাকরি করেন না ।

-আপনি না আমাকে বললেন ,উনি এইখানে চাকরি করেন এবং উনি একটা জরুরী অফিসের কাজে আটকে আছেন ।

-বলেছিলাম ।কারণ আমি জানতাম না ।

-না জেনে উত্তর দিয়েছেন কেন ??

-দেখুন উনি গত কয়েকদিন আগে মাত্র রিজাইন লেটার জমা দিয়েছেন ।আর আমি এসেছি নতুন ।এম্লয়িদের ফোল্ডারে এখনো উনার নাম আছে ।ডিলেট করা হয় নি ।উনাকে আমি চিনতাম না ।আর কেউ খুঁজতে আসলে এবং যাকে খুঁজতে আসা হয় উনার যদি দেরি হয় তাহলে আমরা উনি ব্যস্ত আছেন বলি ।আমি অফিসের অভ্যন্তরে আপনার খুঁজতে আসার খবর পাঠিয়েছিলাম ।আমাকে কোন জবাব দেওয়া হয় নি ।আমি একটু আগে জেনেছি ।ভেবেছি আপনি চলে গেছেন ,তাই জানানো হয় নি ।আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন ।আই এম এক্সট্রিমলি স্যরি ।

-বুঝেছি ।সরকারী অফিসের চেয়ে বাজে অফিস ।আপনাদের বাজে অফিসের অবস্থা ব্যাখ্যা করার জন্য ধন্যবাদ ।



মেয়েটার চেহেরা দেখার মত হয়েছে ।মাথা নিচু করে ফেলেছে ।খারাপ লাগল ইমরানের ।মেয়েটার দোষ ছিল না ।

আনিকাদের মামার বাড়ি যাবে কিনা ভাবছে ।মামাদের প্রতিক্রিয়া দেখার ইচ্ছা হচ্ছে ।পুরো দু ঘন্টা নষ্ট হওয়াতে আফসোস লাগছে তার ।আনিকার বাবার চাকরি ছেড়ে দেয়ার কারণও বুঝতে পারছে না ।আনিকার কাছে শুনেছিল ,গত পনের বছর ধরে এইখানেই চাকরি করছিলেন ।মাথায় ঝামেলা একটা নিয়ে আসার পর দেখছে ঝামেলা বাড়ছেই ,জনাব রিয়াদের চাকরি ছাড়া নিশ্চয় ভাল কিছু বহন করে না ।

স্থির করে ফেলেছে আনিকাদের মামার বাড়িতে যাবে ।কিছু যদি জানতে পারা যায় !!!

-------------

রাইমার আত্মকথন



তাপ্পড়টা বেশ লেগেছিল ।এত জোরে মারবে কল্পনাও করি নি ।তারপর আবার বলল কি ,প্যাচপ্যাচানি বন্ধ হয়েছে কিনা !!বেয়াদপ একটা ।রাহাত ভাইয়াকে খুঁজতে এইভাবে চট্টগ্রাম ছোটে যাবে ভাবতে পারি নি ।আমি কেন !!আনিকা আপুও ভাবতে পারি নি ।ঐদিন বুঝতে পেরেছি ,আনিকা আপুকে অনেক পছন্দ করে ইমরান ।আমার খারাপ লাগা উচিত ছিল ,খারাপ লাগে নি ।নিজেকে কেন জানি খুব গর্বিত মনে হচ্ছিল ।কেন হচ্ছিল জানি না ।

যাওয়ার সময় চেহেরাটা এমন শান্ত লাগছিল তার ,বলার মত না ।সাধারণ ইমরান তখন সে ছিল না ।সাধারন ইমরানের চেহেরায় সবসময় একটা উদ্ভ্রান্ত ভাব থাকে ,কিছুটা ফানি টাইপের ।আজকের সকালে ঐ উদ্ভ্রান্ত ভাব ছিল না ।কাঁধে যেন বিশাল দায়িত্ব ।যে দায়িত্বটা তার পালন করতেই হবে ।

ও যাওয়ার পর থেকেই মন খারাপ ।পড়াই মন বসাতে পারছি না ।অথচ কিছুদিন পরেই এক্সাম ।আনিকা আপুর ওখানেও যেতে ইচ্ছা করছে না ।উনি খুব একটা কথা বলেন না ।সবসময় চুপচাপ থাকেন ।বড় ঝড় যাচ্ছে উনার উপর দিয়ে ।হঠাত সবকিছু চ্যাঞ্জ হয়ে গেছে আসলে ।বেশি টাকাও আর হাতে নাই নাকি !!কি করবেন বুঝতে পারছেন না ।উনাকে চিন্তা না করতে বলেছি ।সবসময় পাশে থাকব ,এই আশ্বাসও দিয়েছি ।কিন্তু উনার মত স্বাধীনচেতা মেয়ের পক্ষে আসলে এইভাবে থাকাটাও অনেক সমস্যার ।সব কিছু নির্ভর করছে এখন ইমরান কি খবর নিয়ে আসে তার উপর ।



আমিও পড়েছি মহা ঝামেলাই ,কিভাবে নিজের ভাল লাগার কথা ইমরানকে জানাবো বুঝতে পারছি না ।অবশ্য বলাটাও সমীচিন মনে হচ্ছে না ।বলব কিভাবে আমি !!ও তো পছন্দ করে আনিকা আপু কে ।আমি কি করে ওকে বলি !!আমার কথা বুঝতে পেরে হয়তো সে হাসবে ।

মনের অজান্তে কান্না করি ,অথচ এই কান্নার কোন অর্থ খুঁজে পাই না ।হয়তো অর্থ পাই ,কিন্তু পেয়ে কি লাভ !!উনার চেহেরাই আগের চেয়ে উদ্ভ্রান্ততা কেন বেড়েছে তাতো আমি জানি ।আগের চেয়ে অসংলগ্ন কথা কেন বেড়েছে তাও জানি ।দার্শনিকতার ভান ধরে ।কেন ধরে জানি !!জারিন আপুর কাছে শুনেছি দেশের বাইরে চলে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে ।কেন করছে আমি কি জানি না !!জানি ।ও পালাচ্ছে আসলে ।সব কিছু থেকে পালাচ্ছে ।আমার উচিত তাকে পালাতে না দেয়া ।কিন্তু আমি কি পারব !!পারার শক্তিতো আমার হাতে নেই ।সব শক্তি তো ঐ উদ্ভ্রান্তের মত চেহেরার মানুষটা কেড়ে নিয়েছে ।

ওর সাথে কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছে ।জানি খুব ব্যস্ত আছে হয়তো ।ডিস্টার্ব করা উচিত হবে কিনা বুঝতে পারছিনা ।অতসত ভাবলে যে ফোনটাও দেওয়া হবে না ।তাই দিয়ে দিলাম ফোন ।দু একবার রিং হওয়ার পর রিসিভ করল ।

-কেমন আছেন ??

-বুঝতে পারছি না ।আশপাশে খুব জটিল সব কান্ড ঘটছে ।মনির নামের একটা বাচ্চা ছেলের দেখা পেয়েছি ।বেশ মজার কথা বলে ।আরো মজার ব্যপার হল সে নাকি আমাকে চিনে ।আমার নাম জানে ।তার আপু নাকি প্রায় সময় আমার কথা বলত ।আপুকে গত কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে না নাকি !!আপু নাকি এখন আর চকলেট আনে না তার জন্য ।অবশ্য এতে সে নাকি মন খারাপ করছে না ।তার বাবা তাকে বলেছে আপু দেশের বাইরে পড়তে গেছে ।পরের বার আসার সময় অনেক চকলেট আনবে !!

-আপনি কোথায় এখন ??

-আনিকাদের মামার বাড়িতে ।মনির আনিকার চার বছরের মামাত ভাই ।তার ছোট মামার ছেলে ।আমি ভাবতেও পারছি না ,এইরকম একটা পরিবার ফেলে আনিকা কিভাবে দেশের বাইরে পড়তে যাইতে পারল !!আনিকাকে বলিও না ,আমি ওদের বাড়িতে এসেছি !!আমি ওকে বলেছি ,ওর বাবার সাথে এখনো দেখা হয় নি ।আমি এখনো ওর বাবার অপেক্ষায় ,উনার অফিসে বসে আছি ।

-উনি কোথায় ??

-এখনো জানি না ।চিন্তা করিও না ।খারাপ কিছু এখনো ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে না ।

-আপনি খেয়েছেন কিছু ??

-সকাল থেকে বাঁশের উপর আছি । এর চেয়ে বেশি খাওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হচ্ছে না ।এখন ফোন রাখ ।কোদাল মুখো অর্থাৎ আনিকার মেজ মামা আসছে ।পরে ফোন দিব ।

ফোনটা কেটে দিল ।ফোন কেটে দেয়ার পর আপনাআপনি মুখ থেকে বের হয়ে গেল , ‘বাইই ,লাভ ইউ !!’ ।







আনিকার মামার বাড়ি খুঁজে পেতে বেশি বেগ পেতে হয় নি ইমরানের ।কোদাল মুখো এক মানুষের দেখা পেয়েছিল সে ।চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের বাড়ি কোথায় জিজ্ঞেস করাতে ,বলল সে কে ??

ইমরান আশ্চর্য মুখ এবং কঠিন চেহেরায় বলল ,

-আপনার জানার দরকার আছে ??

-আছে ।

-জানতে পারি কারণটা ?

-আমি উনার ছোট ভাই ।

জবাব শুনে চুপসে গিয়েছিল ইমরান ।ভাবতে পারে নি আসলে সে ,কোদালের মত চেহেরার এই মানুষটা আনিকার মামা হতে পারে ।চেহেরা যেমন শরীরও তেমন ।কোন একটা রেসলারের সাথে মিল পাচ্ছিল ।একটু ভাবতেই বুঝতে পারল , “THE GREAT KHALI” ।

-আসলে আমি বুঝতে পারি নি ।আসসালামু আলাইকুম ।

-অসুবিধা নাই ।বলুন ।ভাইয়াকে খুজছেন কেন ??

-আমি ঠিক উনাকে খুঁজছি না ।উনার বাড়িটাকে খুঁজছি ।ঐখানে নিশ্চয় রিয়াদুল হক নামের কেউ একজন থাকেন ??

-থাকত ।এখন নাই ।উনাকে খুজছেন কেন ??

-আমি আসলে আনিকার ফ্রেন্ড ।ইমরান ।কক্সবাজার থেকে এসেছি ।

-আনিকা !!দুপুরে খেয়েছ কিছু ??

