somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“টাইটানিকের ইতিহাস”

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“টাইটানিক” এর সম্পর্কে অনেক দিন ধরেই লেখার ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু সময়ের অভাবে তা হয়ে উঠেনি। আজ দেখি টাইটানিক সম্পর্কে আপনাদের কিছু লেখে দেখাতে পারি কি না। তবে আমার থেকেও অনেক ভালো ভালো লেখক/লেখিকারা লিখেছেন। আমি আর কতটা পারবো লিখতে। তবুও যেটুকু পারি।



“টাইটানিক” ১৯০৯ সালের ৩১ মার্চ সর্বপ্রথম টাইটানিকের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। জাহাজটি ব্রিটিশ শিপিং কোম্পানি “হোয়াইট স্টার লাইন” মালিকানাধীন নির্মাণের দায়িত্ব নেন। এটি তৈরি করা হয় ইউনাইটেড কিংডম-এর বেলফাস্টের হারল্যান্ড ওলফ্ শিপইয়ার্ডে। জন পিয়ারপন্ট মরগান নামক একজন আমেরিকান ধনকুব এবং ইন্টারন্যাশনাল মার্কেন্টাইল মেরিন কোং-এর অর্থায়নে। এবং এই জাহাজটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। এরপর দীর্ঘ চার বছর পর ৩১ মার্চ ১৯১২ সালে টাইটানিককে সমুদ্রের বুকে ছাড়ার সিন্ধান্ত নেওয়া হয়।



টাইটানিক এর নামকরণ করা হয় “টাইটান” থেকে।“টাইটান” হলো গ্রীক পুরানোর সৃষ্ট্রির একজন শক্তিশালী দেবতার নাম। গ্রীকরা বিশ্বাস করতো এই দেবতার কাজ শুধু সৃষ্টি করা। আর সেই দেবতার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় “টাইটান” থেকে “টাইটানিক” যার সংক্ষিপ্ত নাম -(RMS) এবং পূর্ণনাম (ROYEL MAIL SHIP) TITANIC. এবং টাইটানিক এর নম্বরটি হলো ৩৯০৯০৪।

টাইটানিক ডিজাইন করেন- “থমাস এন্ডুর”। তিনি এমন ভাবে ডিজাইন করেছেন যা সকল ধরণের ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মধ্যে দিয়েও সমুদ্রের বুকে চিতিয়ে চলতে পারবে। টাইটানিক নির্মাণ করতে খরজ হয়েছিলো প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন ডলার (এখনকার সময়ের প্রায় ১৬৫ মিলিয়ন ডলার)। এর দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ৮৮২ ফুট দুই ইঞ্চি (প্রায় ২৬৯.১ মিটার) এবং প্রস্থ ছিল প্রায় ৯২ ফিট (২৮ মিটার)। এ জাহাজটির ওজন ছিল প্রায় ৬০ হাজার ৩২৮ লং টন। পানি থেকে জাহাজটির ডেকের উচ্চতা ছিল ৫৯ ফুট (১৮ মিটার)। এতো বড় একটি জাহাজ নির্মাণ করবে সেই সময়ের মানুষ এটা কল্পনাও করতে পারেনি।



জাহাজটি সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫৪৭ জন যাত্রী ও ক্রু বহন করতে পারত। এটি ছিলো ঐযাবৎ কালের সবচেয়ে অদ্ভুতপূর্ব মাপে নির্মিত করা একটি জাহাজ। ফার্স্ট ক্লাস যাত্রীদের জন্য ছিলো বিলাসবহুল ডাইনিংয়ের ব্যবস্থা। যা প্রায় এক সাথে ৫৫০ জন খাবার খেতে বসতে পারতো। এছাড়াও ছিলো এর অভ্যন্তরে সুদৃশ্য সুইমিং পুল, জিমনেসিয়াম, স্কোয়াস খেলার কোট, ব্যয়বহুল তুর্কিস বাথ, ব্যয়বহুল ক্যাফে এবং ফার্স্ট ক্লাস ও সেকেন্ড ক্লাস উভয় যাত্রীদের জন্য আলাদা বিশাল লাইব্রেরি। সেইসময়ই আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটেছিল এই টাইটানিক জাহাজে। বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাও ছিল আরো উন্নত। এ জাহাজের ফার্স্ট ক্লাসের জন্য তিনটি এবং সেকেন্ড ক্লাসের জন্য একটি মোট চারটি লিফটের ব্যবস্থা ছিল। এবং টাইটানিকের একটি বিশাল ব্যয় বহুল প্রধান গেট বা দরজা ছিলো।



