আজ (০৫ এপ্রিল ২০১৯) পবিত্র জুম্মার নামায আমাদের মাসজিদের দক্ষিণ পার্শ্বস্থ এক্সটেনশন বা গাছ গাছালি ঘেরা উন্মুক্ত আকাশের নীচে, বর্ধিত স্থানটিতে পড়েছি। এর কারণ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভেতরের কক্ষে প্রবেশ করার জন্য সবাই হুড়োহুড়ি করে, আগে থেকে বসে থাকা মানুষের ঘাড়ের উপর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে ফাঁক ফোকর খুঁজে নিয়ে প্রথমে সুঁই এর মত গুটিশুটি স্থান করে নেয়, পরে ফালের মত স্থান অধিকার করতে চায়, যা আমার মোটেই পছন্দ নয়। হুড়োহুড়ি আমি একদম পছন্দ করি না। আর তা ছাড়া আজ সকালের দিকে একটু হাল্কা বৃষ্টির মত হয়ে যাওয়াতে আবহাওয়াটাও তুলনামূলকভাবে সহনীয় ছিল। তাই খোলা আকাশের নীচে গাছের ছায়ায় বসেই বেশ আরাম বোধ করছিলাম। যেই না ইমাম সাহেব নামায শুরু করলেন, আর অমনি একটা কোকিল শুরু করলো তার মুহুর্মুহু ‘কুউ কুউ’ মর্মভেদী কূজন। ওর এ নিরন্তর ডাক শুনে মনটা বারে বারে কেমন কেমন করে উঠছিলো। জানিনা, কোন খেয়ালে সে কাকে ডেকে চলেছিল, কিন্তু তার এ ডাক আমাকে নামাযে আমার অমনযোগিতার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল এবং আমাকে ঠিক তার মত করেই স্রষ্টাকে ডাকার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল। আমি মুহূর্তেই যেন সম্বিৎ ফিরে পেলাম, আমি নামাযের মধ্যেই স্রষ্টার কাছে কিছু প্রার্থনা রেখে এলাম। তার মধ্যে অবশ্য সেই অদেখা কোকিলটার জন্যেও কিছু কথা ছিল।
পঞ্জিকার হিসেব অনুযায়ী বসন্তের দুই মাস, অর্থাৎ ফাল্গুন আর চৈত্র মাসে কোকিল ডাকার কথা। কিন্তু আমাদের এখানে আমি গত কয়েক বছর ধরে মাঘের মাঝামাঝিতেই কোকিলের প্রথম ডাকটা শুনে আসছি। এ নিয়ে আমি প্রতিবছরই কোকিলের প্রথম ডাক শোনা নিয়ে লিখেছি, ব্লগে নয়, অন্যত্র। এ ডাক আমি শুনতে পাই বোশেখের মাঝামাঝি পর্যন্ত। তার মানে প্রায় তিন/সাড়ে তিন মাস ধরে আমি এ সময়টাতে প্রতিদিন প্রকৃতি থেকে ক্ষণে ক্ষণে এক মধুর আবাহনের মূর্ছনা অনুভব করে থাকি। তার পরে ধীরে ধীরে এ অব্যক্ত মধুর সঙ্গীত প্রকৃতির আড়ালে বিলীন হয়ে যায়। এরা তখন কোথায় যায়, কোথায় থাকে কে জানে! হয়তো এখানেই আশে পাশের কোন গাছে থাকে, তবে তাদের কন্ঠে আর সে গান বাজে না।
আজকের কোকিলটার ডাক শুনে কেন যেন মনে হলো, বিদায়ের ঘন্টা যেন ধনিত হচ্ছে। দিনপঞ্জী অনুযায়ী বসন্ত শেষ হতে আর মাত্র একটি সপ্তাহ বাকী। ওদের আসন্ন বিদায়ের কথা জানাতেই যেন আজ ওর এই নিরন্তর একটানা ডেকে যাওয়া। ওদের এ ডাক আরও কিছুদিন হয়তো শুনতে পাবো, তার পরে অপেক্ষা করতে হবে আবারো সেই মাঘের মাঝামাঝি পর্যন্ত। মানুষ আর অচেনা পাখির মধ্যে কিইবা এমন হার্দিক সম্পর্ক থাকতে পারে, কিন্তু তবুও ওদের এ সাময়িক বিদায়ের কথা ভেবে কিছুটা বেদনাহত হচ্ছি তো বটেই। প্রতিটি বিদায়ই মনে হয় বেদনার উদ্রেক করে----
ঢাকা
০৫ এপ্রিল ২০১৯
(ছবিসূত্রঃ গুগল)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:৪৫