somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রামোজী ফিল্ম সিটি এক মজার ভ্রমন (২য় পর্ব)

২০ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সারি সারি ভাস্কর্য দাড়িয়ে আছে দর্শকদের মুগ্ধ নয়নের সামনে

সবাই সিটে বসার পর রামোজীর নিজস্ব লাল রংয়ের দৃষ্টিনন্দন বাস তার ঠিকানা ছেড়ে এগিয়ে চল্লো। পুরো ফ্লিম সিটির দর্শনীয় স্থানগুলো দেখিয়ে আনার দায়িত্ব তাদের।আমরা যথারীতি সামনের সিটে বসলাম। আর আমাদের সামনে গাইড দাড়ালো মাইক্রোফোন হাতে ধারা বর্ননা দেবার জন্য।প্রথমেই জানিয়ে দিল যে যেখানে বসেছেন সেখানেই সবসময় বসবেন। জায়গা বদল করা যাবে না।বিরাট একটা স্বস্তির নিঃস্বাস ছাড়লাম আমি।


পথের পাশে এমন অজস্র সুন্দর নারীর ভাস্কর্য

সুন্দর মসৃন পীচ ঢালা রাস্তা দিয়ে আমাদের বাস এগিয়ে যাচ্ছে। গাইডের ভরাট মসৃন কন্ঠ ভেসে আসছে মাইক্রোফোনে।জানালো কত সালে কে প্রথম এই সিটি প্রতিষ্ঠা করেছে, কতটুকু জায়গা নিয়ে এই সিটি গড়ে উঠেছে, কি কি আছে দর্শকদের দেখার জন্য।গাইডের বিবরন শুনছি আর জানালা দিয়ে চেয়ে আছি পথের দু পাশে ফুলে ফলে ভরা গাছ, বিভিন্ন নারী/ বিমুর্ত সব ভাস্কর্য আর সেই সাথে অপরূপ ডিজাইনের এক একটি পানির ফোয়ারা ।


ঐতিহ্যবাহী ইউরোপীয় ডিজাইনে তৈরী এ্যন্জেল ফাউন্টেইন

এরপর আমাদের গন্তব্য বিভিন্ন প্রকৃতির দৃষ্টি নন্দন এক একটা বাগান। প্রতিটি আলাদা আলাদা বৈশিষ্টে ভরপুর, যেমন কোনটা জাপানী গার্ডেন।কোনটা বনসাই গার্ডেন, গাছ কেটে কেটে পশু পাখীর আকৃতির স্যাংচুয়ারী গার্ডেন,গাছ দিয়ে তৈরী ছাতার আকৃতির বাগান, মোগল ডিজাইনের গার্ডেন।আকর্ষনীয় ফুল,গাছ,ঝর্না আর স্থাপত্যের সংমিশ্রনে মোহনীয় সেই বাগানগুলো দৃষ্টিকে করে তুল্লো হতবাক।


স্যাংচুয়ারী গার্ডেনে হাতির প্রতিকৃতি


সুবিশাল মূঘল গার্ডেন
এরপর একটা বিশাল প্লেনের হ্যাংগারের মত জায়গায় গেলাম সেখানে অসংখ্য ফুলের সমারোহ যা তারা স্যুটিং এর সময় কাজে লাগায়।


সেই ফুলের বাগান
এরপর আসলাম জালে ঘেরা বেশ বড় এক বাটার ফ্লাই পার্কে। আনন্দ আর স্বাধীনতার মূর্ত প্রতীক সেই হাজার হাজার রংগিন প্রজাপতি গাছ থেকে গাছে উড়ে বেড়াচ্ছে। আর আমরা বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে আছি সেই বিস্ময়কর দৃশ্যে।
আরো অনেক বাগানে গিয়েছি সেগুলোর কথা আর নাইবা বল্লাম।


কৃত্রিম পশু পাখী সহ তৈরী জলাশয় আর বাগানের ভেতর বুদ্ধের মাথার সামনে আমি
আবার পথ চলা শুরু হলো বাসে বসে জানালা দিয়ে দেখছি এক একটা সেট। দেখলে মনে হয়না সাময়িক ভাবে কোন কিছু তৈরী।


পথের ধারে
এমন সময় গাইড খুবই দুঃখের সাথে জানালো যে গাইডেড ট্যুরের ব্রোশিওরে উল্লেখ করা আছে যে লেগ গার্ডেন সেখানে আমাদের নিতে পারছেনা। সবাই বিশেষ করে পুরুষকুল চেচিয়ে উঠলো কেন! কেন! গাইড জানালো স্যুটিং চলাকালীন সময় সেই স্থানে যাওয়া সম্পুর্ন রামোজী প্রশাসন থেকেই নিষিদ্ধ।আমার স্বামী দেখলাম মুষড়ে পড়লো, সাথে বাসের বাকী পুরুষকূল।


