somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রামোজী ফিল্ম সিটি এক মজার ভ্রমন (শেষ পর্ব)

০৭ ই মে, ২০১৩ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রামোজী ফিল্মী দুনিয়ার সামনে আমি

লাল টুকটুকে বাসে চড়ে পুরো রামোজীর পথে পথে ঘুরে শেষ হলো সিনেমা তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় বেশীরভাগ সেট দেখা।গাইড এবার আমাদের নিয়ে আসলো রামোজীর প্রধান চত্বর ইউরেকার পাশ দিয়ে উঠে যাওয়া মৌর্য্য সিড়ি পথ এর সামনে। সিড়ির ধাপ বেয়ে উঠে এসে দাড়ালাম যে জায়গায় তার চারিদিকে অনেকগুলো আকর্ষনীয় দৃষ্টিনন্দন সববিল্ডিং। তারই একটির নাম হলো ফিল্মী দুনিয়া।

এখানে টয় ট্রেনে চেপে শুরু হবে অন্ধকার গুহায় আমাদের যাত্রা।আমরা দেখবো লন্ডন থেকে প্যারিস, নিউইয়র্ক থেকে মাউন্ট রাশমোর হয়ে ব্যাংককের বিখ্যাত সব শ্যুটিং স্পট। পুতুলের মুখে শুনবো সেই কাহিনী।


টয় ট্রেনে চেপে যাত্রা শুরু

এখানে এসে আবার সিরিয়াল দিতে হলো।বেশ লম্বা লাইন ১৫ মিনিটের এই শো দেখতে আমাদেরকে আরো ১৫ মিনিট লাইনে অপেক্ষা করতে হলো। ট্রেনে উঠার আগে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে তারা সবার ছবি তুলছে যা আমরা বের হয়ে আসার সাথে সাথে ডেলিভারি দিবে। দুজন দাড়ালাম ছবি তুলতে।
এরপর টয় ট্রেনে চেপে যাত্রা শুরু হলো, ট্রেন লাইনের দুপাশে স্টেজের উপর কৃত্রিম ভাবে তৈরী সিনেমায় দেখা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বহুল পরিচিত সব শহরগুলোর ল্যান্ডমার্ক। এক এক করে পার হলো ....


নিউয়র্কের মাইলস্টোন স্ট্যাচু অব লিবার্টি
ঘোড়ায় টানা গাড়ি করে কোন শহরে আসলাম বুঝতে পারলাম না তারাহুড়ায়।


ফিল্মী দুনিয়ায় ঘোড়ার গাড়ি চলছে


প্যারিসের বিখ্যাত মলিন রুয়া থিয়েটার হল এর রেপ্লিকা


হলিউড না বলিউড কোথাও সিনেমার শ্যুটিং চলছে


রামোজী গ্রুপ অব কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতাদের মুখায়াবয়বের ভাস্কর্য্য কৃত্রিম রাশমোর পাহাড়ে
জাতীয় এই সৃতিস্তম্ভটি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অংগরাজ্য দক্ষিন ডাকোটার রাশমোর পাহাড়ের গায়ে গ্রানাইটে খোদাই করা। এই ভাস্কর্য্যে রয়েছে আমেরিকার চারজন কালজয়ী প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন, টমাস জেফারসন, থিওডর রুজভেল্ট আর আব্রাহাম লিংকনের মুখাবয়ব।


অরিজিনাল মাউন্ট রাশমোরের ছবি যা নেট থেকে নেয়া।

ফিল্মী দুনিয়া দেখে মনে হলো এটা মুলতঃ বাচ্চাদের জন্যই বেশী উপভোগ্য।তবে চেহারা দেখে মনে হলো বড়রাও বাদ যায় নি মজা পেতে।

সে দুনিয়া থেকে বের হয়েই দেখি আমাদের ছবিগুলো ডেলিভারী দিচ্ছে। লোকজনের ভীড় ঠেলে কাছে গিয়ে দাড়ালাম। কম্পিউটারে দেখে যুবকরা বলছে কোনটা নেবেন ? সেকেন্দ্রাবাদ না রামোজী ব্যাকগ্রাউন্ড? তবে তারা জানালো সেকেন্দ্রাবাদ ব্যাকগ্রাউন্ডে যথারীতি আমার চোখ বন্ধ। শুনে রামোজী ব্যাকগ্রাউন্ডটাই নিলাম।তবে জানালো সফট কপি দেয়ার কোন উপায় নেই। সেখানে সবাই উদগ্রীব তাৎক্ষনিক ভাবে নিজেদের চেহারা দেখার জন্য,আমিও ছিলাম বটে।

