somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এস এম সুলতান: জন্মদিনের শ্রদ্ধান্জলি

১০ ই আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৪:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের চিত্রকলার কিংবদন্তী পুরুষ সৈয়দ মোহাম্মদ সুলতান (এস. এম. সুলতান ) এর আজ ৮৫তম জন্ম বার্ষিকী। ডাক নাম লাল মিয়া। জন্ম ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামে এক কৃষক পরিবারে। পিতা শেখ মেসের আলী অবশ্য পেশায় ছিলেন রাজমিস্ত্রি। ৫ বছর বয়সে পিতার সহযোগী হিসাবে কাজে নামেন। দেয়ালের গায়ে চুন সুরকী, সিমেন্ট বালি দিয়ে নকশা ও কারুকাজ শুরু করেন।
১৯২৮ সালে জিটি স্কুল সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লাল মিয়াকে ভর্তি করা হয়। কিন্তু নিয়ম করে পড়া তাঁর ধাতে ছিলো না। স্কুল পালিয়ে দেয়ালের নকশা আঁকার দিকেই ছিলো ঝোঁক। তাঁর এসব কাজ দৃষ্টি কাড়ে জমিদার ধীরেন্দ্র রায়ের। জমিদারের সহায়তায় ১৯৩৮ সালে কলকাতা যান। ছবি এঁকে প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন প্রখ্যাত শিল্পসমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর। শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন সনদ ছাড়াই শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর আনুকূল্যে ভর্তি হন কলকাতা আর্ট স্কুলে। তিন বছর পর পাঠ অসমাপ্ত রেখে আর্ট স্কুল থেকে পালান। তবে যে ক'দিন আর্ট স্কুলে পড়েছেন 'ক্লাসের ফার্স্ট বয়ই ছিলেন। ১৯৪৩/৪৪ সালে বৃটিশ বিরোধী খাকসার আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

১৯৪৪ সালে সব ফেলে বোহিমিয়ান জীবন শুরু করেন। চলে যান কাশ্মীর। এন্তার ছবি আঁকতে থাকেন। এ সময়ে আঁকা যে ক'টা চিত্রকর্মের ছবি আছে তাতে পোস্ট ইম্প্রেশনিস্ট ভ্যান গগ-এর ছাপ লক্ষ করা যায়। সে সময় মিসেস হার্ডসন সামের এক কানাডীয় ভদ্রমহিলার সহযোগিতায় ১৯৪৬ সালে সিমলায় তাঁর প্রথম চিত্র প্রদর্শনী হয়। উদ্বোধন করেন কাপুরতলার মহারাজা।

১৯৪৭ সালে আসেন লাহোর। ১৯৪৮ সালে লাহোরেও ১৯৪৯ সালে করাচীতে দু'টি প্রদর্শনী করেন। লাহোরের প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন ফিরোজ খান নুন ( পরে যিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। তাঁর স্ত্রী ভিকারুন্নিসা নুন-এর নামানুসারে ঢাকার বিখ্যাত স্কুল এন্ড কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়) এবং করাচীর প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন মিস ফাতিমা জিন্নাহ। ১৯৪৯ সালে পাকিস্তানে একটি শিল্প প্রদর্শনীতে এবং ১৯৫০ সালে ব্রুকলিন ইন্সটিটিউট অব আর্টের চিত্রপ্রদর্শনীতে শ্রেষ্ঠ শিল্পীর পুরস্কার পান।

১৯৫০ সালে একটি শিক্ষা বিনিময় কর্মসূচির আওতায় তিনি দীর্ঘদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমন করেন। বোস্টন,ওয়াশিংটন, শিকাগো, মিশিগান ইত্যাদি শহরে তিনি ১৩টি প্রদর্শনী করেন। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে আমেরিকা, ইয়োরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তাঁর প্রদর্শনী হয় ২০টি। বাংলাদেশে তাঁর মৃত্যুর পর হওয়া একটিসহ প্রদর্শনী হয়েছে ৪টি। এর মধ্যে প্রথমটি হয় ১৯৫৩ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজে। দ্বিতীয়টি ১৯৭৬ সালে শিলাপকলা একামেীতে, তৃতীয়টি ১৯৮৬ সালে জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে।

