বান মাকং বস্তির বর্তমান চেহারা
আগের পর্ব-
Click This Link
জ্ঞান পর্ব
যে উদ্দেশ্যে গেলাম সেই জ্ঞান অর্জন পর্ব শুরু হলো আমাদের এলাকা থেকে পাচার হওয়া জ্ঞান দিয়ে। সেটা হচ্ছে নগর দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থিক উন্নয়ন দিয়ে। সোজা বাংলায় বস্তি উন্নয়ন। বাংলাদেশ এসব উন্নয়ন তত্ত্বের সূতিকাগার।
যাই হোক থাই প্রসঙ্গে আসি। তারা ১৯৯২ সালে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে আরবান কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অফিস (ইউসিডিও) স্থাপন করে। ২০০০ সালে এসে ইউসিডিও আর আরবান ডেভেলপমেন্ট ফাণ্ড-কে এক করে স্থাপন করে কমিউনিটি অর্গানাইজেশন ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট (কোডি) স্থাপন করে। এখনো এটাই চলছে। কোডির প্রাথমিক ফাণ্ডের পরিমান প্রায় ২৯০০ মিলিয়ন বাথ। এটি সামাজিক উন্নয়ন ও মানব নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত সরকারী সংগঠন। এটি একটি বোর্ড অব ডাইরেক্টর দ্বারা পরিচালিত। এতে সদস্য হিসাবে আছেন সরকারের প্রতিনিধি চার জন, বস্তিবাসীদের নেতা (কমিউনিটি লিডার) তিন জন আর সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ২ জন মোট নয় জন। মূল কমিটির বাইরে দুটি উপ-কমিটি আছে। একটি ইস্যু ভিত্তিক উন্নয়ন আরেকটি কমিউনিটি অর্গানাইজেন ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করে। হেড অফিস ছাড়াও অঅছে ১১টি আঞ্চলিক অফিস। সেখানে আছে আঞ্চলিক কমিটি। মাঠ পর্যায় পর্যন্ত সেখানে কাজ চলে।
কোডি মূলত: কমিউটিনি পর্যায়ে সংগঠন গড়ে তোলা, আর্থিক সহযোগিতা করা, সরকার ও অন্যান্য সংস্থার সাথে সমন্বয় আর আন্ত-সংগঠন সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা। কোডি মূলত: সহযোগিতামূলক কাজ করে।
এদের একটি প্রকল্প হলো ব্যাংককের কাছাকাছি 'বান মাকং' বস্তির উন্নয়ন। একটি খালের দুইপাড়ে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বস্তি। সেটা পরিদর্শন করেছি আমরা। পুরোটা বা আংশিক খালের ওপর ঘর বানিয়ে থাকতো বস্তির লোকজন। এরা খালের পারে ডুপ্লেক্স ভবন করে থাকার ব্যবস্থা করেছে। কিছু বস্তিবাসীর টাকা আর কিছু সরকারী ভর্তুকী। এরজন্য জমি নেয়ার বিষয়ে কোডি সহযোগিতা করেছে, এর একটি বিশাল অংশ খাস জমি। সেটার ব্যবস্থা করেছে সরকারের সাথে দেনদরবার করে।
এমনিতে এই পরিবর্তনের ফলে বস্তির চেহারা পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু খালটির পানি আমাদের বস্তির লাগোয়া খালের মতোই দুর্গন্ধময় আর নোংরা।
এক বস্তিবাসী !
এলাকায় ঢুকেই বোঝা গেলো সত্যি সত্যি বস্তিতেই এসেছি। হোক না সেটা অতিদ্রুত উন্নয়নশীল থাইল্যাণ্ডে। পাড়া ঘুরে নেয়া হলো বস্তিবাসীদের সমিতির অফিসে। যাবার পথে দেখলাম আমাদের বস্তির মতো সেখানেও টিভি আছে। সেই টিভি দেখার জন্য নিজেরা কিনে ডিশ লাগিয়েছে। বুঝলাম বাংলাদেশের কোয়াবের মতো ওখানে 'টোয়াব' বা 'কোয়াট' টাইপের কিছু নেই।
দেখে মনে হয় ভালোই আছেন
সমিতির সভাপতি আর সেক্রেটারী আমাদের ব্রীফ করলেন থাই ভাষায়। আমাদের সফরসঙ্গী শালিনী চুপচাপ ছিলেন। দোভাষীর কাজ করেছেন ওয়ান আর সুফিয়ান। সমিতির সভাপতি মাঝবয়সী। থাই সেনাবাহিনীতে কাজ করেন। সাধারণ সম্পাদক একটু বয়সী লোক। ক্ষুদ্র ব্যবসায় জড়িত।
তারা জানালেন, কিভাবে তাদের সংগঠন চলে। কি কি কাজ করেন। বিশেষভাবে যে টা বলেছেন, বস্তির বাচ্চাদের জন্য তারা স্কুল চালান। স্কুলে পড়া ও খাওয়া ফ্রি। এতিম বাচ্চাদের সব দেখাশোনা তারা করেন। যাদের বাবা মা কাজের জন্য বাইরে থাকেন তাদের সবরকম দেখাশোনা করে সমিতি।
এরপর আমাদের কাছে কিছু পণ্য উপস্থাপন করা হলো যেগুলো সমিতিরি সদস্যরা তৈরী করেছেন আয়বর্ধক কাজের অংশ হিসাবে। শালিনী একটা জামা কিনে আমাদের বললেন, আপনারা সবাই কিনুন এদের সাহায্য করার জন্য। আমাদের কেউ কেউ কিনলেন।
সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক
আবার বের হলাম। বস্তির আরেক অংশ ঘুরে দেখে হোটেলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। যেটা এখনো ভুলতে পারিনি সেটা বস্তির ট্রেড-মার্ক গন্ধ। আর সত্যিসত্যি তাদের আর্থিক অবস্থার যে ভালো উন্নতি হয়েছে সেটাও সবিনয়ে স্বীকার করতেই হবে।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১২ দুপুর ২:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


