গত সপ্তাহে যখন ভূমিকম্প হল তখন আমি বাথরুমে গোসল করছিলাম। হঠাৎ আম্মার চিৎকার শুনে দরজা খুললাম। আম্মা বলল ভূমিকম্প হচ্ছে, দ্রুত ভেজা পোষাক চেন্জ করে নিচে নেমে আয়। আমি বললাম, ঠিক আছে আপনি আর আপু চলে যান আসি আসছি। আমি আর নামলাম নাহ্। কীভাবে ফ্লোর আর আসবাব গুলো কাঁপছে সেটাই বাথরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলাম।
খানিক পরে কম্পন শেষ হলে দরজা বন্ধ করে শাওয়ারটা ছেড়ে দিলাম। ভিজতে ভিজতে একটা চাপা তীব্র আতঙ্ক আমার সর্বাঙ্গ গ্রাস করে ফেলল। ভাবতে লাগলাম আচ্ছা যদি ঐ মুহূর্তেই কুড়ি বছরের ছোট্ট জীবনটার সমাপ্তি ঘটে যেত! তবে কি নিয়ে হাজির হতাম মাওলার দরবারে?
হাসি তামাশাতেই ত বিশটা বসন্ত কাটিয়ে দিলাম। মরণের কথা কভু স্মরণেও আনিনি। শত সহস্র পাপগুলো যখন মনের আঙিনায় ভিড় জমালো তখন অনেক চেষ্টা করেও কোন পুণ্যের কথা স্মরণে আনতে পারলাম নাহ্। মন্দ জেনেও ভুল গুলো বারংবার করে গেছি। মাঝে মাঝে মনের গহীনে একটু আধটু অনুশোচনা বোধের সৃষ্টি হলেও আল্লাহর দরবারে করুণ স্বরে মাফ ত কখনো চাইনি। নিকট অতীতে নামাজে দন্ডায়মান হয়ে আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছি কিনা তাও মনে পড়ছে নাহ্। এমনকি সন্ধ্যার মাগরিবের নামাজটাও অবহেলার কারণে পড়া হয়নি।
তবে কি নিয়ে যাচ্ছি আমি অন্ধকার কবরে? কি জবাবই বা দিবো কাল হাশরের মাঠে? মনের অন্দর থেকে কেবল শুনতে লাগলাম " তুই পাপী, তুই বেনামাজি, তুই জাহান্নামী "। কথাগুলো কানে তীব্রভাবে বিঁধতে লাগল। অচেতন মনে নিজেকে দাঊ দাঊ করে জ্বলা আগুনের মধ্যে আবিষ্কার করলাম। বড় বড় বিছা গুলো আমার সারাটা শরীর জুড়ে বিষাক্ত ছোবল মেরে যাচ্ছে। ভয়ে সমস্তটা শরীর শিহরে উঠল!
খানিক বাদে মুয়াজ্জিনের করুণ সুরের আযানে তন্দ্রা ভাবটা কেটে গেল। মনে পড়তে লাগলো পল্লীকবির কবর কবিতার দুখানা পঙক্তি-
"মজিদ হইতে আযান হাঁকিছে বড় সকরুণ সুর,
মোর জীবনের রোজকেয়ামত ভাবিতেছি কত দূর"