somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পর্যটক প্রিয় কো- সামুই এর বিখ্যাত আং থং মেরিন পার্ক ও তারনিম ম্যাজিক পার্ক ভ্রমনের গল্প

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কো মায় কো পাহাড় চুড়া থেকে আং থং মেরিন পার্কের কিছু অংশ
বেশ অনেকদিন অর্থাৎ মাস খানেক হলো ঘরে বসে আছি। ঘরে বসে থাকা বলতে যা বোঝায় তা ঠিক না যেমন ব্যংকক শহরের ভেতর ঘুরছি ফিরছি কিন্ত মন আমার উড়ু উড়ু অনেক দূরে কোথাও যাবার জন্য। অবশেষে অগতির গতি নেট নিয়ে বসলাম। থাইল্যন্ড নিয়ে বিখ্যাত ভ্রমণ বিশারদের নানা রকম লেখাজোকা, আদেশ-উপদেশ থেকে শেষ পর্যন্ত বেছে নিলাম না দেখা কো- সামুইকে। থাই ভাষায় কো অর্থ দ্বীপ অর্থাৎ কো সামুই মানে সামুই দ্বীপ। সেদেশের বিখ্যাত আং থং মেরিন পার্ক সহ আরো অনেক কিছুরই গর্বিত মালিকানার অংশীদার তিনি। দেশটির দক্ষিনের বিশাল প্রদেশ সুরাটথানির কোল ঘেষে থাই উপসাগরের পান্না সবুজ জলের মাঝে সবচেয়ে বড়টিই হলো সামুই।


ফেরীর কাঁচের জানালার ভেতর থেকে তোলা কো সামুই
ক্রান্তীয় বনভুমিতে ছেয়ে থাকা ২২৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সামুই এর বুক জুড়ে রয়েছে সুউচ্চ পাহাড় সারি, সমতলে জনবসতি ছাড়াও আছে পাম, দুরিয়ান, রাম্বুথান আর চির পরিচিত নারকেল বাগান। তার ফাকে দু একটা সুপারী গাছও নজরে পড়লো। আছে সেগুন, মেহগনী, কাঠ বাদাম,দু একটি পলাশ, নাম না জানা অসংখ্য গাছ আর চেনাজানা জংলী গাছের ঝোপ। চলতে ফিরতে ডানে বায়ে উকি দেয়া সমুদ্রের সবুজাভ জলতরংগ দেখে মনে হচ্ছিল প্রকৃতি যেন নিজ হাতে স্বর্গীয় রূপ-সুষমার পাত্রটি উপুড় করে ঢেলে দিয়েছে সামুইতে। যার আকর্ষনে সারা বছর জুড়েই এত পর্যটকদের ভীড় এখানে, যেমনটি আমরাও এসেছি।
ট্যাক্সি, প্লেন, ফেরী, মাইক্রোবাস ইত্যাদি নানা রকম যানবাহন লেগেছিল ব্যংকক থেকে ৬৭০ কিঃমিঃ পথ পারি দিয়ে সামুই এর নির্ধারিত হোটেলে পৌছাতে। ডিলাক্স বাস বা ট্রেনে আসা যায়, বিভিন্ন সময় প্রমোশন দেয়ায় বাসের সাথে প্লেনের ভাড়ায় খুব একটা ফারাক না থাকায় আমরা প্লেনেই আসলাম। তাছাড়া দীর্ঘ এবং বিশেষ করে নৈশ বাস জার্নিতে আমি প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পরি এই একটা বিরাট অযোগ্যতা ইবনে বতুতা হিসেবে আমার।


বিশাল সাইনবোর্ড আহবান জানাচ্ছে সামুই ভ্রমনে
সুরাটথানি এয়ারপোর্ট এ একটি কোম্পানী্র সাথে চুক্তি হলো, তারা মাথা পিছু ১৫০০ বাথ নিবে যার মাঝে রয়েছে ট্যাক্সি করে পৌনে দু ঘন্টার পথ ডনসাক জেটিতে পৌছে দেয়া, যেখান থেকে সামুই এর উদ্দেশ্যে ঘন্টায় ঘন্টায় ছেড়ে যাওয়া নির্ভরযোগ্য কোম্পানী সিট্রান এর ফেরীতে তুলে দেয়া। ফেরীতে লাগে এক ঘন্টা পাঁচ মিনিট সময়, সামুই জেটি থেকে সোয়া ঘন্টার পথ পর্যটক প্রিয় এলাকা চয়েং এক হোটেলে পৌছে দেয়া। আবার চারদিন পর একই ভাবে সুরাটথানি এয়ারপোর্ট পৌছে দেবে তারা। প্রতিটি জায়গায় ড্রাইভার সহ গাড়ী আমাদের অপেক্ষায় থাকবে। নিজেরা নিজেরা যাবার চেষ্টা করলে হয়তো কিছুটা কম পয়সা লাগতো কিন্ত বিদেশ বিভুই কোথায় কি তা খুজে বের করা ছাড়াও ভাষা এখানে বিশাল সমস্যা। মোদ্দা কথা ব্যংকক থেকে সকাল সাতটায় ঘর থেকে বের হয়ে সামুই হোটেলে আসতে আসতে আমাদের বিকেল হয়ে গেল।

পরদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা নির্ধারিত ছিল বিখ্যাত আং থং মেরিন পার্ক ভ্রমন যা আগে থেকেই বুকিং দেয়া ছিল। এই ভ্রমনের জন্য মাথা পিছু ১৫০০ বাথ দিতে হলো ট্যুর কোম্পানীকে। কোম্পানীর নাম সামুই আইল্যান্ড ট্যুর। এই টাকার মাঝে অন্তর্ভুক্ত হোটেল পিক আপ, ড্রপ, অর্থাৎ ভ্যানে করে অনেক দুরের জেটিতে ভেড়ানো নির্দিষ্ট নৌযানে তুলে দেয়া ও সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরিয়ে আনা ছাড়াও অন্তর্ভুক্ত ছিল সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, বিকেলের চা নাস্তা, সারাদিনের জন্য চা, কফি, কোমল পানীয়তো ছিলই। আমাদের দেশের লঞ্চের মতই তিন তালা সেই নৌযান। সেখানে ওঠার সাথে সাথে দুজন পুলিশ চেকিং করতে লাগলো সেই নৌযানে যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে কি না, সবাই লাইফ জ্যাকেট পড়েছে কি না? মোবাইলে ছবিও তুলে নিয়ে গেল তারা।


নীলাভ সবুজ পানিতে কায়াক প্রেমীরা
১৫০০ বাথে আরো অন্তর্ভুক্ত ছিল কায়াকিং, ছোট ছোট দ্বীপে সময় যাপন, সাতার কাটা, স্ন্ররকেলিং অর্থাৎ ডুবুরীর মত পোশাক পড়ে ডুবে ডুবে প্রবালের ঝাড় দেখে বেড়ানো, পাহাড়ে চড়া এসব। সত্যি বলতে কি এসব আমাদের মত বয়সীদের জন্যও নয় আমাদের সংস্কৃতির লোকজনের জন্যও নয়। তাই আমরা দুজনাই বসে বসে শুধু প্রকৃতির রূপ সুষমাই উপভোগ করেছিলাম যখন বাকি পঞ্চাশ ষাটজন জোয়ান বুড়ো কচি কাঁচার দল সমুদ্রে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছিল।

সামুই এর ৩০ কিঃমিঃ:উত্তর পশ্চিমে ছোট বড় ৪২ টি দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে বিখ্যাত আং থং মেরিন পার্ক যা দেখা ছিল আমাদের প্রধান আকর্ষন। ২৫০ স্কয়ার কিমি বিস্তৃত মেরিন পার্কের মাঝে মাত্র ৫০ স্কয়ার কিঃমিঃ জুড়ে চুনা পাথরের পাহাড় যার বেশিরভাগই জনমানবহীন। অদ্ভুত আকৃতির বেশিরভাগই পাহাড়ই খাড়া উঠে গেছে সমুদ্র থেকে, আবার কোন কোনটি সরু একটি পাথরের স্তম্ভের উপর ঝুলে আছে সমুদ্রের উপর যে কোন সময় ভেঙ্গে পরার অপেক্ষায়। এর ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে প্রকৃতির নিজ হাতে তৈরী অন্ধকার গুহা আর সরু টানেল যার মাথার উপর থেকে নেমে এসেছে চুনা পাথরের মোটা মোটা হাত যার নীচ দিয়ে মাথা নীচু করে কায়াক চালিয়ে যেতে হয়। খুব দক্ষ চালক না হলে মুহুর্তের মাঝে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পেরে।


ফুকেটের এক ভয়ংকর গুহায় কায়াক চড়ে যাচ্ছি আমি
কয়েক বছর আগে যখন ফুকেট গিয়েছিলাম তখন কায়াক চালাতে অক্ষম আমাকে একাকী অসহায় অবস্থায় ডেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লঞ্চের এক কর্মী যিনি একজন দক্ষ কায়াক চালকও বটে আমাকে সেই টানেলের ভেতর দিয়ে চারিদিকে অনেক উচু পাহাড় ঘেরা অপুর্ব সুন্দর ছোট এক হ্রদের মাঝে নিয়ে গিয়েছিল। পানি থেকে লম্বা একটি নারকেল পাতা তুলে তৎক্ষনাৎ একটি গোলাপ ফুল বানিয়ে গিফট করেছিল আমাকে। যা আমার অনেক প্রিয় একটি স্মৃতি।
সামুই আইল্যান্ড ট্যুর কোম্পানী প্রায় ঘন্টা দেড়েক পরে আমাদের নিয়ে আসলো একটি দ্বীপে নাম কো মায় কো যার অর্থ মাদার আইল্যান্ড বা মা দ্বীপ। ঘুরে দেখার জন্য সময় দিল এক ঘন্টা। তার আগে অবশ্য যারা কায়াকিং করবে তাদেরকে এই দ্বীপ থেকে একটু দূরে সমুদ্রে নামিয়ে দিল যাতে তারা সহজেই কায়াক চালিয়ে দ্বীপে চলে আসতে পারে। জেগে থাকা পাথুরে পাহাড় আর নীলাভ সবুজ জলের মাঝে কায়াকগুলো মুহুর্তের মাঝে সৌন্দর্য্যের রঙ ছড়িয়ে দিয়েছিল।


