somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ যান্ত্রিকতার শহরে ভালবাসা

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এলার্মের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল ফারহানার। ঘুম থেকে উঠে এলার্মটা বন্ধ করে দিল। এখন আর পাখির শব্দে ঘুম ভাঙেনা। আর মোরগের ডাক! সেটা ইট পাথরের যান্ত্রিকতায় হারিয়ে গিয়েছে।

ফারহানা বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়েই রান্না ঘরে ঢুকল। সকালবেলা নাস্তা তৈরি করার জন্য রান্নাঘরে ঢুকতে হয়। দোকান থেকে আনা রুটি আর জেলির চেয়ে ঘরে বানানো রুটির স্বাদ বেশি থাকে। যে স্বাদ নিজে তৈরি করার মাঝে থাকে।

ফারহানা নাস্তা বানিয়ে শাকিলের পাশে এসে বসল। শাকিল এখনো ঘুমাচ্ছে! ফারহানা শাকিলকে ডাকার পরেও উঠছে না। কয়েকবার ধাক্কা দিয়ে বলল
-এই, উঠ।
শাকিল ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল
-বিরক্ত করোনা।
-মেয়ের স্কুলের সময় হয়ে গেল যে!
ফারহানার কথা শুনে শাকিল উঠে পরল। শাকিলের পাশে তার মেয়ে শারিকা ঘুমাচ্ছে। শাকিল শারিকাকে ডাক দিয়ে ঘুম থেকে তুলে দিল।

শারিকা ঘুম থেকে উঠে বলল
-বাবা, আমি গেইম খেলব।
ফারহানা শুনেই অবাক! ঘুম থেকে উঠে গেইম! আগে ঘুম থেকে উঠে দাত ব্রাশ করতে যেত অথবা ঘরের বাইরে সকালের পরিবেশ দেখতে যেত। আর এখন! যান্ত্রিক জীবনে এটাও যেন এক যান্ত্রিকতার ছোঁয়া।

ফারহানা নিষেধ করার পরেও শাকিল গেইম বের করে শারিকার হাতে মোবাইলটা দিল। ফারহানা দেখে একটু রেগে গেলেও শাকিল মুচকি মুচকি হাসছে।

শাকিল ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখে, শারিকা তখনো গেইম খেলছে! শাকিল শারিকার পাশে বসে বলল
-আম্মু, দাত ব্রাশ করতে হবে।
-গেইম খেলব আরেকটু।
-আচ্ছা, তুমি খেলতে থাক। আমি তোমাকে কোলে নিয়ে যাচ্ছি।

ফারহানা বিছানায় বসে আছে। শাকিল শারিকাকে কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকল। শারিকার হাতে মোবাইল আর শাকিল তাকে দাত ব্রাশ করিয়ে দিচ্ছে!

ফারহানা খাবার টেবিলে গিয়ে খাবার সাজিয়ে দিল। ফারহানা বলেও লাভ নেই! শাকিল আর শারিকা সময়মত আসবে।

শারিকাকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বলল
-আম্মু, আমি খাইয়ে দেই।
-আচ্ছা।

ফারহানা নাস্তা খাচ্ছে। শাকিল নিজে নাস্তা না করে শারিকাকে নাস্তা করিয়ে দিচ্ছে। ফারহানা শাকিলের কর্মকাণ্ড দেখে মঝে মাঝে হাসে। তবে ফারহানাও মেয়েকে কম ভালবাসে না। দুজনের পৃথিবী জুড়ে এই মেয়ে।

ফারহানার নাস্তা শেষ হলে শারিকাকে স্কুলের জন্য তৈরি করতে নিয়ে এল। শাকিল এতক্ষণে খাচ্ছে! ফারহানা নিজেও অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছে।

-এই, তোমাকে দারুন লাগছে, আসো একটু আদর করি।
ফারহানা শাকিলের কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে বলল
-সকালবেলাই দুষ্টামি! মেয়ে আছে তো।
-মেয়ে ওই রুমে গেইম খেলছে।
-এখন না। তৈরি হয়ে নাও।
শাকিল ফারহানার কপালে একটা চুমু খেয়ে অফিসের জন্য তৈরি হতে থাকল।

শাকিল বাইক স্টার্ট দেওয়ার সাথে সাথে শাকিরাকে মাঝখানে বসিয়ে, নিজেও উঠে বসল।

-এখন যাও।
ফারহানা বলতেই শাকিল বাইক চালাতে শুরু করল। শাকিরার স্কুল কাছেই।সকালবেলা মা-বাবা দুজন মিলে অফিসে রেখে আসে।

শাকিরাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে ফারহানার সাথে অফিসের দিকে ছুটল। শাকিল বাইক চালাচ্ছে, আর ফারহানা পিছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে আছে। শাকিল মাঝেমাঝে ছোট ব্রেক করে। ফারহানা শাকিলের দিকে আরেকটু ঝুকে যায়। ফারহানা রাগ দেখালেও, শাকিল মুচকি হাসে।

শাকিলের পাশাপাশি ফারহানার একটু বেশিই ভাল লাগে। বিয়ের আগে দুজন রিক্সায় পাশাপাশি অনেক ঘুরেছে। সিনেমা দেখা আর চুটিয়ে প্রেম করা দুজনের রুটিনের মধ্যে ছিল।

শাকিল ফারহানাকে ভালবাসলেও বলতে পারেনি সাহস করে। শাকিল ফারহানার পাশের মানুষদের সাথে ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। অনেকভাবে বলার চেষ্টা করলেও বলা হয়নি। তবে ফারহানার পাশের মানুষগুলো ঠিক বলে দিয়েছিল। ফারহানা আস্তে আস্তে শাকিলের নিজেই দুর্বল হয়ে যায়।