জাহাজটির রেসিপ্রোকেটিং ইঞ্জিন সেসময়ের নির্মিত বৃহত্তম ইঞ্জিন ছিলো প্রায় ৪০ ফুট (১২ মি) উঁচু এবং জ্বালানি হিসেবে প্রতিদিন সিলিন্ডারে ৯ ফুট (২.৭ মি) ৬০০ লং টন এবং ৬১০ টন কয়লা ব্যবহৃার করা হতো। চার সিলিন্ডারের দুটি রিসিপ্রোকল ইঞ্জিন, ট্রিপল এক্সপ্যানশান স্টীম ইঞ্জিন এবং তিনটি প্রোপেলার চালানোর জন্য ও একটি লো প্রেসার টারবাইন ছিলো। এবং ২৯টি বয়লার সক্রিয় রাখার জন্য ১৫৯ টি কয়লা পোড়ানো চুলো, যা সর্বোচ্চ ২৩ নট (৪৩কি.মি./ঘণ্টা) গতিতে জাহাজটিকে চালাতে সাহায্য করতো। টাইটানিক এর চারটি বিশাল চিমনির ছিলো তার মধ্যে তিনটি ছিলো সক্রিয় এবং চার নম্বরটি ব্যবহার করা হতো বায়ু চালানোর জন্য যা অনেকেই বলতো এটি সৌদ্যর্য বৃদ্ধির জন্য ছিলো।



এরপর আসলো সেই দিনটি, দিনটি ছিলো ১৯১২ সালে ১০ এপ্রিল মোট ২২২৩ জন যাত্রী নিয়ে ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু করে। এখানে প্রথমশ্রেণী যাত্রীরা ছিলো ৩২৫ জন, দ্বিতীয় শ্রেণী ছিলো ২৮৫, তৃতীয় শ্রেণীর ছিলো ৭১০ জন এবং জাহাজের কর্মী ছিলো ৮৯৯ জন মোট ২২২৩ জন যাত্রী নিয়ে রওয়ানা হয়। এতো গুলো মানুষ শুধু মাত্র সমুদ্রের রোমাঞ্চকর ভ্রমণের উদ্দেশ্যে টাইটানিকের যাত্রী হয়েছে। সে সময় প্রথম শ্রেণীদের জন্য জাহাজের ভাড়া ছিলো ৩১০০ ডলার এবং তৃতীয় শ্রেণীদের ভাড়া ছিলো ৩২ ডলার। কিন্তু ঐসব মানুষেরা তাদের টাকা পয়সাটাকে কিছুই মনে করেনি। তারা মনে করতো এটা কোন বিষয়ই না। তাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিলো তারা টাইটানিকের যাত্রী হয়ে গন্তব্যস্থানে পৌঁছাবে। কারণ সেই সময় বৃটেন থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় যাওয়াটা ছিলো খুবই ভয়ংকর। ছোট-খাটো কোনো জাহাজের করে পাড়ি দিতে হতো
সেই মহাসাগর। এটা ছিলো তখনকার সময় জীবন বাজি রাখার মতো ঘটনা। সামুদ্রিক ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মুখের পরার আশংকা সবসময়ই থাকতো তাদের মধ্যে। টাইটানিক জাহাজটি ছাড়ার পর পুরো বিশ্বটা হইচই এর মধ্যে পরে যায়। তাই ঐ যাত্রীরা চেয়েছিলো তাদের নাম ঐতিহাসিক এই যাত্রায় নিজেদেরকে সাক্ষিক রাখুক, ইতিহাসের পাতায় থাকুন তাদের নাম। জাহাজটি যখন বন্দর থেকে ছেড়ে যাচ্ছে তথন প্রচুর জনসমাবেশ ছিলো। যা কোন রাজনৈকিত সভাও এতো জনসমাবেস হয় না।