সমুদ্র থেকে উঠে আসা চুনাপাথরের পাহাড়
এ দ্বীপের প্রধান আকর্ষন হলো পাহাড়ের চুড়োয় প্রাকৃতিক ভাবে তৈরী অপরূপ সুন্দর এক লবনাক্ত পানির হ্রদ যার পানির রঙ পান্না সবুজ। অনেক উচু এই পাহাড়ে ওঠার জন্য দুধারে রেলিং সহ লোহার সিড়ি উঠে গেছে খাড়া ভাবে, যার খানিকটা পর পরই রয়েছে কাঠের চারকোনা পাটাতন। এখানে দাঁড়িয়ে অনেকেই ক্ষনিকের জন্য বিশ্রাম নিচ্ছিল যেমন নিচ্ছিলাম আমি পরবর্তী ধাপ পাড়ি দেয়ার জন্য। অনেক কষ্টে উপরে ওঠার পর দেখলাম কাঠের একটি ছাউনি রয়েছে যার চারিদিকে বেঞ্চ পাতা।


খাড়া এই সিড়ি বেয়ে উঠতে হলো ডি ক্যাপ্রিওর লেগুন দেখার জন্য

এত দূর উঠে যেন বিশ্রাম নিতে পারেন। রয়েছে একই উচ্চতায় বেড়া দেয়া একটি প্ল্যাটফর্ম যেখান থেকে হ্রদটি ছাড়াও আপনি সুদুরে চোখ মেলে দিতে পারেন।পাহাড়ের এত উপরে গড়ে ওঠা হ্রদের পানি লবনাক্ত হলো কেমন করে সেটা জানার ইচ্ছে পুরন করলো সেখানে ঝোলানো এক সাইন বোর্ড। লেখা আছে তিরিশ মিলিয়ন বছর আগে ভুপৃষ্ঠের আন্দোলনের ফলে এই হ্রদটি সৃষ্টি হয়েছিল, আরো সৃষ্টি হয়েছিল কিছু গুহা আর ভুগর্ভস্থ টানেলের যার মাধ্যমে সমুদ্র থেকে এখানে লবনাক্ত পানি আসে।


মা দ্বীপের প্রধান আকর্ষন পাহাড়ের চুড়োয় সৃষ্টি পান্না সবুজ রঙের পানির লেগুন

এই লেগুনেই হলিউডের বিখ্যাত স্টার টাইটানিক ছবির নায়ক ডি ক্যাপ্রিওর দ্য বীচ সিনেমার শুটিং হয়েছিল। আমার সঙ্গীর পায়ে সমস্যা থাকায় আমি একাই উঠেছিলাম। যত সুন্দরই হোক কোন কিছুই যেন একা একা উপভোগ করা যায় না। তাই আমিও নেমে আসলাম খানিক পরেই সুন্দর একটি অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করে। ওঠার থেকেও নামাটা ভয়ংকর মনে হলো আমার কাছে। পা পিছলে পড়লেই সব শেষ। আমাদের সাথী পর্যটক যারা যারা পাহাড়ে ওঠেনি বিশেষ করে অসুস্থ অথবা যাদের সাথে শিশু রয়েছে তারা নেমে পড়েছিলো সমুদ্র মন্থনে ।


সমুদ্র স্নানের তোরজোড়
সমুদ্র থেকে খাড়া ভাবে উঠে যাওয়া কো মায় কো দ্বীপটিতে রয়েছে সামান্য এক চিলতে এক বেলাভুমি। এটুকুর মাঝেই তারা গড়ে তুলেছে প্রকৃতির সাথে মিলিয়ে ছোট আকারের একটি দৃষ্টি নন্দন কফি ও কোমল পানীয়র দোকান, ক্ষুদে এক স্যুভেনীরের দোকান, অত্যাধুনিক টয়লেট ও চেঞ্জ রুম। সারাদিন ধরে শত শত পর্যটকের আগমনেও নোংরা হয়ে পরে নি এর ক্ষুদে বেলাভুমি। কারন সার্বক্ষনিক পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ছাড়াও মানুষ জনও অত্যন্ত সচেতন, তদুপরি আইন অত্যন্ত কড়া । পাহাড় থেকে নেমে আসলাম, সুর্য্য তখন মাথার উপর তার তেজ ঢেলে দিচ্ছে অমিত বিক্রমে। গলা শুকিয়ে কাঠ, পানি খাওয়া উচিত কিন্ত আইসক্রীমের লোভ সামলাতে পারলাম না। ১৫ বাথের একটি ম্যাগনাম আইসক্রীম চল্লিশ বাথে খেতে খেতে জেটিতে ভেড়ানো পারাপারের নৌকায় উঠে বসলাম।


