somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরে এসো অবন্তীকা (ছোট গল্প)

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



‘বুবু ও বুবু সাজু খালা রোজ রোজ এমন ভর সাইঞ্ঝা কালে বুক চাপড়াইয়া কান্দে ক্যান কউ দেখি’!
রাহেলার প্রশ্নে সোনাভানের চোখেও পানি আসে, “বুঝোস না সাজুবু কান্দে ঐ মাইয়াডার লিগা”
‘কোন মাইয়া বুবু’ ?
“ঐ যে তার বইনের মাইয়া অবন্তী না কি নাম তার লিগা কান্দে”।
‘শুনছি সে তো মইরা গেছে আইজ সাতদিন হইলো’।
“হ সাতদিন হইলো হেইডা ঠিক,তয় মাইয়াডা বড় অভাগী আছিলোরে, এরেই কয় মাইয়া মাইনষের কপাল! মইরা গিয়া বাচছে মাইয়াডা" ।
‘কি কউ বুবু! হেরাতো বলে ঢাকা শহরে থাকে, তোমার মনে নাই বুবু একবার আমাগো গেরামে বেড়াইতে আইছিলো ? কত সুন্দর জামাকাপড় পরনে,কানে গলায় কি সোন্দর জেওর। হেই সব তো আমি জীবনে চক্ষেও দেখি নাই। আর দেখতেও কি সোন্দর আছিলো। আমাগো লগে বৌ ছি খেলছে, দুফুইরাকালে যহন পুকুরে সাতর দিতাম তহন ঘাটে বইয়া থাকতো, হে ডরাইতো পানিরে, মাইয়াডা কেমনে মইরা গেল বুবু ? আমারও মনে হইলে খারাপ লাগে’।

জাহেদা আর হালিমের প্রথম সন্তান অবন্তীকা, বড় বোনের মেয়ে শানু ইউনিভার্সিটিতে পড়তো তখন, সেই নামটি রেখেছিল শখ করে। ফুলের মত ছোট্ট অবন্তী যেন মা বাবার চোখের মনি। জাহেদার মনে পরে প্রথম কথাই সে বলেছিল মা, বুকটা যেন ভরে গিয়েছিল সেই মা ডাক শুনে। ফরসা টুলটুলে গাল, একমাথা কোকড়া চুলের ছোট্ট অবন্তীকে আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী সবাই অনেক ভালোবাসতো।
পাচ বছরে পা দিতে দিতেই অবন্তীর আরো দুটো ভাই হলো। তিন ভাই বোন বড় হচ্ছে, একসাথে স্কুলে যায় এক সাথে বসে বাবা মার কাছে স্বরে অ স্বরে আ শিখে। মায়ের রান্না শেষ হলে এক থালায় ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দেয় তিন ভাই বোনকে।

কিন্ত এই সুখ মনে হয় হালিম আর জাহেদার সংসারে সইলো না। নিষ্ঠুর নির্মমতার যাতাকল নিয়ে একদিন তাদের বাড়িতে হাজির হলো দারিদ্রতা। স্বচ্ছল পরিবারে এখন নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। হালিম যেই ঔষধের দোকানে চাকরী করতো সেটা বন্ধ হয়ে গেলো। আত্মীয় স্বজনের মাঝে এমন কেউ নেই যে সাহায্য করবে। চোখে মুখে অন্ধকার দেখতে লাগলো।হালিম এখানে ওখানে টুকটাক কাজ করে তাতে আর কিইবা আসে। অল্প শিক্ষিত জাহেদা একদিন সংসারের হাল ধরার জন্য ঘর ছেড়ে বের হয়ে আসলো কঠিন দুনিয়ার সামনে। কেউ যেন না জানে তার জন্য অনেক দুরের এক স্কুলের গেটের বাইরে ছোট্ট এক গুমটি ঘরের আড়ালে বসে নিজ হাতে বানানো সিঙ্গাড়া বিক্রি করতে শুরু করলো। কিন্ত এতে কি আর পাচজনের পরিবারের অভাব মিটে !