-না ।

-আস আমার সাথে ।

বলেই সামনে হাঁটা শুরু করলেন ।ইমরানও তাঁকে অনুসরণ করতে লাগল ।সোজা বাড়িতে নিয়ে আসলেন ।খাওয়া দাওয়া শেষ করে মাত্র উঠল সে ।ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আছে ।ইমরান বসে আছে একটা সোফার উপর ।কিছুটা নার্ভাস সে ।জনাব আনিসুর রহমানকে দেখা যাচ্ছে না ।বয়স্ক মত দুজন মহিলা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে ।এর মধ্যে কোন জন আনিকার মা সে বুঝতে পারছে না ।দুজনের যে কোন একজন হতে পারে ।অপরজন নিশ্চয় ওর বড় মামি ।মেঝ মামা এবং ছোট মামা নিজেদের মধ্যে আলাপ করছে ।আলাপের বিষয়বস্তু বুঝা যাচ্ছে না ।আনিকার ছোট মামাকে ভ্যাবদা টাইপের মানুষ মনে হচ্ছে ।এই টাইপের মানুষরা নিজেদেরকে অতি চালাক মনে করলেও ,মাঝে মাঝে উনারা যে উচ্চ শ্রেণীর গাঁধা তা প্রমাণ হয়ে যায় ।ছোট মামা তার দিকে অতি সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছে ।

আনিকার বাবাকে দেখা যাচ্ছে না ।দেখা যাওয়ার কথা না মেঝ মামা বলেছে উনি এইখানে থাকেন না ।কিন্তু আনিকা বলেছে থাকে ।আনিকার মাকেও দেখা যাচ্ছে এখানে ।অর্থাৎ কিছু একটা ঘাপলা আছে ।মেঝ মামার কাছে কয়েকবার প্রশ্ন করার পরও উনি উত্তর দিয়েছেন একটাই ।চাকরি পাল্টেছেন ।যা সদুত্তর নয় ।

হঠাত মামা দুজন চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল ।মাথা গুরিয়ে ইমরান দেখল ,শ্মশ্রুমন্ডিত শান্ত কিন্তু উজ্জ্বল চেহেরার এক মানুষ রুমে প্রবেশ করল ।বুঝতে পারল ইনিই আনিকার বড় মামা ।

নির্দিষ্ট চেয়ারে উনি বসলেন ।ঠান্ডা চোখে কিছুক্ষণ মাপলেন ইমরান কে ।ইমরানের এতক্ষণ ভয় করে নি ।এখন করছে ।এই চাহনীর মাঝে গাঁ শিরশিরানো টাইপের কিছু আছে ।

বলিষ্ঠ অথচ শ্বান্ত কন্ঠে উনি জিজ্ঞেস করলেন ,

-নাম ?

-ইমরান ।

-কক্সবাজার থেকে ??

-জ্বি ।

-কোন কারণে এসেছ ?

-জ্বি ।আনিকার বাবাকে খুঁজতে ।

-কারণ জানতে পারি ??

ইমরানের মন থেকে হঠাত ভয় দূর হল ।এইভাবে জ্বি জ্বি করলে সব গুলিয়ে ফেলা হবে ।স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলল ,

-না ।প্রাইভেট ব্যাপার ।

জনাব আনিসুর রহমানের চোখে স্পষ্ট অবিশ্বাস্য ।চোয়াল হয়তো খানিকটা কঠিন হয়ে গেছে ।

-ও এইখানে থাকে না ।তুমি যেতে পার ।

-আনিকার আব্বু নেই ,আম্মু তো আছে ।উনার সাথে কথা বলা যাবে ??আপনার অনুমতি নিচ্ছি না ।উনি কে তা দেখিয়ে দিতে বলছি ।আসলে ঐ দুই মহিলার মাঝে কে আনিকার শ্রদ্ধেয় আম্মাজান তা বুঝতে পারছি না ।

জনাব আনিসুর রহমান এইবার সত্যি সত্যি রেগে গেলেন ।তবে মুখে তা প্রকাশ করছিলেন না ।ছেলেটা কতটুকু যেতে পারে তা দেখছিলেন ।শ্বান্ত কন্ঠেই বললেন ,

-তুমি আসলে কি বলতে চাচ্ছ ?

-দেখুন আমি এইখানে খামোকা আসি নি ।একটা দায়িত্ব নিয়ে এসেছি ।

-দায়িত্বটা কি তা সহজ ভাষায় বলে ফেললেই তো হচ্ছে ।এত তালগোল পাকাচ্ছ কেন ??

উনাদেরকে সব কথা বলে দেওয়া উচিত হবে কিনা ভাবছে সে ।সব কথা বললে উনাদের কি প্রতিক্রিয়া বুঝতে পারছে না সে ।স্থির করে ফেলল ,বলে দিবে সে ।

-আমি যা বলছি মনোযোগ দিয়ে শুনুন ।আপনাদের নিশ্চয় অজানা নেই ,আনিকা একটা ছেলেকে বিয়ে করেছে ।নাম রাহাত ।ছেলেটা ভাল কি খারাপ আমি জানি না ।কারণ অবজারভ করার খুব একটা টাইম পাই নি ।কিন্তু আনিকা হয়ত তার মাঝে ভাল কিছু দেখেছিল অথবা লাইলী মজনু টাইপের ভালবাসায় মজেছিল ।আপনারা হয়তো ভাল কিছু তার মাঝে দেখেন নি ।তাই মেনে নেন নি ।ফলাফল সাধারণ বাংলা সিনেমায় যা হয় ,নায়ক নায়িকা নিরুদ্দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করল ।যাত্রা পথ আমার ঐখানে গিয়ে শেষ হল ।আসলে যাওয়ার আর জায়গা ছিল না ।কক্সবাজারইতো বাংলাদেশের শেষ ।

-তোমার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করলে খুশি হব ।



বললেন আনিকার মেঝ মামা ।



-ধন্যবাদ ।আমি আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব ।যা বলছিলাম ,আমাদের বিল্ডিংয়ে বাসা একটা খালি ছিল ।বাড়িওয়ালাকে রাজি করালাম ।উনি আবার চৌদ্দগুষ্টির খবর নিয়ে ছাড়েন ।এইক্ষেত্রে নিতে পারেন নি ।ক্রেডিট আমার না ,উনার মেয়ের ।আমাদের পক্ষের মেয়ে তো ।যাক সে কথা , দু তিন সপ্তাহ মত ভালোই গেল ।রাহাতও এক চাকরি যোগাড় করে ফেলেছিল ।হঠাত একদিন সে গায়েব ।গায়েব হওয়ার আগে সে আমাকেও ফোন করেছিল ,আনিকাকেও ফোন করেছিল ।আমাকে বলেছিল আনিকাকে দেখে রাখতে ।আর আনিকাকে বলেছিল বাচ্চার নাম কি রাখবে এসব বিষয় ।অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন ,আপনাদের নাতি অথবা নাতনী coming soon ।আপনাদেরকে বললাম ।মেয়েটা একেবারে একা হয়ে গেছে ।আমরা থাকলেও না থাকার সমান ।তাই ওর বাবাকে খুঁজতে এসেছিলাম ।পাই নি ।আপনাদেরকে বললাম ।

হঠাত একটা আর্তনাদের মত একটা কন্ঠ শুনে ওদিকে তাকাল ইমরান ।বয়স্ক মহিলাদের একজন ।

-আমি বলেছিলাম মেয়েটাকে ।ছেলেটা এমন করবে ।আমার কথা শুনে নি ।

-আন্টি আপনি হয়ত ভুল করছেন ।ব্যাপারটা হয়তো মোটেও ওরকম না ।রাহাত ভাই হয়তো বাধ্য হয়েছে অথবা উনার কোন বিপদ হয়েছে ।আমি ঠিক জানি না ।কিন্তু আমার ঐরকমই মনে হচ্ছে ।

-ছেলে এইবার একটু চুপ হয়ে বস ।জাহানারা ,আপাকে ভিতরে নিয়ে যাও ।আমি কথা বলছি ।

গম্ভীর কন্ঠে বললেন জনাব আনিসুর রহমান ।

আনিকার মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রমহিলা উনাকে নিয়ে ভিতরের ঘরে চলে গেলেন ।

-তুমি যা বলছ ,তা হয়তো সব সত্যি ।কিন্তু আমাদের এখন কিচ্ছু করার আছে বলে মনে হচ্ছে না ।সে তার পথ বেছে নিয়েছিল ।তার ঐ পথেই থাকতে হবে ।কিভাবে থাকবে তা আমাদের চিন্তা করার বিষয় না।

গম্ভীর কন্ঠটা আবার আবার শুনল ইমরান ।

-কিন্তু ও তো আপনাদের পরিবারের একজন সদস্য ।

-ছিল ।এখন নেই ।সে রাহাত নামের ছেলেটার পরিবার হয়ে গেছে ।তাঁকে বাড়িতে ফেরত আনানোর ইচ্ছা থাকলে অনেক আগেই আনাতে পারতাম ।আমরা চাচ্ছি না ।যে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে তাকে সাহায্য করার কোন অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না ।তোমার আর কিছু বলার থাকলেও শুনতে চাচ্ছি না ।

-কিন্তু আন্টিতো কষ্ট পাচ্ছে ।

-সেটা আমরা বুঝব ।তবে তোমার একটা ধন্যবাদ পাওয়া উচিত ।নিজের কোন লাভ ছাড়াই তুমি এইখানে এসেছ বলে ।বিশ্রাম করার ইচ্ছা থাকলে করতে পার ।না হয় চলে যেতে পার ।আরফান (মেঝ মামা), ওকে সহী সালামতে গাড়ীতে তুলে দিবা ।আর হ্যা ,রিয়াদকে খুঁজে বের করে তোমার আবেদন করতে পার ।সে হয়তো তার মেয়েকে সাহায্য করবে ।



তিন ঘন্টা পর ।



ইমরান এখন বাসে ।কক্সবাজার ফিরে যাচ্ছে ।অনেক মিশ্র অনুভূতি নিয়ে ফিরে যাচ্ছে ।কোদাল মুখো মানুষটা এত ভাল কেন ,তা যেমন বুঝতে পারছে না ।তেমনি জনাব আনিসুর রহমান মানুষটা এত খারাপ কিভাবে হতে পারে তাও বুঝতে পারছে না ।

বাসে তুলে দেওয়ার আগে জনাব আরফান ওরফে দ্যা গ্রেট কালি তাকে আশ্বাস দিয়েছে দু এক দিনের মাঝেই সে কক্সবাজার আসছে ,সাথে জনাব রিয়াদুল হকও থাকবেন ।রাহাতকে খোজার আশ্বাসও উনি দিয়েছেন ।দেখা যাক কি হয় !!!



১০



আনিকার আত্মকথন



সারাদিন অস্থিরতাই কাটল ।ইমরানের একটা ফোনের জন্য ওয়েট করেছি ।বেয়াদপটা ফোন দেয়নি ।অবশ্য তাকে বেয়াদপ বলাটাও উচিত হচ্ছে না ।সে যা করছে তা তো অন্য কেউ করবে না ।আরেকজনের উপরও যথেষ্ট কৃতজ্ঞ ।রাইমার উপর ।মেয়েটা নিজের বোনের মত হেল্প করছে আমাকে ।

থাকতে না পেরে ইমরানকে ফোন দিয়েছিলাম ।রিসিভ করে নি ।মেসেজ পাঠিয়েছিলাম ।রিপ্লাইও দেয় নি ।অবশেষে আবার ফোন করলাম ।রিসিভ করল ।

-কোথায় এখন ?

-আপাতত রাস্তায় হাঁটছি ।

-কোন খবর ?

-অনেক বড় খবর ।প্রস্তুতি নাও ।

-কেন ??কি হয়েছে ??রাহাতকে পাওয়া গেছে ??

-রাহাতকে পাওয়া যাবে না ।উনি একটা ওষুধ খেয়েছেন ।গায়েব হওয়ার ওষুধ ।গায়েব হওয়ার ওষুধ খেয়ে উনি গায়েব হয়ে গেছেন ।

-কি বাজে কথা বলতেছ ??

-বলব নাতো কি করব !!প্রথমে তো বাবার কথা জিজ্ঞেস করতে পারতা ।করেছ ??করতেছ, যে তোমাকে ফেলে যেতে বাধ্য হয়েছেন তার কথা ।আমি কিন্তু রাহাত ভাইকে দোষারূপ করছি না ।বলেছিইই তো উনি বাধ্য হয়ছেন ।

তার কথা শুনে মনটা সত্যি অনেক খারাপ হয়ে গেল ।আমি আছি আমার চিন্তা নিয়ে ,আর সে করছে ফাযলামো ।আমি রাহাতের কথা জিজ্ঞেস করব নাতো ,কার কথা জিজ্ঞেস করব ।আব্বুকে নিয়ে তো চিন্তা নেই ,উনি নিশ্চয় বাড়িতে খুব ভাল মতই আছেন ।কিন্তু রাহাত !!সে বেঁচে আছে কিনা মরে গেছে কেউ কি জানে !!তার কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলা কথাগুলা যে এখনো ঘুম ভেঙ্গে দেয় ।তার প্রতিটা স্পর্শ যে আমি এখনো অনুভব করি ।কেউ দরজা নক করলে যে ,প্রথমেই তার চেহেরাটা মনে ভাসে ।

-কিরে চুপ কেন ?? ওপাশ থেকে আবারো বলল ইমরান ।

--না ,এমনিতে ।বল ,কি অবস্থা আব্বুর ??দেখা হয়েছে উনার সাথে ??