ভাসমান প্লাস্টিকের জেটি
নৌযানে ফিরে শুনলাম নীচ তালা থেকেই লাইন দিয়ে দুপুরের খাবার নিয়ে উপরে উঠতে হবে। খাবারের মাঝে ছিল সাদা ভাত, আলু দিয়ে রান্না মুরগীর তরকারী, হরেক পদ মিলিয়ে একটি সব্জী, ভেজিটেবল রোলস এবং তরমুজ ও আনারস। তিনতালা সেই নৌযানের দোতালায় দুদিকে বেঞ্চ লাগানো টেবিল বসে খেতে খেতে শুনলাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্য কো উয়া তালাপ , এখানে রয়েছে ন্যাশনাল মেরিন পার্কের হেড কোয়ার্টার। কায়াকিং করে আর পাহাড়ে চড়ে ক্লান্ত বিপর্যস্ত সবার চেহারা দেখে মনে হলো না ঐ দ্বীপে কেউ যেতে রাজী হবে। আমরা যেহেতু অতটা পরিশ্রম করি নি তাই খেয়ে দেয়ে অল্প গভীর পানিতে নীল প্লাস্টিকের ভাসমান জেটি পর্যন্ত যাবার জন্য লম্বা ইঞ্জিন নৌকায় উঠে বসলাম। দেখলাম ধীরে ধীরে সবাই এসে দুটো নৌকা ভরে ফেল্লো। দু মিনিটের মধ্যে জেটিতে এসে নৌকা ভিড়লো।


এই দ্বীপেই রয়েছে আং থং ন্যাশনাল মেরিন পার্কের প্রধান কার্যালয়
আং থং ন্যাশনাল মেরিন পার্কের সমুদ্রের নীচে রয়েছে নানা ধরনের জীব বৈচিত্রের সমাহার যার মাঝে প্রবালের ঝাড়, মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রানী ও মাঝে মাঝে নজরে পরা বিষাক্ত জেলী ফিস। জেলী ফিসের ব্যাপারে বিভিন্ন জায়গায় সতর্কবানী লেখা।
পাহাড়গুলোতেও রয়েছে অনেক রকম বন্য প্রানী যার মাঝে সাপ, গিরগিটি, সাদা মুখের বানর, দুর্লভ পাখী ছাড়াও বিভিন্ন ফার্ন আর বুনো ফুল যার মাঝে অর্কিড প্রধান। গাইড বার বার সাবধান করে দিল যে "এখানে শুধু চোখ দিয়ে দেখবে আর হাতের ক্যামেরা ও মনের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে আনবে। যেখানের জিনিস সেখানেই থাকবে, কোন কিছু নেয়া বা ছোয়া বারন, ২০০০ বাথ জরিমানা আর সেটা দিতে তুমি বাধ্য"। বিশেষ করে বন্য প্রানী যার মাঝে বিশেষ করে বানরদের কোন রকম উত্যক্ত না করা বা খাবার না দেয়ার জন্য আমাদের নির্দেশ দিচ্ছিল । মনে মনে ভাবলাম বানরকে কে খাবার দিতে যাবে শুনি! শেষ মেষ হয়তো আমার ফোন সানগ্লাস তাদের হাতে খুইয়ে বসবো।


সমুদ্র তীরে নারকেল বিথী আর সমুদ্র সৈকত
দেড় ঘন্টা সময় আমাদের হাতে জানিয়ে দিল গাইড এখানে কেউ বা স্নরকেলিং এ ব্যস্ত, কেউবা সমুদ্র স্নানে আর কেউ বালুকা বেলায় অথবা গাছের ছায়ায় চাদর বিছিয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন । আয়তনে সব চেয়ে বড় এই পাহাড়ী দ্বীপটির সমুদ্রের দিকে অপেক্ষাকৃত বড় একটি সৈকত ছাড়াও রয়েছে রেস্টুরেন্ট, কোমল পানীয়র দোকান, মিউজিয়াম, প্যারা মেডিকস সহ মেডিকেল সেন্টার, ক্যাম্পিং এর ব্যবস্থা, অর্কিডের বাগান, আর চেইঞ্জ রুম, টয়লেট তো আছেই। সবুজ ঘাসের কার্পেটে পা ফেলে বিশাল গাছের ছায়ায় ছায়ায় চারিদিকে ঘুরে ফিরে এক কাপ কফি নিয়ে বসলাম কাঠের বেঞ্চে।


