সূরা বনী ইসরাঈল ১ম আয়তে- মহিমান্বিত (আল্লাহ তায়ালা) যিনি তাঁর এক বান্ধাকে রাতের বেলায় মাসজিদে হারাম থেকে মাসজিদে আকসায় নিয়ে গেলেন। ২য় আয়তে- যার পারিপার্শ্বিকতাকে আমি (আগেই বরকতপূর্ণ করে রেখেছিলাম,(উদ্দেশ্য ছিলো) আমি যেনো তাকে আমার (দৃশ্য-অদৃশ্য) কিছু নির্দশন দেখাতে পারি; অবশ্যই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বস্রষ্টা।
রাসূল (ছাঃ) এর এর শোকের বছরগুলো একটা দিনও ভুলে থাকতে চাইতেন না। এমন কোন দিন নাই যে তিনি মাতা খাদিজা (রাঃ) এর কথা স্মরণ না করতেন। তিনি চাচা আবু তালিবে না থাকাটাকে বিষন অনুভব করতেন। তার মনে বারবার সেই স্মৃতিটা সব সময় আঘাত করে বেড়াতো তায়েফ বাসীদের পাথর নিক্ষেপ্ত করাটা। তবে আল্লহ তায়ালা আমাদের তো আশাস্ব দিয়েছেন- (ইন্নামা আল-ওছরি, ইসরো) “নিশ্চয় কষ্টের পর রয়েছে সহযোতা” রাসুল (ছাঃ) এর এমন কল্পিত পরিক্ষার পর আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় হাবিবকে এমন একটি উপহর দিয়েছেন যা পৃথিবীর আর কোন বান্দাকে দেননি।
সময়টা ছিলো গভির রাত- রাসূল (ছাঃ) তিনি হাতীমে কা’বা বা হাজরে আসওয়াদ বা কৃষ্ণপাথরের নিকটে কোন এক স্থানে শয়নাবস্থায় ছিলেন। এমতাবস্থায় হযরত জিবরাঈল (আঃ) এসে তাঁর বক্ষ বিদীর্ণ করেন এবং ঈমানে পরিপূর্ণ একখানা স্বর্ণের পাত্রে জমজম কুপের পানি দ্বারা ধৌত করে পূর্ববৎ ঠিক করে দিলেন। কোন কোন রেওয়াতে এসেছে তা ইমান দিয়ে ধৌত করা হয়েছে। এমন একটি ঘটনা রাসূল (ছাঃ) এর জীবনে আরো একবার ঘটেছে। তখন তিনি শিশু ছিলেন, দুধমাতা হালিমার ঘরে। অনেক ওয়ালামাদের মতে রাসূল (ছাঃ) এর হিৃদপৃন্ড জমজম পানি বা ইমান দিয়ে ধৌত করার কারণ- তার মনটাকে শক্ত বানানোর জন্য। কারন তিনি এমন সব জিনিস দেখতে যাচ্ছেন যার ক্ষুদ্র একটি অংশ একজন সাধারণ মানুষ দেখলে তার মানসিক ভারসম্য হারিয়ে ফেলবেন!