-তুমি কাঁদছ ??

-না ।কই ??

-আসলে স্যরি তোমাকে কথাগুলা এইভাবে বলা উচিত হই নি ।আমি এখন বাসে ।আবার ফিরে আসছি ।আঙ্কেলের সাথে দেখা হয় নি ।উনি উনার চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন ।তোমার মামার বাড়ির গেট থেকে ফিরে এসেছি ।ঢুকার জন্য সাহস হয় নি ।কয়েকটা ফ্রেন্ডকে রাহাত ভাই সম্পর্কে খোজখবর নিতে বলেছি ।সবাই পুলিশের কাছে যাওয়ার জন্য বলছে ।দেখি কি করা যায় ।কক্সবাজারে আব্বুর এক পরিচিত পুলিশ আছেন ।আব্বুর সাথে কথা বলে দেখতে হবে ।

-আব্বু চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন কেন ,কিছু জানতে পারছ ??

-না ।অফিস থেকে বলেছে উনি হঠাত রেসিগ্নেসন লেটার জমা দিয়েছেন ।কারন হিসেবে কিছু উল্লেখ করেন নি ।কান্না করিও না ।আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে ।আমি রাখছি ।পরে কথা হবে ।

-ওকে ।রাখ !!

ইমরান ফোন রাখার পর মনটা স্বাভাবিক ভাবেই খারাপ হয়ে গেছে ।কান্না আসছে অনেক ।কিন্তু কেঁদে কি লাভ !!সব হারাচ্ছি ।প্রথমে মা ,মামা ,মামী ,মামাত ভাইবোন ;তারপর রাহাত আর এখন বাবা ।

চাঁদটা বেশ আলো ছড়াচ্ছে আজ ।পূর্ণিমা হয়ত !!ছোট বেলায় ছাদে চাঁদের আলোতে বসে গল্প বলত বাবা ।চারপাশে আমরা গোল হয়ে বসতাম ।আমি এবং মামাত খালাত ভাইবোনরা ।অধীর আগ্রহে শুনতাম ।মাঝে মাঝে মাও আসত ।বাবাকে বকা দিত ।বাচ্চা ছেলের মত আচরণ করত বলে ।অদূরে বড় মামা দাঁড়িয়ে হাসত ।মাঝে লুকোচুরিও খেলতাম ।বাবার একটা কমন জায়গা ছিল পানির ট্যাংকের পিছনে । যখন আমি চোর হতাম ,শুধু তখনি উনি ঐ জায়গাটাতে লুকাত ,যাতে আমি সহজে উনাকে খুঁজে পাই ।

সব কিছু বদলে গেছে ।সেই ছাদ নেই ,সেই বাবাও নেই ।বাবার গল্প শুনার সংগি ভাইবোনরাও নেই ,বাবাকে বকা দেয়ার জন্য মাও নেই ,মায়ের বকায় অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা হাস্যরত বড় মামাও নেই ।

তবে চাঁদটা আছে ,তার ছড়ানো মুক্তার মত আলোও আছে ।আর আছে একরাশ হতাশা ,দু চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় ঝরে পড়া লবনাক্ত পানি এবং কিছু স্মৃতি ।

সব পালটে গেছে ,সব !!সব পালটে দিয়েছে রাহাত ।স্রেফ উলটপালট হয়ে গেছে জীবনটা ।



---------------------------------------



ইমরানের আত্মকথন



আনিকাকে চমকে দেয়ার প্লান ছিল ।চমকে সে যাবে ,তবে কিছুদিন পর ।যখন তার বাবাকে সহ নিয়ে তার মেঝ মামা তাকে দেখতে যাবে ।কিন্তু ওর মেঝ মামা কি আদৌ আসবে !!ভরসা করা যায় !!বুঝতে পারছি না ।দ্যা গ্রেট কালির চেহেরাটা তখন ভাল করে বুঝা যায় নি ।অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল ।কন্ঠস্বর শুনে বুঝার উপায় নেই ।যেমন শরীর তেমন কন্ঠ ।দানব মার্কা ।আলিফ লায়লার দানবদের এইভাবে কথা বলতে শুনেছি ।তবে তাদের কথায় নাটকীয়তা থাকে ।এই বেটার কন্ঠে তাও নেই ।একেবারে রোবটিক দানব ।তবে তার কথা বিশ্বাস করা ছাড়া ,আমার আর কোন ভরসা নেই ।

তবে সব কিছু কেমন যেন পেছিয়ে গেছে ।বুঝায় যাচ্ছে ,আনিকার মামাদের সাথে ঝামেলা বেঁধে গেছে আনিকার বাবার ।নিশ্চয় আনিকা বিষয়ক কোন ঝামেলা ।ফলে উনি বাড়ি ছেড়েছেন ,চাকরিও ছেড়েছেন ।বাড়িও ছাড়লে ,চাকরিও ছাড়লে উনি যাবেন কোখায় !!একটা জায়গায়ই যাওয়ারই সম্ভাবনা ।উনার নিজের গ্রামের বাড়ি ।গ্রামের বাড়ি কোথায় পরে জানা যাবে ।জনাব কোদাল মুখো যদি উনার কথা না রাখেন তাহলে গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত খুঁজতে যেতে হবে ।আচ্ছা ,আমি এই দৌড়াদৌড়ি করছি কিসের জন্য !আসলেইতো ,আমি দৌড়াদৌড়ি কিসের জন্য করছি ।আমার তো কোন লাভ নেই ।আমিতো কিছুদিন পরই মধ্যপ্রাচ্যে গমন করব ।কোন সংজ্ঞাতেই যে ফেলতে পারছি না ।যেমনটা কোন সংজ্ঞাতেই ফেলতে পারছি না ,এই অসময়ে রাইমা নামের আধপাগল মেয়েটার ফোন দেওয়াটা ।রাত বাজে একটা ।ফোন দেয়ার সময় এইটা !!!



----------------------------------



রাইমার আত্মকথন



রাত বাড়ছে ।দুশ্চিন্তা বাড়ছে ।ইমরানের জন্য দুশ্চিন্তা ।আনিকা আপুর জন্য দুশ্চিন্তা ।চাঁদটাও কেমন বিষণ্ণ ভাবে আলো ছড়াচ্ছে আজ ।বিষন্নভাবে আলো ছড়াচ্ছে !!হয়ত না ।হয়ত আমার মনে হচ্ছে ।আনিকা আপুর কথা যখন প্রথম শুনেছিলাম ,তখন কি এক অমোঘ আকর্ষণে অস্থির হয়ে ছাদে ছোটে গিয়েছিলাম জানি না ।পরে যখন শুনলাম তেমন কিছু না ,খুব লজ্জা পেয়েছিলাম আর ভেবেছিলাম সব ঠিকঠাক আছে ।ভুল ছিলাম আসলে ।ভাবতেও পারি নি ,ইমরান আনিকা আপুকে এতটা ভালবাসবে ।

তবুও তো সব ঠিক ছিল ।রাহাত ভাইয়ের উদাওয়ের সূত্র ধরে ওর প্রেমটা আরো ভাল করে জেগে উঠেছে ।চট্টগ্রাম পর্যন্ত ছোটে গেল ,রাহাত ভাইকে খুঁজতে ।শুধু একটু মাত্র আনিকা আপুর মুখে হাসি ফোটনোর জন্য ।আমি তো কিছুই না আসলে ।খামোকা হয়ত ওকে পছন্দ করে ফেলেছি ।কিছুদিন পরই নাকি দেশের বাইরে চলে যাবে ।ওকে হয়ত জীবনেও বলতে পারবো না ।ও হয়ত জীবনে বুঝতেও পারবেন না ।বুঝতে পারলেও বুঝার চেষ্টা করবে না !!

তার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছে ।কিন্তু এত রাতে ফোন দিলে যদি সে বিরক্তিবোধ করে !!তাছাড়া সে বাসে আছে ।কিন্তু মানাতে তো পারছি না মনটাকে ।ফোন তো দিয়ে ফেলেছি ।ইমরান নামটা এত আকর্ষণ করে কেন !!

-হ্যালো ।

কন্ঠ শুনেই বুঝতেই পারছি যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছে সে ।

-কোথায় এখন !!

-জাহান্নামের দোয়ারে আছি ।

কথাটা শুনে প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছি ।বুঝতে না দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ,

-বুঝি নি ।বুঝায় দেন ।

-বুঝে না কিছু !! গাড়িতে চড়া মানেই তো জাহান্নামের দোয়ারে থাকা ।জান্নাত বলি নি ,কারণ প্রচুর পাপ করেছি ।আল্লাহর দয়া ছাড়া জান্নাতে যাওয়ার চান্স নাই ।

-কি করেন ?

-বাসে মানুষ যা করে আমি তাই করছি ।মানুষ কি করে জিজ্ঞেস করিও না আবার !!আমি মানুষ প্রজাতি।

-খেয়েছেন কিছু ??

-হুম ।এত রাতে কেন ??ঘুম টুম আসে না ।

-না ।

-কেন ??ঘুমাও ঘুমাও ।ঘুমে রাজকুমার আসবে ।পক্ষী ঘোড়ায় চড়াবে ।শুনেছি বাসের চেয়ে জোরে চলতে পারে তারা ।

-আমার রাজকুমার স্বপ্নে আসে না ।

-তাই নাকি !!তো কি দুঃস্বপ্নে আসে ??

এই মানুষটা কাঁদাতে যেমন পারে হাসাতেও পারে ।হাসছি এখন !!

-দুঃস্বপ্নেও আসে না ।রাজকুমারটা বাস্তবেই আছে !!

-তাইলে জড়ায় ধরে ঘুমায় পরো ।আমাকেও ঘুমাতে দাও ।বাস ঘুমানোর জন্য অতি উত্তম জায়গা ।রাখি ।বাইইই ।

আমাকে বিদায় বলার সুযোগ দেয় নি ।কেটে দিয়েছে ফোন ।তবে কেটে দেয়ার আগে ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে বলেছে ।না জেনে বলুক !!বলেছে তো !!

না ,চাঁদটা মোটেই বিষন্ন ভাবে আলো চড়াচ্ছে না ।চাঁদের আলো অতি উজ্জ্বল ,অতি সুন্দর !!