জাহাজটি ধিরে ধিরে আটলান্টিকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যাত্রীরা স্থলের চিন্তা ভুলে পার্থিব জীবনের ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে উঠে। নির্ধারিত ছয় দিনের যাত্রাকে সামনে রেখে তারা আগাচ্ছে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে। একদিন, দুইদিন, তিনদিন এরপর চারদিন অর্থাৎ ১৯১২ সালে ১৪ এপ্রিল দুপুর ২:০০ দিকে "Amerika" নামের একটি জাহাজ থেকে রেডিও এর মাধ্যমে টাইটানিককে সংকেত দেয় যে- তাদের যাত্রা পথের সামনে একটি বিশাল আইসবার্গ রয়েছে! তারপর "Mesaba" নামের আরো একটি জাহাজ রেডিও এর মাধ্যমে ঐ একই সর্তকবানী পাঠায়। তখন টাইটানিকের রেডিও এর যোগাযোগ অপারেটরের দায়িত্বে ছিলো জ্যাক পিলিপাস এবং হ্যারন্ড ব্রীড। তাদের কাছে দু’দুবার সর্তকবানী আসার পরও এটাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করলো। তারা ইচ্ছা করে, বিরক্ত হয়ে সর্তকবানীটি টাইটানিক নিয়ন্ত্রণের মূলকেন্দ্রে পাঠায়নি।

টাইটানিক দুর্ঘটনায় পরার মাত্র ৪০ মিনিট আগে "Californian" শীপের রেডিও অপারেটর টাইটানিকের সাথে যোগাযোগ করে আইসবার্গ সম্পর্কে জানাতে চেয়েছিলো। কিন্তু টাইটানিকের রেডিও অপারেটর জ্যাক পিলিপস রাগন্বিত হয়ে বলল আমি কেইপ রেসের সাথে কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। এই বলে লাইনটি কেটে দেয়। আর সাড়া না পেয়ে "Californian" শীপের রেডিও অপারেটরও তার ওয়ার্লেস সেটটি বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরে। তাই অনেকের ধারণা সামান্য কিছু অবেহেলার কারণে জাহাজটি দুর্ঘটনার কবলে পরে। রাত তখন ১১টা ৪৫ মিটিন টাইটানিক সবে মাত্র উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের বুক চিরে আগাচ্ছে। এতোগুলো সংকেত আসার পরও সেটাকে অবেহেলার পাত্র বলে রেখে দিলো। আর সেই অবেহেলার কারণের মৃত্যু হলো ১,৫১৩ জন যাত্রীর।


টাইটানিক এর ক্যাপ্টেন “এডওয়ার্ড জন স্মিথ

তাপমাত্রা তখন ০ (শূন্যে) ডিগ্রির কাছাকাছি, তখন আকাশে চাঁদ ভেসে বেড়াচ্ছে, আকাশ পরিষ্কার তবে চাঁদের আলো দেখা যাচ্ছে না সমুদ্রের বুকে। টাইটানিক বিপদের মুখামুখি তখন জাহাজের ক্যাপ্টেন “এডওয়ার্ড জন স্মিথ” তিনি ১৫ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা সেসময়ের পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইংল্যান্ডের রাজকীয় কমান্ডার নেতৃত্বে টাইটানিক ছেড়ে জান সমুদ্রে পথে। ক্যাপ্টেন যখন তার সামনে বিশাল আইসবার্গটি দেখেন। তখন তিনি জাহাজের গতি সামান্য দক্ষিণ দিকে সরিয়ে নিয়ে যান। আর তখনই টাইটানিকের আরো পথ পর্যবেক্ষণকারীরা একটি বিশাল আইসবার্গ দেখতে পায়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। হঠাৎ করেই টাইটানিকের ফার্স্ট অফিসার মুর্ডক আকস্মিকভাবে বাম দিকে নেওয়ার অর্ডার দেন। তারপর জাহাজটি সর্ম্পূণ উল্টোদিকে চালাতে বা বন্ধ করে দিতে বলেন। টাইটানিককে আর বাঁচাতে পারলো না তারা। টাইটানিকের ডানদিকটি আইসবার্গের সঙ্গে প্রচন্ড ঘর্ষণ খেয়ে চলতে থাকে। তার ফলে টাইটানিকের প্রায় ৯০ মিটার অংশ জুড়ে চিড় দেখা দেয়। আর এই আইসবার্গ হলো সমুদ্রের বুকে ভেসে থাকা বড় বড় বরফের খন্ড। এগুলো সমুদ্রের উপর তাপমাত্রা ০ (শূন্যে) ডিগ্রি হলে জেগে উঠে। তবে এই আইসবার্গগুলো সমুদ্রে মাত্র আট ভাগ হয়ে থাকে তার মধ্যে সাত ভাগই থাকে পানির নিচে আর এক ভাগ ভেসে থাকে পানির উপরে। সেই অর্থে এর বড় অংশটাই চোখে দেখা যায়না।

