মাইকেল
আগের পর্ব-
Click This Link
যাদের সাথে দিন কেটেছে
আমাদের দিনগুলো যাদের সাথে কেটেছে, যারা পুরো কোর্সটি চালিয়েছেন এবার তাদের কথা বলি। মূল মানুষটি ছিলেন মাইকেল ই. লো। জার্মান মা আর বৃটিশ বাবার সন্তান। যুক্তরাজ্য থেকে রাজনীতি ও অর্থনীতিতে প্রথম স্নাতক ডিগ্রী নেন। এরপর বয়স্ক শিক্ষার ওপর নেন দ্বিতীয় ডিগ্রী। এরপর প্রোডাক্টিভিটি ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে জাপান থেকে নেন তৃতীয় ডিগ্রী। ১৯৬৯ থেকে ৭৬ পর্যন্ত নিজ দেশে শিক্ষকতা করেছেন এরপর ১৯৮২ পর্যন্ত ছিলেন ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনার। ৮২ থেকে ৮৯ পর্যন্ত কাজ করেছেন সিঙ্গাপুরে আসিয়ানের একটি সংস্থায়। ১৯৮৯ থেকে ৯১ পর্যন্ত কাজ করেছেন মার্কিন ম্যানেজমেন্ট তাত্ত্বিক ফিলিপ ক্রসবির সাথে। ক্রসবি প্রসঙ্গে যতোবার বলেছেন ততোবারই ''গুরু'' সম্বোধন করেছেন। এরপর বছর দুয়েক লন্ডনে রিপা নামের একটি সংস্থায় কাজ করার পর ১৯৯৩ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত নেপালে কাজ করেছেন ডিএফআইডি'র হয়ে। এখানেই ছিলেন সবচেয়ে বেশী দিন। ২০০৪ সাল থেকে ফ্রিলান্স ম্যানেজমেনট কনসালট্যান্ট হিসাবে কাজ করেছেন কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল, ভারত, থাইল্যাণ্ড,পাকিস্তান, ভূটান, আফগানিস্তান এবং মালদ্বীপে। আমাদের সাথে কাজ করেছেন ওই শর্তেই।
প্রচণ্ড কড়া মানুষ আমাদের প্রতিদিন রাত ১২ টা পর্যন্ত কাজ করিয়ে ছেড়েছেন। কিন্তু আমরা সবাই তার ভক্ত হয়ে গেছি। ব্যবস্থাপনা আর প্রশাসনিক সংস্কার নিয়ে দুর্দান্ত সব আইডিয়া শেয়ার করেছেন ভদ্র লোক। খুবই সুশৃঙ্খল মানুষ। একটা তথ্য দেবার লোভ সামলাতে পারছি না। তিনি জানালেন, প্রতিদিন মেইল চেক করার পরই মুছে ফেলেন মেইল। তার মেইল বক্স ফাঁকা রাখেন তিনি। কিন্ত তার দরকারী সব কিছু সুশৃঙ্খলভাবে রক্ষিত আছে তার ল্যাপটপে। সাঙ্কেতিক শব্দ বানিয়ে সব সেভ করেন। শব্দ ধরে ধরে যে কোন ফাইল খুঁজে বের করতে পারেন এক মিনিটের কম সময়ে।
তিন ছেলেমেয়ে। সবাই নিজ নিজ সংসারে ব্যস্ত। পরিবার সম্পর্কে বলেন, হ্যাপিলী ডিভোর্সড। যখন হাসেন তখন মনে হয় লোকটির ভেতর বাহিরে কোন তফাৎ নেই। যদিও কখনো কখনো পাগলাটে মনে হয় তাকে। তার জিরো ডিফেক্ট থিয়োরী আমাদের বিমোহিত করেছে।
পুরো দলের মধ্যমনি মাইকেল
কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট বলতে বোঝান, কোয়ালিটি বাড়াবার কৌশল। সব কাজই হলো একটি প্রক্রিয়া। তার মতে, কাজ হচ্ছে ''A series of actions that produces a result'' সেটার মূল কথা হলো, কাস্টমারের চাহিদা পূরণ। এখানে তিনটি বিষয় জড়িত-কাস্টমার,চাহিদা আর সরবরাহকারী। চাহিদা আবার পক্ষ বদল করে। এটা প্রথমত কাস্টমারের বিষয়, কাস্টমার আসলে কি চান ? কাস্টমার যদি নতুন বা বাড়তি কিছু চান, তাহলে চাহিদা সরবরাহকারীর দিকে চলে আসে। কাস্টমারের সেই বাড়তি বা নতুন বিষয়ের বিস্তারিত জানা তার চাহিদায় পরিণত হয়।
কোয়ালিটির চারটি মৌলিক বিষয় হলো- সংজ্ঞা (কোয়ালিটি বলতে কি বুঝবো), প্রক্রিয়া( কিভাবে কোয়ালিটি অর্জিত হবে), পারফরমেন্সের মান (কোন মান আমরা বিবেচনায় নেব) আর পরিমাপ (কোয়ালিটি কিভাবে পরিমাপ করবো)।
সাধারণত কোয়ালিটি বলতে চমৎকারিত্ব, কতোটা ভালো, টাকার মূল্যতে তার পরিমান এসব বোঝানো হয়। মাইকেলের মতে, কোয়ালিটি হচ্ছে, Conformance to Requirements অর্থাৎ সোজা বাংলায় কাস্টমারের চাহিদা পূরণ করা। কোয়ালিটি বাড়াবার প্রক্রিয়া হিসাবে মূল্যায়ণ, পরিবীক্ষণ, পরিদর্শন এবস বোঝানো হয়। মাইকেলের মতে, নিয়মিত যোগাযোগ, পরিকল্পনা, পরীক্ষা আর মনিটরিয়ের মাধ্যমে কোয়ালিটির মান কমা প্রতিরোধ করাই হচ্ছে কোয়ালিটি বাড়বার কৌশল।
পারফরমেন্সের মান বলতে সাধারণত বলা হয়, চাহিদার সাথে যতোটা সঙ্গতি রাখা যাবে ততোই ভালো। মাইকেলের মতে সেটা হচ্ছে-
Zero Defects
“Doing it right the first time,
and every time”
কোন ডিফেক্ট থাকতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে মাইকেল বললেন, বিমান পরিবহনের সাথে যুক্ত সবাই এই জিরো ডিফেক্ট তত্ত্বে বিশ্বাসী। বিমানে কোন দুর্ঘটনা হলে তার মূল কারণটা সব সময় বের করা হয়, সে জন্য বিমানে ব্ল্যাক বক্স থাকে যা আগুন পানি সব প্রতিরোধক। কারণ বের করে সেটার পুনরাবৃত্তি রোধ করার চেষ্টা করা হয়। সে কারণেই সকল প্রকার যান বাহনের মধ্যে বিমানই সব চেয়ে নিরাপদ। সড়ক বা নৌ দুর্ঘটনায় প্রতি বছর যত লোক মারা যায় বিমান দুর্ঘটনায় তার চেয়ে অনেক অনেক কম লোক মারা যায়।
কোয়ালিটির পরিমাপ করতে কোন ইনডেক্স বা তুলনার দ্বারস্থ হয় সবাই। মাইকেলের মতে, চাহিদার সাথে অসঙ্গতি দূর করতে যে ব্যয় হবে সেটাই কোয়ালিটির পরিমাপের মান। তার ভাষায়-
''What it costs to do things wrong
Rework
Re-explanations
Waste – Time, Effort, Materials
Dealing with complaints''
খুব স্পষ্ট আর কার্যকর তার এ তত্ত্ব। এটা আসলে মাইকেলের গুরু ফিলিপ ক্রসবির তত্ত্ব।
এটা পড়ানোর পর আমরা জানতে চাইলাম, বিয়েটা কি এ জন্যই টিকলো না ? মাইকেল হেসে বললেন, আমার বউ দরকার জিরো ডেফেক্ট সম্পন্ন।
তার কথায় সারা ঘর হাসিতে ফেটে পড়লো।
(চলবে)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