১২



রাত চারটার দিকে বাড়িতে পৌছাইছে ইমরান ।গেইট বন্ধ থাকবে জানত ।তাই দারোয়ানকে আগে থেকে ফোন করে রেখেছিল সে ।কিন্তু দারোয়ান ঘুম ।এতক্ষণ নক করছে কোন খবর নাই ।ফোন দেয় রিসিভ করে না ।ওর বাবাকে ফোন দিল ,ওর মা রিসিভ করল ।

-আম্মু নিচের দরজাটা খুলে দাও ।আমি পৌছায়ছি ।

-দারোয়ানকে ডাক ।

-ডাকলাম তো ।খবর নাই ।ফোনও করলাম ।রিসিভ করে না ।সকালে দেখাব আমি ওকে ।আঙ্কেল তো আঙ্কেলের মত কতগুলা মানুষ রাখছে ।

-আচ্ছা ,আমি আসতেছি ।চিল্লাচিল্লি করিস না ।

-আস ।তাড়াতাড়ি ।

ফোন সে রাখতে পারে নি ।দরজা খোলার আওয়াজ শুনে ওদিকে তাকাল ।নিশ্চয় দারোয়ান ।তীব্র বকাবকি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সে ।দরজা খুলল ।ওপাশে রাইমা ।চোখে অনিদ্রার চাপ স্পষ্ট ।কাপড় ঠিক করছে ।কিছুটা অগোছালো ছিল ।অবিন্যস্ত চুলগুলো মুখের উপর খেলা করছে ।শরতের হাল্কা হাল্কা ঠান্ডা বাতাস বইছে তখন ।চুল উড়ছে ।রাইমা মাথা নিচু করে আছে ।ইমরান স্রেফ অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে ।কি বলবে বুঝতে পারছে না ।সময় যেন থমকে গেছে ।ফিল্মে দেখেছে সে ।এই অবস্থায় সময় থমকে যায় ।রাইমা মুখটা তুলল ।

-ভেতরে আসুন ।

-হুম ,আসছি ।কিন্তু তুমি ?

-আপনার আওয়াজ শুনলাম ।ফারুক (দারোয়ান) ভাইকে ডাকছিলেন ।ফারুক ভাই ছিল না জানতাম ।তাই খুলে দিতে এলাম ।

-ঘুমাও নি ??

-ঘুমিয়েছিলাম ।একটু আগে ।হঠাত ঘুম ভেঙ্গে গেল ।শুনলাম নিচ থেকে আপনি ডাকছেন ।

-সিরিয়াল দেখ না আজকাল ,তাই না ??

ইমরানের কথা শুনে একটু হাসল রাইমা ।ছোট বাল্বের মিট মিট আলোতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল হাসিটা ইমরানের ।মেয়েটা এত সুন্দর ,এত মায়াবী আগে তো কখনো খেয়াল করে নি সে ।

-কেন বলুন তো ??

-সিরিয়াল দেখলে তো সাজুগুজু করেই গেইট খুলে দিতে আসতা ।

এইবার একটু বেশিই হাসল সে ।

-আপনি এত্ত শয়তান কেন !!

-কি জানি !!

চোখ টিপে হাসি দিল ইমরান ।রাইমাও হাসছে ।সিঁড়ি দিয়ে উঠছে তারা ।তিন সিঁড়ি উপরে ইমরান ।আর নিচে রাইমা ।ইমরান উঠছে পিছন ফিরে ।রাইমার মুখোমুখি হয়ে ।আজকে যেন ,বেশি করে দেখতে ইচ্ছে করছে রাইমাকে তার ।রাইমা হাসছে ।চোখ নামিয়ে লজ্জা লজ্জা হাসি ।

-কিরে, দরজা কে খুলে দিল ??

উপর থেকে বললেন জনাবা আসমা ।উনি তখন সিঁড়ি দিয়ে নামছিলেন ,ছেলেকে দরজা খুলে দিতে ।মায়ের দিকে তাকিয়ে আবার রাইমার দিকে তাকাল ,তারপর আবার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল ,

-রাইমা ।

-রাইমা !!

-জি আন্টি ।ইমরান ভাইয়ার কন্ঠ শুনলাম মনে হল ।ফারুক ভাইয়াও তো নাই ।তাই খুলে দিতে এলাম ।জেগে ছিলাম আমি ।

বলল রাইমা ।

-ও ।

হাসলেন তিনি ।ইমরানকে বললেন ,

-তাড়াতাড়ি আই ।

-তুমি যাও ।আমি আসছি ।যাও তুমি ।দাঁড়িয়ে আছ কেন ??আসছি তো ।

-ওকে ওকে ।যাচ্ছি ।

-ঘুমায় যাও ।আমি আসতেছি ।দরজা খুলা রেখ ।

-ওকে রাখব ।

জনাবা আসমা চলে গেলেন ।ছেলের অদৃশ্যে গিয়ে হাসলেন ।প্রেম করছে নাকি ছেলেটা ।রাইমার সাথে !!আশির দশকের ক্লাসিক প্রেম কাহিনীর মত !!বাড়িওয়ালার মেয়ের সাথে প্রেম !!উনার আর জনাব সাইফুলের কাহিনী তো ঐখান থেকেই শুরু ।



মা চলে যাওয়ার পর রাইমার দিকে তাকাল ইমরান ।রাইমাও কিছু বলছে না ,ইমরানও কিছু না ।স্রেফ দাঁড়িয়ে আছে ।রাইমা মাথা নিচু করে ,ইমরান তার দিকে তাকিয়ে আছে ।অদ্ভুত চোখে ।সম্পূর্ণ অন্য রকম লাগছে আজ রাইমাকে ।সম্পূর্ণ অন্য রকম ।সরতেও বলছে না তাকে ।

-তোমার কি ঘুম বেশি আসছে ??

-এখন একদম নাই ।

-কেন ??

-এইত হাটাহাটি করলাম যে !!

-কফি খাওয়াতে পারবা ??অথবা চা ??

অবাক চোখে ইমরানের দিকে তাকাল সে ।কি বলছে !!এইটা কি আদৌ ইমরান ।নাকি ঘুমিয়েছিল ,ঐখানে স্বপ্ন দেখছে !!না ,ইমরানই তো ।

-খাওয়াতে পারবো না ।পান করাতে পারবো ।

-ঐ হল ।ছাদে নিয়ে আসিও ।আমি ঐখানেই থাকব ।



বলেই ইমরান চলে গেল ।হঠাত করে ফিরে রাইমার দিকে তাকিয়ে হাসল ।রোমান্টিক হাসি ।রাইমাও হাসছে চোখ নামিয়ে লজ্জা লজ্জা টাইপের হাসি ।বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে !!এত পরিবর্তন !!!



এক ঘন্টা পর ।



ছাদে দাঁড়িয়ে নতুন উঠা সূর্যটা দেখছে রাইমা ।ছাদের রেলিংয়ের উপর দুটা কফির মগ ।দুটা কফির মগই কফি দ্বারা পূর্ণ ।তবে সেখান থেকে ধোয়া উড়ছে না ।ঠান্ডা হয়ে গেছে ।এক ঘন্টা আগে বানানো কফি নিশ্চয় গরম থাকার কথা না ।বানিয়েছিল রাইমা ।একটা তার নিজের জন্য ,অপরটা ইমরানের জন্য ।ইমরান আসে নি ।আসবে বলেছিল সে ।কেন আসে নি, রাইমা জানে না ।সে আসলে কিছুই বুঝতে পারছে না ।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে ।মাঝে মাঝে চোখের পানিগুলা মোছার জন্য ডান হাতটা ব্যবহার করছে ।নাক টানছে ।সূর্য দেখছে ।শরতের হাল্কা হাল্কা শীত শীত বাতাস তাকে ছুয়ে যাচ্ছে ।চুলগুলো উড়ছে ।মুখের উপর অভিন্যস্তভাবে সামনের চুলগুলো এসে পড়ছে ।সে লজ্জা লজ্জা ভঙ্গিতে তা সরানোর চেষ্টা করছে না ।করার প্রশ্নই আসে না !!কার জন্য সরাবে !!সে তো আসে নি ।সে কাঁদছে ।নাক টেনে টেনে অনবরত কান্না ।



ঘুম যখন ভাঙ্গে তখন সাড়ে ছ টা ।দড়ফড়িয়ে বিছানা থেকে নামে ইমরান ।রাইমাকে কফি বানিয়ে আনতে বলেছিল ছাদে ।মেয়েটা নিশ্চয় গেছে এবং তাকে পাই নি ।কি করল সে !!অনেক রাগ করেছে নিশ্চয় ।কিন্তু ফোন তো করে নি কেন সে !!ফোন করলেই তো তার ঘুম ভাংত ।মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে ১৪ টা মিসড কল ।ছয়টা মেসেজ কিন্তু মোবাইল সাইলেন্ট ।

“ওয়েট করছি আপনার জন্য ।”

“আপনি কোথায় ??”

“ফোন রিসিভ করছেন না কেন ??”

“কোথায় ??আমি এখনো ওয়েট করছি ।”

“কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে ??আবার বানিয়ে নিয়ে আসব ??আপনি আসবেন ??”

“কফি আবার বানিয়ে নিয়ে এসেছি ।খাবেন না !!”



শেষ মেসেজটা ছিল পাঁচ মিনিট আগের ।অর্থাৎ এখনো ওয়েট করছে তার জন্য !!পাগল নাকি !!নিজের উপর মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে তার ।ওয়াশ হয়ে এসে কেন যে ,একটু শুতে গিয়েছিল !!বেচারী নিশ্চয় অনেক কষ্ট পেয়েছে ।

ছাদে আসল ইমরান ।এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে রাইমা, পিছন ফিরে ।ছাদের দরজার আওয়াজ শুনে পিছন ফিরল সে ।ইমরান তার দিকে এগিয়ে গেল ।কাঁদছে দেখে অবাক হল ।

-এতক্ষণ কোথায় গিয়েছিলেন আপনি ??জানেন না ,আপনার জন্য আমি এইখানে অপেক্ষা করব ??কয়বার ফোন দিয়েছি !!একবারো রিসিভ করেন নি ।মেসেজ পাঠিয়েছি ,রিপ্লাই দেন নি ।কেন !!

কান্না করছিল আর বলছিল রাইমা ।রাইমার এই অভিমানী কন্ঠ শুনে ইমরানের বুঝতে বাকি রইল না ,মেয়েটা ভালবাসে তাকে ।ভালবাসার স্কেল্টা কোথায় আছে সে জানে না ,তবে বুঝতে পারছে হয়ত খুব তীব্র ।ফ্ল্যাশব্যাকে বিশ্বাসী ছিল না সে ,মনে করত মুভিতেই বুঝি এইটা সম্ভব ।কিন্তু এখন তা মনে হচ্ছে না ।তার ফ্ল্যাসব্যাক হচ্ছে ।ফ্ল্যাসব্যাকে শুধু সে আর রাইমা ।

“তার জন্য রাতে খাবার নিয়ে আসা ,সেই রাতে ঘটা কাহিনী ।বাসা ভাড়ার কথা বলার সময় ,ঐদিন ওভাবে ছোটে এসে ,আনিকার কথা জিজ্ঞেস করা ।আজকে সকালে গেইট খুলে দিতে যাওয়া” ।

সব মনে পড়ছে ।হাসিটা প্রসারিত হচ্ছে তার ।হাসি হাসি মুখে তাকাল সে রাইমার দিকে ।রাইমা চোখ মুছায় ব্যস্ত এখন ।ইমরানের হাসি হাসি মুখটা হটাত শক্ত হয়ে গেল ।নিজেকে যথা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে ।মেয়েটাকে খামোকা কষ্ট দিয়ে লাভ কি !!দুদিন পরই তো সে দেশের বাইরে চলে যাবে ।তাছাড়া রাইমা তাকে পছন্দ করে ,রাইমাকে তো সে পছন্দ করে না ।রাইমাকে সবসময় একজন ওয়েল উইশার হিসেবে দেখেছে ।সে যদি এখন তাকে পছন্দ করে ফেলে ,তাহলে নিশ্চয় তাকে এড়িয়ে চলা উচিত ।

-স্যরি ,আসলে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম ।এমনিতেই একটু করে শুয়েছিলাম ।কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না ।মোবাইলটা যে সাইলেন্টে ছিল খেয়াল করি নি ।স্যরি ।তাছাড়া তুমি চলে যাও নি কেন !!আমি আসছিনা দেখে তো চলে যেতে পারতা ।