বহু সিনেমায় ব্যাবহৃত জনপ্রিয় শ্যুটিং স্পট লেগ গার্ডেন

আমি বল্লাম কি আছে কত গার্ডেনই তো দেখলে, নাই বা দেখলে লেক গার্ডেন।' সে বল্লো 'লেক না, লেক না, লেগ ঐ যে ডার্টি পিকচারে হুলালা গানটায় নাসিরুদ্দিন শাহ আর বিদ্যা বালান নাচলো সাদা শ্বেত পাথরের পা এর ভাস্কর্যের সামনে, তুমি তো আবার হিন্দী সিনেমা দেখো না' একটু ঝাঁঝ মেশানো গলা আমার স্বামীর।বল্লাম 'ছি ছি তুমি এত লুল' !! সে নিজেও ব্লগার হওয়ার জন্য লুল শব্দটার সাথে বেশ পরিচিত। বল্লো 'শোন দুনিয়ার সব পুরুষ সে জোয়ানই হোক আর বুড়োই হোক কিছু না কিছু লুল'!
আমি চমকে উঠলাম তার নির্ভীক সরল স্বীকোরোক্তিতে !


দুর থেকে দেখা যাচ্ছে লেগ গার্ডেনের শ্যুটিং
লেগ গার্ডেনের পাশ দিয়ে যখন যাচ্ছি বেশীরভাগ পুরুষরাই বিমর্ষ বদনে চেয়ে আছে জানালা দিয়ে। মনে হলো স্যুটিং আলাদের মুন্ডুপাত করছিল মনে মনে । আমি আর কি বলবো ! এখানে একটা ইমো দিতে ইচ্ছে করছে ভীষন।

অপরূপ সুন্দর পথ বেয়ে চলেছি পরবর্তী গন্তব্যে। পথটির দুপাশে ফুল আর নান্দনিক বৈশিষ্টে পুর্ন সারি সারি বাতির পোলগুলো রাতে না জানি কি অপরূপ মোহনীয় আলো ঝলমলেই না হয়ে উঠে।


সেই অপুর্ব সড়ক রামোজী সিটির ভেতর

রাস্তা থেকে দেখা গেল কতগুলো কালো ফ্রেমের তৈরী চৌকোনা লোহার খাঁচার মত। গাইড জানালো এখন থেকেই সিনেমার সব স্টান্ট দৃশ্যের স্যুটিং হয়ে থাকে।সিনেমার প্রয়োজনে আগুনের দৃশ্য, নায়ক আর ভিলেনদের আগুনের মধ্যে মারামারি করা, সেখান থেকে লাফ দেয়া এসব শ্যুটিং এখানে করে থাকে।


স্টান্ট দৃশ্যে ব্যবহার করার জন্য তৈরী এই লোহার ফ্রেমগুলো

ওটার পাশ ঘুরে এগিয়ে যাচ্ছি, মনে হলো কোন শহর এলাকায় ঢুকে পরলাম। গাইড বল্লো দেখো এটা দক্ষিন ভারতের একটি লোকালয়ের সেট। ওরা দরকার মত সিনেমায় ব্যাবহার করে ।এত নিখুঁত ভাবে তৈরী মনেই হয়না কোন শ্যুটিং সেট। সেই রকম লাল আর সাদা পাথরে তৈরী সত্যিকারের সব দালান কোঠা, গেট সবকিছু।মাঝখান দিয়ে আমরা যাচ্ছি বাসে করে।


দক্ষিন ভারতের নাম না জানা কোন এক লোকালয়।

বাস থেকেই দুরে দেখা গেল মুঘল এক স্থাপত্যের নিদর্শন। গাইড জানালো আমরা যাচ্ছি সেখানে। কোন ছবিতে মুঘল দৃশ্যের শ্যুটিং এর জন্য তৈরী।


বাস থেকে দেখা যাচ্ছে মুঘল আমলের বাদশাহী শহর।

এরপর নিয়ে গেল এক এয়ারপোর্টের সেটে যা কিনা এক ঘন্টার মধ্যে পাল্টে হয়ে যায় জেট এয়ারওয়েজ বা এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটের সেট ।