-চলে এসেছি।
শাকিলের কথা শুনে ফারহানা বাইক থেকে নামল। শাকিল আর ফারহানার অফিস এক বিল্ডিং এ। শাকিল দ্বিতীয় তলায় আর ফারহানা ষষ্ঠ তলায়।

শাকিল আগে অন্য অফিসে ছিল। ফারহানার এই অফিসে আসার দিন, ফারহানার সাথে শাকিল'ও খুশি। দুজনের এক অফিসে চাকরি মানে আরো কাছাকাছি থাকা।

ফারহানা লিফটে উঠতেই, শাকিল'ও লিফটে উঠল। একটা কাজের জন্য ফারহানাকে নিচে আসতে হয়েছিল।

ফারহানা শাকিলের ইশারা দেখেই তার দিকে তাকাল। শাকিল ফারাহানার দিকে ফ্লাইং কিস দিচ্ছে। লিফটে আরো মানুষ না থাকলে সরাসরি কিস করে ফেলত। ফারহানা শাকিলের চুমু দেওয়া দেখে মুচকি হাসছে।

অফিস শেষ করে ফারহানার সাথে শাকিল'ও বাসায় ঢুকল। শারিকা তাদের আগেই বাসায় চলে এসেছে। দুপুরে কাজের লোক শারিকাকে নিয়ে আসে।

-এই শপিং এ যাবে?
-এখন!
-সমস্যা কি?
-যাওয়া যায়।
ফারহানার কথা শুনেই শাকিল তৈরি হতে চলে গেল। এখন শাকিলের শপিং এ যেতে হবে। সাথে শারিকা আর ফারহানা থাকবেই।

-এই শার্টটা তুমি নাও।
-আমি!
-খারাপ লাগছে!
-আরে নাহ। তবে...
-তবে কি?
-আমার কাছে টাকা নেই।
শাকিলের কথা শুনে ফারহানা মুচকি হেসে বলল
-টাকা তোমাকে দিতে বলেছি নাকি! আমার টাকা দিয়ে গিফট করব তোমাকে।
-তাহলে নেওয়া যায়।

শাকিলের জন্য দুইটা শার্ট আর শারিকার কাপড় কিনেই বেড়িয়ে এল।শাকিল হঠাৎ ফারহানার হাত টেনে বলল
-এই এদিকে আসো।
শাকিল ফারহানার হাত ধরে শাড়ির দোকানে নিয়ে এল। ফারহানা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।

-এই শাড়ি দুইটা তুমি নাও।
-আমার লাগবে না। আমার আছেতো।
-তো কি হয়েছে! নিতে বলছি নাও। তোমাকে দারুন মানাবে।
-আচ্ছা!

শাকিলের জোড়াজুড়িতে শাড়ি দুইটা প্যাক করতে বলা হল। ফারহানা পার্স থেকে টাকা বের করে দোকানদারকে দিতেই, দোকানদার বলল
-পেমেন্ট হয়ে গিয়েছে।
-কে করল!
দোকানদার শাকিলকে দেখাতেই, শাকিল মুচকি মুচকি হাসছে।

-তোমার কাছে নাকি টাকা নেই!
-আমার নিজের জন্য ছিল না। তবে তোমার জন্য ছিল। আমি কিনতে চাইনি। কিন্তু তুমি জোর করে কিনে দিলে!
-তাই তুমিও...
-প্রতিশোধ নিলাম।
শাকিল হাসছে আর ফারহানা মুখে রাগ দেখিয়ে মনে মনে হাসছে।

বাসায় এসে শাকিল নতুন কেনা শার্ট পরেছে, ফারহানাও নতুন একটা শাড়ি পরে এল। শারিকা তার মত গেইম খেলছে।

-আজকে একটা বিশেষ দিন। তুমি কি জানো?
ফারহানার কথা শুনে শাকিল চোখ অবাক চোখে বলল
-কিসের বিশেষ দিন?
-তুমি ভুলে গেলে!
-মনে করতে পারছি না।
-মনে করতে হবে না।
-না বললে কিভাবে জানব!

-আজ আমাদের বিবাহবার্ষিকী।
ফারহানার অভিমান ভরা কথা শুনে শাকিল মুচকি হাসছে। শাকিলের অপরাধ, সে এই দিনের কথা ভুলে গিয়েছে।

শাকিল ফারহানার হাত ধরে, আংটি পরিয়ে দিল। ফারহানা অবাক হয়ে বলল
-এটা কেন!
-আজকের এই দিনের জন্য বানিয়েছি। আমি এই দিনের কথা ভুলে যাইনি।
শাকিলের কথা শুনে ফারহানা চুপ করে আছে। চোখের ভেতরে পানি চিকচিক করছে। শাকিল ফারহানাকে বুকে নিয়ে বলল
-এই, ভালবাসি।

শাকিল ইচ্ছা করেই বিশেষ দিনের কথা ভুলে যায়। ভুলে যায় বললে ভুল হবে। ভুলে যাওয়ার ভান করে।কিন্তু কোন সারপ্রাইজ ফারহানার জন্য অপেক্ষা করে।

এই যান্ত্রিকতার শহরে ফারহানা আর শাকিলের ভালবাসা যান্ত্রিক হয়নি। তাদের ভালবাসা এতটুকু কমে যায়নি! শাকিল আর ফারহানাকে দেখলে মনেহয়, সদ্য প্রেমে পরা যুবক যুবতী। কিন্তু কেটে গিয়েছে দীর্ঘ বারোটি বছর!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×