ইমরানের কথা শুনে কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল রাইমার ।কিভাবে বলতে পারছে ‘তুমি চলে যেতে পারতা’ !!চলে যাওয়ার জন্য তো সে আসে নি ।এসেছিল ,সকাল বেলার ফুটফুটে আলোতে দাঁড়িয়ে দু দন্ড কথা বলতে ,কফি খেতে ।এর চেয়ে সুখের বিষয় আর কি হতে পারত !!কান্না আসছে তার ।তবে ঠোটে ঠোঁট চাপিয়ে কোন মতে কান্না থামিয়ে বলল ,

-আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম ।ভেবেছিলাম ,আপনি এসে যদি না পান ,তাই থেকে গেছি ।এই নেন কফি ।গরম ।মেসেজ নিশ্চয় দেখেছেন ।খান ।খাওয়ার পর এইখানে রেখে যাইয়েন ।আমি এসে নিয়ে যাব ।আমি যাচ্ছি ।আমার কিছু কাজ আছে ।

বলেই নিজের কফিটা ছাদের উপর থেকে নিচে ফেলে দিল সে ।কাঁদছিল তখন সে ।ইমরান দেখেও ,না দেখার ভান করছে ।চলে যাচ্ছে রাইমা ।যাওয়ার আগে ভাবছে এখনই হয়ত তাকে ডেকে পাশে দাঁড় করাবে ।ইমরানও জানে ,তার উচিত রাইমাকে ডাকা ,তার সাথে কথা বলা ।কিন্তু কথা বললে ,ডাকলে মায়া বেড়ে যাবে ।আর মায়ায় জড়াতে চাচ্ছে না সে ।আর মায়ায় জড়াতে চাচ্ছে না কাওকে ।স্রেফ একা থাকতে চাইছে ।কিন্তু খুব কষ্ট লাগছে তার ।বুকের নীচটায় চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে ।চিনচিনে ব্যথাটাকে সে অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করছে ।অগ্রাহ্য করে গরম কফিটার মগে চুমুক দিচ্ছে ।বড় বড় চুমুক ।

আর ছাদের দরজার ওপাশে অঝোর ধারায় কাঁদছে রাইমা ।বুক চিনচিন করা কান্না !!



১৩



-তুমি বলতে চাইছ ,আমি এই ব্যাপারে রফিকের সাথে কথা বলতাম ।

-হ্যা আমি অবশ্যই তাই চাইছি আব্বু ।

জনাব সাইফুলের মাথাটা তীব্র গরম হয়ে আছে ।ছেলে ইমরানের কাজ কর্ম কিছুতেই বুঝতে পারছেন না উনি ।ছেলেটা মেয়েটাকে ফেলে চলে গেছে ।ইদানীংকালের খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার ।পালিয়ে বিয়ে করবে কেন !!বউকে খাওয়ানোর যদি পয়সা না থাকে ,বিয়ে করবি কেন !!আর মেয়েরাই বা কেমন ,ছেলে বলল অমনি চলে আসল ।তারা কি দেখছেনা ,আশপাশে কি ঘটছে !!দুদিন মৌজ মাস্তি করে এখন মেয়েটাকে কোন সাগরে ফেলে গেছে ছেলেটা !! আর ইমরান চাচ্ছে পুলিশের সাথে কথা বলে ছেলেটার খোজ নিতে ।এইসব আজগুবি কাজের কোন অর্থ খোজে পাচ্ছেন না উনি ।

-তুমি কেন করছ এইসব !!ছেলেটা মেয়েটাকে ফেলে চলে গেছে ।এখন হারহামেশাই ঘটছে এমন ।তুমি কেন খামোকা এই ঝামেলাই জড়াতে চাচ্ছ বুঝতে পারছি না ।

-কারন মেয়েটা আমার ফ্রেন্ড ।আর জানই তো বন্ধু ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল ।এয়ারটেল ইউজ কর ,জানার তো কথা ।

-এইটা ফাযলামো করার বিষয় না ইমরান ।

-আমি জানি ।তাই তো তোমাকে সাহায্য করতে বলছি ।তোমাকে না বলে আমি নিজেই যেতে পারতাম ।কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হত না ।বাংলাদেশের পুলিশ তো !!পরিচিত কেউ বলে দিলে অথবা টাকা পয়সা দিলে কাজ করে ।আমার কাছে অত টাকা পয়সা নাই ,মেয়েটার কাছেও নাই ।অতএব তুমিই এক মাত্র ভরসা ।তোমার পরিচিত আছে ।তুমি বলে দিবা ।

-মেয়েটার আত্মীয় সজনকে খবর দিচ্ছ না কেন ?

-দিতে তো গিয়েছিলাম ।মেয়েটার ভাগ্য খারাপ ।বাবা নাই ।মামাদের বাড়িতে বড় হয়েছে ।মামারা বলেছে ,বাড়িতে ঢুকতে দিবে না ।

-বাবা নাই !!

-না ।

-ওকে, আমি সাহায্য করবো ।রফিক কে আমি ফোন করছি ।বিস্তারিত বলব ।তোমরা উনার সাথে দেখা করে আসিও ।কি কি লাগতে পারে আমি জানাবো ,উনার সাথে কথা বলে ।

আনিকার বাবা নেই কথাটা তার বাবা কিভাবে নিয়েছে বুঝতে পারছে না ইমরান ।তার বাবার এইভাবে হটাত রাজি হয়ে যাওয়ার কারণও বুঝতে পারছে না সে ।বাবা নাই বলতে সে বুঝাতে চেয়েছিল ,বাড়িতে বাবা ছিল না ।কিন্তু জনাব সাইফুল বুঝেছেন মেয়েটার বাবাই নাই ।মারা গেছে ।মামাদের বাড়িতে বড় হয়েছে ।কিন্তু ইমরানের কোন মতেই বোধগম্য হল না ,এত সহজে রাজি হয়ে গেল কেন !!এতক্ষণ তো কোন কথায় শুনতে চাচ্ছিলেন না উনি ।

বেশ খুশি মনে নাচতে নাচতে আনিকার ফ্ল্যাটের সামনে আসল সে ।এইবার নিশ্চয় আর লুকিয়ে থাকতে পারবেন না রাহাত ভাই ।গতকালের পর থেকে রাইমাকে দেখেনি সে ।তবে তাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ইমরানের ।এই দেখতে ইচ্ছা করাটাকে সে চেপে রেখেছে ।উগলে উঠতে দিতে চাচ্ছে ।কারণ সে তো মেয়েটাকে পছন্দ করে না ।পছন্দ না করলে এই রকম ফিলিং আসার নিশ্চয় কোন কারণ নেই ।তাহলে আসছে কেন !!এমনিতেই হয়ত ,মেয়েটা পছন্দ করে বুঝতে পেরে হয়ত একটু মায়ার জন্ম নিয়েছে ।

দরজা নক করছে ইমরান ।কিন্তু কেউ খুলছে না ।অনেকক্ষণ নক করার পর দরজা খুলল ।ওপাশে রাইমা দাঁড়িয়ে ।সব সময় এই মেয়েটা দাঁড়িয়ে থাকে কেন দরজার ওপাশে !!ইমরানের বুকটা কাঁপছে ।কেন কাঁপছে বুঝতে পারছে না ।অথচ কাঁপার তো কথা না ।রাইমা মাথা নিচু করা ।তার চেহেরার দিকে তাকাচ্ছে না ।সরে জায়গা করে দিল ইমরানকে ভিতরে ঢুকার জন্য ।ইমরান ঢুকছে না ।রাইমার দিকে তাকিয়ে আছে ।অথচ তার তাকিয়ে থাকাটা মোটেই উচিত হচ্ছে না ।কিন্তু একটা মোহ তাকে আটকে ফেলেছে ।এই মোহের জাল ছিড়ে ফেলা উচিত তার ।কিন্তু মোহের জালটা কিভাবে ছিড়বে বুঝতে পারছে না ।তবে মোহের জাল ছিড়ে ফেলতে সাহায্য করল আনিকা ।

-কিরে দাঁড়িয়ে আছ কেন ??ভিতরে আস ।

-এ !! হ্যা !!আসছি ।আসছি তো ।ভাল সংবাদ আছে ।

বলে সে বাসায় ঢুকে পড়ল ।মাথাটা ঝিম ঝিম করা শুরু করেছিল ।এখন চলে গেছে ।হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে যেন সে ।

-আপু ,আমার পড়া আছে ।আমি যাই ।বিকেলের দিকে আসব ।আপনারা কথা বলুন ।

বলল রাইমা ।সে ইমরানের মুখোমুখি হতে পারছে না ।সে বুঝতে পারছে ,ইমরানকে ভালবাসার কথা ইমরান বুঝে ফেলেছে ।বুঝে ফেলার পরও সে সাড়া দিচ্ছে না ।স্রেফ এড়িয়ে যাচ্ছে ।গতকাল সকালের “তুমি চলে যেতে পারতা” বাক্যটাও এই এড়িয়ে চলার অংশ ছিল ।এখন কান্না আসছে তার ।ধরা খাওয়া যাবে না এদের সামনে ।তাই নিশ্চিন্ত মনে কাঁদতে যাচ্ছে সে তার রুমে ।একটা মেয়ে যদি বুঝে ফেলে ,কোন ছেলেকে সে পছন্দ করে এবং ছেলেটা তার পছন্দের ব্যাপারটা জানার পরও তাকে অগ্রাহ্য করছে ,তখন সেই কষ্টটা হয় বর্ণনাতীত ।এই বর্ণনাতীত কষ্টটাই পাচ্ছে রাইমা ।



রাইমা যখন নিজের বাসায় এসে ঢুকল ,তখন জনাবা আফিয়া আনাম (রাইমার মা) ডাইনিং টেবিল টা পরিষ্কার করছিলেন ।রাইমার চোখ দিয়ে তখন পানি পড়ছিল ।মা কে দেখে সে তা লুকানোর জন্য দৌড় দিল ।রাইমার এহেন আশ্চর্যকর দৌড় দেখে তিনি খানিকটা চিন্তিত হলেন ।গত কাল থেকে মেয়ের অবস্থা খুব বেশি ভাল দেখছেন না উনি ।কিছু একটা হয়েছে ।ইমরানের সাথে কিছু হয় নি তো ।তিনি বুঝতে পারেন ,তার মেয়েটা ইমরান ছেলেটাকে পছন্দ করে ।কিন্তু মেয়েকে বুঝতে দেন নি ।ইমরান ছেলেটাকে তার ভালই মনে হয় ।কিন্তু মেয়েটা কাঁদছে কেন !!কি হল !!জিজ্ঞেস করবেন কিনা ভাবলেন !!তবে মন খুব একটা সাঁয় দিল না ।

--------------------------------

আনিকার সাথে বিস্তারিত কথা বলে নিজের বাসায় আসল ইমরান ।রাইমার ব্যাপারটা মাথা থেকে দূর করতে পারছে না ।বড় বোনের কাছে যাবে কিনা ভাবছে ।কিন্তু ক্ষেপাবে !!ঐ বেটির ক্ষেপানো মোটেই পছন্দ করে সে ।জনাব সাইফুল ফোন করেছিল ওকে ।ছবি টবি নিয়ে যেতে বলেছে রাহাতের ।জি ডি ও করাতে হবে নাকি !!বড় বোনের রুমে আসল ।ইদানীং জারিন চেহেরাটা সবসময় ভুতুম পেঁচার মত করে রাখে ।তার বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে ।কিন্তু সে বিয়ে করতে চাচ্ছে না ।সে বিয়ে করবে নিহালকে ।কিন্তু নিহালের খবর নাই ।কিছুদিন আগে তাকে বিস্তারিত বলেছিল ।তার বিয়ে দেয়ার জন্য তার বাবা পাত্র ঠিক করেছে ।সে বলেছিল ,দেখি ।সেই দেখি বলে যে ,ফোন রেখেছিল আর খবর নায় ।

-আপু ,কি হয়েছে তোর !!চেহেরাটা এমন করে রেখেছিস কেন ??