সাপ খোপের দেখা না মিল্লেও এই পুচকে গিরিগিটি জাতীয় প্রানীটি বেঞ্চে আমার সঙ্গী হয়েছিল
তারই ফাকে মেরিন পার্ক মিউজিয়ামটি দেখে নিলাম। নিরিবিলি সেই এক রুমের মিউজিয়ামে দু তিন জন কর্মী মাত্র বসে আছে। ভাষা না জানার জন্য অনেক কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। দেড় ঘন্টা সময় কখন পেরিয়ে গেল টেরই পেলাম না। গাইডের ডাকে ফিরে চললাম নৌকার উদ্দেশ্যে যে আমাদের নিয়ে যাবে সামান্য দূরে ভীরে থাকা আমাদের নৌযানে। এসে দেখি চা নাস্তা সাজানো। নাস্তার প্লেট নিয়ে সামনে ডেকে গিয়ে বসলাম। ধীরে ধীরে আমাদের লঞ্চের মুখ ঘুরিয়ে রওনা দিল গন্তব্যে।


চোখে পড়লো অথৈ নীল পানিতে অদূরেই এক বিশাল জলযান
চালকের আসনে বসে আছে আমাদের অত্যন্ত হাসি খুশী গাইড। অনেক দূরে ধোঁয়া ধোঁয়া এক সারি পাহাড়ের দেখিয়ে তার দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকা্তেই সে হেসে উত্তর দিল “ইয়েস দিস ইজ আওয়ার সামুই”। জেটিতে নামার সময় মনে হচ্ছিলো অসাধারন নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য নিয়ে সমুদ্রের কোলে লুকিয়ে থাকা এই আং থং মেরিন পার্ক আমাদের স্মৃতিপটে ভেসে থাকবে সারা জীবন।

রাতে খেয়ে দেয়ে যখন ফিরে আসছি চেয়ে দেখি আমাদের হোটেলের পাশেই প্রচুর ট্যুর কোম্পানীর অফিস। কাঁচের দরজা ঠেলে মালকিনের কাছে পরদিন একটি হাফ ডে সিটি ট্যুরের জন্য বললাম। উনি তড়িৎ গতিতে কয়েকটি কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করে ভীষন দুঃখের সাথে জানালেন পরদিন সিটি ট্যুরের কোন সিটই খালি নেই, সব বুকড। উনি আরো জানালেন চাইনীজ নববর্ষ উপলক্ষে প্রচুর চীনা পর্যটকের আগমনই এর কারন। আরো দু একটি জায়গায় চেষ্টা করলাম একই ফলাফল। কি আর করা দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে হোটেলে ফিরে আসলাম। পরদিন সামুইতে ই ঘুরি ফিরে কাটাতে হবে আর কি।


ম্যাজিক পার্কের বংশী বাদক
সামুই বেড়ানো যখন ঠিক হলো তখনই নেট থেকে জানতে পারি এখানে একটি ম্যাজিক পার্ক রয়েছে যা পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষনীয়। ছবি দেখে সেখানে যাবার জন্য আমার মাথায় ভুত চেপে বসেছিলো। হাফ ডে ট্যুর নিয়ে সেখানে যাওয়াই ছিল আমার প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্ত তা আর হলো কই! সকাল নয়টা, কফি খাবার জন্য হোটেল থেকে বের হয়ে রওনা দিলাম ফ্যামিলি মার্টের উদ্দেশ্যে যা চব্বিশ ঘন্টাই খোলা থাকে। মাঝ রাত পর্যন্ত হুলুস্থুল করে এসময় চারিদিকের দোকান-পাট, রেস্তোরা সব বন্ধ শুনসান, রাতের জমজমাট রাস্তাটি বিশাল অজগরের মত নীরব ঘুমে পরে আছে যেন।


সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় এখানে সামুদ্রিক খাবারের এলাহী আয়োজন যা এখন বন্ধ
ফেরার পথেই এক ট্যাক্সিওয়ালা এগিয়ে এসে জানতে চাইলো আমরা কোথাও যাবো কিনা। যখন শুনলো আমরা যাদুর বাগানে যেতে চাই তখন সে জানালো সে বাগান অনেক দূর, যেতে দু ঘন্টা লাগবে, অনেক উচু পাহাড়ের উপর উঠতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। শুধু ড্রপ দিয়ে আসবে ভাড়া মাথা পিছু ১০০০ বাথ, অর্থাৎ দুজনার বাংলাদেশি টাকায় ৫হাজার।অনেক দর কষাকষির পর পিক আপ হোটেল ড্রপ ও আরো তিনটি জায়গা ঢুকিয়ে মোট চার ঘন্টার জন্য ১৮০০ বাথে রাজী করালাম। কিন্ত ট্যুর কোম্পানীর ভ্যানে অন্যদের সাথে গেলে ভাড়া নিতো মাথাপিছু ৩৫০ বাথ। মনে পড়লো জীবনে কত রকম বাগানই না দেখেছি, যার মাঝে উল্লেখযোগ্য ছিল মায়ানমারের হাজার বছরের পুরনো একটি আস্ত শহর যার নামই বাগান। সবুজ বাবলা গাছের মাঝে লাল পোড়ামাটি আর পাথরে তৈরী হাজার হাজার মঠের বাগান।