এরপরের প্রোগ্রাম হলো এ্যাকশন থিয়েটার রামোজী ম্যুভি ম্যাজিক বিল্ডিং এ ।


রামোজী ম্যুভি ম্যাজিক বিল্ডিংএর সামনের অংশটুকু

আমরা তো সবসময় শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হলে বসে পপকর্ন খেতে খেতে ম্যুভি দেখি আর সমালোচনা করি এটা কি হলো ? এমন করলো না কেন ? ওমন করলে আরো ভালো হতো ইত্যাদি। কিন্ত একটা সিনেমা বানানো যে কত কষ্ট কত ঘাম ঝরানো পরিশ্রম তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না। অপ্রাসংগিক ভাবে এখানে উল্লেখ করতে চাই ।

রামোজী ফিল্ম সিটি দেখার পরদিন আমরা হায়দ্রাবাদের বিখ্যাত গোলাকোন্ডা ফোর্টটি দ্বীতিয়বারের মত দেখতে যাই।ঢুকতেই শুনি গানের আওয়াজ ভেসে আসছে উপর থেকে। গাইডকে শুধালাম 'কি ব্যাপার এখানে গান কেন! পরশুদিন তো শুনিনি। বল্লো ‘ম্যাডাম আজ একটা সিনেমার শ্যুটিং হচ্ছে’শুনে বেশ আগ্রহী হোলাম।

জানতে চাইলাম আমাদের কি দেখতে দেবে? গাইড বল্লো অবশ্যই দেখা যাবে।গানের একটা চরণই বার বার কানে ভেসে আসছে। আমরা একটু একটু করে সেই দুর্গের সব কিছু খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে দেখতে যখন ১ ঘন্টা পর সেই শ্যুটিং স্পটে উপস্থিত হোলাম। দেখলাম সেখানে সম্ভবত তেলেগু ম্যুভির গানের সাথে দলীয় নাচের একটি দৃশ্যের শ্যুটিং চলছে।

নায়িকার সাথে অংশ নিচ্ছে সিনেমার ভাষায় কিছু এক্সট্রা নামের মেয়ে। সেই কড়া রোদের মধ্যে মেয়েগুলো গানের ঐ একটি কলির সাথে বার বার নেচে চলেছে। কিন্ত কিছুতেই পরিচালকের ইচ্ছে অনুযায়ী নিজেদের মিলাতে পারছে না।পরিচালক ছাতার নীচে বসে কাট কাট করছে।এই ফাকে মেকাপম্যান দৌড়ে গিয়ে ছাতার নীচে বসা নায়িকার মেকাপ ঠিক করে দিচ্ছে।আর সেই ফাকে অতিরিক্ত মেয়েগুলো দৌড়ে গিয়ে দেয়ালের পেছনে রাখা বোতলের পানিতে একটু করে চুমুক দিয়ে আসছে।


গোলকোন্ডা দুর্গে নাম না জানা তেলেগু ফিল্মের নাচের শ্যুটিং চলছে
অবশেষে আধঘন্টা পর আমি ক্লান্ত আর হতাশ হয়ে চলে আসলাম সেখান থেকে। প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর আমি যখন সেই দুর্গ থেকে বের হয়ে আসি তখনো কানে ভেসে আসলো সেই গানের একই চরণ বেজে চলেছে। তারমানে তখনো গানের ঐ একটি সিনই ওকে হয়নি। সেই মুহুর্তে ছোট ছোট জামা পড়া মেয়েগুলোকে আমার একটুও অশ্লীল না লেগে মায়াই লাগছিল।কারণ নায়িকা থেকে পরিচালক কাঠফাটা সেই তপ্ত রোদে ছাতার নিচে ছিল শুধু ম্যুভি জগতে ঐ এক্সট্রা নামের চিন্হিত মেয়েগুলো ছাড়া।

সেই কঠোর পরিশ্রমসাধ্য কাজ অর্থাৎ কি ভাবে একটি ছবি তৈরী হয় সেটা দেখবো এখন এই থিয়েটারে? স্টুডিওর ভেতর ইনডোর স্যুটিং করে পরিচালকরা এডিটিং এর মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন অপরূপ লোকেশনে দৃশ্যের পর দৃশ্য দেখিয়ে আমাদের চমকে দেয়। অর্থাৎ একটা ম্যুভি তৈরির পেছনের গোপন যাদুর কিছু অংশ নিজের চোখে দেখা। এ জন্য আমাদের আমন্ত্রন জানালো এ্যাকশন থিয়েটার রামোজী ম্যুভি ম্যাজিক বিল্ডিং ।