-ইচ্ছা হচ্ছে ।আচ্ছা শোন ,একটা কাজ করে দে না ।নিহালের সাথে একটু দেখা কর না !!

-কেন ??তোর সাথে ফোনে কথা হয় না ??

-না ।তার ফোন বন্ধ ।বিয়ের ব্যাপারে কথা বলেছিলাম তার সাথে কিন্তু এর পর থেকে ওর খোঁজ খবর নাই ।

-জানতাম ,এইরকম কিছু একটা ঘটবে ।পালাবি উনার সাথে ??

-আমি পালানোর কথা বলি নি ।আমি ওকে বলেছি ,ওর বাবা মাকে পাঠাতে ।কিন্তু সে তো এখন ফোনই বন্ধ করে রেখেছে ।

-তাহলে ।তোকে বিয়ে করার ইচ্ছা উনার নাই ।

-ফালতু কথা বলবি না ।বিয়ে করার ইচ্ছা থাকবে না কেন ??নিশ্চয় ওর কিছু একটা হয়েছে ।

-বিয়ে করার ইচ্ছা যে একেবারে নাই ,তা না ।বিয়ে করার ইচ্ছা কার আবার থাকে না !!তবে এখন বিয়ে করার ইচ্ছা নাই ।পরে বিয়ে করার ইচ্ছা আছে আর কি !!তুই যদি ততদিন অপেক্ষা করতে পারস ,তবে নিশ্চয় তোকেই বিয়ে করবে ।

-বাবাকে একটু বুঝা না !!

-আমি বুঝাতাম !!আমার নিজেরই ঠিক ঠিকানা নাই ।আবার আমি বাবাকে বুঝাতাম তাই না !!

-তোর কথা তো বাবা শুনে ।

-তোরা একটা কাজ করস না কেন !!বাগদানটা সেরে নিলেই তো পারস ।পরে বিয়ে করবা ।উনিও সেটল হবে ভাল করে ,তুইও মাস্টার্স কমপ্লিট .........

-বলেছি ।রাজি হয় নি ।তার বাবা মা নাকি রাজি হবে না ।সরাসরি বিয়ে ।

-হুম ।উনি বিয়ে করতে পারবে কি পারবে না ।এসব কিছু বলেছে ??

-না ।শুধু বলেছে, দেখি ।

-আবহাওয়া বিশেষ ভাল ঠেকছে না ।

-ফালতো কথা বলবি না ।তোর চেহেরা দেখতে ইচ্ছা করছে না ।দূর হ এইখান থেকে ।

-আমিতো দূর হওয়ার জন্য আসি নি ।

-কি জন্য আসছচ ,তাড়াতাড়ি বলে দূর হ ।তোকে দেখতে ইচ্ছা করছে না ।

-তুই নিহাল ভাইকে প্রপোস করছিলি নাকি নিহাল ভাই তোকে ??

-মেয়েরা প্রপোজ করে নাকি ???মেয়েরা তো অপেক্ষা করে থাকে ।

-ভাব নাকি ??

-বলতে পারস ।

-তুই কি একবারও বুঝাতে চাস নি ।উনাকে তুই পছন্দ করস !!

-না ।স্রেফ ওর কাছে নোট নিতাম ।আমাকে মাঝে মাঝে দেখিয়ে দিত ,কি পড়তে হবে ।

-উনাকে তখন থেকেই পছন্দ করতি ??

-প্রশ্নই আসে না ।স্রেফ ওয়েল উইশার হিসেবে জানতাম ।একদিন হঠাত প্রপোজ করে বসল ।না করে দিয়েছিলাম প্রথমে ।পরে আবার একসেপ্ট করেছি ।

-কোন কারণ ছাড়াই ??

-না ।তাকে দেখতাম ।খুব মায়া লাগত ।একটু অন্যভাবে দেখতে শুরু করেছি এর পর ।তার কাছ থেকে আবার নোট নিতে ইচ্ছে করত ।তার পাশে বসে গল্প করতে ইচ্ছা করছিল ।কিন্তু জানস পারছিলাম না ।দিন দিন ব্যাপারটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছিল ।দেখতাম তাকে প্রতিদিন ।কিন্তু ওর দিকে তাকিয়ে আগের মত হাসতে পারতাম না ।তাকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করত ,কিন্তু পারছিলাম না ।অসহ্য যন্ত্রনার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম ।অসহ্য যন্ত্রনা সহ্য করার ক্ষমতা আমার ছিল না ।তাই একসেপ্ট করে ফেলেছিলাম ।

-হুম ।বুঝছি ।

-আসলে সে চোখের সামনে ছিল বলেই হয়ত ব্যাপারটা ঘটেছে ।যদি চোখের আড়াল থাকলে হয়ত ঘটত না।

-কিভাবে বুঝছস ??

-আমি তাকে দেখতাম না ।আমারো এই ফিলিং গুলা আসত না ।ব্যাপারটা খুব সিম্পল ।

-হুম ।এই সাবজেক্ট আর ঐ সাবজেক্টে প্রচুর মিল আছে ।স্রেফ একটু উল্টা হয়ে গেছে ।

-মানে ??

-বুঝবি না ।জটিল হিসাব নিকাশ ।আড়াল হতে হবে ।

-কি বলতেছস এইগুলা !!

-সাকিব খান আর অপু বিশ্বাসের মধ্যে কি রসায়নটা আছে বুঝতে পারছি না ।মিশা সওদাগর বাবাজী এত চেষ্টা করে কিন্তু এই রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাঝে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে না কেন ,এইটাই বুঝতে পারছি না ।

-বেয়াদপ ।দূর হ তুই এইখান থেকে ।



বোনের রুম থেকে বের হয়ে আসল ইমরান বেশ খুশি মনে ।রাইমার ব্যাপারটার ওষুধ পেয়ে গেছে সে ।চোখের আড়াল হতে হবে ।যাতে সে রাইমাকে না দেখে ।প্রথম কাজ হিসেবে ,নাম্বার ডিলেট করে দিতে হবে ।তারপর দিতে হবে ফেসবুকে ব্লক ।তারপর সে তো চলে যাবে দেশের বাইরে ।কিন্তু নাম্বারটা ডিলেট করতে হাত কাঁপছে কেন !!কাঁপবেই তো !!এই রকম হয় !!তার আপুরও হয়েছিল ।



১৪



একটা যাত্রী ছাউনিতে বসে আছে ইমরান ।অনেক গাড়ি যাচ্ছে ,রিক্সা যাচ্ছে ।রাত আনুমানিক দশটা ।ছুটন্ত গাড়ি তার গায়ে বাতাস দিয়ে যাচ্ছে ।গভীর চিন্তায় আছে সে ।হাতে কিছু কাগছ ।পুলিশের কার্যালয় থেকে বের হয়েছে প্রায় চার ঘন্টা হয়ে গেছে ।পুলিশের বলা কথা গুলা চিন্তা করছে ।আদৌ কি সত্যি কিনা বুঝতে পারছে না সে ।আনিকাকে কিভাবে জানাবে ,আদৌ জানানো উচিত হবে কিনা তাও বুঝতে পারছে না ।

জনাব রফিক অর্থাৎ কক্সবাজার থানার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সাথে তার বাবা কথা বলার পরের দিনই আনিকাকে সাথে নিয়ে উনার সাথে দেখা করতে এসেছিল ইমরান ।জনাব রফিক সেদিন তাদেরকে কিছু জানাতে পারেন নি ।কথা বলেছিলেন ।সাধারণ কথা ।কখন বিয়ে করেছে ,তাদের নিজের বাড়ি কোথায় ,শেষ কখন ফোন করেছিল ,ফোন নাম্বার কি ছিল ,শেষ বার কি কথা হয়েছিল !!উনি বেশ গুরুত্বের সাথেই নিয়েছিলেন ব্যাপারটা ।চিন্তা না করতে মানা করেছিলেন ।খুব শীঘ্রই খুঁজে বের করে দিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন ।তার আশ্বাস বাণী শুনে আনিকা বেশ খুশি হলেও খুশি হতে পারে নি ইমরান ।কারণ সে বাংলাদেশের পুলিশকে ভালভাবে চিনে ।উনারা কোন কাজ সহজে করে না ,জটিল করে ফেলে ।কিন্তু ভুল ছিল সে ।এখন বুঝতে পারছে ।খুব সহজেই তারা রাহাতের খোঁজ পেয়ে গেছে ।মাত্র দু দিনের মাথায় তার নাড়ি নক্ষত্রের খবর নিয়ে ফেলেছে ।কিন্তু আসল খবরটা দিতে পারেনি ,সে বর্তমানে কোথায় অবস্থান করছে ।ইহকালে নাকি পরকালে !!

রাহাতের পরকালে গমন করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে ।যথেষ্ট সম্ভাবনার কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন ,জনাব রফিক ইমরানকে ।এই কারণগুলা আনিকা শুনে নি ।কারণ সে ঐদিন আসে নি ।রফিক আনিকাকে না জানিয়ে তার সাথে দেখা করতে বলেছিল ইমরানকে ।

রাহাত একজন আন্ডারগ্রাউন্ড ডন ছিল চট্টগ্রামের ।ইয়াবা ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত ছিল সে ।ধারনা করা হয় তাকে দিয়ে ব্যবসা করানো হত ।সে স্রেফ নিয়ন্ত্রণ করত ।তার ঠান্ডা মেজাজ এবং গুড লুকিং ইমেজটা সে সবসময় ব্যবহার করত ।ধরা পড়ত না বললেই চলে ।হঠাত এক সময় সে সব কিছু ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই ,তাকে খুব একটা একটিভ থাকতে দেখা যেত না ।এড়িয়ে চলতে চাইত এসব ।কিন্তু এড়াতে পারে নি ।কারণ এসব ব্যাপারে জড়ানো যতটা সহজ তার চেয়েও কঠিন বের হওয়া ।পুলিশ এসবের কিছুই জানত না ।জেনেছে ,একটা হত্যা ঘটনার পর ।

মাস ছয়েক আগে একটা লাশ পাওয়া গিয়েছিল চট্টগ্রাম শহরের একটা নর্দমায় ।লাশটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করার কোন কারণ ছিল না ।কিন্তু খুনের ধরন দেখে র‍্যাব তদন্ত করতে আগ্রহী হয় ।কারণ খুনটা করা হয়েছিল নৃশংস ভাবে ।হাতের আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়েছিল ,দাঁতগুলাও আস্ত ছিল না ।তদন্ত করতে গিয়ে বের হয় নাড়ির খবর ।লাশটা ছিল ,স্মাগলিং জগতের খুব পরিচিত এক মুখের ।এই পরিচিত মুখের খবর নিতে গিয়ে জানা হয় ,স্মাগলিং জগতের গুড বয় রাহাতের কথা ।যাকে ,সবচেয়ে বেশি সন্দেহ করা হয় এই খুনের জন্য ।এমনকি রাহাতকে খুন করার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজাখুঁজি শুরু করে দিয়েছিল ঐ পরিচিত মুখের বন্ধুরা ।সাথে খুঁজছিল র‍্যাব পুলিশরাও ।কারন পুলিশের ধারণা ছিল তাকে ধরতে পারলে অনেক রাঘব বোয়ালদেরও ধরা যাবে ।কারণ এই গুড বয়ের যোগাযোগ ছিল একেবারে মাথাদের সাথে ।

এর পর আর খুঁজে পাওয়া যায় নি রাহাতকে ।জনাব রফিক গত দুদিন আগে জেনেছেন ,রাহাত ছেলেটা বিয়ে করেছিল এবং তার খুব সুন্দর একটা বউ আছে ।তিনি বুঝতে পেরেছেন আনিকা কিছু জানে না ,হতচ্ছাড়াটা এই ফুটফুটে মেয়েটাকে ফেলে দিয়েছে অথৈ সাগরে ।অবশ্য ফেলে না গিয়েও উপায় ছিল না ।ফেলে না গেলে সে হয়ত বেঁচে থাকতে পারত না ,মেয়েটাকেও হয়ত বাচিয়ে রাখতে পারত না ।আদৌ হয়ত সে বেঁচে নেই ।

---------------------------



ইমরান রাত এগারটার দিকে বাসায় পৌছাল ।আনিকার ঐখানে যেতে ইচ্ছে করছে না ।সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে আনিকাকে কিছু জানাবে না ।রফিক আঙ্কেলকেও মানা করে দিয়েছে কিছু না জানানোর জন্য ।এখন ভালয় ভালয় ওর বাবাকে নিয়ে ঐ কোদাল মুখোটা আসলে হয় ।তার মাথা ঝিম ঝিম করছে ।সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে ইচ্ছে হচ্ছে না ।রাহাতের ব্যাপারটা তার বিশ্বাসই হচ্ছে না ।বাস্তব জীবনে এইটা কিভাবে সম্ভব !!সম্ভব এইটা !!ডন রাহাত !!

