somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ পাশাপাশি পথচলা

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েকবার কলিংবেল বাজানোর পরে কাজের মেয়ে দরজা খুলে দিল। রাশেদ ভেতরে ঢুকে, কাজের মেয়েকে দরজা লাগিয়ে দিতে বলল। অফিসের কাজ শেষে এখন নিজেকে ক্লান্ত লাগছে। মনেহয় বিছানায় শুয়ে পরলেই ঘুম।

রুমে ঢুকে দেখল শারমিন টিভি দেখছে। রাশেদ নিজের মত বিছানার উপরে বসল। রাশেদের পানি তৃষ্ণা পেয়েছে। রাশেদ নিজেই পানি নিয়ে খাবে।

রাশেদ পানি খেয়ে শুয়ে পরল। শারমিন চুপ করে ওদিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে আছে। মেয়েরা তাদের শখ বা চাওয়া পুরন করতে না পারলে মুখ ফুলিয়ে রাখে। শারমিনের কোন ইচ্ছাটা পুরন হয়নি সেটাই রাশেদ ভাবছে।
অবশেষে বুঝল দেরি করে বাসায় ফেরাই তার অপরাধ।

রাশেদ ছোটবেলা থেকেই হোস্টেলে বড় হয়েছে। বাবা মা মারা যাওয়ার পরে, হোস্টেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বয়েজ স্কুলে পড়েছে। পরে কলেজ লাইফেও কোন মেয়ের সাথে মেশা হয়নি।

পড়ালেখা শেষ করে বাবার ব্যাবসার কাজ দেখাশোনা করতে শুরু করে। চাচার ইচ্ছাতেই শারমিনকে বিয়ে করেছে। বিয়ের আগে শারমিনের সাথে কথা বলা বা দেখা হয়নি।

রাশেদ ঘুম থেকে উঠে অনেক্ষন বিছানায় শুয়ে আছে। শারমিনের ঘুমন্ত মুখটা দেখতে কত মায়াবি লাগে। এখন কোন হুর পরীকে রাশেদের সামনে আনলেও, শারমিনের কাছে সেটা কিছুই না।

-এই মেয়ে উঠ। এই চোখে তাকিয়ে দেখ। কত ভালবাসা জমে আছে দেখ।
রাশেদ মনে মনে কথাগুলো ভেবে মুচকি হেসে দেয়। শারমিমকে এখন ঘুম থেকে ডেকে বলতে ইচ্ছা করছে
-এই মেয়ে, তুমি এত সুন্দর কেন!
কিন্তু কথাগুলো মনেই চেপে থাকে। বিয়ের পরে রাশেদ আস্তে আস্তে শারমিনের কতটা প্রেমে পরেছে সেটা বুঝতেই পারেনি। ভালবাসা কে বুঝি পরিমাপ করা যায় না। তবে অনুভব করা যায়।

রাশেদ বিছানা ছেড়ে উঠে পরল। রাশেদ নিজের কাজ নিজেই করতে পছন্দ করে। হোস্টেলে থাকা অবস্থায় নিজের কাজ নিজেই করত। নিজের কাজ নিজে করায় আলাদা আনন্দ আছে।

রাশেদ ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে ঢুকল। রান্নার কাজ কাজের লোক করে। রাশেদের খুব ইচ্ছা করে, শারমিনের হাতের রান্না খাবে। সুন্দরি মেয়েদের রান্না সুন্দর হয় নাকি জানা নেই। তবে বউ এর এমন সুন্দরি মেয়ে যেমন তেমনভাবে রান্না করে দিলেও খেয়ে নেওয়া যায়।

রাশেদ পানি গরম করা শেষ করে দুই কাপ চা বানাল। একটা ট্রেতে দুই কাপ চা নিয়ে বেডরুমে ঢুকল। একদিন শারমিন চা খেয়ে বলেছিল
-বাহ চমৎকার চা।
সেদিনের পর থেকে রাশেদ নিয়ম করে শারমিনের জন্য চা বানায়। শারমিন চায়ে একটা চুমুক দিলেই যেন তার চা বানানো সার্থক।

রাশেদ রুমে ঢুকে শারমিনের দিকে তাকিয়ে চুপ করে আছে। ঘুমের ঘোরে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। এলোমেলো চুল আর ঘুমন্ত মুখ মিলিয়ে দারুন লাগছে।

শারমিনের ঘুম ভেঙে গিয়েছে। রাশেদ ট্রে থেকে এক কাপ চা এগিয়ে দিল। শারমিন চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। মেয়েটা কত সুন্দর করে চায়ে চুমুক দিচ্ছে! কাউকে ভালবাসলে বুঝি তার সবকিছুই ভাল লাগে! কারো প্রেমে পরলে সবকিছুই মুগ্ধ করে!

