somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কক্সবাজাররে একমাত্র নারী ভাষাসনৈকি মাহফলি আরা আজমত

৩১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনে নারীদের সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা অনেকেই জানে না। তখনকার রক্ষণশীল সমাজে নারীদের বাড়ির বাইরে বের হাওয়াই যেখানে অপরাধ বলে বিবেচ্য হত, সেখানে নারীরা ভাষার জন্য পুরুষের সঙ্গী হয়ে লড়াই করেছে যা সত্যিই অসাধারণ। ভাষার দাবিতে নারীরা জীবন বাজি রেখে পুরুষের সঙ্গে কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে মিছিল করেছে। সেস্নাগান দিয়েছে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবির মিছিল ও মিটিংয়ে পুরুষের পাশাপাশি যে কয়েকজন নারী জীবনকে তুচ্চ মনে করে অংশ নিয়েছেন তাদের অন্যতম মাহফিল আরা। রক্তে অধিকার আদায়ের প্রবণতা বহমান। তার জেঠা অবিভক্ত বাঙলার খাজা নাজিম উদ্দীন মন্ত্রীসভার জনস্বাস্থ্য ও স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন বিষয়ক মন্ত্রী খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী আজীবন মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং বাংলাকে বৃটিশের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বৃটিশ জেলা প্রশাসককেও হুমকি দিয়েছিলেন। বড় হওয়ার পর থেকে জেঠা রাজনৈতিক দেখে দেখে বড় হয়েছেন এবং বাবা কবির উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর কাছ থেকে শুনেছেন। তার মতে তিনি বড় হয়েছেন। স্বপ্ন ছিলো অধিকার আদায়ে কখনো পিছপা হবে না। ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯২৯ চকরিয়া উপজেলার হারবাং এলাকায় জন্মগ্রহণকারী মাহফিল আরা আজমত ১৯৪৪ সালে কলকতার কৃষ্ণ নগর ফ্রাইস্টচার্চ মিশনারী বিদ্যালয় থেকে তিনটি বিষয়ে স্টারমার্কসহ প্রথম বিভাগে ম্যাট্টিক, ১৯৪৬ সালে লেডি ব্রেবর্ন কলেজ থেকে আই এ, ১৯৫০ সালে ঢাকাস্থ ইডেন কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। ইডেন কলেজ থেকে বিএ পাসের পর তারই জেঠা খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী এবং বাবা কবির উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর ইচ্ছায় প্রাচ্যের অক্সপ্রোসড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে মাস্টার্স-এ ভর্তি হন এবং ১৯৫৩ সালে এম এ পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৫ সালে ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন (বি.এড) এবং ১৯৫৬ সালে এম.এড ডিগ্রী নেন। মাহফিল আরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী তখন বাংলার আকাশে প্রবাহিত হয় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের হাওয়া। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্রী মাহফিল আরা অন্যান্য নারী ভাষাসৈনিকের সাথে রাত জেগে পোস্টার লিখতেন এবং স্লোগান তৈরি করতেন। সকালে দুজন দুজন করে সামনের সারিতে ছাত্রীদের নিয়ে মিছিল বের করতেন। পুলিশের টিয়ার গ্যাস থেকে বাঁচার জন্য ছাত্রীরা শাড়ির আঁচল পানিতে ভিজিয়ে নিতেন। পুলিশের আক্রমণে ছাত্রীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যেতেন, তারপর আবারো মিছিল নিয়ে অগ্রসর হতেন। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, খুনি নুরুল আমিনের বিচার চাই, ছাত্র হত্যার প্রতিবাদ চাই, নুরুল আমিন গদি ছাড় প্রভৃতি স্লোগান ছিলে তাদের মুখে মুখে। রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার পর সেই রক্তমাখা শার্ট ঝুলিয়ে রেখে আন্দোলনকারীরা মিছিল বের করে। সেই মিছিলে মাহফিল আরাও ছিলেন। সবকিছু উপেক্ষা করে তিনি আন্দোলনের পুরো সময়টাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটান। ফেব্রুয়ারিতে তার বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছিলো। এ দিকে উত্তপ্ত সেই পরিস্থিতিতে হবু শ্বশুরবাড়িতে প্রচারিত হয়েছিলো তাদের হবু পুত্রবধু মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আন্দোলন শেষে তিনি হল ত্যাগ করে ঘরে ফিরে আসেন। ১৯৫৩ সালে বিয়ে করেন। ১৯৫৩ সালে স্বামী আজমত উল্লাহর কর্মস্থল রাজশাহীল পিএন গালর্স হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ গালর্স কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে যোগদান করেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও জড়িত ছিলেন। ষাটের দশকে প্রতিটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন তিনি।
১৯৬৪ সালে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম বেতারে শিশুদের অনুষ্ঠান ‘ ছোটদের মাহফিল’ পরিচালনা করেন ভাষাসৈনিক মাহফিল আরা আজমত। তার মাধ্যমে বেতারে প্রথম ছোটদের অনুষ্ঠান ছোটদের মাহফিল এর যাত্রা শুরু হয়। বেতার কথক হিসেবে খ্যাতি রয়েছে তার। আজীবন প্রতিবাদী মাহফিল আরা আজমত ১৯৬৪-৬৭ সালের দিকে পূর্ববাংলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চর্চা ও রেডিওতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে তার প্রতিবাদ করেন তিনি। ৬৬, ৬৯, ৭০ এবং ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে দেশমাতৃকাকে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর হাত থেকে মুক্ত করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন।তিনি দীর্ঘ ১৬ বছর অর্থনীতি ও মনোবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনার পাশাপাশি ভাইস প্রিন্সিপালের দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৭৭-৮১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চট্টগ্রাম টিচার্স ট্রেনিং কলেজে অধ্যাপনা করেন এবং ১৯৮১ সালে অসুস্থতার কারণে অবসর গ্রহণ করেন। এই সময় চট্টগ্রাম বেতারে লাভ প্রোগ্রাম ‘টক’ পরিচালনা করতেন।

তার কর্ম-এর স্বীকৃতি হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মহান স্বাধীনতা পদক (মরণোত্তর, ২০১১), ভাষাসৈনিক ম্মাননা(মরণোত্তর, ২০১২), একুশের ২১ নারী পদক, ঢাকা গিতালী ললিতকলা একাডেমী গুণীজন পদক ((মরণোত্তর, ২০১০)সহ বিভিন্ন ধরনের পুরষ্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন মাহফিল আরা আজমত।
অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে আজীবন আপসহীন সংগ্রামী মাহফিল আরা আজমত ১৯৯৩ সালের ১৭ আগস্ট আমাদের ছেড়ে ইহ ত্যাগ করেন। তিনি মরে গেছেন কিন্তু আমাদের কাছে তথা নারী সমাজের কাছে রেখে গেছেন নিজের অধিকার আদায় কীভাবে করতে হয় তার অনুপ্রেরণা।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৩৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×