সেই ম্যাজিক থিয়েটারে গেটে ঢোকার সময় বাচ্চাদের চেঁচামেচিতে উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি এক প্রমান সাইজ স্পাইডারম্যান বসে আছে।তার এ্যাকশন দেখে মনে হলো এখনি ঘাড়ের উপর লাফিয়ে পড়বে। এখানে দেখাবে একটা সিনেমা তৈরী করতে গেলে যে শ্যুটিং ডাবিং থেকে এডিটিং হয় তার যাবতীয় গোপন রহস্য ও কলাকৌশল।


স্পাইডারম্যান
অনেক পর্যটকদের সাথে সারিবেধে আমরা দুজন ঢুকলাম একটা প্রশস্ত রুমে। সেখানে দেখি এক দিকের দেয়ালের উপরের দিকে একটা মোটামুটি বড় স্ক্রীন। সেখানে আমাদের সাধারন একটা ব্রিফিং দেয়া হলো রামোজীর প্রতিষ্ঠা, সিনেমার উন্নতি নিয়ে তাদের চিন্তা ভাবনা, আকর্ষনীয় শ্যুটিং স্পট তৈরী, একটা ম্যুভি তৈরীর জন্য অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধার পরিবেশ তৈরী এসব। ঘাড় উচু করে স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে শুনতে শুনতে ভাবছি আজ আমার সারভ্যাইক্যাল স্পন্ডেলাইসিসের ব্যাথা বাড়ার হাত থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।এভাবে যদি লোকে লোকারন্য রুমে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সিনেমা বানানো দেখতে হয় !

এমন সময় এক ভদ্রলোকের অসম্ভব মার্জিত পৌরষোচিত গলা ভেসে আসলো মাইক্রোফোনে। ইংলিশে কথা বলছিলেন সবার সুবিধার জন্য। নাহলে অন্ধ্রের ভাষা তো তেলেগু।যদিও ভীড়ের জন্য তখনো আমি তাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না কিন্ত কানে আসলো উনি আমাদের মাঝ থেকে একটি ছেলে আর একটি মেয়েকে সেই যাদুর দুনিয়ায় অংশগ্রহনের জন্য আহ্ববান করছে। দুজন অল্প বয়স্ক ছেলেমেয়ে এগিয়ে গেল। ভাবছি এখন কি হবে?
এমন সময় মাইক্রোফোনে ঘোষনা হলো আমরা যেন পাশের রুমে গিয়ে কৃপা করে আসন গ্রহন করি ।
বিস্মিত নয়নে চেয়ে দেখি সেই স্ক্রীনের নিচের প্লেন দেয়ালটিতে এক পাল্লা এক পাল্লা করে মোট পাঁচটা বিশাল দরজা আড়াআড়ি ভাবে চিচিং ফাকের মত খুলে গেল। তার ওপাশে বিশাল এক অডিটোরিয়াম যাতে মনে হয় হাজারখানেক মানুষ বসতে পারবে।আমরা সবাই গিয়ে বসলাম থাকে থাকে নেমে আসা সেই গ্যালারীতে।
সামনে তাকিয়ে দেখি একটা স্টেজ তাতে রয়েছে কাঠের একটা টাংগার শুধু উপরের অংশটুকু। অর্থাৎ চাকা ছাড়া টাংগাটি একটি মোটা লোহার রডের উপর আড়াআড়ি ভাবে রাখা। আর এক কোনে এডিট আর ডাবিং মিক্সিং মেশিন।


সিনেমা তৈরীর অপরিহার্য যন্ত্র এডিটিং আর ডাবিং মিক্সার মেশিন
সুন্দর কন্ঠস্বরের অধিকারী সেই হ্যান্ডসাম উপস্হাপক এবার জানালো তারা আমাদের বিখ্যাত ম্যুভি শোলের একটি দৃশ্য তৈরী করা দেখাবে।

পরে একজনের কাছে শুনলাম তারা ইদানিং শোলের এই দৃশ্যটাই দেখাচ্ছে।
আমার স্বামী নড়ে চড়ে বসলো। এই ভদ্রলোক অমিতাভ বচ্চনের সিনেমা দেখতে কখোনো ক্লান্ত বোধ করে না।টিভি ছাড়লে সেটা যেখান থেকেই শুরু হোক দেখা চাই। আর শোলে মনে হয় হাজারবার দেখা।