এয়ারপোর্টের বাইরের দৃশ্য
একটা এয়ারপোর্ট বা প্লেনের ভেতরে যা যা থাকে কাস্টমস, চেক ইন, ইমিগ্রেশন ছাড়াও প্লেনের ভেতর সিটসহ সব কিছু একদম অবিকল নিখুত ইট সিমেন্টে তৈরী করা। যা একটি সিনেমা তৈরীতে প্রয়োজনীয়।


এয়ারপোর্টের ভেতরের দৃশ্য


মনে হলো কোন সুপরিসর বিমানের ভেতর সারি সারি সীট

পথে যেতে যেতে গাইড একটি বিল্ডিং দেখালো যা কিনা প্রয়োজনে খুব অল্প সময়ের মধ্যে সামনের অংশটুকু পাল্টে আদালত ভবন, কলেজ ভবন,থানা অথবা মিউনিসিপ্যালিটি বিল্ডিং এ পরিবর্তন করে ফেলা যায়।
আরো রয়েছে গ্রামীন এবংশহুরে ট্রেন ষ্টেশনের সেট যেখানে ট্রেন দাড়ানো। শুধু খালি সাইন বোর্ডে নামটা বসিয়ে দেয়ার অপেক্ষায়।অনেক ম্যুভিতে এগুলো দৃশ্য নাকি আমরা দেখেছি বলে গাইডটা জানালো।


একটা নাম না জানা রেলওয়ে ষ্টেশনের সেট

এ ছাড়াও স্যুটিং এ ব্যাবহারের জন্য জেল খানা,পুরো একটি ভারতীয় গ্রামের সেট ইন্ডিয়ার বিভিন্ন প্রদেশের বৈশিষ্ট মন্ডিত শহর ছাড়া কিছু আন্তর্জাতিক শহর, মন্দির, গুহা, ঘর বাড়ীর সেটও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রামোজী ফ্লিম সিটির সর্বত্র।যা আমরা বিভিন্ন সিনেমা বা সিরিয়ালে দেখে থাকি।কোন কার্ডবোর্ড, হার্ট বোর্ড নয় প্রতিটি স্থাপনা একেবারে উচুমানের নির্মান সামগ্রী দিয়েই তৈরী করা।অবাক হওয়ার পালা যেন শেষ হয়ে আসছিল ক্রমে ক্রমে।
যেটা প্রথমেই বলেছিলাম কেউ একটা স্ক্রিপ্ট নিয়ে আসলে ম্যুভি নিয়ে বের হয়ে যেতে পারবে রামোজী ফিল্ম সিটি থেকে।

চলতে চলতে আসলাম এক চৌরাস্তায় যার মাঝখানে এক গোলাকার বাগান। গাইড আমাদের দৃষ্টি সেদিকে ফিরিয়ে নিল। রংগীন ফুল ফুটে থাকা সেই গোল বাগানের মাঝখানে উচু করে তৈরী গোলাকার এক দৃষ্টিনন্দন লোহার খাঁচা , এটার নাম কারিশমা গার্ডেন।


কারিশমা গার্ডেন

গাইড খুব নির্বিকার ভাবে আমাদের এই গার্ডেন সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিবেশন করলো। সেটা হলো এখানে কোন সিনেমার নাচের দৃশ্য স্যুট করার সময় নায়িকা খাচার ভেতর দাড়িয়ে গানের সাথে সাথে নাচে তখন তার পোশাকের রং পাল্টানোর সাথে সাথে বাগানের ফুলের রংও পাল্টে যেতে থাকে।'তবে নাচের কোন কোন সময় অর্থাৎযিসি টাইমমে হিরোইন কো বডিমে কোই কাপড়া নেহি তো উসি টাইমমে ইস গার্ডেনকো ফুল মে ভী কোই কালার নেহী হোতা' !!

এরপর হলিউডি স্টাইলে হলিউড লেখা এক চত্বরে নিয়ে আমাদের নামালো। ঘুরে ঘুরে দেখছি আর ছবি তুলছি।কোন সিনেমায় হলিউড দেখানোর দরকার থাকলে এটা ব্যাবহার করে। মনে মনে ভাবছি সত্যি কি হলিউডের চেয়ে বড় রামোজী ফিল্ম সিটি !


হলিউডে আমি !

ভেবেছিলাম এই পর্বেই বুঝি শেষ হবে না এখনো অনেক কিছু বাকি আছে দেখার। তাই তৃতীয় পর্ব পর্যন্ত যেতে হবে।
ছবিগুলো আমাদের ক্যামেরায় তোলা
চলবে ....।

Click This Link
১ম পর্ব

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:০২
৭৫টি মন্তব্য ৭৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×