somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রসিকতার ইসলামী সীমারেখা,

০২ রা মে, ২০১৬ সকাল ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :







পাঠক! এখানে আমরা এমন একটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছি যে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই হয়তো ততোটা ভাবেন না। বিষয়টি হলো রসিকতা। রসিকতা যে খারাপ জিনিস তা কিন্তু নয়, কেননা টেনশন, হতাশা, বিষাদগ্রস্ততা দূর করার জন্যে হাঁসি-রসিকতা একটি ভালো উপাদান। মানসিক প্রফুল্লতার জন্যেও হাস্যরসের যথেষ্ট উপযোগিতা রয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো রসিকতার সীমা মেনে চলা। সীমা লঙ্ঘন হয়ে গেলে অনেকের মনেই আঘাত লাগতে পারে। তাই সীমারেখাটি আগে জানতে হবে এবং পরে তা মানতে হবে।
মানসিক স্বস্তি ও সতেজতা আল্লাহর একটি অনুগ্রহ। যার ভেতরে এই সতেজতা বিদ্যমান সে নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান। সতেজ মানুষেরা আনন্দ ও প্রশান্তিময়য জীবন যাপন করে। তাঁরা আল্লাহ এবং তাঁর রহমতের ব্যাপারে আশাবাদী। তাঁরা তাঁদের দুঃখ-কষ্টগুলোকে সৌভাগ্যের সোপান বলে মনে করে। শ্রোতাবন্ধুরা! এ মুহূর্তে আপনারা যারা এ অনুষ্ঠান শুনছেন আশা করি আপনারাও তেমনি ভাগ্যবান এবং আশাবাদী মনের মানুষ। তাই আপনারাও নিশ্চয়ই ইতিবাচক মনের প্রশান্তি ভোগ করে আনন্দময় জীবনযাপন করছেন। এরকম মনে করার কারণ হলো যারা ইতিবাচক চিন্তার মানুষ, জীবনের ব্যাপারে যাদের দৃষ্টি আশাবাদী, তারা এই আশাবাদী মনের সাহায্যে অন্তর থেকে সকল দুশ্চিন্তা দূর করে দেয়।
ইসলামের মতো একটি মুক্তিদাতা দ্বীন আনন্দময় ও আশাবাদী মনের ব্যাপারে উৎসাহিত করে। রাসূলে খোদা (সা) এর পুরো জীবনটাই ছিল চমৎকার এইসব গুণাবলিতে সমৃদ্ধ। ইসলাম স্বল্প-ধৈর্য, অলসতা, বিমর্ষতা, বিষন্নতাপূর্ণ মানুষ বিশেষ করে আশাহীন ব্যক্তিকে পছন্দ করে না। পক্ষান্তরে সক্রিয়, সচেষ্ট, আশাবাদী এবং হাঁসিখুশিময় লোকজনকে পছন্দ করে। ইসলাম সুন্দর এবং হাঁসিখুশি আচরণকে স্বাগত জানায় যাতে মুসলমানদের মাঝে আত্মিক প্রশান্তি বিরাজ করে। অপরদিকে বিষাদ-বিষন্নতা এবং হতাশার মতো বাজে বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মাঝ থেকে দূরে সরে যায়। সুন্দর আচার ব্যবহারের একটি প্রকাশ হলো রসিকতা বা কৌতুক প্রবণতা। তবে সেই রসিকতা বা কৌতুক করতে হবে অবশ্যই সীমারেখা মেনে। কোনোভাবেই অপরকে উত্যক্ত করা বা খোঁচা দেওয়ার জন্যে কৌতুক করা যাবে না।
ইমাম সাদেক (আ) এর একটি বর্ণনার উদ্ধৃতি দেওয়া যায়। তিনি একবার ইউনূস শিবাণীকে জিজ্ঞোসা করেছিলেনঃ ‘লোকজনের সাথে কী পরিমাণ কৌতুক মজা করো? ঐ লোক জবাবে বলেছিলঃ কম। ইমাম সাদেক (আ) তখন তিরস্কারের সুরে বলেছিলেনঃ কেন লোকজনের সাথে হাসি-মজা করো না? হাঁসি-কৌতুক সুন্দর আচার-ব্যবহার আর সচ্চরিত্রের অংশ।’ ইসলামের দৃষ্টিতে মুমিনদের একটি দায়িত্ব হলো দ্বীনী ভাইদেরকে আনন্দ দেওয়া। হযরত আলী (আ) বলেছেনঃ রাসূল (সা) যখনই তাঁর কোনো সহচরকে বিষন্ন বা মনমরা অবস্থায় দেখতেন, তখনই কৌতুক মজা করে তাকে প্রফুল্ল করে তুলতেন এবং বলতেনঃ নামাযের পর সবচেয়ে উত্তম আমল হলো মুমিনদের অন্তরকে প্রফুল্ল করা। অবশ্য এমনভাবে হতে হবে যেন তাতে গুনাহের লেশমাত্র না থাকে।
অনেকেই মনে করেন যে হাস্য-রসিকতা ছাড়া জীবন একেবারেই অসহ্য,এটা এক ধরনের নিরাময় শক্তি। স্ট্রেস নিরাময়ে বা টেনশন দূর করার ক্ষেত্রে হাষ্য-রসিকতার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে বলে মনোবিজ্ঞানীগণও মনে করেন। তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে হাঁসি আনন্দ ব্যক্তির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং জীবনমান উন্নয়ন আর সমস্যা হ্রাস করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। অ্যালেন ক্লেইন ‘কৌতুকের নিরাময় শক্তি’ নামক গ্রন্থে লিখেছেনঃ ‘হাঁসি-আনন্দ-রসিকতা বিষাদগ্রস্ততা, অবসাদ, টেনশন ইত্যাদি থেকে মানুষকে মুক্ত রেখে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে, আরো সাহায্য করে নিজের অবস্থা বা পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন হতে। কেননা রসিকতা এমন একটি অস্ত্র যা মানসিক চাপ সৃষ্টির কারণগুলোকে অকার্যকর করে দেয় এবং পরিবেশের ওপর ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।’