জাহাজটি সর্বোচ্চ চারটি পানিপূর্ণ কম্পার্টমেন্ট নিয়ে ভেসে চলার শক্তি ছিলো কিন্তু ভগ্যকর্মে পাঁচটি কম্পার্টমেন্টই পানিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো সেইদিন। এছাড়াও ১২টি পানি প্রতিরোধকারী দরজা ছিলো কিন্তু কপালের বিধান তো আর খন্ডনো যায় না। সেই ১২টি দরজাও পানিপূর্ণ হয়ে যায়। কম্পার্টমেন্টগুলো ওজনের কারণে জাহাজটি আস্তে আস্তে সামনের দিকে তলাতে থাকে। তখন ক্যাপ্টেন স্মিথ মূল নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রে এসে পুরো জাহাজটিই বন্ধ করে দেন। টাইটানিক যেখানে ডুবেছিলো সেই স্থানটির নাম ছিলো “গ্রেট ব্যাংকস অব নিউ ফাউন্ডল্যান্ড”



১৫ তারিখ মধ্যরাত্রির অর্থাৎ ১২টার পর লাইফবোটগুলো নামাতে থাকে। আর সব যাত্রীরা নিজ নিজ প্রাণ বাঁচাতে নেমে পরে লাইফবোটে। তবে লাইফবোট ছিলো মাত্র ১৬টি। কথিত আছে টাইটানিক প্রায় ৬৪টি লাইফবোট বহন করতে সক্ষম ছিল, যাতে প্রায় ৪০০০ যাত্রী বহন করতে পারে। কিন্তু টাইটানিক এতো বেশি লাইফবোট নেওয়া দরকার মনে করেনি। সেই কারণে হয়তো ১৬টি বোট তারা নিয়েছেন। আর তাতে মাত্র ১ হাজার ১৭৮ জন যাত্রী বহন করতে পারত। তারপরই টাইটানিক বিভিন্ন দিকে জরুরী বিপদ সংকেত পাঠিয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে যে সিপগুলো সাড়া দিয়েছিল তার অন্যতম হল “মাউন্ট ট্যাম্পল” ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং টাইটানিকের সহোদর অলেম্পিক। তবে সবচেয়ে কাছে যে সিপটি অবস্থিত ছিলো তার নাম "Carpathia" এই জাহাজটি টাইটানিকের প্রায় ৯৩ কি.মি. দূরে ছিল। কিন্তু কথা হলো ”Carpathia” জাহাজ টাইটানিকের কাছে পৌঁছাতে সময় লাগতো আরো প্রায় ৪ ঘণ্টা।

তবে রহস্যজনক একটি ঘটনা টাইটানিকের নিয়ন্ত্রকেন্দ্র থেকে কিছুদূরে একটি জাহাজের আলো দেখা যাচ্ছিলো। আসেলে সেটা কি ছিলো তা আজো কিন্তু রহস্য রহস্যই থেকে গেছে। কেউ কেউ ওটাকে "Californian" বলে আবার কেউ ওটাকে বলে "Sampson"। টাইটানিক ওয়ারলেসর মাধ্যমে যোগাযোগের কোন সাড়া না পেয়ে আবারও “মর্স ল্যাম্প” শেষে জরুরী রকেট ছোড়ার মাধ্যমেও জাহাজটির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় কিন্তু সেখান থেকে কোনো সাড়া দেওয়া হয়নি।



রাত তখন প্রায় ০২:০৫ জাহাজের সম্পূর্ণ মাথাই পানির কাছাকাছি চলে আসে। ০২:১০ এর দিকে প্রপেলারকে দৃশ্যমান করে দিয়ে জাহাজের পেছনের দিক উপরের দিকে উঠতে থাকে। ০২:১৭ এর দিকে জাহাজের সামনের দিকের ডেক পর্যন্ত পানি উঠে যায়। এ মূহুর্তেই শেষ দুটি লাইফবোট টাইটানিক ছেড়ে যায়। জাহাজের পেছনের সাইটটা আরো ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠতে থাকে। এরপর একটা সময় জাহাজের বিদ্যুতিক সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায় অন্ধকার হয়ে যায় চারদিকে। এর কিছুক্ষন পরেই বেশি ওজেনের কারণে টাইটানিকের পেছনের অংশটা সামনের অংশ থেকে ভেঙ্গে যায়। তার ফলে জাহাজের সম্মূখভাগ সম্পূর্ণরুপে পানির নিচে চলে যায়। জাহাজের পেছনের অংশ ধীরে ধীরে খাড়া হতে হতে একেবারে লম্বভাবে খাড়া হয়ে যায়। বায়ুজনিত কারণে এ অংশটি কিছুক্ষণ ভেসে থাকার পর রাত ২:২০ এর দিকে ধীরে ধীরে জাহাজের বাকী অংশটিও সমূদ্রের অতলে হারিয়ে যায়।

