সেই একটা সময় ছিল বটে, যখন শাহরিয়ার কবির সাহেব এবং মুনতাসির মামুন সাহেবদের শরীরে ভরা যৌবন ছিল। (যদিও ক্ষমতায় তখন ছিল বিএনপি)

শরীরে যৌবন থাকিলে কাজে কর্মে জোশও থাকে। সেই জোশের টাইমে বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘু (?)দের উপর যে কোন ধরনের জুলুম আর নির্যাতন হইলে উনারা প্রবল বিক্রমে ঝাঁপায়া পড়তেন, যাবতীয় তথ্য প্রমানাদির ডকুমেন্ট দিয়া দুনিয়া (ওকে, দুনিয়া না হোক, এটলিষ্ট দিল্লীরে) কাঁপিয়ে দিতেন।

২০০১ সালে নির্বাচনে জিতার জন্য বিএনপি হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর জুলুম নির্যাতন চালিয়ে ছিল। আর সেই জুলুম নির্যাতন চাপা দিতে সেকালের বিএনপি সরকার ক্ষমতা হাতে নিবার পর হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ত্রাস জারি করে রেখে ছিল। আমাদের শাহরিয়ার কবির এবং মুনতাসির মামুন তখন ছিলেন ভরা যৌবনের। বিএনপিকে একটা সাম্প্রদায়িক হিন্দুবিরোধী দাঙ্গাবাজদের দল প্রমানের জন্য উনাদের শরীরের জোশ ছিল দেখার মতো। উনারা সে সময়-- সারা বাংলাদেশ চুষে বেড়াতেন তিল তিল কইরা সেই সব হিন্দু নির্যাতনের ঘটনার ডকুমেন্টেস সংগ্রহ করেছিলেন। তথ্য উপস্থাপনের যাবতীয় মাধ্যম ভিডিও, সাক্ষাৎকার, ফটোগ্রাফ যা যা হইতে পারে-- যত্ন করে সেই সব প্রমানাদি নিয়া দিল্লীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে ছিলেন। উনাদের দুর্ভাগ্য-- ঢাকা এয়ারপোর্টে এই সব ডকুমেন্টেসন সহ উনাদের আটক করা হয়ে ছিল।

বাংলাদেশের হিন্দুভাইয়েরা... কি আর করবেন। আপনাদের কপাল আসলেই খারাপ। আপনাদের এখন মেনে নিতেই হবে, সেই রামও নাই, সেই অযোধ্যাও নেই। শাহরিয়ার কবিরদের সেই সিজনাল যৌবনও নাই। এমনকি সবচাইতে যেইটা আপনাদের জন্য ইম্পর্ট্যান্ট-- এই মুহুর্তে ক্ষমতায় এখন বিএনপিও নাই। ফলে বিএনপি যে কত্তোবড় একটা “সাম্প্রদায়িক” দল-- এইটা আর জোশ মতো কওয়া যাইতেছে না। সারা দেশের মানুষ বরাবরই আগে থেকেই জানে, এখন হয়তো হিন্দুভাইয়েরাও জানবেন (মানবেন কি'না, সেইটা অবশ্য বলতে পারি না)---- ঘটনা হইলো ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ থাকলে হিন্দু নির্যাতনের প্রশ্নে শাহরিয়ার কবির এবং মুনতাসির মামুন যৌবন হারায়া উত্থানরহিত হয়ে পড়েন। আওয়ামিলীগকেও আর সাম্প্রদায়িক হিন্দুবিরোধী দাঙ্গাবাজদের দল হিসাবে বলা উনাদের হিম্মতে কুলায় না।

হিন্দুভাইয়েরা প্রমাণ দেখেন-- আওয়ামীলীগের এই জমানায় গত কয়েক বছরের হিন্দু নির্যাতনের ঘটনা বাদই দিলাম, এমন কি রামুর ঘটনার প্রসঙ্গও এইখানে তুলতেছি না। কিন্তু এইবারের ব্রাহ্মনবাড়ীয়ার হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনার প্রায় সপ্তাহ পার হয়া যাইতেছে, সব ধরনের মিডিয়ায় এই হামলা নির্যাতনের বিষয়ে, নানা ধরনের খবর আমরা শুনতে পাইতেছি। অথচ তাজ্জবের বিষয় হইলো-- শাহরিয়ার কবির এবং মুনতাসির মামুন ব্রাহ্মনবাড়ীয়া নিয়ে এখনও নিশ্চুপ। শাহরিয়ার কবির এবং মুনতাসির মামুন যৌবন হারিয়ে এখনও উত্থানরহিত। গত কয়েক দিনে, হিন্দু নির্যাতনের প্রশ্নে উনাদের গলা দিয়া একটা ক্ষীন আওয়াজও কোন মাধ্যমে শুনা যায় নাই। প্রচারনা আর ডকুমেন্টেসন তো বহু দূরের কথা।

২০০১ সালের যে মাত্রার নির্যাতনের ঘটনা সমুহের প্রচারনা দিয়া শাহরিয়ার কবির এবং মুনতাসির মামুন দেশে বিদেশে বিএনপিকে একটা দাঙ্গাকারী এবং একটা হিন্দু বিরোধী দল হিসাবে সফল ভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন-- সেই একই মাত্রার সাম্প্রতিক ঘটনায়--এখন উনারা পুরা নিশ্চুপ। দেশের সব "প্রগতিশীল" মহল চুপচাপ। উনারা হয়তো বুঝাইতে চাইতেছেন, আওয়ামী জমানায় হিন্দু পিটানি জায়েজ আছে...!!! এইটা ততটা দোষের কিছু না। এইবার এমনকি দিল্লীরও এইসব নিয়া সেই মাত্রার মাথাব্যাথা নাই। হাসিনা সরকারও বলে দিয়েছে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নিরাপদে আছে, ভাল আছে-- দিল্লির সরকার সেইটাই মেনে নিয়ে চুপচাপ আছে। বরং শেখ হাসিনার সরকার এখন পুরা ঘটনার জন্য ইউএনও আর স্থানীয় থানার ওসিকে অর্থাৎ স্থানীয় প্রশাসনকে দায়ী করেছেন। অর্থ্যাৎ ব্রাহ্মনবাড়িয়ার ঘটনায় হাসিনা সরকারের কোন দায় দ্বায়ীত্ব নেই--- ব্রাহ্মনবাড়িয়ার ঘটনা ছিল যেন নিছক একটা প্রশাসনিক সমস্যা।

হিন্দুদের উপর সাম্প্রতিক সময়ের নির্যাতন প্রশ্নে "প্রগতিশীল" মহলের এই উত্থান রহিত অবস্থা-- বড়ই কৌতুকের...!!!