নিজেদের দরজায় নক করল সে ।দরজা খুলল অনেকক্ষণ পর ।দরজার ওপাশে রাইমা দাঁড়িয়ে ।এই মেয়েটাই কেন সবসময় দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকে বুঝতে পারছে না ইমরান ।আনিকার দরজার ওপাশেও সে ,মেইন গেটের ওপাশেও সে ,এখন আবার নিজেদের দরজার ওপাশেও সে ।

-এত রাতে আপনি !!

আশ্চর্যকর কন্ঠে জিজ্ঞেস করল রাইমা ।

-এত রাতে মানে ।প্রতিদিনতো এই টাইমেই বাড়িতে আসি ।তা তুমি এইখানে কেন ??

-আমি এইখানে কেন মানে !!আমিতো আমার বাড়িতে ।আপনি মনে হয় ভুল করছেন ।

-ভুল করছি !!বল কি !!এইটা সেকেন্ড ফ্লোর না ??

-না ।এইটা থার্ড ফ্লোর ।আপনি ভুলে আমাদের বাসায় চলে এসেছেন ।

ইমরান নিজের বোকামি ধরতে পারল ।কি করতে ,কি করছে সে নিজেই বুঝতে পারছে না ।রাইমা মেয়েটার সামনে সে পড়তে চাচ্ছে না ।কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ,সে বারবার তার সামনেই পড়ে যাচ্ছে ।মেয়েটা এখন মুখ টিপে হাসছে ।এই মুখ টিপে হাসাটা দেখে তার রাগা উচিত ছিল ।কিন্তু সে রাগতে পারছে না ।অদ্ভুত এক ভাল লাগায় শরীর মন জুড়িয়ে যাচ্ছে ।এতক্ষণের চিন্তা ক্লান্তি যেন এক নিমিষে দূর হয়ে যাচ্ছে ।

-পানি খাবেন ??পানি নিয়ে আসব ??রাতে কিছু খেয়েছেন ??

-পানি !!হে ,খাব ।রাতে বাইরে সামান্য নাস্তা করেছি ।নিয়ে আস ।

-আসুন ভিতরে এসে বসুন ।আমি পানি নিয়ে আসছি ।

ইমরান যন্ত্রমানবের মত ড্রয়িং রুমে বসল ।জনাব পেট মোটা ড্রয়িং রুমে টিভি দেখছিলেন ।তাকে দেখে হাসলেন ।বিদঘুটে হাসি ।কোন কথা না বলে টিভিতে খেলা দেখায় মনোযোগ দিলেন ।

ইমরান অনুমতির তোয়াক্কা না করে সোফার উপর বসে পড়ল ।সে কি করছে সে জানে না ।তার উচিত ছিল রাইমাকে এড়িয়ে চলা ।কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারনে মেয়েটাকে সে এড়িয়ে চলতে পারছে না ।বরং মেয়েটার দেওয়া পানি খাওয়ার জন্য সে তাদের ড্রয়িং রুমে এসে বসেছে ।ঘামছে সে ।কেন ঘামছে জানে না ।মেয়েটার এত দেরি হচ্ছে কেন !!পানিটা খেয়েই চলে যেত ।পানিটা খাওয়ার দরকার কি !!এখনই চলে গেলে মন্দ কি !!কিন্তু সে উঠতে পারছে না ।কারণটা জানে না !!

-কি অবস্থা ??

পেট মোটা জিজ্ঞেস করল ।

-জি !!অবস্থা !!ভাল ।আপনি কেমন আছেন ??

-আমিও ভাল ।কিন্তু তোমার আচরণে সন্তুষ্ট না ।

ইমরান বুঝল ভালই প্যারাই পড়েছে ।পেট মোটা এখন পেইনের ঝাপি খুলে বসবে ।

-আমি কি করেছি আবার ??

-সালাম দাও নি ।তোমার কাছ থেকে আমি সালাম আশা করেছিলাম ।

-স্যরি আঙ্কেল ।আসলে অন্যমনস্ক ছিলাম তো ।পরে দুটা সালাম এক সাথে দিয়ে পুষিয়ে দিব ।

পেট মোটার চেহেরাটা অগ্নিমুর্তি ধারণ করার কথা ছিল ।কিন্তু করে নি ।উনি ফুটবল খেলায় মনোযোগ দিলেন ।একটু পর আবার জিজ্ঞেস করলেন ,

-ফুটবলে কোন দল পছন্দ কর ??

-ব্রাজিল ।

-জানতাম ।তোমরা ম্যারাডোনার খেলা দেখনি তো ,তাই খেলার আসল মজাটা বুঝতে পারনি ।

-আমরা তো রোনালদো ,রোনালদিনহো ,কাকা এদের খেলা দেখেছি ।

-এরা ম্যারাডোনার কাছে নস্যি ।

-ম্যারাডোনাকে আমার বিশেষ ভাল লাগে নি ।ইউটিউবে দেখেছি ।

-তোমরা ব্রাজিল সমর্থকদের এসব বুঝিয়ে লাভ নেই ।বাদ দাও ।ক্লাবে ??

-রিয়াল মাদ্রিদ ।

-তাও জানতাম ।ব্রাজিল সমর্থকরা অধিকাংশ মাদ্রিদ সাপোর্ট করে ।তা তোমার পড়ালেখার কি অবস্থা ??কোথায় ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছ ??

-দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে ।প্রসেসিং চলছে ।

-হুম ।খুব ভাল ।এই দেশে কিচ্ছু হবে না ।দেশের বাইরেই বরং চলে যাও ।এত রাতে কোথা থেকে আসছ ??ভুল করে চলে এসেছ শুনলাম আমাদের এইখানে ।

-জি ।একটা ফ্রেন্ডের কাছে গিয়েছিলাম ।জরুরী কাজ ছিল ।ক্লান্ত ছিলাম আর চিন্তিত ছিলাম বলে কখন যে নিজের বাসাটা পার হয়ে এইখানে চলে এসেছি বুঝতে পারি নি ।

-চিন্তিত ছিলা কেন !!

-এইত একটা ব্যাপার নিয়ে ।

রাইমা এত দেরী করছে কেন বুঝতে পারছে না ।পেট মোটার পেট টা ফেটে দিতে ইচ্ছা করছে তার ।বদের হাড্ডি এত প্রশ্ন করে কেন !!এই সময় রাইমা আসল ।

-আসুন ।খাবেন ।দেরী হওয়ার জন্য স্যরি ।খাবার রেডি করছিলাম তো ।

-খাবার !!

-হুম ।

পেট মোটা বলল ,

-যাও খেয়ে নাও ।তোমাকে বেশ ক্ষুধার্ত মনে হচ্ছে ।তাছাড়া আমার মেয়ে নিজের হাতে রান্না করেছে ।

রাইমা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে ।এই হাসি মুখটা অগ্রাহ্য করা অসম্ভব ।কিন্তু ইমরানের উচিত অগ্রাহ্য করা ।সে মায়ায় পড়ে যাচ্ছে ।রাইমার মায়ায় ।রাইমার যত্নের মায়ায় ।রাইমার ঐ চোখের মায়ায় ।রাইমার কথার মায়ায় ।সে আসক্ত হয়ে পড়ছে ।



১৫



পাঁচ বছর পর



সুন্দর সকাল ।মেয়েটাকে ঘুম থেকে তুলতে পারছে না আনিকা ।মারাত্মক অলস ।স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে মেয়েটাকে কিছুদিন আগে ।এখনো কক্সবাজারে ঐ ফ্ল্যাটটাতে থাকে সে ।

এই পাঁচ বছরে বদলে গেছে অনেক কিছু ।রাহাত সম্পর্কে কোন খোঁজ সে পায় নি ।ইমরানের কাছে জানতে পেরেছিল ,পুলিশ অনেক চেষ্টা করার পরও খোজে পাই নি ।মামার বাড়িতেও ফিরে যায় নি ।জীবন সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে ।হঠাত একদিন দরজা নক করার শব্দ শুনে ,ভেবেছিল রাহাত এসেছে ।না, রাহাত আসে নি ।এসেছিল ওর মেঝ মামা ,সাথে তার মা এবং বাবা ।জীবনের সবচেয়ে সুখের মুহুর্ত ছিল তার ।মাকে ধরে অনেক কান্নাকাটি করেছিল ।ক্ষমা চেয়েছিল তাদের কাছে ।তারা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন অনেক আগেই ।নিজের মেয়ে তো !!তার মেঝ মামা এই পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশী সহযোগিতা করেছেন ।ওর বাবা ,মা আসার কয়েকদিনের মাথায় ইমরান দেশের বাইরে চলে যায় ।তখন আনিকার মনে হচ্ছিল নিজের ভাই চলে যাচ্ছে ।সে যা করেছে ,তা হয়ত কেউ করবে না কোনদিন ।তারপর তো তার কোল আলো করে ফুটফুটে একটা মেয়ে আসল ।

সব অপূর্ণতা যেন তার হঠাত করে চলে গিয়েছিল ।নিজের লাইফ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সে ।আবারো পড়ালেখা করা শুরু করেছিল ।শেষও করেছে ।এখন একটা স্কুলে চাকরিও করছে ।দিনের শুরুতে মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ততা ।তারপর স্কুলে ছেলে মেয়েদের সাথে ব্যস্ততা ।বাবা মায়ের সাথে আড্ডা দেওয়া ।ভালই চলে ।

কিন্তু সারাদিনের ক্লান্তির পর যখন রাতে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দেয় ,তখন বুকটা খুব খালি খালি লাগে ।একজনের স্পর্শ পেতে মন অনেক চায় ।কিন্তু একজনটা যে একেবারে গায়েব হয়ে গেছে ।



মেয়েটাকে অনেক কষ্টে ঘুম থেকে তুলে তাকে স্কুলে যাওয়ার রেডি করল সে ।মেয়েটা বাবার কথা জিজ্ঞেস একবারো করে নি ।ভবিষ্যতে করবে !!তখন কি বলবে সে জানে না ।ছোটবেলা থেকে নানা ,নানিকে দেখছে ।তার টাইটা খালামণিকেও দেখে ।তার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবীও সে ।রাইমাকে মেয়েটা টাইটা ডাকে ।ছোট বেলায় ডাকত ।ঐ ডাকাটা এখনো যায় নি ।

স্কুলে দেরী হয়ে যাচ্ছে দেখে খুব তাড়াতাড়ি বের হল ।খুব জোরে হাঁটছিল সে ।মেয়েটা তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁটার চেষ্টা করছে ।কিন্তু পারছে না ।প্রতিবাদ করল সে ।

-আম্মু ,এত জোরে হাটতেছ কেন ??আমি হাঁটতে পারছি না তো ।

-মা ,দেরী হয়ে যাচ্ছে তো স্কুলে ।তুমিতো দেরী করে ............