এক ঘোড়ায় টানা টাংগার ছবি

খেয়াল করলাম টাংগার সিটের সামনে দুটো মোটা দড়ি এক সাথে করে রাখা যার দুটো মাথা স্টেজের সামনের দিকের শেষ মাথায় একটু ফাক রেখে আটকানো, আর পাশে রয়েছে এক চাবুক । এবার আমাদের থেকে বেছে নেয়া দুজন অমৃতা আর রাজেন কে ডাকা হলো স্টেজের পেছন থেকে। জীনসের প্যান্ট আর ফতুয়া পড়া অমৃতা হলদে লেহেংগা আর মেকাপে বাসন্তী সেজে স্টেজে আসলো।
উপস্থাপক বল্লো 'অমৃতা টাংগায় গিয়ে বসো, ঠিক আছে এবার দড়ি দুটো ধরো, তোমার দিকে টান দাও, এবার চাবুক মারো, ওকে এবার পেছন ফিরে তাকাও' ।
এটা অমৃতাকে কয়েকবার করতে বল্লেন ভদ্রলোক। সেই সাথে রাজেন কে বল্লো 'তুমি লোহার রডটা ধরে টাংগাটা দোলাতে থাকো'।

এভাবে কিছুক্ষন করার পর ভদ্রলোক অমৃতা আর রাজেন কে বিদায় দিয়ে আমাদের পাশের রুমে এমনই একটি অডিটোরিয়ামে নিয়ে গেল। সেখানে টাংগাটি নেই কিন্ত এডিট করার যন্ত্রটি রয়েছে।এখানে উনি দেখালো একটু উপর থেকে মুঠি করে বালু ছেড়ে দিলে মাইক্রোফোনে কেমন ঝমঝম বৃষ্টির শব্দ হয়, দুটো লোহার বাটি একটার সাথে আরেকটা বাড়ি দিয়ে ঘোড়ার খুরের ক্লপ ক্লপ শব্দ করে শোনালো,পাতলা একটা টিন নাড়ালে ঝড়ের আওয়াজ, আর একটা গোল মেশিন ঘুরিয়ে শো শো বাতাসের শব্দ শোনালো।

এবার আমাদের থেকে চারজন ছেলেকে ডেকে নিয়ে উনি এই শব্দগুলো করালেন।উনি ছিলেন এডিট মেশিনের সামনে। পেছনের স্ক্রীনে দেখলাম সেই ঘোড়া আর চাকা ছাড়া আমাদের অমৃতা টাংগা চালাচ্ছে। আর তার পেছনে তিন চার জন দস্যু ঘোড়াসওয়ার তাকে ঘন একটা জংগলে খুঁজে বেড়াচ্ছে।
আবার পাশের রুমে যাবার আমন্ত্রন।সেখানে এবার বিরাট স্ক্রীন।

ভদ্রলোক তাৎক্ষনিক ভাবে ঘোড়াবিহীন টাংগায় চড়া অমৃতাসহ চারটি ছেলের করা সেই শব্দগুলো জুড়ে দিয়ে আমাদের পর্দায় দেখালো কি ভাবে অমৃতা সেই তুমুল ঝড় বাদলের মধ্যে এক সাদা ঘোড়ায় টানা টাংগা করে গভীর জঙ্গলের ভেতর দিয়ে চাবুক মেরে দ্রুত পালানোর চেষ্টা করছে আর তার পেছনে তিন চার জন দস্যু তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে, যাদের এতক্ষন কোন চিন্হই ছিলনা। দেখানো শেষ হলো সিনেমা তৈরির পেছনের সামান্য একটুকরো কাহিনী। অসাধারণ সেই ম্যুভি ম্যাজিক।আমরা কিছুক্ষন অবাক হয়ে বসে রইলাম।


বিখ্যাত শোলে ম্যুভির জনপ্রিয় নায়িকা হেমা মালিনী, তার টাংগা আর প্রিয় ঘোড়া ধন্যু
এগুলোর কোন ছবি দিতে পারলাম না কারন মনে করতে পারছি না ছবি তোলা নিষেধ ছিল নাকি আমরাই মন্ত্রমুগ্ধ ছিলাম।

