ইকবাল জিল্লুল মজিদ
তারিখ: ৯.১২.২৫
মানুষ জীবনের পথে চলতে চলতে বহু শত্রু খুঁজে বেড়ায়—কখনো মানুষকে দোষ দেয়, কখনো পরিস্থিতিকে, কখনো ভাগ্যকে। অথচ দুঃখ, অশান্তি ও অস্থিরতার গভীরতম উৎস থাকে আমাদের ভেতরেই—এক অদৃশ্য সংকট, এক নিঃশব্দ দ্বন্দ্ব, যা নীরবে আমাদের মনের শান্তিকে ক্ষয় করে।
আমরা সুস্থতা চাই, শান্তি চাই, মুক্তি চাই—কিন্তু নিজের ভেতরের সেই গোপন অস্থিরতার দিকে তাকাতে চাই না। কারণ নিজের ভেতরের ভুল ধারণা, ভয় অথবা ক্ষতের মুখোমুখি হওয়া সবচেয়ে কঠিন। আমরা বারবার জীবনের দরজা বন্ধ করি বাইরের মানুষের বিরুদ্ধে, অথচ যেটি আমাদের কষ্টের মূল, সেই অন্তরের দ্বন্দ্বকেই বুঝতে চাই না।
এই ভেতরের অস্থিরতা—হোক তা ভয়, সন্দেহ, অহংকার, দুঃখ, অতীতের আঘাত, কিংবা ভুল বিশ্বাস—নিরবে আমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি অনুভূতিকে প্রভাবিত করে। আমরা বাইরের পৃথিবীকে যেভাবে দেখি, তা এই অভ্যন্তরীণ আঁধারি কণাগুলোর মধ্য দিয়ে রঙিন হয়ে আসে।
বাইরের কোনো সমাধানই কার্যকর হয় না, যদি ভেতরের সংকটকে আমরা চিনতে না শিখি। শান্তির দরজা বাইরে নয়—ভিতরে। আরোগ্যের পথ অন্যের কথায় নয়—নিজের সঙ্গে সৎ আলোচনায়। মুক্তি মানে বাইরের অবস্থা বদলানো নয়; বরং নিজের হৃদয়ের ভেতরে জমে থাকা দীর্ঘদিনের অন্ধকার দূর করা।
মানুষের প্রকৃত যাত্রা হলো অন্তরের যাত্রা। সেখানে থাকে সাহস—নিজেকে সত্যভাবে দেখার; থাকে করুণা—নিজেকে ক্ষমা করার; থাকে প্রজ্ঞা—নিজের সত্যকে উপলব্ধি করার। যখন আমরা নিজের ভেতরের ভুল ধারণাগুলোকে চিনে ফেলি, যখন আমরা অভ্যন্তরের অন্ধকারকে আলোয় নিয়ে আসি—তখনই শুরু হয় সত্যিকারের সুস্থতা।
বাইরের কেউ আমাদের ভাঙতে পারে না, যতক্ষণ না ভিতরের বিভ্রান্তি তাকে পথ দেখায়।
আসল শক্তি তখনই আসে, যখন আমরা নিজের অন্তর্দৃষ্টি জাগিয়ে তুলি, নিজের মনকে শান্ত করি, এবং নিজেকে সত্যের আলোয় দাঁড় করাই।
এই উপলব্ধিই মানুষকে নিয়ে যায় প্রকৃত মুক্তির দিকে—
যেখানে দ্বন্দ্ব নেই,
সংকট নেই,
কেবল আছে নীরবতার মধ্যে এক সম্পূর্ণ সমগ্রতা—
যা আমাদের প্রকৃত আশ্রয়।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



