দেশে মোট শনাক্ত কভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ৪০৭২ জন (২৪/০৪/২০২০)। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১১২ জন এবং মারা গিয়েছেন ১৩১ জন। ৬৪ জেলার মধ্যে ৬০টি জেলায় পাওয়া গেছে কভিড-১৯ আক্রান্ত। ভাগ্যবান ৪টি জেলা হচ্ছে রাঙামাটি,খাগড়াছড়ি, সাতক্ষীরা এবং ঝিনাইদহ। এদের আর কতদিন আশঙ্কামুক্ত রাখা যাবে? কে জানে!
আমাদের মেগা সিটি ঢাকাতে কভিড-১৯ ইত্যেমধ্যে প্যান্ডিমিক আকার ধারণ করেছে। আজকে পর্যন্ত রাজধানীতে এফেক্টেড(শনাক্ত) ২০৬০ জন। যা আবার দেশের মোট এফেক্টেড রেট এর ৫০.৫৯%।মাত্র ৬ দিন আগে যা ছিল ৪৫৬ জন। ৬ দিনে বেড়েছে ৪৪৬ গুণ!! ঢাকার প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার পরও এই চিত্র! অথচ বিশাল একটা সংখ্যার (ঢাকা ফেরত) দেশের অন্যান্য অঞ্চল সেই তুলনায় কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে(!)।
টানা লকডাউনে থাকা দেশটা কতটুকু স্বস্তিতে আছে তাই একটু বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব। ঢাকা শহর বাদ দিলেও সবথেকে ভয়াবহ চিত্র ঢাকা বিভাগেরই। মোট আক্রান্তের ৩৫.৪১ শতাংশের বাস এই ঢাকা বিভাগেই। সংখ্যার হিসেবে যা দ্বারায় ১৪৪২। গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ এবং নরসিংদী; এই ৪টি জেলা আছে মারাত্মক জোনে। যেখানে এফেক্টেড যথাক্রমে ২৯৪, ১৮০, ৫৬৬ ও ১৪১ জন করে। যা দেশের মোট শনাক্তের ১২.০৮%, ৪.৪২%, ১৩.৯০% ও ৩.৪৬%। বলাবাহুল্য এসবই হচ্ছে সেই সংখ্যা যা আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। বাস্তব চিত্র যে কি! তা নিয়ে ভাবতে পারছি না। ভাবতে চাচ্ছিও না। মাদারীপুর জেলা নিয়ে কেমন একটা হৈচৈ শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রথম দিকে। প্রথম লক ডাউন হওয়া এই জেলা নিজেকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। ১২টি জেলা ইতিমধ্যে ছারিয়ে গেছে মাদারীপুরকে। যেখানে কিনা প্রথম এফেক্টেড পাওয়া গিয়েছিল অনেক পরে। তবুও তারা মাদারীপুরকে ছারিয়ে গেছে। কারণ একটাই। দেরিতে লকডাউন। মাদারীপুরে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ২৮ জন। যার মধ্যে সুস্থ হয়েছে ৯ জন (২৩.০৪.২০২০)। গত ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে যেখানে নতুন শনাক্ত রেকর্ড ৫০৩ জন। মাদারীপুরে সেখানে ০। অন্য চিত্রটাও তাহলে দেখা যাক... গত ১৯ তারিখে পাওয়া তথ্য মতে কিশোরগঞ্জ এ আক্রান্ত ছিল ১৭, মাদারীপুরে ১৯। আজকে কিশোরগঞ্জে আক্রান্ত ১৮০ ,মাদারীপুরে ২৮। সঠিক সময়ে লকডউনে যেয়ে আক্রান্ত চিহ্নিত করে আইসোলেশন এ নেওয়াটা কতটা কার্যকরী হতে পারে এই ছোট্ট তথ্য চিত্র থেকেই বোঝা সম্ভব। নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীর আজকের এই চেহারা যথাযুক্ত কারণেই ঘটেছে; সন্দেহ নেই। ঢাকা বিভাগের আশঙ্কাযুক্ত অন্যান্য জেলাগুলি হচ্ছে ঢাকা(৬৪), মুন্সীগঞ্জ(৬৩), টাঙ্গাইল(২১) ও গোপালগঞ্জ(৪৩)।
আক্রান্তের সংখ্যার বিচারে ঢাকা বিভাগের পরেই আছে চট্টগ্রাম বিভাগ। খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে এখনো সংক্রমণ শনাক্ত করা না গেলেও অন্য ৯টি জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৫৬ জন। জেলা চট্টগ্রামই যেখানে দখল করে আছে ৪৫টি আসন! আক্রান্ত অন্যান্য ৮টি জেলার মধ্যে অধিক ঝুকিতে আছে কুমিল্লা(৩২), লক্ষ্মীপুর(২৭) এবং বি.বাড়িয়া(২৫)। বি.বাড়িয়া কয়েকদিন আগে ঘটিত জানাজা কান্ডে এই জেলা নিয়ে আমরা বিশেষ ভাবে উদ্বেগ। কিন্তু তথাকথিত এই উদ্বেগ করোনা রুখতে পারবে না। এই জেলাটিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে যে ট্রোল হচ্ছে সেই ট্রোলও করোনা রুখতে পারবে না। প্রশাসনকে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। নতুবা ন উপায়!
সিলেট(৪৯), বরিশাল(৮৬), রাজশাহী(৩২) বিভাগের জেলাগুলো এখন অবধি মারাত্মক পর্যায়ে না পৌছালেও খুব বেশি দেরি নেই। তবে ময়মনসিংহ বিভাগের সব কয়টি জেলা আছে আসঙ্কাজনক অবস্থানে। সবথেকে বেশি আক্রান্ত পাওয়া গেছে ময়মনসিংহ জেলাতেই। সংখ্যায় যা ৬৮। ৬ দিনে বেড়েছে ৪৮৫ গুণ! এই ৬ দিনে জামালপুরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ১৬৭ গুণ, নেত্রকোণায় ৫৫০ গুণ এবং শেরপুরে ৩১৬ গুণ! এভাবে চলতে থাকলে লাগাম টানা আর সম্ভব হবে না।
তথ্য ও ছবিঃ আইইডিসিআর
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৪৬