-আমার একটা জীবনানন্দ দাসের কবিতার বই লাগবে।
রাশেদ অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছে। শারমিনের কথা শুনে আবার আগের মতই টৈরি হতে থাকল। মেয়েটা এমন কেন! বই আনার কথাও কেউ এভাবে বলে! একটু ভালবেসে বললেও পারে।

জীবনানন্দ দাসের কবিতা পরে তো মনে প্রেম জেগে ওঠে। রাশেদ যতবার তার কবিতা পড়েছে। যতবার পড়েছে ততবার প্রেমে পরেছে। কিন্তু মেয়েটা কবিতাগুলো পড়েও কিছু বলেনা!

বিকেলবেলা অফিস থেকে ফেরার পথে রাশেদ দুইটা কবিতার বই কিনল। বই দুইটা কেনার পরে রাশেদের মনে অনেক ধরনের চিন্তা ঘুরঘুর করছে। বইগুলো দিয়ে শারমিনকে একবার ভালবাসি বললে কেমন হয়! চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলে কেমন হয়!

রাশেদ বাসায় এসে দেখল শারমিন ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আছে। সুন্দর একটা শাড়ি পরেছে। শাড়িটা সেদিন কেনা। রাশেদ একদিন রাতে সুন্দর একটা শাড়ি কিনে এনেছে। শাড়িটা কিনে ভেবেছিল, শারমিনকে পরতে বলবে। কিন্তু বাসায় এসে দেখল, শারমিন ঘুমিয়ে পরেছে। শাড়িটা ড্রেসিংটেবিলে রেখে দিয়েছিল।

রাশেদ কবিতার বই দুইটা শারমিনের দিকে এগিয়ে দিল। শারমিন বই হাতে নিয়ে আস্তে করে বলল
-থ্যাংকস।
-খেয়েছ?
-না।
-চলো খেয়ে নেই।
রাশেদ শারমিনকে বসতে বলে ফ্রেশ হতে ঢুকল। রাশেদ ভেবেছিল বইটা দিয়ে কিছু বলবে। কিন্তু বলা হল না।

খাওয়াদাওয়া শেষ করে শারমিন বিছানায় বসে আছে। রাশেদ রুমে ঢুকে বিছানায় বসল। শারমিন কিছু বলবে বলে মনেহয়। রাশেদ সেই অপেক্ষা করছে। বই পেয়ে তখন যে কথাগুলো বলেনি, এখন সেগুলো বলবে!

-ছাদে যাব।
শারমিনের কথা শুনে রাশেদ একটু অবাক হল।।আজকে শারমিনকে যেন অন্যরুপে মনেহয়। বিয়ের তিনমাসেও শারমিনকে এমনভাবে দেখা হয়নি। রাশেদ শারমিনের সাথে ছাদের দিকে হাটতে থাকল।

ছাদে এসে রাশেদ শারমিনের পাশে বসে আছে। শারমিনের মুখে কোন কথা নেই। এই মেয়েটা কম কথা বলে। রাশেদ শারমিনের দিকে তাকিয়ে কিছু বলবে ভাবছে। কিন্তু বলা হচ্ছেনা। হঠাৎ শারমিন বলল
-হাতটা ধরবে?
রাশেদ কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে থাকল। আজ সত্যি শারমিনকে অন্যরকম লাগছে।

রাশেদের অফিস থেকে ফিরতে দেরি হলে, শারমিন না খেয়ে অপেক্ষা করে। রাশেদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রতি কাজের মাঝে ভালবাসা দেখালেও মুখ ফুটে বলে না।

রাশেদ অনেক্ষন ধরে শারমিনের হাত ধরে বসে আছে। চাঁদনী রাতে দুজন পাশাপাশি বেশ দারুন লাগছে। রাশেদ বলল
-রুমে চল। অনেক রাত হয়েছে।
-আমার হেটে যেতে ইচ্ছা করছে না।
রাশেদ শারমিনের দিকে তাকাল। মুখে দুষ্টামির হাসি। রাশেদ সেই দুষ্টামি বুঝতে পেরে শারমিনকে কোলে তুলে নিল। একটু দুষ্টামির ছলে প্রেয়সীকে কাছে টেনে নিলে ক্ষতি কি!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:১৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×