ম্যাজিক পার্কে খুন নিমের স্বহস্তে নির্মিত বাদক আর নর্তকী দলের ভাস্কর্য্য
১৮০০ বাথের শোক বুকে চেপে শহর ছাড়িয়ে রানওয়ের মত মসৃন নিরিবিলি পথ ধরে চলছি তো চলছি শেষ আর হয়না।তারপর শুরু হলো পাহাড়ি পথে চড়াই উৎরাই। পথের দুপাশে পাতা বাহার আর বিভিন্ন ফুল আর ফলের গাছ যার ফাক দিয়ে দৃষ্টি চালানো মুশকিল। কক্সবাজার যাবার সেই পুরনো পথের কথা মনে করে দুঃখ হতে লাগলো। বন উজাড় করে কি করেছি আমরা ! অবশেষে ড্রাইভার এসে থামলো পাহাড়ের চুড়োর উপর একটি খোলা চত্বরে যেখানে রয়েছে স্যুভেনীর কাম কফি শপ ও টিকিট ঘর কাচের উপর লেখা তানিম ম্যাজিক পার্ক।


তানিম ম্যাজিক গার্ডেনের টিকিট ঘর
আসার আগে বিভিন্ন সুত্র থেকে এই যাদুর বাগান সম্পর্কে তেমন বিস্তারিত কোন বর্ননা পাইনি। যতটুকু জেনেছি সেটা হলো ১৯৭৬ সালে ৭৭ বছর বয়সী এক দুরিয়ান (কাঠাল আকৃতির ফল)চাষী নাম তার নিম থংসুক প্রকৃতির কোলে নীরবে নিভৃতে তার শেষ জীবন কাটাতে বেছে নিয়েছিলেন এক অভিনব পন্থা যা অনেকের কাছেই অকল্পনীয়। সামুইতে পম নামের অন্যতম উচু পাহাড়টির গভীর জঙ্গলের মাঝে ছোট্ট এক গিরিখাতকে ঘিরে খুন নিমের ছিল কিছু পারিবারিক জমিজমা। প্রৌঢ় বয়সে খুন নিম সেই শান্ত সুন্দর পরিবেশকে ঘিরে শুরু করেন এক যাদুর বাগান তৈরীর কাজ যা শেষ হয় ৯১ বছর বয়সে তার মৃত্যুর মাধ্যমে। তাঁর যাদুর বাগানটি তারানিম ম্যাজিক পার্ক বা সিক্রেট বুদ্ধ পার্ক নামে পরিচিত। সংক্ষেপে তানিম পার্ক নামেও ডাকে কেউ কেউ।


যাদুর বাগান জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন ভাস্কর্য্য
উপড়ে উঠে এসে শুনি এত খাড়া পথে ভ্যান উঠতে পারে না। এখানে আসতে হলে ফোর হুইল জীপ, মটর সাইকেল বা ট্যাক্সিই সম্বল। মনে হলো আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। ট্যুর গ্রুপের সাথে গেলে ওরা হয়তো পাহাড়ের অনেক নীচেই ভ্যান থেকে নামিয়ে দিয়ে হেটে উঠতে বলতো ।


ম্যাজিক পার্কের অচেনা মুর্তি
মাথা পিছু ৮০ বাথ দিয়ে টিকিট কিনলাম। তারপর একজনার দেখিয়ে দেয়া পথ ধরে শুরু হলো নীচে নামা। আগের দিন মেরিন পার্কে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দৌড় ঝাপে পা দুটো এমনিতেই টন টন করছিল ব্যাথায়। তার উপর খাড়া সিড়ি বেয়ে নামাও বেশ কষ্টকর ছিল আমাদের কাছে। কিন্ত নেমেই মনে হলো সত্যি এক যাদুর বাগানেই এসেছি। ভুলে গেলাম পায়ের ব্যথা বেদনা, টাকার মায়া। কংক্রিটের সিড়ি নেমে এলাম ছোট্ট এক গিরিখাতের মাঝে।


