somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থাইল্যান্ড পাহাড়ের ভয়ংকর গুহায় হারিয়ে যাওয়া কিশোর ফুটবল দল

০২ রা জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


থাই মেসাই বর্ডারের পাহাড়ে থাম লুয়াং নামে ভয়ংকর গুহায় আটদিন ধরে হারিয়ে যাওয়া কিশোর ফুটবল দলের সদস্যরা

এডভেঞ্চার আর রহস্যের প্রতি কৌতুহল সবার মাঝেই কম বেশী রয়েছে, তবে কিশোর আর সদ্য তরুনদের মাঝেই হয়তো বেশী থেকে থাকে। নাহলে স্থানীয় স্কুলের ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী বারোটি ছেলে ও তাদের ২৩ বছরের তরুন কোচ বিকেল বেলায় প্র্যাক্টিস সেরে সেই ভয়ংকর গুহায় কেন ঢুকতে যাবে! বিশেষ করে এ সময়ে প্রচন্ড বৃষ্টিতে পাহাড়ী নদীর ঢলে গুহার ভেতরেও জায়গায় জায়গায় পানি মানুষের মাথা ছাড়িয়ে গিয়েছে, যেখানে জুন থেকে নভেম্বর সেই গুহায় ঢোকা নিষেধ বলে সরকারী ভাবে বিজ্ঞপ্তি টানানো আছে, সেখানকার কর্মচারীদের নিষেধ স্বত্বেও কোন রোমাঞ্চের অদম্য নেশায় তারা সেখানে গিয়েছিল !


ব্যাগ প্যাক, ছাড়াও সাইকেলগুলো তেমনি হেলানো আছে গত সাত দিন ধরে ।

চিয়াং মাই এর এই পাহাড়ের মাঝেই একটি গুহায় আমরা গিয়েছিলাম এ বছর অর্থাৎ ২০১৮ এর ফেব্রুয়ারীর শেষ নাগাদ। সামান্য কিছুদুর অগ্রসর হবার পর বাদিকে একটি সরু পথ চলে গেছে যার ছাদটা নেমে এসেছে মাটির কাছাকাছি। সে পথে কিছুদুর যাবার জন্য গাইডের শত অনুরোধেও আর এক পা এগুইনি । যদিও আমরা যাবো বলে কর্তৃপক্ষ বাতি জেলে দিয়েছিল কিন্ত তারপরও সেই উচু নীচু অসমান পিচ্ছিল তলদেশ আর মাথার উপর থেকে ঝুলে থাকা স্ট্যালেকটাইটের হাতগুলো মনে হচ্ছিল আমার গলা চেপে ধরতে চাইছে। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসে স্বস্তির নিশ্বাস নিয়েছিলাম। এমন অনুভুতি আমার হয়েছিল শিলং এর মাওয়াসমাই গুহায়।


পানি উঠে যাওয়া গুহার ভেতরের একটি চেম্বারে থাই বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা

চিয়াং রাই এর মে সাই অঞ্চলে ২৩শে জুন বিকেলে স্থানীয় বারোটি বালক আর তাদের তেইশ বছরের তরুন কোচ ফুটবল প্র্যাকটিস
করছিল । অদুরেই মায়ানমারের সীমান্ত বরাবর চলে যাওয়া পাহাড় শ্রেনীতে রয়েছে অনেকগুলো গুহা। এর মাঝে সবচেয়ে দুর্গম ও ভয়ংকর গুহাটির নাম হলো থাম লুয়াং। কোচিং শেষে আরো অনেকদিনের মতই তারা প্রবেশ করে সেই ভয়ংকর গুহায়। প্রচন্ড বর্ষনে গুহামুখ প্লাবিত হয়ে গেলে তারা আর বের হয়ে আসেনি। বিশেষ করে বাইরে হেলানো সাইকেল ব্যাগ-প্যাক দেখে পরিবারের লোকজন তাদের ধারনা আরো দৃঢ় হয়। তাদের হদিশ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন, প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচা, দেশের প্রধান ধর্মীয় গুরু, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধান থেকে শুরু করে আপামর জনগন সেই বাচ্চাগুলোর পরিবারের সাথে একইভাবে উদ্ববিগ্ন অবস্থায় দিন যাপন করে চলেছে। একটি সুসংবাদের আশায় সমগ্র জনগন চব্বিশ ঘন্টা চোখ রেখে চলেছে টেলিভিশন পর্দায়।


গুহার ভেতরের সরু পথ পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে একজন বৃটিশ ডাইভার বাচ্চাগুলোর খোঁজে

