মালয়েশিয়া সম্পর্কে কিছু তথ্য
এই সিরিজের শেষ পর্যায়ে (এরপর আর এক পর্ব) এসে মালয়েশিয়া সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য দিতে চাই। সাথে কিছু মজার তথ্যও থাকবে। মালয়েশিয়ার রাষ্ট্র প্রধান হলেন সুলতান। তাঁর পদবী মালয়ীতে বেশ লম্বা (নামের মতোই)- ইয়াং দি পারতুয়ান আগং। বৃটিশ ওয়েস্ট মিনিস্টার ধাঁচের সংসদীয় সরকার। সরকার প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৫৭ সালে স্বাধীন হবার পর থেকে বহুদলীয় কোয়ালিশন সরকার দেশটি চালাচ্ছে। এর নাম আগে ছিলো এলায়েন্স পার্টি। বর্তমান নাম বারিসান ন্যাশনাল।
ফেডারেল সরকারের সংসদ দুই কক্ষ বিশিষ্ট। রাজ্য সংসদ এক কক্ষ বিশিষ্ট। নিম্ন কক্ষের নাম প্রতিনিধি পরিষদ বা দেওয়ান রাকায়েত ( চেম্বার অব দা পিপল) আর উচ্চ কক্ষের নাম সিনেট বা দেওয়ান নিগারা ( চেম্বার অব দা নেশন)। ২২২ আসনের নিম্ন কক্ষের নেতাই হন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। তবে মন্ত্রীসভার সদস্য হন দুই কক্ষ মিলিয়ে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নজীব তুন রাজ্জাক। ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষাপ্রাপ্ত মি. নজীব উপমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ২৫ বছরের বেশী দায়িত্ব পালনের পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী তুন আবদুল রাজ্জাকের পুত্র। সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর।
অন্যদিকে উচ্চ কক্ষের সদস্য সংখ্যা ৭০। মেয়াদ ৩ বছর। ১৩টি রাজ্য থেকে ২ জন করে ২৬ জন নির্বাচিত হন রাজ্য সংসদের সদস্যদের ভোটে। ফেডারেল টেরিটোরি কুয়ালা লামপুর থেকে ২ জন, পুত্রাজায়া এবং লাবুয়ান থেকে ১ জন করে মোট ৪ জন এবং বাকী ৪০ জন মনোনীত হন সুলতান কর্তৃক।
১৩টি রাজ্যে আছে ১৩টি সংসদ। সংসদের নাম দেওয়ান আনদাংগান নিগারী। মেয়াদ ৫ বছর। এমপিরা নির্বাচিত হন জনগণের ভোটে। রাজ্য গুলি হচ্ছে - জোহর, কেদাহ, কেলানতান, মালাক্কা, নিগারী সেমবিলিয়ান, পাহাং, পেরাক, পারলিস, পেনাং, সাবাহ, সেলাঙ্গর, সারাওয়াক ও তেরেঙ্গানু।
ফেডারেল ও রাজ্য সরকারের পাশাপাশি পরবর্তী প্রশাসনিক ইউনিট হলো জেলা ( দায়েরাহ)। এরপর আছে সাবডিভিশন ( মুকিম)। রয়েছে গ্রাম পর্যায়ে স্থানীয় সরকার। শহরে আছে পৌরসভা। রাজ্য সরকারের কাছে রয়েছে ভূমি, ধর্ম আর পানিসম্পদ সম্পর্কিত ক্ষমতা। বাকী সব কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে।
নেট সমস্যা
বাংলাদেশে নেট সমস্যা সুবিদিত। মালয়েশিয়ায় আমি সেটা আশা করিনি। চায়নাতে নেট স্পিড দেখে চমকে গিয়েছিলাম। মালয়েশিয়ায় আমি দু'বার নেট ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছিলাম। স্পিড আমাদের দেশের মতো পেয়েছি। যারা মালয়েশিয়ায় থাকেন তারা প্রকৃত তথ্য দিতে পারবেন।