এর মধ্যে দুটি লাইফবোট আবার উদ্ধার কাজে ফিরে আসে। তার মধ্যে লাইফবোট-৪ পাঁচজন যাত্রীকে উদ্ধার করে যার মধ্যে দুজন পরবর্তিতে মারা যায়। একঘণ্টার মধ্যে লাইফবোট-১৪ ফিরে আসে আবারও সেটি আরো ৪ জন যাত্রীকে উদ্ধার করে তাদের মধ্যেও একজন পরে মারা যায়। সকাল ৪:১০ এর দিকে “Carpathia” জাহাজটি এসে পৌছায় এবং বেঁচে থাকা যাত্রীদের উদ্ধার করা শুরু করে । সকাল ৮:৩০ মিনিটে জাহাজটি আবারও নিউ ইয়র্কের দিকে রওনা।

অনেকের ধারণা ছিলো টাইটানিকে নাকি কোন অভিশাপ ছিলো। অনেকের মতে কোনদিনও নাকি টাইটানিক ডুববে না। কিন্তু সেটি কি ভাবে ডুবে গেলো সেই রহস্যময় কাহিনীটার কারণ অনুসন্ধান করতে থাকে বিভিন্ন বিজ্ঞানীগণ। ১৯৯৮ সালের ১৯ অক্টোবরে টাইমস জানিয়েছে, এরকমই এক রহস্যময় কাহিনী। তিনি বলেছেন- আমেন বা আমেন রা নামের মিসরীয় এক রাজকুমরীর অভিশপ্ত মমি ছিলো ঐ টাইটানিকে। তাই বলা হয়- সেই মমির অভিশাপেই নাকি টাইটানিক বরফের সাথে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়।


এই সেই মমি।

খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সালের দিকে মারা যায় “প্রিন্সেস অব আমেন রা। তার সমাধি ছিলো ল্যুক্সরে। নীল নদের পাশেই ল্যুক্সরে তার সৎকার করা হয়। উনিশ শতকের নব্বই শতকের শেষ দিকে চার জন ইংরেজকে ওই রাজকুমারীর মৃতদেহসহ একটি মমি কেনার জন্য আহ্বান করে। উৎসাহী ইংরেজদের একজন নয় প্রায় বেশ কয়েকজন নাকি মৃতদেহটি হাজার পাউন্ডের বিনিময় বিক্রেতার কাছ থেকে কিনে নেয়। সেটিকে নিয়ে আসে তাদের হোটেলে। কয়েক ঘণ্টা পর মরুভূমির দিকে হাটতে দেখা যা ক্রেতা সেই মানুষটিকে। কিন্তু সেই মানুষটিকে আর ফিরে পাওয়া যায়নি।

পরের দিন এক ইংরেজ এক মিশরীয় ভৃত্য কর্তৃক গুলিবিদ্ধি হয়। তিনি এমন ভাবে আহত হয় শেষ পর্যন্ত তার হাত কেটে ফেলতে হয়। এরপর আমেন রা তৃতীয় মানুষটির হাতে পরে কিন্তু সেই মানুষটির জমানো সব অর্থ লোপাট হয়ে যায় একেবারে সে নি:স্ব হয়ে যায় পরে। সে রাস্তায় রাস্তায় দিয়াশলাই বিক্রি করে খদ্যা নির্বাহ করতো এই মমির অভিশাপে। এতো ঝামেলার মধ্যেও মমিটি পৌঁছে যায় ইংল্যান্ডে। তবুও তার অভিশপ্ত পর্বটা শেষ হয়নি। ওর সাথে জড়িত প্রত্যেকটি মানুষের ভাগ্যে জুটেছে কোনো না কোনো দূর্ঘটনা বা অপমৃত্যু।