অতঃপর জিবরাঈল (আঃ) তার নিকট একটি পশু নিয়ে আসলেন। যা গর্ধবের চেয়ে বড় কিন্তু খচ্চরের চেয়ে ছোট; একটি উজ্জ্বল শ্বেত বর্ণের সওয়ারী যার নাম বলা হচ্ছে “আল বোরাক”। এটি সওয়ারী হিসেবে উপস্থিত হল। বোরাক রাসূল (ছাঃ)) কে নিয়ে চলতে লাগলো। সাথে জিবারাঈল (আঃ) এবং কোন কোন রেওয়াতে এসেছে তাদের সাথে মিকাইল (আঃ) ও ছিলেন। বোরাক কত দূরত্ব যাচ্ছে! রাসূল (ছাঃ) বর্ণনা করছেন যার গতিবেগ ছিল দৃষ্টি সীমা রেখার বাইরে। তার মানি বর্তমান আধুনিক প্রযু্ক্তিকেও হার মানিয়েছে। তবে বোরাককে নিয়ে অনেক মতোবিরোধি রয়েছে- কেউ কেউ মনে করতো বোরাক উড়তে পারতো। রাসূল (ছাঃ) কে নিয়ে বোরাক উড়ে মেরাজে পৌছেন। আসলে এই ঘটনাটা সত্যি না, বোরকা উড়তে পারতো না। এই যাত্রা সে দৌড়িয়েই মাসজিদে হারাম থেকে মাসজিদে আকসাতে গেছে। সেই অনুযায়ী বোরাক কখনো উড়তে পারতো না। কিন্তু বাস্তবে সেটা ছিলো একটি পশু যা আমরা কখনোই দেখিনি।
রাসূল (ছাঃ) বললেন- যাত্রা পথে এক বৃদ্ধার সাথে আমার দেখা হয়। আর একটি বস্তু আমাকে ঝুঁকে ডাকছিল এবং একটি জীব আমাকে সালাম দিল। যাত্রা পথে আমাকে তিন জায়গায় নামাজ পড়ানো হয়েছে যার ১ম স্থান ছিলো মদীনায় আমাকে বলা হয়েছে এটি আপনার হিজরতগাহ বা প্রবাস স্থান। ২য় সীনাই পর্বতে এই জায়গাটিকে বলা হয়েছে এখানে হযরত মূসা (আঃ) ও আল্লাহর কথাপোকথনের স্থান; এবং ৩য় বাইতুল মুকাদ্দাসে, বলা হয় এখানে হযরত ঈসা (আঃ) ভূমিষ্ট হয়েছিলেন। এর পর বাইতুল মুকাদ্দাসের পাথরের ছিদ্রের সাথে আমার বোরাক কে বাঁধা হয়, যেখানে সকল নবীদের সওয়ারী বাঁধা হতো।
তারপর আযান দেওয়া হলো; আর জিবরাঈল (আঃ) নীব করীম (ছাঃ) কে ইমাম বানালেন। এবং পৃথিবীতে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত নবীদের রাসূল (ছাঃ) এর পেছনে নামায পড়লেন। রাসূল (ছাঃ) হযরত মুসা (আঃ) কে দেখতে পান তিনি তার বর্ণনা বললেন- তাকে দেখতে শানুয়াহ্ গোত্রের মানুষদের মতো। তিনি ছিলেন লম্বা ও চওড়া গঠনের মানুষ। এরপর তিনি দেখলেন হযরত ঈশা (আঃ) কে তিনি দেখতে ছিলেন কর্কশিয়া বর্ণের এবং তার চুল ছিলো কিছুটা ভিজা তিনি গঠনে ছিলেন মুসা (আঃ) এর থেকে একটু খাটো। এবং তিনি সেখানে ইব্রাহিম (আঃ) কে দেখলেন তিনি বললেন হযরত ইব্রাহিম (আঃ) দেখতে একেবারেই তার চেহেরার মতো।
এরপর জিবরাঈল (আঃ) রাসূল (ছাঃ) এর নিকট দুটি পাত্র তুলে ধরলেন। তার একটির মধ্যে দুধ অন্যটির মধ্যে মদ। এখানে বলে রাখা ভালো যে- তখনও কিন্তু মদ হারাম করা হয়নি। জিবরাঈল (আঃ) বললেন বেছে নেও তোমার জন্য এবং তোমার উম্মতদের জন্য। রাসুল (ছাঃ) বেছে নিলেন দুধের বাটিটি। তখন জিবরাঈল (আঃ) বললেন তোমার জন্য এবং তোমার উম্মতদের জন্য শেষ্ঠ জিনিসটিই বেছে নিয়েছো। এ যাত্রা প্রথম অংশ শেষ করেছেন তিনি।