হাস্য রসিকতা বা কৌতুক পরস্পরকে ঘনিষ্ট করে তোলে। এ কারণে পরিপূর্ণ জীবন বিধান ইসলামে কৌতুককে বিশেষ করে মুমিনদের জন্যে জরুরি একটি বিষয় বলে মনে করা হয়। অপরদিকে ইসলাম রসিকতার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করাকে ভীষণভাবে নিষেধ করেছে। ইসলাম কাজ, বিশ্রাম, ইবাদাত ইত্যাদির ব্যাপারে যেমন ভারসাম্য রক্ষায় বিশ্বাস করে তেমনি সর্বক্ষেত্রেই চরমপন্থাকে নিষিদ্ধ করে। ইমাম হাসান (আ.) কে ইমাম আলী (আ) এক উপদেশ বাণীতে বলেছেনঃ হে সন্তান আমার! সে-ই ইমানদার যে তার দিনরাতের সময়গুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করে নেয়। একটি অংশকে কাজে লাগায় আধ্যাত্মিকতার চর্চা এবং আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করার মধ্য দিয়ে। অপর একটি অংশকে কাজে লাগায় পার্থিব জগতের প্রয়োজনীয়তা ও জীবন জীবিকার চাহিদা মেটাতে। আর তৃতীয় অংশটিকে নির্দিষ্ট করে বৈধ এবং হালাল বিনোদন উপভোগ করার জন্যে।
ইসলামের মনীষীগণ উৎফুল্ল হৃদয়ের হওয়া সত্ত্বেও চাতুর্যপূর্ণ রঙ্গ-রসিকতার মাঝে ডুবে গিয়ে নিজেদের ব্যক্তিত্বকে কখনোই বিসর্জন দেন নি। হাঁসি আনন্দ করার ক্ষেত্রে কখনোই তাঁরা ভারসাম্য রেখা অতিক্রম করে হারাম বা গুনাহের কাজের দিকে অগ্রসর হন নি। রাসূল কিন্তু কখনোই নিজে রসিকতাপূর্ণ কথাবার্তা শুরু করতেন না, তবে তিনি তাঁর সঙ্গী সাথীদের জন্যে হাঁসি-আনন্দের পটভূমি তৈরিতে সহযোগিতা করতেন। সাহাবিগণও রাসূলে আকরাম (সা) এর অনুসরণে অপছন্দনীয় রসিকতা পরিহার করে চলতেন। কিন্তু পছন্দনীয় মজা-কৌতুক প্রত্যাখ্যান করতেন না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এক যাযাবর আরব রাসূলে খোদার কাছে আসতেন এবং নবীজীকে উপহার উপঢৌকন দিতেন। কিছুক্ষণ যাবার পর যাযাবর আরব লোকটি বলতোঃ ‘এবার উপহার উপঢৌকনের টাকাটা দিন’। তখন রাসূলে খোদা (সা) নিজেও হাঁসতেন। ঐ ঘটনার পর রাসূলে খোদা (সা) যখনই বিষন্নতা বোধ করতেন তখনই বলতেনঃ ঐ যাযাবর আরব লোকটি কোথায়? ও আসতো যদি…।’
রাসূলে খোদা (সা) এবং আমিরুল মুমেনিন আলী (আ) এর খুরমা খাওয়া নিয়েও চমৎকার একটি কৌতুক আছে। কৌতুকটি হলো একদিন এই দুই মহান মনীষী একসাথে বসে খুরমা খাচ্ছিলেন। রাসূলে খোদা (সা) খুরমা খেয়ে বিচিগুলো আলী (আ) এর সামনে রাখতেন। খাওয়া শেষে রাসূল বললেনঃ যার সামনে বীচি বেশি সে অতিভোজী। আমিরুল মুমেনিন দেখলেন রাসূলের সামনে কোনো বীচিই নেই, তাই জবাব দিলেনঃ যে বীচিশুদ্ধ খুরমা খেয়েছে সে-ই বেশি পেটুক।
অপর এক বর্ণনায় এসেছে, একবার আব্দুল মোত্তালেবের মেয়ে রাসূলে খোদার বৃদ্ধা ফুফু সফিইয়্যাহ্ নবীজীর কাছে এলেন। রাসূলকে তিনি বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার জন্যে একটু দোয়া করো যেন বেহেশ্তবাসী হতে পারি।‘ নবীজী একথা শুনে হাঁসতে হাঁসতে মজা করে বললেনঃ ‘বৃদ্ধ মহিলারা বেহেশতে যাবে না।’ সফিইয়্যাহ্ ভীষণ বিষন্ন হয়ে পড়লেন এবং ফিরে গেলেন। নবীজী তখন মুচকি হেঁসে বললেনঃ সফিইয়্যাকে বলো বৃদ্ধ মহিলারা আগে তরুণী হবে তারপর বেহেশতে যাবে।
যাই হোক। এই ছিল রাসূলে খোদার কৌতুকের নমুনা। আমরা আমাদের মানসিক প্রশান্তির স্বার্থে অবশ্যই মজা করবো, কৌতুক করবো, কিন্তু কখনোই অপরকে ঘায়েল করার জন্যে নয়। তা করা হলে সীমালঙ্ঘন করা হবে। আর সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। আমরা যেন কেউ আল্লাহর অপছন্দনীয় বলে গণ্য না হই-সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৬ সকাল ১১:১৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×