somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গন্তব্য

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-মামা, টিকিট দেন তো।
আমার কথা শুনে কাউন্টারের লোকটা আমার দিকে করুন চোখে তালাল! ভাব দেখে মনেহয়, আমি তার কলিজা চেয়ে বসেছি!

-টিকিট নাই।
আস্তে করে লোকটি বলে চুপ করে থাকল। টিকিট না পেয়ে মেজাজ খারাপ হচ্ছে। মন খারাপ হওয়াও স্বাভাবিক।

-মামা, টিকিট লাগবে?
একজন লোক পিছন থেকে ডাক দিতেই ফিরে তাকালাম। কাকে বলেছে জানিনা। তবে টিকিটের কথা শুনেই ঘুরে তাকালাম।

লোকটির দিকে ঘুরে বললাম
-টিকিট লাগবেই তো।
-এদিকে আসুন।
লোকটি আমার হাত ধরে পাশে ডেকে নিয়ে গেলেন।

-টিকিট আছে, কিন্তু দাম বেশি।
টিকিট আছে শুনেই মনে আশা জাগল। দাম কোন ব্যাপার না। টিকিট পেলেই হল। আমি লোকটির দিকে তাকিয়ে বললাম
-কত লাগবে?
-ছয়শ টাকা।

-আচ্ছা ঠিক আছে।
আমার কথা শুনে লোকটি পকেট থেকে টিকিট বের করে দিল। আমি পকেট থেকে ছয়শ টাকা বের করে দিলাম।

টিকিট হাতে পেয়েই চলে এলাম। সাড়ে তিনশ টাকার টিকিট ছয়শ টাকা! তবুও অবশেষে পেলাম, এটাই বড় কথা। তবুও তো বাড়ি যেতে পারব।

কালকে সকালের বাসের টিকিট পেয়েছি। এখন চিন্তামুক্ত হয়ে ব্যাগটা গুছিয়ে নিলেই হল। কালকে ব্যাগ গুছিয়ে নেওয়ার চেয়ে আগেই গুছিয়ে রাখা ভাল।

টিকিটে সিটের নাম্বার দেখে সিট খুঁজে নিলাম। জানালার পাশের এই সিটটা ভালই হয়েছে। রাস্তায় যে পরিমাণ ট্রাফিক জ্যাম! তাতে জানালার কাছে না বসলে শেষ।

আমার সিটে বসে, পাশের সিটে তাকালাম। পাশের সিটের যাত্রী এখনো আসেনি। বাস ছাড়তে আর দশ মিনিট বাকি। এখন কেউ বাস মিস করার কথা না। তবুও আমার পাশের সিটের যাত্রী যদি মিস করে যায়, তবে আমার কোন সমস্যা নেই। সারাপথ আরামে যেতে পারব।

-এই যে সরে বসুন।
একটা মেয়ের কণ্ঠ শুনে মাথা তুলে তাকালাম। এতক্ষণ মাথা নিচু করে ভাবছিলাম। কি ভাবছিলাম জানিনা। তবে ভাবছিলাম এটা জানি।

আমি মেয়েটির দিকে একবার তাকিয়ে সরে বসলাম। আমার পাশের সিট এই মেয়েটার। তাই বসার জায়গা দিতেই হবে।

-আপনি একটু এইপাশে আসবেন?
মেয়েটির কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম! আমার সিট ছেড়ে আমি ওপাশে যাব কেন! অনেক কষ্ট করে জানালার পাশে সিট পেয়েছি। এখন কি সেই সিট ছাড়তে হবে!

-আমি ওপাশে যাব কেন!
আমার কথা শুনে মেয়েটি আস্তে করে বলল
-জানালার পাশে না বসলে আমার সমস্যা হয়। তাই যদি...
-জানালার পাশে না বসলে আবার কি সমস্যা!
-সমস্যা আছে। আপনি এপাশে আসুন।
-সম্ভব না।

-আপনাকে এ পাশে আসতে বলছি। আসুন।
মেয়েটির মুখে এমন কথা শুনে মেজাজ গরম হয়ে গেল। মেয়েটি আমাকে আদেশ করছে! কিন্তু সে আদেশ করার কে!