২০১৯ এর ফেব্রুয়ারীতে তাদের নির্বাচন হবে,গনতন্ত্র ফিরে আসবে জান্তা প্রধানের দেয়া এই আশ্বাসে যখন পলিটিকাল পার্টিগুলো তাদের প্রার্থী বাছাই এর চিন্তাভাবনা করছিল। জনগনও নির্বাচিত গনতান্ত্রিক সরকার আসলে তাদের কতখানি অর্থনৈতিক উন্নতি
হবে সেই আশায় দিন গুনছিল ঠিক সে সময়ই থাম লুয়াং গুহায় হারিয়ে যাওয়া ছেলেগুলোর চিন্তায় পুরো দেশ স্তব্ধ।তাদের খুজে বের করতে প্রানপন চেষ্টা করছে থাইল্যান্ডের বিভিন্ন দক্ষ বাহিনী ছাড়াও আমেরিকা, চীন জাপান,মায়ানমার, বৃটেন ও অস্ট্রেলিয়ার বিশেষ বাহিনী । সারা থাইল্যান্ড জুড়ে তোলপাড় চলছে এই ঘটনাটিতে।


গুহার অভ্যন্তরে

বিরতিহীন প্রবল বৃষ্টিপাতে অধিকাংশ এলাকা ডুবে যাওয়া ঘুটঘুটে অন্ধকারে খাবার ছাড়া, পানি ছাড়া, কাদা পানিতে ডুবে থাকা গুহায় তাদের আটদিন ধরে বেচে থাকা নিয়েও জনগন সংশয়ে আছে। থাই নেভী সিল প্রধান দৃঢ় স্বরে ঘোষনা দিয়েছেন যতদিনই লাগুক, যে অবস্থাতেই থাকুক আমরা এগিয়ে যাবো, দেখবো শেষ পর্যন্ত কি আছে ভাগ্যে।


অন্য একটি গুহা মুখ খোজায় ব্যাস্ত ড্রোন

পানিতে তলিয়ে যাওয়া গুহার অন্য একটি মুখ খুজতে যখন সংশ্লিষ্ট বাহিনী পাহাড়ের উপর ভাগে ড্রোন ব্যবহার করে তখন সেই সংশ্লিট বাহিনী প্রধান তাদের হুমকী দেয় কার অনুমতিতে তারা এটা ব্যবহার করছে, শিঘ্রই এটা বন্ধ করার আদেশ দেন। এখন মোবাইলের যুগ, ফলে কোন এক জন তাঁর এই বক্তব্য রেকর্ড করে সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়ার সাথে সাথে লক্ষ লক্ষ থাই জনগন তার অপসারন চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানায়।


আশায় আশায় এগিয়ে যাচ্ছে শেষ চেম্বারের দিকে

জনগনের এক অংশের ধারনা সেই পাহাড়ী গুহায় আজীবনের মাদক প্রস্ততকারী দেশ মায়ানমার ও তাদের থাই অংশীদারদের কোন আস্তানায় ভুলে সেই কিশোর ফুটবল দল হাজির হয়েছিল। তাদের হাতেও তাদের ভাগ্যে কিছু ঘটতে পারে বলে অনেকে আশংকা করছে। আর এখান থেকে সেই বাহিনী প্রধানও একটি বিরাট অংশ লাভ করে বলে ড্রোন উড়াতে নিষেধ করেছে বলে অনেকের বিশ্বাস।


দুর্গম গুহায় আটকে পরা কিশোরদের খুজতে পানির নীচ দিয়ে চলা রোবোট ব্যবহারে জন্য এগিয়ে যাচ্ছে

থাইল্যান্ডের আবহাওয়া অধিদফতর ঘোষনা করেছে আজ থেকে আগামী দুদিন বৃষ্টি হবে না, হলেও অল্প পরিমানেই হবে আর এই সুযোগ নিয়ে প্রতিটি বাহিনী শেষ চেম্বারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ছেলেগুলোকে খুজে পাওয়ার শেষ আশা নিয়ে।


পরিবারের প্রার্থনা
মাত্র কয়েক মাস আগেই আমার ঘুরে আসা সেই এলাকাটি এখন খবরের শিরোনাম হয়ে আছে, একজন মা হিসেবে আমার বুকেও রক্তক্ষরন হচ্ছে অবিরাম। আমিও সেই ১৩ জন মায়ের সাথে একাত্বতা জানিয়ে একটি সুখবরের অপেক্ষায় আছি ২৬শে জুন শনিবার থেকে।


আজ নয়দিন খোজ নেই গুহায় হারিয়ে যাওয়া তেরটি মায়ের নাড়ী ছেড়া ধন, পিতার আদরের সন্তান, বোনের আদরের ভাইদের


অক্সিজেন সিলিন্ডার কাঁধে নিয়ে পানির ভেতর দিয়ে হেটে চলেছে বিশেষ বাহিনীর সদস্য


আমার দেখা এই একই পাহাড় শ্রেনীরই একটি গুহার অভ্যন্তরের ছবি


সব ছবি ব্যংকক পোস্ট থেকে নেয়া শুধু শেষেরটা আমার তোলা মোবাইলে

সর্বশেষ আপডেট ঃ
দূর্গম গুহার মাঝে হারিয়ে যাওয়া থাই ক্ষুদে ফুটবলারদের এইমাত্র খুজে পেলো উদ্ধারকারীরা
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:১২
৩৬টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×