somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুজবের বৃক্ষ

০৫ ই আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৬:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গুজবের বৃক্ষের এত শক্তি যে জলপানি ছাড়াই তার ডালপালা গজাতে মুহুর্ত সময় লাগে না। কিন্তু গুজব ছড়ায় কারা? যারা মনে করে এটি ছড়িয়ে দিলে আন্দোলন এত তীব্র হবে যে সরকার আর নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বিপদে পড়ে যাবে। কিন্তু তারা কি এটা জানে না যে গুজব মিথ্যা প্রমাণিত হলে তাদের মুখটা কই থাকবে? কিন্তু নিজেদের কথা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পর যে লজ্জিত হতে হয়, এই লজ্জা যে অপমানের ও অসম্মানের সেটি তারা বুঝতে অক্ষম। একারণে মোটাদাগে আমরা তাদের মূর্খ মাথামোটা বলি। 

চারজন খুন আর চারজন ধর্ষণের মিথ্যা খবর রটিয়ে সাময়িক উত্তেজনা তৈরি করা গেছে ঠিকই কিন্তু পরিশেষে তারা সত্যিকারের ক্ষতি করেছে বাচ্চাদের আন্দোলনের। গুজবটি ছড়ানোর পর উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং ছাত্রলীগাররা বাচ্চাদের মেরে রক্তাক্ত করে। বাচ্চাদের রক্তাক্ত ছবি আমাদের হৃদয়কে বিদীর্ণ করে দিয়েছে। এই রক্তাক্ত ছবি আন্দোলনে আরো বড় শক্তি যোগাতে পারত, কিন্তু খুন ও ধর্ষণের মিথ্যা খবর সেটিকে একেবারে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। সরকারকে কঠোর হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এটি তারা বুঝতে অক্ষম বলেই তাদের আমরা মুর্খ বলি।

মুর্খদের সর্দার মাহমুদুর তার পত্রিকায় ছাপিয়ে দিল যে মক্কায় যুদ্ধাপরাধী সাঈদির মুক্তি চেয়ে গিলাফ পরিবর্তন করা হয়েছে। বাংলাদেশে হায় হায় রব উঠে গেল। চারিদিকে আগুন ধরে গেল। আর কেউ জানুক না জানুক মাহমুদুররা ঠিকই জানে যে তার ফলোয়াররা মুর্খ এবং খবরের সত্যতা যাচাই করার মানসিকতা তারা রাখে না। একারণেই যেকোনরকমের তথ্য দিয়ে তা ছড়িয়ে দিতে পারলেই হল। হেফাজতের হাজার হাজার আলেম নাকি মারা হইছে, ট্রাকে ভর্তি করে লাশ সরানো হচ্ছে, পরে দেখা গেল মারা গেছে ১২ জন, তারমধ্যে আবার দুইজন পুলিশ। ট্রাকের লাশ ছিল ইন্দোনেশিয়ায় সুনামির সময়ের। 

কোটা আন্দোলনের এক কর্মীকে পাওয়া গেল ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী লাকির বাসায়। লাকির ছোট ভাইয়ের বন্ধু সে। ভাইবোন একসাথে থাকে। কিন্তু ছাত্রলীগাররা ছড়িয়ে দিল লাকির সাথে রাত কাটানোর সময় কোটা আন্দোলনের নেতা গ্রেফতার।

সারা পৃথিবীতে একটি প্রতিষ্ঠিত ধারণা হল, যারা ডানপন্থায় বিশ্বাসী, দলান্ধ, যারা প্রতিক্রিয়াশীল বা উগ্র রাজনীতির আদর্শ ধারণ করে তারা সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ। এই পিছিয়ে পড়া বিত্তের দিক নয়, মন ও মননের দিক দিয়ে। বড় বড় ডিগ্রি এদের কারো কারো থাকতে পারে কিন্তু চিন্তার দৈন্যতা এদের ছাড়ে না। চৈতন্যের কানাগলিতে বিচরণ করতে করতে সত্য মিথ্যা নির্ধারণে খেই হারিয়ে ফেলে। এখানে ডানপন্থা বলতে আমি শুধু জামাতিদের বুঝাচ্ছি না কারণ আমাদের দেশের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা ইউরোপের কট্টরবাদীদের থেকেও কট্টর।

গুজবেরর আরেকটা দিক হল, গুজবটা কার বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগ আজ পৃথিবীর একটি অন্যতম সন্ত্রাসী সংগঠন। বহু জঙ্গি সংগঠনের মত এদেরও নিষিদ্ধ করার সময় বহু আগেই পার হয়ে গেছে। এদের অত্যাচারে যখন বাংলাদেশ অতিষ্ট তখন এদের বিরুদ্ধে যেকোন কথা, সেটি ডাহা মিথ্যে হলেও মানুষ সাদরে গ্রহণ করে। এটি বোঝার মত শক্তি সরকারের আছে, দুগ্ধপোষ্য শিশুও তা মনে করে না।

ধর্মে বর্ণে বিশ্বাসে মতাদর্শে বিভাজিত হতে হতে যদি একটি মানুষও আর অবশিষ্ট না থাকে সত্যটি বলার মত, দুর্বলের পাশে দাঁড়ানোর মত, মানুষে মানুষে মিলনের দুর্লভ কথাটি বলার মত, সেদিনও, সেই অতি ঘোর দুঃসময়েও আমাদের সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, অসাম্প্রদায়িকতা, আর শান্তির কথা বলে যেতে হবে, যেতেই হবে, যদি আমরা এই পৃথিবীকে বর্তমানের হাঙ্গামা থেকে উদ্ধার করে আজকের রক্তদান করা আঠারোর তরুণদের জন্য একটি নতুন পৃথিবী তৈরি করতে চাই।

***সমাপ্ত***

জাহিদ কবীর হিমন
আখেন, জার্মানি
৪ আগস্ট ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৬:২৯
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×