ব্রিটিশ মিউজিয়ামে প্রদর্শনের সময় একজন দর্শনার্থী পরেন চমর দুর্দশায়। সে ছিলো একজন মহিলা ঐ মমিটির মুখচ্ছবি তার গায়ের কাপুর দিয়ে মুছে দিয়েছিলোন কারণ ওটাতে একটু ময়লা পরেছিলো। কিন্তু সেই মহিলার কয়েদিন পরই তার ছেলে হাম রোগে মারা যায়। এরপর মিউজিয়ামের কর্তৃপক্ষ মমিটিকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যখন মমিটি সরানোর জন্য কিছু মানুষ কাজ করতে দেওয়া হলো তাদের মধ্যে একজন কয়েদিনের মধ্যে বিষন অসুস্থ হয়ে পড়ে। এবং ঐ কাজের তত্বাবধায়ককে তার অফিসের ডেস্কের উপর মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এই বিষয়টি যখননি সবার নজরে আসে তখন সংবাদপত্রের ও নজরে আসে। জানা যায় যে এক ফটো-সংবাদিক মমিটির ছবি তুলে ডেভেলপ করে দেখতে পায় রাজকুমারীর বীভৎস চেহারা। এরপর খবর আছে ঐ সংবাদিক নাকি গুলি করে আত্মহত্যা করে।

প্রায় দশ বছর পর্যন্ত ঘটতে থাকে এই ধরণের ঘটনা। এরপর সর্বশেষ মমিটিকে বিক্রি করে একজন সৌখিন সংগ্রাহকের কাছে। বিভিন্ন ধরণের দুর্ভাগ্যজনক বিপদের মুখোমুখি হয়ে মমিটিকে তিনি নির্বাসন দেন, নিজ বাড়ির চিলেকোঠায়। এরপর একজন মার্কিন প্রত্মতত্ববিদ কিনে নেয় মিশরীয় এই রাজকুমারীর মমিটি। আর সেই মার্কিন প্রত্মতত্ববিদই মমিটিকে নিয়ে উঠে পরেন টাইটানিক জাহাজে। তাই অনেকেই মনে করে এই অভিশপ্ত মমির কারণেই নাকি টাইটানিক জাহাজ ডুবেছে। এবং এটাই অনেকের বিশ্বাস।



১৯১২ সালের পর আবারও টাইটানিককে পুনরায় আকিষ্কার করা হয়। কিন্তু তাতে বিজ্ঞানীরা ব্যর্থ হয়। সমু্দ্রেভূ-পৃষ্ঠা হতে প্রায় ১২৪৬৭ ফুট বা ৩৮০০ মিটার নিচে সমাহিত হয়ে আছে বিশ্বের স্বপ্নের টাইটানিক, হয়তো চিরদিনই থাকবে ওখানে। কিন্তু পৃথিবীর মানুষের কাছে আজো টাইটানিক চিরকালই রহস্যের আড়ালে রয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে গবেষণার জন্য এখনো এটা নিয়ে অনুসন্ধান করে যাচ্ছেন। বিজ্ঞানীদের ভাষ্যানুযায়ী বলা হচ্ছে যে- পানি আর বরফের প্রকোপে ডুবে থাকা টাইটানিক ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। তারা মনে করে টাইটানিকের অবস্থা যদি এইভাবে চলতে থাকে তাহলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে টাইটানিক সাগরের বুকে নিশ্চিহৃ হয়ে যাবে।

কিছু তথ্য নেট থেকে নেওয়া। এবং ছবিগুলো সম্পূর্ণই নেট থেকে নেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৫
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য: টিপ

লিখেছেন গিয়াস উদ্দিন লিটন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৫




ক্লাস থ্রীয়ে পড়ার সময় জীবনের প্রথম ক্লাস টু'এর এক রমনিকে টিপ দিয়েছিলাম। সলজ্জ হেসে সেই রমনি আমার টিপ গ্রহণ করলেও পরে তার সখীগণের প্ররোচনায় টিপ দেওয়ার কথা হেড স্যারকে জানিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বৈশাখে ইলিশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৪০



এবার বেশ আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে । বৈশাখ কে সামনে রেখে ইলিশের কথা মনে রাখিনি । একদিক দিয়ে ভাল হয়েছে যে ইলিশকে কিঞ্চিত হলেও ভুলতে পেরেছি । ইলিশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×