খেতাব
মালয়েশিয়ায় নাগরিকদের জন্য তিনটি খেতাব চালু আছে। সর্বোচ্চ ফেডারেল খেতাব ''তুন''। শর্ত আছে একসাথে ২৫ জনের বেশি জীবিত তুন খেতাবধারী থাকতে পারবেন না। এ পর্যন্ত ১৪ জন মাত্র তুন খেতাব পেয়েছে। এ ছাড়া আছে সুলতান প্রদত্ত খেতাব ''দাতু''। আর আছে রাজা প্রদত্ত খেতাব ''দাতুক''।
ভাষা মালয়ী
মালয়ীদের ভাষাটি আমাকে বেশ আকর্ষণ করেছে। এক সময় নাকি আরবী হরফে ওদের ভাষা লেখা হতো। এখন লেখা হয় রোমান বর্ণমালার সাহায্যে। ইংরেজ বা ইন্দোনেশীয়দের মতো মালয়ীদেরও নিজস্ব বর্ণমালা নেই। ইংরেজ আর ইন্দোনেশীয়দের মতো মালয়ীরাও রোমান বর্ণমালায় ওদের ভাষা লেখে। তবে মালয়ী ভাষায় ইংরেজীর তুলনায় বর্ণমালার ব্যবহার সহজ। ইংরেজীতে যেমন সি বর্ণটি ক, চ, ছ নানা উচ্চারণে ব্যবহৃত হয় কিংবা জি বর্ণটি গ, জ, য ইত্যাদি উচ্চারণে ব্যবহৃত হয় মালয়েশিয়া তা করে না। কিছু বানান দেখলে ব্যবহারের সহজতা বোঝা যাবে- Teknologi (technology), Kedai(দোকান), Parabot(আসবাবপত্র) ইত্যাদি। আরেকটি বিষয় হলো ওরা নাম লেখার সময় আমাদের চেয়ে ভিন্ন শব্দক্রম ব্যবহার করে। যেমন আমরা লিখি রোকেয়া সরনি, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ বা এয়াপোর্ট রোড। ওরা লেখে -জালান পুত্রা, জালান টুংকু আবদুল রহমান। জালান মানে রাস্তা। মোটর সাইকেলের দোকান লিখবে Kedai Motosykol। লড্রিকে লেখে কেদায়ী দোবি।
ওদের ভাষায় বেশ কিছু শব্দ এসেছে সংস্কৃত থেকে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এটা মালয়ী ভাষায় পেরদানা মেনতিরি মালয়েশিয়া। তবে রোমান বর্ণমালা ব্যবহার করলেও উচ্চারণ করে আরবী হরফের মতো করে।
প্রবাসীদের কথা
মালয়েশিয়ায় আছে ৪/৫ লাখ বাংলাদেশী। বেশিরভাগ কাজ করে পাম আর রাবার বাগানে। আছে দোকান কর্মচারী বা হোটেল কর্মচারীও। যেখানে গেছি বাংলাদেশী চেহারা দেখলেই কথা বলেছি। তাদের সুখ দু:খের কথা জেনেছি। কেউ ভালো আছে। বেশিরভাগের অবস্থা খারাপ। এজেন্টদের প্রতারণার কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছেন। অনেকে হয়ে আছেন অবৈধ। ফলে ঘর থেকে বের হতে পারেন না। পুলিশ পেলেই হয়রানী করে। অবস্থানের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কাগজে ''ছোপ'' মারার জন্য অপেক্ষায় থেকেও কোন কূল কিনারা পান না। ওখানে যে কোম্পানীতে যাবে সেখান থেকে অন্য কোথাও গেলেই হয়ে যাবে অবৈধ। দূতাবাসে এখন যিনি ফার্স্ট সেক্রেটারী (লেবার) তিনি এই পদ নিয়ে অসন্তুষ্ট। কোন কাজে তিনি আসবেন বলে ভরসা হলো না। বাস্তব খবর অবশ্য জানি না।
(চলবে)