-আমার বমি বমি ভাব হচ্ছে। তাই আপনাকে এপাশে বসতে বললাম।
মেয়েটির কথা শুনে হাসব নাকি আরো রাগ দেখাব সেটা বুঝতে পারছি না।

-আপনি কি প্রেগন্যান্ট! যে আপনার বমি আসবে এখন!
আমার কথা শুনে মেয়েটি রেগে গেল। আসলে এভাবে না বললেও হত। তবুও বলে ফেললাম।
মেয়েটি রেগেই বলল
-আপনি কিন্তু লিমিট ক্রস করে যাচ্ছেন।
-আসলে আমার আনলিমিটেড টকটাইম তো। তাই লিমিট ক্রস করে যাই।

আমার কথা শুনে মেয়েটি চুপ করে সিটে বসল। এতক্ষণে বাস ছেড়ে দিয়েছে। মেয়েটি এখনো রেগে আছে। মেয়েটি দেখতে তো সুন্দরি। তাহলে এমন করে কথা বলে কেন! ছোটবেলায় মুখে মধু না দিয়ে কি নিমের পাতা দিয়েছিল!

বাস আপন গতিতে ছুটে চলেছে। এখন পর্যন্ত মেয়েটির বমি ভাব দেখিনি। মেয়েটি জানালার পাশের সিট নেওয়ার জন্য ভান করেছিল। এটা বুঝতে পারছি।

গাড়ি জ্যামে আটকা পরে আছে। যাচ্ছে আবার থামছে। এই ট্রাফিক জ্যাম আমার কাছে সবচেয়ে বিরক্ত লাগে। গাড়ি চলন্ত অবস্থায় বসে থাকা যায়। কিন্তু এভাবে জ্যামে আটকালে বসে থাকতে ইচ্ছা করেনা।

মেয়েটি আমার পাশে বসে ঘামছে। গরমে ঘামার কথা। মেয়েটি তার ব্যাগ থেকে পাথা বের করে বাতাস করছে নিজেকে। মেয়েটির হাতের পাখা দেখে স্যারের কথা মনে পরছে। আমাদের এক স্যার এই পাখাকে ডিস্কো পাখা বলত!

অনেক সময় পরে জ্যামের হাত থেকে মুক্তি পেলাম।গাড়ি এখন আপন গতিতে চলছে। গাড়ি চলার সাথে মনের আনন্দ বেড়ে যাচ্ছে। বাডি যাওয়ার আনন্দ একটু বেশি হয়।

-ওহ শিট!
মেয়েটি তার ব্যাগ থেকে কিছু খুঁজছে। খুঁজে না পেয়ে মেয়েটি হতাশ হয়ে গেল। আমার মনেহয় পানির বোতল খুঁজছে। এখন বাস থামাবে না। তাই পানি পিপাসা পাওয়ার পরে বোতল খুঁজে না পেলে হতাশ হওয়া স্বাভাবিক।

-এই নিন।
আমি মেয়েটির দিকে পানি এগিয়ে দিলাম। মেয়েটি মনেহয় আমার থেকে এমন কিছু আশা করেনি। মেয়েটি চুপ করেই আছে।

-রাগ করে থাকলে আপনার পানি পিপাসা মিটবে না।
আমার কথা শুনে মেয়েটি পানির বোতল হাতে নিল। এখন ঠিকভাবেই পানি খেয়ে নিল।

-ধন্যবাদ।
মেয়েটির কথা শুনে আমি মুচকি হেসে বললাম
-আমার মা বলেন, বন্ধুত্তের হাত বাড়ালে শত্রুও মিত্র হয়ে যায়।
আমার কথা শুনে মেয়েটি মুচকি হাসল।

গাড়ি চলতে চলতে এক জায়গায় থামল। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে আবার সিটে বসলাম। মেয়েটি এখনো আসেনি। সেও মনেহয় ফ্রেশ হতে গিয়েছে।

-নিন। খান।
মেয়েটি একটা প্যাকেট থেকে খাবার বের করে আমায় দিল। আমি তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। হঠাৎ এত ভাল!

-মা বলেছে, অপরিচিত কেউ কিছু দিলে খাবি না।
আমার কথা শুনে মেয়েটি হেসে ফেলল। আমি চুপ করে খেতে থাকলাম। আমার সাথে মেয়েটিও খাচ্ছে।

-এই নিন।
পানির বোতল এগিয়ে দিতেই আমি বললাম
-পানির ধার শোধ করছেন নাকি!
আমার কথা শুনে মেয়েটি হাসল। আমি পানির বোতল নিয়ে পানি খেলাম।

বাস থামতেই বাস থেকে নেমে গেলাম। মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে আবার চলে গেল। যাওয়ার আগে শুধু বলে গেল
-ভাল থাকবেন। হয়ত আবার দেখা হবে।

আমি আমার মত গন্তব্যে চলেছি। আমি মেয়েটির শেষ কথার পরে আর কথা বলিনি। তবে ভাবছি মেয়েটির সাথে দেখা হবে নাকি! আচ্ছা আবার যদি দেখা হয়ে যায়!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×