এর ফলে একটাই ক্ষতি হয়েছে আমাদের।আর তাহলো এখন সিনেমা দেখতে বসলেই মনে হয় ব্যকগ্রাউন্ড কিসের আমেরিকা কিসের সুইজারল্যান্ডে ! এগুলো সবই রামোজী অর্থাৎ স্টুডিউতে করা।
এতক্ষনের উত্তেজনায় টের পাইনি যে ক্ষিদায় পেট চোঁ চোঁ করছে। ব্রোশিওরে কয়েকটা রেষ্টুরেন্টের নাম রয়েছে।এক একটায় এক এক ধরনের খাবার।
আমার স্বামীর ইচ্ছা সুপার স্টারে খাবার যেখানে রয়েছে মাল্টি কুইজিন ।


সুপার স্টার রেষ্টুরেন্ট

কিন্ত ঐ গরমে আমার মনে হলো দক্ষিনী খাবারটাই ভালোলাগবে।টক দই সাথে ভেজিটেবল খাবার। মাছ মাংস আর ভালোলাগছিল না। তাই আমার পছন্দ মত ঢুকলাম দিল সে রেষ্টুরেন্টে।যতদুর মনে ১৫০ টাকা করে পারহেড।ব্যুফে সিস্টেম।এবং অনেকগুলো আইটেম ছিল।ছিল মুগ ডালের হালুয়া যা এর আগে আমি কখনো খাই নি।যত খুশি খাও যেটা খুশি খাও।দারুন পরিষ্কার পরিছন্ন সেই সাথে অত্যন্ত উচু মানের রান্না এবং পরিবেশ ও পরিবেশনা।


সাউথ ইন্ডিয়ান খাবারের রেষ্টুরেন্ট দিল সে

খাওয়া শেষে কিছুক্ষন বসে রইলাম ইউরেকা কমপ্লেক্সে ছাতার নীচে লম্বা মতন চেয়ারগুলোয়। এমন সময় একটি মেয়ে এসে আমার স্বামীর হাতে একটা ফর্ম দিয়ে অনুরোধ করলো রামোজী ফিল্ম সিটির ব্যাপারে তার ফিডব্যাক জানাতে। আমার স্বামী সবই ভালো বল্লো, সবকিছুই সুন্দর মোহনীয়, যথাযথ, অত্যাধুনিক এবং পরিস্কার টয়লেট থেকে শুরু করে সবকিছু ভালো। কিন্ত একটাই খারাপ সেটা হলো লেগ গার্ডেন দেখতে না পারা।
এরপর আমরা নিজেরা নিজেরা ঘুরে বেড়ালাম এদিক সেদিক।


তৎক্ষনাৎ তোলা ছবি হাতে নিয়ে আমি
শুনলাম ওখানে ব্যাক্তিগত অনেক অনুষ্ঠানও করা যায়। কোটি কোটি পতিরা হয়তো করে সেসব।এর মধ্যে হোটেল সিতারা হলো সবচেয়ে বিলাশবহুল, এর পরে রয়েছে হোটেল তারা বিজনেস স্ট্যাটাসের আর হোটেল সাহারা হলো ইকোনমি ক্লাস।গাইড জানালো হোটেল সিতারায় সব বড় বড় ফিল্ম স্টার আর হোমরাচোমরা ব্যাবসায়ীরা উঠে।


সান ফোয়ারার সামনে সবচেয়ে দামী হোটেল সিতারা

রামোজী ফিল্ম সিটিতে অল্পবয়সী ছেলেপুলে আর বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন রাইড ছাড়াও রয়েছে যাদুর জগত ফান্ডাস্তান। যার ভেতরে তাদের মনোরন্জনের জন্য নানা রকম ম্যাজিক, গুহার মধ্যে ওদের প্রিয় কার্টুন বা সিনেমার ভালো থেকে ভয়ংকর সব চরিত্র। ওগুলো আর আমরা দেখি নি।


ফান্ডাস্তানের প্রবেশপথে আমি

সবশেষে ছিল আরেকটি শো, ওয়াইল্ড ওয়েস্টার্ন শো। একসময়ে আমেরিকার পশ্চিমে কাউবয়দের জীবন যাত্রার কিছু অংশ এটাতে দেখিয়ে থাকে স্টান্ট শো করা ছেলেমেয়েগুলো ।এটা আমি থাইল্যান্ডের সাফারী পার্কে দেখেছি বলে খুব একটা আগ্রহী ছিলাম না। কিন্ত সেখানে পরিচিত এক দম্পতির আহব্বান এড়াতে পারলাম না ।


ওয়াইল্ড ওয়েষ্ট শো এর অডিটোরিয়াম আর স্টেজে সাজানো সে সময়ের আমেরিকার পশ্চিমের একটি শহরের দৃশ্য।

এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে দেখতে প্রায় যাবার সময় হয়ে আসলো।অপেক্ষা করছি ক্লোজিং শো এর। ইউরেকার বিশাল চত্বরে রামোজীর সব নৃত্য শিল্পী যাদুকর, এক্রোবেটের সন্মিলনে শুরু হলো সেই বিশাল শেষের অনুষ্ঠান। সাথে বিভিন্ন উপজাতীয় নাচ।


রামোজী ফিল্ম সিটির সমাপ্তি অনুষ্ঠান
কখন যে সময় হয়ে গেল বাসে চড়ার টেরই পেলাম না। আমাদের সাথে হায়দ্রাবাদ থেকে আসা এক পর্যটকের ডাকে সম্বিত ফিরে পেলাম। ওহ বাস ছাড়ার সময় তো হয়ে এসেছে, দৌড়ে এক বোতল পানি কিনে চড়ে বসলাম আমার সেই পছন্দের সামনের সীটে।যদিও টাইম দেয়া থাকে, ভয় দেখায় রেখে চলে যাবে তারপরও লিষ্ট দেখে প্রতিটা ট্যুরিষ্ট না আসা পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করতে থাকে।সবাই আসলো বাসও চলতে শুরু করলো ফিল্ম সিটির গেটের দিকে।


বাস চলতে শুরু করলো, আস্তে আস্তে পার হয়ে আসলাম রামোজীর গেট
এবার আরেকটা পথ দিয়ে যাচ্ছি নয় নম্বর জাতীয় সড়কের কাছে মেইন গেটের দিকে।এই পথটা যে কি সুন্দর বলার নয়।পাহাড়ী আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে বাস চলছে।চারিদিকে সবুজ গাছ দূরে দেখা যাচ্ছে রামোজীর বিভিন্ন স্থাপনাগুলো।একদম মেইন রোডের উপর মেইন গেটের কাছে এসে বাস দাড়ালো। অনেকে নেমে গেল তাদের জমা রেখে যাওয়া জিনিস আনতে। আমার স্বামী নামলো বেনসনের প্যাকেটটা ফেরত আনতে ছবি। আমি বাস থেকে নেমে ছবি তুল্লাম আমার প্রিয় তালগাছের ফাকে অস্তগামী সূর্যের সাথে রামোজী ফিল্ম সিটিকেও বিদায় জানানোর শেষ মুহুর্তটির।


তালগাছের ফাকে সূর্যের বিদায়
এখন মনে হয় এখানে না আসলে এই আলো ঝলমল জগতের অনেক কিছুই অজানা থাকতো। জানি অনেকে হয়তো বলবেন কি হতো না দেখলে ?আর বিভিন্ন টিভির চ্যানেলে কত দেখিয়েছে এসব ফিল্ম মেকিং। ঠিক ই বলবেন তারা আমি অস্বীকার করি না। আমি শুধু বলবো হ্যা আমিও দেখেছি টিভিতে ফিল্ম মেকিং।কিন্ত সেসাথে আনুসাংগিক জিনিসগুলোও নিজ চোখে দেখার অনূভূতিই অন্যরকম।
ধন্যবাদ অসাধারন একটি দিন উপভোগের সুযোগ করে দেয়ার জন্য আমার স্বামীকে।
আরো ধন্যবাদ জানাই হায়দ্রাবাদের সেই সব নাম না জানা লোকদের যারা আমাদের রামোজী দেখার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করেছিল। সবশেষে ধন্যবাদ আমার এই পোষ্টের সব পাঠকদের যারা আমাকে প্রতিটি মুহুর্তে উৎসাহ যুগিয়ে গেছেন প্রতিটি পর্বে।


চার পর্বে লেখা আমার এই পোষ্ট আমি সামহোয়্যার ইন ব্লগের একজন সিনেমা পাগল ব্লগার মাষ্টারকে উৎসর্গ করলাম।

সামুর প্রবলেমের কারনে আরো কিছু ছবি দিতে পারলাম না বলে দুঃখিত।
ছবিগুলো আমাদের ক্যামেরায় তোলা।
এছাড়া অরিজিনাল মাউন্ট রাশমোর টাঙ্গা, শোলের ছবিতে হেমা মালিনী আর ডাবিং করার ইন্সট্রুমেন্টের ছবিগুলো নেট থেকে নেয়া।


সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৩ সকাল ৯:৩৩
৫৭টি মন্তব্য ৫৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×