ছেলেমেয়েরা সরকারী স্কুলে পড়তো, ছেলে দুটো পড়াশোনায় ভালো ছিল, অবন্তীর বাবা হেড মাস্টারের হাতে পায়ে ধরে ছেলে দুটোর বেতন মকুব করলো। কিন্ত অবন্তীকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিল কারন পড়ালেখায় তার মন বসতো না একেবারেই।তবুও মা চেয়েছিল তার মত না হয়ে বাসায় বসে নিজে নিজে পড়ালেখা করে অন্তত এস এসসি টা পাশ করুক।

মা বাবা দুজনাই সকালে যায় সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীরে ফিরে আসে ঘরে। ভাই দুটো স্কুল থেকে ফিরে ঠান্ডা ভাত, আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে মেখে নিয়ে খেয়ে পড়তে বসে।।অবন্তীর রোজ রোজ ডাল ভাত খেতে ভালোলাগে না,একটু মাছের জন্য মায়ের কাছে কান্না কাটি করে । কিন্ত কোথায় মাছ ! মা পড়তে বলে যায় প্রতিদিন কিন্ত পড়াশোনা করতে একটুও ভালোলাগে না অবন্তীর। তার ভালোলাগে টিভি দেখতে, বাসার ছোট্ট সাদাকালো টিভিটাই তার জীবনে যেন একমাত্র আনন্দের খোরাক। নাটক আর সিনেমার মেয়েগুলি যে কি সুন্দর! তাদের সাজগোজ আর শাড়ি গয়না পরা চেহারা দেখলে মনে হয় মায়ের মুখে শোনা গল্পের এক একটা পরী।। অবন্তী মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। আয়নার সামনে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখে, প্রশ্ন করে মনকে আচ্ছা আমিও কি এমন পরী হইতে পারুম একদিন?

একদিন সেই সাদাকালো টিভিটাও বিক্রী করে দিল অবন্তীর বাবা। সেদিন ছিল তার জীবনের এক কষ্টের দিন। তারপর মাঝারি মানের পাকা বাড়ি ছেড়ে দুই কামরার টিনসেড বাসায় উঠলো তারা। রান্না ঘর গোসলখানা কমন। এদিকে মেয়ে বড় হচ্ছে চিন্তায় অবন্তীর মায়ের ঘুম আসে না। যেই এলাকায় উঠলো সেখানে পরিবেশটা তত ভালোনা। মাঝখানে সরু রাস্তা আর দুইপাশে টিনসেড ঘর আর তাতে ভাড়া থাকে বেশিরভাগই অল্প আয়ের লোকজন, দোকানদার, সিএনজি ড্রাইভাররা। গলির মাঝে দাঁড়িয়ে সিগারেট মুখে তাদের গালাগালি, হাসহাসি, কুৎসিত অঙ্গভংগী দেখে জাহেদা ঘোমটা টেনে দীর্ঘস্বাশ ফেলে, কিশোরী মেয়ের কথা ভাবে আর চোখের পানি ফেলে।
কাছাকাছি জাহেদার আপন বড়বোন রহিমা থাকেন উনি মাঝে মাঝে অল্প বিস্তর সাহায্য করেন তবে তার অবস্থাও তত ভালো না। একদিন ওনাকে গিয়ে সবকিছু খুলে বলে অনুরোধ করে “বুবু আমার মাইয়াটাকে যদি তুমি রাখতা তাইলে একটা চিন্তার হাত থিকা বাচতাম” ।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রহিমা বলে “শোন জাহেদা আমার কি সেই আগের অবস্থা আছেরে, তোর দুলাভাইও তো রিটায়ার করেছে। সমস্যা না থাকলে আমিই বলতাম অবন্তীকে আমার কাছে রেখে যা। দেখি কি করা যায়’ বলে হাতে দুশো টাকা আর পুরনো একটা বিছানার চাদর দিয়ে বোনকে বিদায় করলো। অনেক ভেবেচিন্তে রহিমা কাছে থাকা তার বড় মেয়ে রানুকে অনুরোধ করলো অবন্তীকে ওদের কাছে রাখার জন্য ।
‘তুইতো কলেজে চাকরি করিস, সেই সাত সকালে বের হোস আর ফিরতে ফিরতে বিকাল। অবন্তী থাকলে তোর মেয়ে সামিয়ারও ভালো লাগবে, দুজনাই তো কাছাকাছি বয়সী। তাছাড়া সংসারের কাজেও তোর সাহায্য হবে’।
মায়ের কথাটা রানু বারবার চিন্তা করে দেখলো, সামিয়ার বাবার সাথেও আলাপ করলো। অবন্তীকে রাখলে তার নিজেরও কিছুটা সুবিধা হয় আর গরীব খালারও কিছুটা সাহায্য হয়। সামিয়াও স্কুল থেকে ফিরে একা বাসায় থাকে। তাছাড়া রানু ছোট অবন্তীকে অনেক আদর করতো। অনেক ভেবেচিন্তে অবন্তীকে নিজের বাসায় নিয়ে আসে।