ম্যাজিক পার্কের মাঝে ছোট গিরিখাতের মাঝ বরাবর ছোট ঝর্নাটি
ঘন সবুজ গাছের ছায়ার ফাকে উকি দেয়া সুর্য্যের নরম আলোয় প্রথমেই চোখে পড়লো ছোট বড় নানা রকম পাথরের টুকরো আর প্রাচীন চেহারার কিছু মন্দির। তারই মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে শান্তশিষ্ট এক ক্ষুদে ঝর্না যার মৃদু মন্দ কুলু কুলু ধ্বনি শান্ত নিরিবিলি পরিবেশকে ঘিরে এক মোহনীয় সুরের সৃষ্টি করে চলেছে। সেই শীতল স্রোতধারার দুপাশ ঘেষে বিস্ময় জাগানিয়া যাদুর বাগানের বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে বড় বড় পাথর ছেঁনে নিম থংসুকের নিজ হাতে তৈরী বিভিন্ন ভঙ্গীমার ভাস্কর্য্যগুলো। এমনকি ঝর্নার পানিতে শায়িত শ্যাওলা ঢাকা বিশাল আকৃতির দুটি মুর্তিও আছে যা খুন নিমের দাদা দাদী বলে জানা যায়। প্রাচীন আদলে তৈরী সেই মুর্তিগুলো এতই জীবন্ত মনে হচ্ছিল ওরা আমাদের তাকিয়ে আছে যেমন করে আমরাও বিস্মিত হয়ে চেয়ে আছি তাদের দিকে।


পাথরের উপর হাসি খুশী মুখে বসে আছে দু জন
সেই সব ভাস্কর্য্যের মাঝে রয়েছে বৌদ্ধ পৌরানিক কাহিনীর বিভিন্ন দেব-দেবী, স্বর্গীয় নর্তকীর দল, বংশী বাদক, একাধিক নৃত্যরতা থাই রমনী, সাপ মুখে বিশালাকার এক পৌরানিক পাখী, কিছু সামুদ্রিক প্রানী, ব্যং, এমনকি এই যাদুর বাগানের স্রষ্টার নিজস্ব ভাস্কর্য্য পর্যন্ত রয়েছে এখানে। আরো আছে অপুর্ব দৃষ্টি নন্দন সব মন্দিরের সমাহার।


বিশাল সাপ মুখে নিয়ে এক পৌরানিক পাখি
কোন গাইড বা ব্রোশিউর না থাকায় আমরা সেই অত্যাশ্চার্য্য বাগান ও তার ভাস্কর্য্যগুলোর কোন পরিচয়ই জানতে পারিনি বলে আফসোস হচ্ছিল। এই যাদুর বাগানেই খুন নিম ও তাঁর স্ত্রীর সমাধিও রয়েছে যা চিনতে আমরা ব্যার্থ হই। এখানকার প্রতিটি ভাস্কর্য্যের নির্মান রীতিতে রয়েছে অত্যন্ত প্রাচীন একটি ভাব, যা দেখলে মনে হয় চল্লিশ বছর নয়, হাজার বছর আগে বুঝি এই যাদুর বাগান তৈরী হয়েছে।


যমদুতের মত দেখতে মুর্তিটির পরিচয় জানা হলো না
এখানে দুটি দরজা বিহীন ঘরে দুটি ব্যতিক্রমী মুর্তি রয়েছে যাদের গায়ে সাদা পোশাক, সামনে খাবার দেয়া। ব্যংকক ফিরে আসার পর একজন ছবি দেখে ভীত স্বরে বল্লো “ এ ছবি কেন তুলেছো ! তুমি কি জানোনা এ দুটো হলো প্রেতাত্বার প্রতীক”। আমি সন্দেহ প্রকাশ করায় সে জানালো “ তুমি দেখছোনা শুধু এই মুর্তি দুটোর সামনেই খাবার ও ধুপকাঠি দেয়া, আর এটা দেয়া হয় এদের খুশী রাখার জন্য"। সে আরো জানালো “তাদের আশাপাশ থেকে কেউ কোন কিছু নিয়ে আসলে সেটা যদি সামান্য গাছের ঝরা পাতাও হয় তা নিয়ে যত দুরেই পালিয়ে যাই না কেন তারা ঠিকই পিছু পিছু ধেয়ে আসবে প্রতিশোধ নিতে”। একথা শুনে আমিতো রীতিমত আতংকিত হয়ে গেলাম, এক ছবি তোলা ছাড়া আর কিছু করেছি বলেতো আপাতত মনে পরছে না আমার।


যাদুর বাগানের মাঝে দরজাবিহীন পাথরের ঘরে সামনে খাবার সাজানো এক প্রেতাত্বার মুর্তি
ঝর্নার পানিতে ছোট ছোট পাথরের টুকরো ফেলে এপার ওপার করার ব্যবস্থা। তখনো তো ভুত প্রেত সম্পর্কে কিছু শুনিনি তাই ঝর্নার দুদিকেই ঘুরে ফিরে দেখছি মুগ্ধ নয়নে। এমনকি সেই প্রেতাত্বার আশে পাশেও ঘুর ঘুর করছি, ছবি তুলছি, অবশেষে ড্রাইভার এসে উকি দেয়ায় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি কখন এক ঘন্টা পেরিয়ে গেছে টেরই পাইনি। যাদুর বাগান যেন সত্যি আমাদের যাদু করে রেখেছিল এতক্ষন। ধীরে ধীরে সিড়ি বেয়ে উঠে আসলাম সেই স্বর্গীয় বাগান থেকে দারুন এক প্রশান্তি নিয়ে।