তারপর দ্বিতীয় যাত্রা শুরু করেন যার নাম মেরাজ। রাসূল (ছাঃ) বললেন- আমার জন্য আকাশটি উন্মুক্ত হয়ে গেলো। জিবারাঈল (আঃ) এর সাথে ভ্রমণ করতে লাগলেন আকাশ পানে। আমাদের এই মহাবিশ্বে যা কিছু আছে সেগুলো হলো আমাদের নিকটতম আকাশটিতে। কোরআনের সুরা মুলক এর ৫ম আয়াতে আছে- “আমি নিকটতম আকাশটিকে প্রদীপসমূহ দ্বারা সুসজ্জিত করেছি। আল্লাহ তায়ালা তার এই প্রকান্ড জগতের সব কিছুই প্রথম আসমানে সাজিয়ে দিয়েছেন- অগনিত গ্রহ, উপগ্রহ এবং নক্ষত্র দিয়ে। এরপর তিনি জিবরাঈল (আঃ) এর সাথে দ্বিতীয় আসমানের দ্বারপ্রান্তে চলে যান। এই আসমান কতটা প্রকান্ড তা আমাদের কল্পনার বাহিরে। তবে আমরা জানি আমরা কখনোই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় থেকে বাকি আসমানগুলোতে যেতে পারবো না।
নতুন এই জগতে তিনি পৌছিয়ে দেখতে পেলেন লম্বা মতো একজন তার জন্য অপেক্ষা করছেন। জিবরাঈল (আঃ) তাকে দেখিয়ে বললেন- উনি তোমার পিতা আদম (আঃ), ওনাকে সালাম দেও। তিনি তাকে সালাম দিলে। আদম (আঃ) সালামের উত্তর দিয়ে বললেন- “মারহাবা হে পবিত্র সন্তান, হে পবিত্র নবী”। এরপর তিনি ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ এবং ৭ম আকাশে চলে যান। কিন্তু প্রতিটি আসমানের দরজা খোলার সময় জিবরাঈল (আঃ) কে জিজ্ঞেসা করা হতো “তোমার সঙ্গে কেউ এসেছেন”? সেই উত্তরে বলা হতো- আমার সঙ্গী হযরত মুহাম্মদ (ছাঃ)।
আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি আসমানে একজন করে নবী প্রেরণ করেছেন রাসূল (ছাঃ) কে সংবর্ধন জানানোর জন্য। এরপর দেখা হয় হযরত ইয়াহিয়া (আঃ),হযরত মুসা(আঃ), হযরত ঈশা (আঃ),হযরত ইদ্রিস (আঃ), হযরত হারুন (আঃ) এবং হযরত ইয়াসুফ (আঃ) যাকে দেখে রাসূল (ছাঃ) বললেন- আমাকে যেনে তার অর্ধেকের এক অংশ সৌদ্যর্য্য দিয়েছেন। অবশেষে ৭ম আকাশে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে দেখলেন, তিনি বাইতুল মামূরের সঙ্গে হেলান দিয়ে আছেন। তিনি তাকেও সালাম দিলেন। তিনিও আদম (আঃ) এর মতো সালামের উত্তর দিয়ে বললেন- “মারহাবা হে পবিত্র সন্তান, হে পবিত্র নবী”। রাসূল (ছঃ) আরো বললেন- আমি বাইতুল মামূরে নামাজ আদায় করেছি; এটি সেই পবিত্র স্থান যেখানে দৈনিক সত্তর হাজার ফেরেশতা তওয়াফ করেন যারা পুনরায় তওয়াফ করার সুযোগ আর পান না।
এই লেখাগুলো পুরোটা সূরা বনী ইসরাঈলের ১ম এবং ২য় আয়াতের শানেনুযূল।
অপেক্ষা করুন দ্বিতীয় পর্বে জন্য; ভালো থাকবেন সবাই। এই পর্বে কোন স্থানে ভুলে হলে বুঝিয়ে বলবেন। কারণ মানুষ মাত্রই ভুলে করে। আমার চেয়েও আপনারা আরো বলতে পারবেন হয়তো।
-ছবিগুলো নেট থেকে নেওয়া-
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:২০