সকালে রানুর স্বামী অফিসে,রানু কলেজে আর সামিয়া স্কুলে বের হয়ে যেত। রানু তাকে পড়া দেখিয়ে বলে যেত সেগুলো পড়ে রাখতে রাতে জিজ্ঞেস করবে। কিন্ত অবন্তীর তাতে মন নেই,বই এর পাতা উল্টিয়েও দেখতো না একবার। গুন গুন করে সিনেমার চটুল গান গাইতে গাইতে অবন্তী চা বানিয়ে আনতো। রানু আপা ধমক দিত তাও অবন্তীর মুখের হাসি মিলাতো না। ঝাকড়া চুলগুলো এক পাশে সরিয়ে ফিক করে হেসে ফেলতো।

তবে এই রানু আপার বাসায় থাকতেই অবন্তীর জীবনে একমাত্র সুখের ঘটনাটি ঘটেছিল। সেটা ছিল এক কোরবানীর ঈদে রানু আপারা সবাই আর অবন্তীর মা বাবা ভাইরা মিলে নানীর বাড়ি বেড়াতে যাওয়া। সবাই মিলে ট্রেনে করে গিয়েছিল আর তারপর সেই গ্রামীন জীবন। ছনে ছাওয়া মাটির ঘরবাড়ী, সামনে নিকানো উঠান। মাচায় লকলকিয়ে ওঠা সীমগাছ বেগুনী ফুলে ফুলে ভরে আছে। তাদের পেয়ে সাজু খালার খুশি কে দেখে।দিন রাত বসে কত রকমের পিঠা পায়েস বানায়। উঠোনে মাদুর পেতে পান খেতে খেতে বোন বোনঝির সাথে গল্প করে। ‘কিরে জাহেদা মাইয়া বিয়া দিবি না ? মাইয়াতো তোর ডাঙ্গর হইয়া উঠতাছে। চাস তো পোলা দেখি তর অবন্তীর লিগা’।
বোনের কথায় চমকে উঠে জাহেদা “না না বুবু কি কউ! ওর কি বিয়ার বয়স হইছে”!
‘কি জানি আমাগো তো এই বয়সে বিয়া হইয়া দুই পোলাপানের মা পর্যন্ত হইছি, তরা তো আবার শহরের মানুষ’ বলে মুখে আরেক খিলি পান গুজে দেয় সাজু বিবি।
এদিকে সেই গ্রামের বিশাল মাঠ ঘাট পুকুর সেই অবাধ স্বাধীনতা যার স্বাদ ঢাকা শহরের দুই রূমে থাকা অবন্তীরা কখনো পায়নি। পড়াশোনার বালাই নেই মুক্ত স্বাধীন অবন্তী আর তার ছোট ভাইরা মিলে রাহেলাদের সাথে মাঠে ঘাটে কত রকম গ্রামীন খেলাই না খেলতো, সাতার জানতো না তারপরও ঘাটে বসে পানি ঘাটানো। রাহেলা বলতো ‘আসেন আপনারে সাতার শিখায় দেই’ । “না না আমার ভয় করে রে” রাজী হয়না অবন্তী। সেই একটি সপ্তাহ তার ছোট্ট মনের গভীরে এক গভীর দাগ কেটে গিয়েছিল ।

দিন যায় মাস যায় বছরও পার হয় রানু আস্তে আস্তে বিরক্ত হয়ে উঠে অবন্তীর উপর। নিজে তো পড়তে বসতই না আবার সামিয়াকেও বিরক্ত করতো। সামিয়া পড়তে বসলে ও চুপিসারে টিভি খুলে বসতো, টিভি ছিল তার নেশার মত। ১৫/১৬ বছরের এক মেয়েকে কাহাতক বকাঝকা করা যায় এসব কারনে একদিন রানু অবন্তীকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়। রহিমা বেগম বাধ্য হয় বোনঝিকে রাখতে। বাসায় ফুট-ফরমাস খাটে,বললে বাসার পাশের মুদি দোকান থেকে এটা ওটা কিনে আনে। খালুর পাশে বসে টিভি দেখে যদিও তা খবরই থাকে সবসময়,মাঝে সাঝে নাটক।তাও ভালোলাগে অবন্তীর এ যেন এক আলাদা জগত।

