আজ বিকেল সোয়া পাঁচটা। মাসজিদে ‘আসর’ নামায পড়ে বাসায় ফিরে আসছি। হঠাৎ চোখে পড়লো, কিছু লোক একত্রিত হয়ে সামনে কী যেন দেখছে। দেখি, একজন লোক তার প্যান্ট উরু পর্যন্ত গুটিয়ে, পায়ে চলা পথটির কাঁটাওয়ালা রেলিঙ পার হয়ে পার্শ্ববর্তী খালের ড্রেনেজ পাইপ বেয়ে নীচে নামছে। একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘লোকটা ওভাবে নীচে নামছে কেন, তার কি মোবাইল ফোনটা খালে পড়ে গিয়েছে’? সে হেসে বললো, ‘না স্যার, একটা বাঁদর কামড় দিয়ে গাছ থেকে একটা পাকা কাঁঠাল খালে ফেলে দিয়েছে। তাই না দেখে কাঁঠালটি এলাকার নিরাপত্তা প্রহরী এখানে এসে হাজির হবার আগেই লোকটি সংগ্রহের চেষ্টা করছে’। আমার মনে হলো, লোকটির হয়তো কাঁঠাল খাবার ইচ্ছে হয়েছে, একটি পুরো কাঁঠাল কিনে খাবার সঙ্গতি হয়তো তার নেই, তাই সে এই ইনিশিয়েটিভটা নিয়েছে। আমি ভাবলাম, তা সে নিক। খালের মালিকানা তো সরকারের। খালের চুনোপুটি, ডানকানা মাছ যেমন এলাকার যে কেউ ধরতে পারে, এবং অনেকে ধরেও, তেমনি খালে পড়ে থাকা একটা কাঁঠালও তো যে কেউ নিয়ে যেতে পারে। আর তা’ছাড়া বাঁদরটাকেও তো মোটেই দোষ দেয়া যায় না। সে হয়তো তার পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি দেখতে এসেছিল, যে ভিটে থেকে আমরাই ওদেরকে উচ্ছেদ করে বহুতল কংক্রিটের বস্তি নির্মাণ করেছি। সে ভিটে দেখতে এসে যদি বানরটি তার বাপ-দাদার আবাস থেকে কিছু ফলমূল খেতেই চায়, তাতে তেমন দোষের তো কিছু নেই!
দেখতে দেখতে মুহূর্তের মধ্যে সেখানে অনেক লোক জড়ো হলো। খালে নামা সেই লোকটি এই এলাকারই এক বাসার কেয়ার টেকার। অর্ধহাঁটু পানি মাড়িয়ে যেই না আধডোবা কাঁঠালটাতে সে হাত স্পর্শ করলো, অমনি সমবেত বিনোদন প্রিয় বাঙালি দর্শককূল করতালি দিয়ে তাকে সোল্লাসে অভিনন্দন জানাতে থাকলো। লোকটিও আকর্ণবিস্তৃত হাসি দিয়ে তা একনলেজ করতে থাকলো। তারপর শুরু হলো উৎসুক জনতার ইন্টারভিউ এর পালাঃ ভাই কাঁঠালটার ওজন কত? হবে ৬/৭ কেজি। কাঁঠালটা কাঁচা, না পাকা? পাকা। আজকেই খাওয়া যাবে? খেতে চাইলে তো খাওয়াই যাবে। ইত্যাদি, ইত্যাদি। লোকটি যখন পতিত কাঁঠালটিকে উদ্ধার করে ফুটপাথে ফিরে এলো, তখন দুই একজন অতি উৎসাহী ব্যক্তি দৌড়ে গিয়ে নিজের নাক লাগিয়ে কাঁঠালটি শুঁকে এবং দুই হাতের দশ আঙুল দিয়ে টিপে টিপে বিজ্ঞের মত মাথা নাড়িয়ে বলতে থাকলো, ‘হুঁ, একদম পাকা। তা না হলে সামান্য এক বানরের কামড়ে গাছ থেকে পড়ে যায়’?
সামান্য একটু বাঁদরামিকে উপলক্ষ করে সমবেত জনতার এ আগ্রহ, উৎসাহ এবং হাস্যরস দেখে আমারও খুব ভাল লাগলো। তবে তা বাঁদরের বাঁদরামি দেখে যতটা নয়, উপস্থিত জনতার হাস্যরস, কৌতুকপ্রিয়তা এবং বিনোদিত হওয়া দেখে তার চেয়ে বেশী। সত্যি, আমরা বাঙালিরা কত অল্পতেই খুশী হতে পারি!!!
গাছভর্তি কাঁঠাল!!!!
উৎসুক জনতার একাংশ
বাঁদরামির পর একহাতে বাচ্চা কোলে নিয়ে বাঁদর মাতা পগার (কাঁটাতারের দেয়াল) পার হচ্ছে।
আরেকটি রিয়ার গার্ড বাঁদর পিছে তাকিয়ে দেখছে।
গাছটির একেবারে গোড়া থেকে কাঁঠাল ধরেছে, গত বছরের মতই।
ঢাকা
২৬ মে ২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৯ দুপুর ২:২৬