কথা শেষ করতে পারে নি সে ।সামনে আসা এক মলিন কাপড়ের ভবঘুরে টাইপের এক মানুষ তার সমস্ত মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে ।মুখে অনেক দিনের না কামানো দাড়ি ,অযত্নে বড় হওয়া চুল ।কাঁধে ঝোলার মত একটা ব্যাগ ।ঋজু ভঙ্গিতে হাটছে ।হাঁটার ধরনটা পরিচিত আনিকার কাছে ।চিরপরিচিত ।রাহাত !!!

মাথা নিচু করে হাঁটছিল বলে আনিকাকে দেখেনি সে ।রাহাতকে দেখে আনিকা দাঁড়িয়ে পড়েছে ।মেয়ে মায়ের হাত ধরে টানছে আর বলছে ,

-আম্মু দাঁড়িয়ে আছ কেন !!স্কুলে দেরী হয়ে যাচ্ছে তো !!

আনিকার নড়ার শক্তি নাই ।থাকার কথা না ।বুকের শুন্যতা হঠাত করে কোন সিগ্নাল ছাড়াই পূর্ণ হওয়া শুরু করেছে বলে বুক কাঁপছে ।বুকে ব্যাথা হচ্ছে ।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ।অঝোর ধারার পানি ।কিন্তু বুকের ব্যাথাটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে ।রাহাতও দেখেছে আনিকাকে ।দাঁড়িয়ে পড়েছে সেও ।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে তারও ।

দুই নর নারী তাকিয়ে আছে একজন আরেকজনের দিকে ।পানি পড়ছে তাদের চোখ দিয়ে ।কথা হচ্ছে তাদের চোখেচোখে ।নিঃশব্দ কথা ,অনেক বছরের জমানো কথা ,অনেক কষ্টের কথা ।জিজ্ঞাসো দৃষ্টি নিয়ে মেয়েটা দেখছে এই দুই নর নারীর অদ্ভুত কান্ড !!

-------------------------



রাইমার আত্মকথন



অনেক জল ঘোলা হয়েছে ।ইমরানও বিদেশে চলে গেছে ।বুঝতে পেরেছিল ,আমি তাকে ভালবাসি ।সাড়া দেয় নি ।সাড়া দেওয়ার অবশ্য কোন কারণও নেই ।সাড়া দিবে কেন সে ।সে তো পছন্দ করে এসেছে আনিকা আপুকে ।তবে খুব বেশি কষ্ট পেয়েছি যখন ফেসবুকে তার নীল রঙের নামটা কাল হয়ে যায় তখন ।একাউন্ট সে ডিএক্টিবেট করে নি জানতাম ।কারণ সে ফেসবুক বিহীন থাকতে পারত না ।তবু মনকে স্বান্তনা দেয়ার জন্য জারিন আপুর কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম ।আপু বলেছিল , ‘নাতো ডিএক্টিবেট করবে কেন ??আমিতো একটু আগেই তার সাথে চ্যাট করেছি’ ।

খুব কষ্ট পেয়েছিলাম ।স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলাম সে আমাকে এড়িয়ে চলছে ।বিদেশে চলে যাওয়ার পর ভাবতাম ফোন করবে ।ভাবাটা বোকামি ছিল ।কিন্তু অবুঝ মনটা বুঝতে চাইত না ।আনিকা আপুকে ফোন করত ,জারিন আপুকেও ফোন করত ।আমাকে করত না ।

আনিকা আপুর পাশে গিয়ে বসে থাকতাম ও ফোন করার সময় ।আমার কথা জিজ্ঞেস করত কিনা দেখতাম ।করত না ।আমি আছি বললেও আমার সাথে কথা বলার আগ্রহ দেখাত না ।আমি কথা বলতে চাইলে নেটওয়ার্ক ডিস্টার্ব করছে বলে রেখে দিত ।কান্না করতাম ।এখনো করি ।কেন করি জানি না !!পাঁচ বছর পরে এসেও কেন আমি একটা ছেলের জন্য কান্না করতে যাব !!কিন্তু কাঁদছি তো আমি ।

আজকে আমার সবচেয়ে বিভীষিকাময় দিন ।বান্ধবীদের কাছে শুনেছি ,তাদেরকে কোন বর পক্ষ দেখতে আসলে নাকি খুব বেশি মজা লাগে ।আমার লাগছে না ।আজকে আমাকে দেখতে আসবে ।বিয়ের জন্য ।জানি ,বাবা সব কিছু ঠিক করে ফেলেছে ।আমাকে দেখতে আসাটা স্রেফ আনুষ্টানিকতা ।ছেলেটাকে দেখি নি ।এমনকি ছবি পর্যন্ত না ।দেখার রুচি হয় নি আসলে ।নাম শুনেছি ।আরফান ।নামটা পছন্দ হয় নি ।বিয়ে করার ইচ্ছাও নাই ।মাকে স্পষ্ট জানিয়েও দিয়েছি ।কিন্তু বাবাকে কিছু বলতে পারি নি ।

রাহাত ভাই ফিরে এসেছে ,আনিকা আপু নিজের পছন্দের মানুষ্টাকে পেয়েছে ।কত সুন্দর ঘর করছে ,একটা পরীর মত মেয়েও আছে ।জারিন আপুও বিয়ে করেছে নিহাল ভাইয়াকে ।কিছুদিন পরই উনাদের দ্বিতীয় বাচ্ছা হবে ।আমি কি দোষটা করেছিলাম !!আমার ক্ষেত্রে কেন এমন হচ্ছে !!হবে না কেন !!

এমন একজনকে পছন্দ করেছি ,যে কিনা বড় স্বার্থপর !!সবসময় নিজের ভালবাসাটাকে দেখে এসেছে ।আমারটা একবারো দেখল না ।



----------------------

আরফানের সামনে বসে আছে রাইমা ।কথা বলছে না ।তাদেরকে একা একটা রুমে কথা বলতে দিয়েছে ।মানুষ্টার চেহেরার দিকে তাকাতে ইচ্ছে করছে না ।বিদঘুটে লাগছে ।প্রথমে আরফানই কথা বলল ,

-তো কেমন আছেন আপনি ??

-ভাল না ।বিরক্ত লাগছে ।

-বিরক্ত লাগছে !!

-হুম বিরক্ত লাগছে ।কেন এসেছেন আসলে ??

আরফান লজ্জা পেয়েছে ।মেয়েটার কথা খুব স্ট্রেইট ।লজ্জা পাওয়া টাইপের না ।তবে সে শুনেছিল মেয়েটা অনেকটা লজ্জাবতী টাইপের ।এখন বিপরীতটা দেখছে ।

-কেন এসেছি বুঝতেই তো পারছন !!

-বুঝতে পারছি না ।বুঝায় দেন ।

-বুঝায় দিব !!কি বলতেছেন !!

-হুম ।বিয়ে করবেন বলেই তো এসেছেন ??তাই না ??

-বলতে পার ।

-আমার বিয়ে করতে ইচ্ছে করতেছে না ।বিশেষ করে আপনাকে ।

যথেষ্ট আশ্চর্য হচ্ছে আরফান ।কি বলতেছে মেয়েটা ।

-কেন জানতে পারি ??

-প্রথমত আপনার নাম আমার পছন্দ না ।দ্বিতীয়ত আপনার ভুঁড়ি নেই ।মেয়েরা ভুঁড়িওয়ালা জামাই পছন্দ করে কিন্তু ভুঁড়িওয়ালা বয়ফ্রেন্ড পছন্দ করে না ।আপনি নিশ্চয় আমার বয়ফ্রেন্ড হতে যাচ্ছেন না ।

মেয়েটার কথার আগা মাথা কিছুই ধরতে পারছে না আরফান ।পাগল নাকি ।কি হয়েছে ।এমন করছে কেন !!পাগলের মত প্রলাপ বকছে ।

-আপনি কি কিছু জানতে চাইবেন ??আমি আসলে কিছু বুঝতে পারছি না ।

এমন সময় কলিংবেল বাজল ।রাইমা ড্রয়িং রুমের যে সোফাটাই বসেছে সেখান থেকে দরজাটা দেখা যাচ্ছে ।দরজাটা তাকে অমোঘ আকর্ষণে টানছে কেন জানে না !!তবে টানছে ।দরজাটা নিজ হাতে খুলে দিতে ইচ্ছে করছে ।কিন্তু এইখান থেকে এইভাবে উঠে যাওয়া উচিত হবে কিনা বুঝতে পারছে না ।

উঠে গেছে সে ।যন্ত্রমানবীর মত হেঁটে গেল ,আরফান অবাক হয়ে তার গমন পথের দিকে তাকিয়ে রইল ।

দরজা খুলে দিল রাইমা ।দরজা খুলে আশ্চর্য হওয়ার কথা ।কিন্তু সে আশ্চর্য হচ্ছে না ।সে ঘোলা চোখে তার সামনের হাসি হাসি মুখ করে থাকা মানুষটার দিকে তাকিয়ে আছে ।চোখ থেকে পানি পড়ছে ।তার পা কাঁপছে ।যেকোন সময় পড়ে যাবে ।হাসি হাসি মুখ করে থাকা মানুষ্টা বলল ,

-দরজা খুলে সবসময় তুমি দাঁড়িয়ে থাক কেন ??সারাজীবন দাঁড়িয়ে থাকবা ??দরজা খুলে দিয়ে বলবা ,পানি খাবা ??তুমি বস আমি পানি আনছি ।পানি আনতে গিয়ে তুমি আর আসবে না ।অনেকক্ষণ পর এসে বলবা ,খাবার দিয়েছি খেতে আস ।কথা বলছ না কেন ?ছাদে দাঁড়িয়ে কফি বানিয়ে খাওয়াবে না ??সকাল বেলার মিষ্টি বাতাসে দাঁড়িয়ে কফি খাব ।এইবার আর ঘুমাব না ।দেরি হওয়ার জন্য স্যরি ।তবে এসেছিতো ।কই বলছ না কেন ,পানি খাব কিনা ??

-বলব কিভাবে !!বলার শক্তি রাখছেন আপনি ??

-এখনো আপনি ??

-না তুমি ।

-আপুর কাছে শুনেছিলাম দু এক মাস আগে ।তোমার বিয়ের কথা চলছে ।একটু দেরী হয়ে গেল !!

-দু মাস আগে থেকে আমার বিয়ের কথা চলছে !!কি বল ,আমি নিজেই তো জানতাম না । তুমি এত ফালতো কেন !!আমাকে ফেলে চলে গিয়েছিলা কেন ??

-জানি না ।হয়ত সিনেমেটিক করার জন্য ।এইভাবে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবা ??

-না ।ভিতরে আস ।পরিচয় করিয়ে দি ,আমার হলেও হতে পারত বরের সাথে ।

-তাই নাকি !!

আরফান হতভম্ব হয়ে দেখছে ,রাইমা একটা ছেলের সাথে কথা বলছে ।ছেলেটা কে বুঝতে পারছে না ।আবার হাতও ধরছে ছেলেটার !!মানে কি এসবের !!

রাইমা ইমরানের হাতটা ধরল ।ইমরান একটা চাপ দিল ।সারাজীবন কাছে থাকার প্রতিশ্রুতির চাপ !!! (সম্পুর্ন গল্পটা ফেসবুকের এক ফ্রেন্ড এর নোটস থেকে নেওয়া। Click This Link )
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৪৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×