১৯৫০ সালের শেষদিকে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া এমব্যাঙ্কমেন্ট ও লেইস্টার গ্যালারীতে পাবলো পিকাসো, সালভাদর দালি, ডুফি, ব্রাক, পল ক্লী, অঁরি মাতিস এর মতো বিশ্বখ্যাত শিল্পীদের সাথে সুলতানের ছবিও প্রদর্শনীতে স্থান পায়। সে প্রদর্শনীতে তিনি ছিলেন একমাত্র এশীয় চিত্রশিল্পী।

১৯৫৩ সালে সুলতান দেশে ফেরেন। সার্টিফিকেট না থাকায় ঢাকা আর্ট স্কুলে ( বর্তমানে চারুকলা ইন্সটিটিউট) চাকরী পেলেন না। চলে গেলেন নড়াইলের নিজ গ্রামে। ৫৪ থেকে ৭৬ পর্যন্ত ২২ বছরে তেমন কোন ছবি আঁকেননি। ১৯৭৬ সালে চিত্রপ্রদর্শনীর আগে জোর করে ছবি আঁকিয়ে নেয়া হয় তাঁর কাছ থেকে। তবে ওই সময়ে গ্রামের বাচ্চাদের ছবি আঁকা শেখাতেন। যেটা আমৃত্যু করে গেছেন।

মাঝে মাঝে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় বা অন্যভাবে ঢাকা এলেও ঢাকা থাকতে চাইতেন না সুলতান।

একটা বিষয় হলো বিদেশে এতো পরিচিতি সত্ত্বেও দেশের শিল্পজগতে তিনি বহুদিন ব্রাত্য হয়ে ছিলেন। এর প্রতিবাদে আহমদ ছফা সুলতানকে নিয়ে বিরাট প্রবন্ধ লিখেছেন।

কিন্তু মজার বিষয় হলো দেশে ব্রাত্য হলেও দেশেই তিনি জীবদ্দশায়ই এমন কিছু পেয়েছেন যা আর কারো ভাগ্যে জোটেনি-জীবদ্দশায় তাঁকে নিয়ে ডকুমেন্টারী "আদমসুরত" তৈরি করেছেন ''মুক্তির গান'' খ্যাত তারেক মাসুদ; হাসনাত আবদুল হাই লিখেছেন তাঁর জীবনীভিত্তিক উপন্যাস ''সুলতান''।

বাংলার কৃষক, শ্রমজীবী মানুষেরা সর্বদা তাঁর ছবির উপজীব্য। ছবিতে পেশী বহুল কৃষক,কিষাণীর উপস্থিতিতে কৃষিসমাজ নিয়ে তাঁর স্বপ্নের পরিচয় মেলে।

তাঁর বিখ্যাত ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ''প্রথম বৃক্ষ রোপন, ধানকাটা,জমি কর্ষণে যাত্রা,মাছ ধরা ইত্যাদি।

পেয়েছেন একুশে পদক (১৯৮২) ও স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৩)।

১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

জন্মদিনে শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাই।













সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০০৯ সকাল ৮:৫৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওহাবী-সালাফি-মওদুদীবাদ থেকে বাঁচতে আরেকজন নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

১.০
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বারানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে শায়েখ নিজাম উদ্দীনের প্রভাবে এই উপমহাদেশে জনজীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা বর্ণনা করেছেন। তার আকর্ষণে মানুষ দলে দলে পাপ থেকে পূণ্যের পথে যোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্তনাদ

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২১

গতকাল রাত থেকে চোখে ঘুম নাই। মাথার ব্যাথায় মনে হচ্ছে মাথার রগগুলো ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেই ভাল ঘুম হয়না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে উচ্চস্বরে এক ছাগলের আর্তনাদ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×