সেদিন অবন্তীকে চা পাতা আনতে বলে রহিমা বেগম চুলায় চায়ের পানি চড়ায়। পানি ফুটতে ফুটতে শেষ কিন্ত অবন্তী আর আসে না, আসেনা । ছেলেকে পাঠালো খোজ করতে, সে আশেপাশে ঘুরে আসলো কোথাও নাই। মেয়েটা কি হাওয়া হয়ে গেল! তারাতাড়ি তার বাবা মাকে খবর পাঠালো। দুই ছেলে নিয়ে অবন্তীর বাবা মা হাপাতে হাপাতে এসে হাজির। তারাও খুজতে বের হলো, কিছুক্ষন পরে বড় ভাই মাথা নীচু করে ফিরে আসলো, মুখ দেখে মনে হচ্ছে কেউ যেন তার মুখে কালি লেপে দিয়েছে। কিরে কি খবর এমন করে আছিস কেন ? ‘বল কি হইছে? কথা কস না ক্যান’! উদবিগ্ন মায়ের প্রশ্নে ছেলে জানালো “অবন্তী আপু পাশের ঐ মুদি দোকানের দোকানদারটার সাথে পালায় গেছে”।
‘কি কস! ঐ বেটার তো বউ আছে, দুই বাচ্চার বাপ’ মাথা ঘুরতে থাকে জাহেদার। তারপর চিৎকার করে কাদতে কাদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জাহেদা।
ভাইরা বাবা মাকে নিয়ে বাসায় আসে, কসম কাটায় বলে তাকে যেন আর কোনদিন এই বাসায় ঢুকতে না দেয়া হয়, সমাজের কাছে আত্মীয় পরিজনের কাছে তাদের মাথা হেট করেছে সে , তার নামও যেন কেউ মুখে না আনে। তার বোন আজ থেকে তাদের কাছে মৃত।

বাবা আর ভাইরা অবন্তীর নাম মুখে আনে না কিন্ত মায়ের মন জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়, ছেলেদের ভয়ে ভুলেও মেয়ের কথা বলে না। দিন যায় সপ্তাহ পার হয় অবন্তী আর ফিরে আসে না। দুই মাস পর এক প্রতিবেশি জানালো স্বামীর সাথে অবন্তীর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। সে এই এলাকায়ই এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়র বাসায় এসে উঠেছে। তার নিজের ভুল সে বুঝতে পেরে আপনাদের কাছে মাফ চেয়েছে। জাহেদা চোখের পানি ফেলে, কিন্ত মেয়েকে বুকে টেনে নেবে সে সাহস নেই। যেই আত্মীয়র বাসায় অবন্তী আছে জাহেদা লুকিয়ে লুকিয়ে ঐ আত্মীয়কে সাধ্যমত সাহায্য করে।

ছেলেরা অনেক পরিশ্রম করে পায়ের নীচের ভিতটা একটু শক্ত করলো।সেই বস্তি ছেড়ে মোটামুটি ভালো একটা বাসা ভাড়া নিল। অনেক আগে থেকেই জাহেদার ডায়বেটিস ছিল সেই সাথে চিন্তায় ভাবনায় আস্তে আস্তে শরীর খারাপ হয়ে আসে, মনে হয় এই বুঝি মরে যাবে।
সত্যি সত্যি জাহেদা একদিন মারা গেল কিডনি নষ্ট হয়ে। খবর পেয়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে অবন্তী বোরকায় মুখ ঢেকে মাকে শেষ বারের মত দেখতে আসলো। কি করে যেন ছোট ভাই টের পেলো অবন্তী এসেছে, সাথে সাথে পাশে থাকা আস্ত এক থান ইট উঠিয়ে নিল অবন্তীর মাথায় ছুরে মারতে যাবে কিন্ত আশেপাশের লোকজন ধরে ফেলে। খালিপায়ে খানাখন্দ পেরিয়ে অবন্তী ছুটে পালায় পাগলের মত।