খুন নিমের সৃষ্টি ভয়ংকর এক ভাস্কর্য্য
অবশেষে কফি শপে কফি খেতে খেতে মনে হলো ট্যাক্সি ড্রাইভার আমাদের মোটেও ঠকায়নি, টাকাটি তার ন্যয্য পাওনাই। এখানে একটা কথা বলে রাখি চায়ের সাথে তুলনা করলে কফি আমার কাছে বিস্বাদই লাগে । যেহেতু দেশের বাইরে কফি সহজলভ্য আর যদিও বা চা পাওয়াও যায় তা হয় লিকার অথবা আইস টি যা আমার মোটেও ভাললাগে না। তাই ক্লান্তি তাড়াতে কফি নিয়ে বসি আর মনে মনে ভাবি এই চা খাবার জন্যই আমি একদিন ঘরে ফিরে যাবো ।
কফি শেষে উঠে দাড়ালাম পরের গন্তব্য এক ঝর্না দেখতে। অসংখ্য দর্শক গিজ গিজ করছে কেউবা পানিতে নেমে দাপাদাপি করছে। দশ মিনিটের মত সেখানে থেকে গেলাম পথের পাশেই থাকা এক লাল পাথরে তৈরী মন্দির দেখতে। সমুদ্রের পাশে খেমার ডিজাইনে করা অত্যন্ত আকর্ষনীয় ছোট খাটো লাল মন্দিরটি সত্যি দেখার মত।


খেমার নকশায় তৈরী লাল মন্দিরটি সত্যি আকর্ষনীয় ছিল দেখতে।
পরের গন্তব্য ছিল বানর দেখা। আমি ভেবেছিলাম উন্মুক্ত নারকেল বাগানে বানরের কেরামতি। যখন গিয়ে শুনলাম সেটা শেকল বাধা বানরের খেলা লাঠির নির্দেশে সে খেলছে তখন তা দেখার আর আগ্রহ হলো না। আপনারা হয়তো ভালো করেই জানেন পাখী থেকে শুরু করে সব প্রানী শিকলি কাটা অবস্থাতেই আমার পছন্দ। প্রায় পাচ ঘন্টা পরে হাসিখুশী তরুন ড্রাইভার আমাদের হোটেলের সামনে নামিয়ে দিয়ে যাবার সময় তার নেইম কার্ডটা দিয়ে গেল কোথাও গেলে যেন তাকে ডাকি।

না আর তাকে ডাকতে হয়নি, কারন বাকি দিন আমরা পায়ে হেটেই বীচে আর রাত বাজার ঘুরে ফিরে কাটিয়েছি। উন্মুক্ত আকাশের নীচে রাস্তা থেকে খাবার কিনে খেতে খেতে মাঝ বয়সী এক পশ্চিমা ভদ্রোলোকের কন্ঠে সত্তর ও আশির দশকের পুরনো দিনের গান সাথে রক এন্ড রোল নাচ উপভোগ করেছি। যার গানের তালে নষ্টালজিক হয়ে দু জোড়া দর্শক টেবিল ছেড়ে উঠে নাচতে লাগলো হাত ধরাধরি করে। যা শেষ হলো অসংখ্য দর্শকের করতালিতে।


এক চৈনিক তরুন এক অপরিচিত মেয়ের হাত ধরে নৃত্যরত।
সারা বছর জুড়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকের ভীড়ে ভারাক্রান্ত সামুই দ্বীপ আরো ভরে উঠেছিল চীনা নববর্ষে উপলক্ষে চীন থেকে আসা প্রচুর পর্যটকে। আমাদের হোটেলের আশাপাশ রাস্তাঘাট যেন আরো জমজমাট হয়ে থাকতো। রাস্তায় রাস্তায় ঝুলানো লাল কাগজের লন্ঠন, ড্রাগন, পাশেই নারিকেল বিথীর ফাঁকে ফাঁকে উকি দেয়া সাদা বালির সমুদ্র সৈকত, সামুদ্রিক খাবা্রের পশরা সাজানো রাস্তার দুধারের অজস্র রেস্তোরা তো আছেই সাথে চীনাদের ঐতিহ্যবাহী লাল পোশাকে তরুন-তরুনী, বুড়ো- বুড়ী মিলে নাচ-গান, হৈ হুল্লোড় ১৫ই ফেব্রুয়ারী থেকে ১৯ শে ফেব্রুয়ারী এই চার চারটি দিন সামুই এর আকাশ বাতাস আমাদের চোখে যেন ধাঁধা লাগিয়ে দিয়েছিল।


ভোরের মেঘলা আকাশ আর তারই নীচে ঢেউগুলো চয়েং সৈকতকে আলতো হাতে ছুয়ে ছুয়ে ফিরে যাচ্ছে

আট বছর পুর্তি উপলক্ষে লেখা এই ভ্রমণ কাহিনীর সব ছবি আমার মোবাইলে তোলা ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩০
৫৭টি মন্তব্য ৫৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×