
নীরব নিঝুম মধ্য দুপুরে বারান্দার গ্রীলে ভাবুক দোয়েল
পাখীদের প্রতি আমার গভীর ভালোবাসার কথা ব্লগের অনেকেই জানেন। খাঁচায় বন্দী নয়, স্বাধীন খোলা আকাশে উড়ে বেড়ানো পাখিদের কথাই বলছি। আমার বারান্দার এক কোনে তাদের জন্য খানাপিনা অর্থাৎ তাদের উপযোগী খাবার আর পানি দেয়া থাকে। সারা দিনমান ধরে চলে সেখানে তাদের আনাগোনা। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে ওদের মান- অভিমান, ঝগড়া- ঝাটি, ভাব-ভালোবাসা সব দেখি । একটু যদি টের পায় আমি তাদের দেখছি ওমনি ফুরুৎ করে উড়ে যায় পাশের নির্মিয়মান ভবনের স্টিলের রডে যেখানে আগে ছিল নিবিড় গাছপালায় ঘেরা একখন্ড জমি ।

মিষ্টি সুরে দোয়েল পাখী গাইছে বসে গান, সেই সুরেতে জুড়িয়ে গেলো সবার মন প্রান

দোয়েল পাখির ছানা, শুরু হলো তার নতুন পৃথিবী চেনা

বুলবুলিটি অপেক্ষায় আছে ঝুটি শালিক কখন খেয়ে দেয়ে উড়াল দেবে

হায় হায় এবার তো দেখছি ভাত শালিকের আগমন

শালিক বলে বুলবুলি আয় আমরা দুজন মিলে লুকোচুরি খেলি

ইশ ওরা যে কখন যাবে ! থাক আমি নাহয় উপরেই বসে থাকি ততক্ষন

যাক বাবা সবাই গেছে, কি নোংরা করে গেছে চারিদিক। ঠিক আছে আমি না নেমেই উপর থেকে উবু হয়ে খেয়ে নেই ।

"ও তুমি এসেছো ! আসো আসো গিন্নী তাড়াতাড়ি গাপুসগুপুস খেয়ে নেই, আবার কে কখন চলে আসে"

"খেয়ে-দেয়ে ঝিমুনি লেগে গেলো দেখছি !" গ্রীলে ঝিম ধরে থাকা বুলবুলি

বিশ্রাম শেষে উড়ে যাচ্ছে জোড়া বুলবুলি

"মানুষ আমাদের একজনকে দেখলে সবসময় বলে ওয়ান ফর সরো"

"যাক বাপু তুমি এসেছো। জানোতো বৌ মানুষ আমাদের দুজনকে একসাথে দেখলে বলে " টু ফর জয়"

" ক্যা? ক্যা ? ক্যা বলে তাদের দেখলে মানুষ টু ফর জয় বলে!" চোখ পাকিয়ে করকরে গলায় বলে উঠলো ঝুটি শালিক

" ব্যপার কি গিন্নী ! তোমার কি কথা কান দিয়ে যায় না ! শুনলে ঐ হাড় হাভাতে শালিকটা কি বলে গেলো !"

রেগে কাইঁ হয়ে ওঠা কর্তার কথা শুনে গিন্নি বলে ' রাখো বাপু ওদের আজেবাজে কথা, আমরাই হোলাম মানুষের আসল সুখের কারন'

কাঠ শালিকের জোড়া, খাচ্ছে থোরা থোরা। না না মোটেই না, দেয়ার আগেই সাবাড়, দৌড়ে আনি আবার

ব্যাপার কি আমাদের আর লোকজন কোথায় উদবিগ্ন কাঠ শালিক, কারন তারা সবসময় সাত আটজন মিলে ঝাঁঁক বেধে আসে

"কি ব্যপার কর্তা মশাই ঘরের ভেতর লোকজন কাউকে দেখতে পাচ্ছো নাকি"? টবের পেছন থেকে উকি দেয়া টিয়ার প্রশ্ন। " যাই বলো আমার কিন্ত ভয় করছে, যদি ধরে ফেলে। সেদিন ঐ বড় বট গাছ থেকে দুষ্ট লোকেরা আমার সই আর তার কর্তাকে ধরে নিয়ে গেল। শুনেছি ওদের নাকি পাখিওয়ালাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে

"না না ভয় নেই, আসো, আসো এরা মনে হয়না খারাপ মানুষ। কতদিন ধরেইতো আমাদের খাওয়াচ্ছে"। উকি মেরে টিয়া দেখে নিল বাসায় কেউ আছে নাকি "

" মনে হয় কেউ নেই্, খেয়ে নেই ভালো করে, দেখেছো কত্তা আমরা যা পছন্দ করি তাই প্রতিদিন তিনি দিচ্ছে কিন্ত"

"তুমি খাও, আমি পাহারা দিচ্ছি" কর্তামশাইকে ভরসা দিলো গিন্নী

" ভয় নেই, আসো আমরা দুজনে মিলেই খাই"

" কেরে ? আবার কে শব্দ করলো! " খাবার থেকে মুখ তুলে বলে ওঠে ভীত টিয়া পাখি !

না গো মনে হয় কেউ নেই
এবার শোনাই এক কাক আর এক বুলবুলি পাখির গল্প

"কি ব্যপার আজ দেখছি নচ্ছার বুলবুলিটা এখনো আসেনি"! ইতি উতি চাউনি দুষ্টু কাকের

"এই যে হুজুর আমি এসে পরেছি, তা আমি কি এই বাটি থেকে কিছু খাবো "? কাকের কাছে আর্জি বুলবুলির ?

"কই কিছু বলছেন না যে! " মৌন কাক বাবাজীর কানের কাছে বুলবুলির আকুল আবেদন

"ঠিক আছে আপনি একাই পেটপুরে খেয়ে নিন, আমার আর খাবার দরকার নেই "। অভিমানী বুলবুলির কথায় লজ্জা পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল কাক মহাশয়

আসলো যখন কাঠঠোকরা পাখি, ঝুটি শালিক বলে এবার আমি ভাগি !

যাক বাপু গেছে দুষ্ট শালিক, এখন আমি পুরো খাবারের মালিক

বাক বাকুম পায়রা--- মাথায় দিয়ে টায়রা, বুনো পায়রা

বুনো পায়রা

আমার চব্বিশ ঘন্টার মেহমান হলো এই চড়ুই এর দল, সারাক্ষন এই থালার উপরেই তাদের লাফানো ঝাপানো আর হুটোপুটি লেগেই আছে।
আকাশে উড়ে বেড়ানো স্বাধীন এই পাখীদের সমস্ত ছবি আমার মোবাইলে আমার তোলা । নেট অথবা কাচের আড়াল থেকে তোলা বলে পরিস্কার লাগছে না ।
সামহ্যোয়ারইন ব্লগের এই দুর্দিনে ছবি ব্লগ দিতে পেরে আনন্দিত আমি ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