মাস কয়েক পরে অবন্তীর এক ফুপু তাকে নিয়ে গেল তার বাসায়। অবন্তীর জন্য এক দারুন পাত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে, বেশ ধনী পরিবার তবে একটাই শর্ত মেয়ে বিয়ের পর বাইরের কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না। বাড়ী বাড়ী লাথি ঝাটা খেয়ে বেড়ানো অবন্তী রাজী হলো সেই শর্তে। তাছাড়া যার বাসায় থাকতো সেই বাড়ির কর্তাও তাকে নানাভাবে বিরক্ত করতো। কিন্ত সেই ধনীর দুলাল যে বিকারগ্রস্ত পাগল ছিল তা তারা লুকিয়েছিল তার ফুপুর কাছে। বিয়ের রাতে সেই পাগল ছেলের হাতে চোরের মার খেয়ে সারা শরীরে কালসিটে নিয়ে অবন্তী ফিরে আসলো ফুপুর বাসায়। ধনী পরিবারের ক্ষমতার হাত অনেক লম্বা তাছাড়া তাদের ইজ্জ্বতের প্রশ্ন ফুপুকে পারেতো তখনই থানায় দেয়। ফুপু অবন্তীর হাতে একশ টাকা গুজে দিয়ে বল্লো জলদি এখান থেকে পালিয়ে যা না হলে তোরও রক্ষা নাই।
অনেক দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ঘুরে এবার অবন্তীর আশ্রয় হলো দূর সম্পর্কের এক মামার বাসায়। মামা বেচে না থাকলেও মামীর আদরে শাসনে মোটামুটি দিন কেটে যাচ্ছিলো অবন্তীর। কিন্ত বছর দুয়েক পরই মামী তাকে তার বড় মেয়ের বাসায় পাঠিয়ে দিল কারন তার মেয়ের দুটো কাজের মানুষের একজন চলে গেছে, মেয়ের বড় কষ্ট হচ্ছে।

মামাতো বোনের বাসায় এসে অবন্তী যেন একটু হাফ ছেড়ে বাচলো। মামী আদর করলেও দিন রাত অমানুষিক পরিশ্রম করতে হতো। কিন্ত এ বাসার সবাই অবন্তীকে পছন্দ করতো তার হাসি খুশী স্বভাবের জন্য। মামাতো বোনের মেয়েটা কলেজে পড়ে সে অবন্তী খালা বলে ডাকে। তার ঘরেই থাকে ঘুমায়, সময় পেলে গল্প করে।

এরই মাঝে অবন্তীর আত্মীয়রা আরেকবার চেষ্টা করলো ভাইদের বুঝিয়ে শুনিয়ে বোনকে বাসায় ফিরিয়ে দিতে। কিন্ত দুই ভাই এর সেই একই কথা তাদের বোন মরে গেছে। ছেলেদের আশ্রিত বাবারও ক্ষমতা নেই মেয়েকে ফিরিয়ে নেয়ার।
অবন্তী মামাতো বোনের বাসায় কাজ করে খায়দায় টিভি দেখে। দেখতে দেখতে অনেকদিন কেটে গেলো। এরই মাঝে সেই বাসায় হানা দিলো করোনা। মামাতো বোন, বোনের মেয়ে আর অবন্তী হাসপাতালে। ১৫ দিন যমে মানুষে টানাটানির পর ফিরে আসলো তিনজনই। ওদের বাসায় এনে মামাতো বোনের স্বামী শাহেদ অবন্তীর বাবাকে ফোন করলো “ফুপা এবার অবন্তীকে নিয়ে যান বাসায়,আমিতো সুস্থ করে নিয়ে এসেছি”। অবন্তীর বাবা ফিসফিস করে জানালো তার অপারগতার কথা। এছাড়া আগামী সপ্তাহে তার বড় ছেলের বিয়ে ঠিক হয়েছে এখন এসব কথা বলাই যাবে না।

ক্ষিপ্ত শাহেদ আত্মীয় স্বজন সবাইকে ফোন করে জানালো এবার বোনের দায়িত্ব তার ভাইদের নিতেই হবে, না নিলে সে স্থানীয় প্রশাসনের সহয়তা নিবে।কিন্ত তার আগেই বিছানায় মিশে থাকা পাটকাঠি শরীর নিয়ে পোড়াকপালী অবন্তী আবার অসুস্থ হয়ে পরলো, প্রচন্ড পেট ব্যাথা আর সাথে বমি। আবার শাহেদ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করলো। পরীক্ষায় দেখা গেল করোনা এবার তার ক্রুর থাবা বসিয়েছে লিভার আর প্যানক্রিয়াসে। ডাক্তারদের আন্তরিক চেষ্টার পরেও তৃতীয় দিন ফজরের আজানের সাথে সাথে অবন্তীর সকল কষ্টের অবসান হলো। আর ফিরে আসেনি অবন্তীকা, কোটরে ঢুকে পরা চোখদুটো চিরকালের মত বন্ধ হবার আগে মামাতো বোনকে হাপাতে হাপাতে একটি কথাই বলতে পেরেছিল ঃ-

“আমারে আমার মায়ের পাশে শোয়ায় দিও আপু, আমার মায়ের পাশে”।



ছবিঃ শিল্পী ইলাইয়ারাজা । নেট থেকে নেয়া
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:৫৯
২৮টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×