বেশ কিছুদিন আগের কথা আমি আর আমার ছোট জা এক প্রতিবেশীর বাসায় গিয়েছিলাম কাজে। ওনার দুটো ছেলে মেয়ে, ছেলেটি ৮/১০ বছর আর মেয়েটি বছর ছয়েক। যাই হোক চা নাস্তা পানের পর এ কথা সে কথা, তখন সেই ভদ্রমহিলা করুন মুখে জানালো তার ছেলেটি একটি বিরল রোগে আক্রান্ত। সারা পৃথিবীতে মাত্র ৫ জনের এই রোগ আছে। একজন জাপানি ডাক্তার এই রোগ আবিস্কার করেছেন তার নামেই এই রোগের নাম। নামটা আমি উল্লেখ করতে চাই না কারন বাইচান্স উনি এই লেখা পড়লে বুঝে ফেলবেন তার কথা বলছি। আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ বাচ্চাটা দেখে আর তার রোগ সম্পর্কে জেনে আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। আমিও সন্তানের মা।
বাসা থেকে বের হয়ে আসতে আসতে আমার জা যে কিনা বয়সে আর পড়াশোনা সবকিছুতেই আমার চেয়ে অনেক কম কিন্তু অনেক বুদ্ধিমতি। হৃদয় ভারাক্রান্ত মন নিয়ে তাকে বললাম "মনিকা শুনলে রোজী ভাবীর ছেলের কথা? ইশ কি খারাপ লাগছে শুনে, কি হবে এখন! এমন রেয়ার ডিজিজ! " আমার এই সব কথার মাঝেই আমার জা অপ্রত্যাশিত ভাবে ঝাঝিয়ে উঠলো, "ভাবী আপনি চুপ করেন তো"! আমি তো অবাক যে মনিকা আমাকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করে আর ভালোবাসে। বিস্মিত আমি বললাম "কেনো "!
মনিকা বল্লো "আপনি কি জানেন না আজকাল মানুষ এই সব বড় বড় অচেনা অসুখের কথা বলে গর্ববোধ করে!
"বিস্মিত আমি বললাম "কউ কি! নিজ সন্তানের এত বড় অসুখের কথা বলে গর্ব করার কি কেউ আছে "! জা বল্লো "আছে,আছে ভাবী, এমন কঠিন কঠিন অসুখের কথা বল্লে তাদের স্ট্যাটাছ বাড়ে"! ( বেচারা স্ট্যাটাস কে স্ট্যাটাছ বলতো)।
আমি তো বেকুব হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে একটা সবজান্তার হাসি দিয়ে বল্লো, "ভাবী আপনি কিচ্ছু জানেন না, কারণ আপনি তো বাচ্চা নিয়ে স্কুলে যান না তাই"!
হয়তো বা বাচ্চা নিয়ে স্কুলে না যাওয়ার দরুন নতুন জামানার অনেক বিষয়ের উপর আমার জ্ঞ্যান আহরনে অনেক কিছুর ঘাটতি ছিল।
অপরূপ রূপসী প্রিয় জা টা আমার কোভিডের প্রথম ধাক্কাতেই মারা গেছে। সেটাও ছিল হঠাৎ করে দুনিয়ায় আসা এক কঠিন অচেনা অজানা অসুখ যা নিয়ে এক রেস্তোরাঁ কর্মী বলেছিল দুনিয়ামে এয়সা বিমার আয়া যিসকো কোই ইলাজ নেহি।
ছবিটা নেট থেকে