Click This Link
সবার প্রিয় জো
মাইকেল ছিলেন লেখাপড়ার প্রধান। কোর্সটি সমন্বয়ের মূল দায়িত্বে ছিলেন এআইটি এক্সটেনশনের সিনিয়র স্পেশালিস্ট মি. ভরাভাত চনলাসিন ওরফে জো। হাসিখুশী আর সদালাপী জো সবার প্রিয় মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। কখনো কাউকে জো সম্পর্কে একটিও অভিযোগ করতে শুনিনি। ভালোবাসা দিয়ে সম্মান দেখিয়ে কি করে সবার কাছ থেকে সব কাজ ঠিকমতো আদায় করা যায় জো তার একটা ভালো নজির রাখলেন। পুরো কোর্সের আয়োজন, সরেজমিন পরিদর্শনসহ সব কিছুতে জো ছিলেন নিখুঁত। আমাদের আধো আধো ইংরেজীর সাথে জো'র আধো আধো ইংরেজীতে ভালোই ভাব বিনিময় হয়েছে।
থাইল্যাণ্ডেও আমাদের মতো স্কুল কলেজে ইংরেজী শেখাবার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সাধারন থাই অধিবাসীরা মাতৃভাষা ছাড়া কথা বলতে চান না। তাদের সাইনবোর্ডে কদাচিৎ ইংরেজী চোখে পড়ে। ইংরেজী থাকলেও সেটা থাকে অপ্রধানভাবে। তাও সেটা ব্যাংকক বা শহর এলাকায়। শহরের বাইরে ইংরেজীর কোন চিহ্ণ নেই। ফলে যতো জায়গায় গেছি সবখানেই যে ইংরেজী শুনেছি সেটা থাই উচ্চারণের সাথে মিলে বিচিত্র আর দুর্বোধ্য হয়ে গেছে। উচ্চ পদস্থ লোকজনেরও ইংরেজীর একই দশা। এই দলে জো ছিলেন একটু ভালো। বাংলাদেশে এসেছেন বেশ কয়েকবার। ফলে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালোই ধারণা আছে। দুনিয়াদারীর খোঁজখবরও ভালোই রাখেন তিনি। ফলে কথা বলে সবসময় ভালো লাগতো আমাদের।
জো'র সাথে আমরা
এছাড়া ছিলেন ওয়ান। এই ভদ্রমহিলার থাই নামটি মনে নেই আমার। ইংরেজী বলার চেষ্টা করতেন কিন্তু সেটা আমরা প্রায়ই বুঝতে পারতাম না। আমাদের ইংরেজী বুঝতেও যে তার সমস্যা হয় সেটা তার জবাব থেকে বুঝতে পারতাম। ফলে কাজ,ইশারা আর হাসিই ছিলো তার সাথে আমাদের যোগাযোগের উপায়।
সামনের সারিতে ডান থেকে তৃতীয়জন ওয়ান, সামনের সারিতে ডান থেকে প্রথম জন (কালো পোষাকে) শালিনী মিত্র আর পেছনের সারিতে ডান থেকে তৃতীয় জন সুফিয়ান
হোটেলে পৌঁছে সবাই এলোমেলোভাবে হাঁটাহাঁটি করছি। একজন মোটাসোটা ভদ্রমহিলা বললেন, সবাই চলুন ছবি তুলতে হবে। ব্যাংককে এআইটির লোকের মুখে বাংলা ভাষা ! জানা গেলো শালিনী মিত্র কলকাতার মেয়ে। এআইটতে পড়তে এসে পড়া শেষে কাজ জুটে গেছে। পরে জেনেছি তার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। বরিশালের ছেলে। (সাথে সাথে ভারতীয় চ্যানেলের একটা অনুষ্ঠানের নাম মনে পড়ে গেলো বরিশালের ছেলে আর কলকাতার মেয়েMADe for Each Other )
কিন্তু দু:খের কথা হলো, খুব দ্রুতই তার সাথে আমাদের দলের সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেলো। সেটা প্রধানত শালিনীর উদ্ধত আচরণের জন্য। ওখানে যেহেতু সবসময় ইংরেজীতে কথা বলতে হয় সে কারণে দু'একজন শালিনীর সাথেও ইংরেজীতে কথা বলে ফেলতেন। শালিনী রেগে গিয়ে বলছেন, আপনি জানেন আমি বাঙালী। আমার সাথে ইংরেজী বলছেন কেন। কয়েকজনের সাথে একই ব্যবহার করেছেন। একবার আমার মুখে চলেই এসেছিলো প্রায়, অনেক কষ্টে নিজেকে নিবৃত্ত করেছি। ভাবলাম তাকে বলি, কলকাতায় আপনারা কি করেন ? বাংলা ফেলে হিন্দী বলেন।
তার সাথে মূলত: গোলমাল লেগেছে বাংলাদেশ সম্পর্কে উল্টাপাল্টা কথা বলা নিয়ে। শেষের দিকে শালিনীর সাথে আমাদের আর দেখাই হয়নি।
সুফিয়ান বেশ হাসিখুশী আর মৃদুভাষী ছেলে। হাসি মুখে প্রচণ্ড পরিশ্রম করেন। সিম কার্ড ছাড়াও ডলার ভাঙানো, থাই বাথের বদলে ডলার কেনা এসব কাজগুলো সুফিয়ান করেছেন দারুন দক্ষতায়। আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করেছি, ব্যস্ততার মধ্যেও ঠিকই হোটেলের কোন ফাঁকা জায়গায় কাঁধের ব্যাগ থেকে জায়নামাজ বের করে নামাজ পড়ে নিচ্ছেন।
সুফিয়ানের ইংরেজীও অন্যসবার মতোই। তবে আমাদের ইশরাটা অন্যদের চেয়ে তিনি ভালো বুঝতেন। তাই যার যা সমস্য তার সমাধানে সবার প্রথম পছন্দ ছিলেন সুফিয়ান।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১২ রাত ৮:০৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





