২০২০!!! তোমাকে আমাদের জীবনে স্বাগতম। আসলে স্বাগতম জানালেই বা কি আর না জানালেই বা কি। তোমরা সবাই একই পানির মাছ। তুমি এখনো আমাদের কাছে সম্পূর্ন অপরিচতি, তোমাকে আমরা এখনো চিনি না, জানি না। যেমনটা ২০১৯ কেও চিনিনি, তারপরও তাকে খুব আপন করে নিয়েছিলাম। কিন্তু দেখো এই একটি বছর সে আমাদের কত, কত কি উপহার দিয়েছেন। যা বলে শেষ করতে পারবো না। জানো তো, মানুষ জীবনে অনেক কিছু হারায় আবার ফিরে পায়, কিন্তু আমরা এতো কিছু হারিয়েছি যা শত, হাজার যুগ চলে গেলেও তা আমরা ফিরে পাবো না। ২০১৮ সালের শেষ রাতটুক বিদায় দিয়ে চেয়েছিলাম সুন্দর একটি উপহার। আর সে উপহারটি ছিল সুন্দর একটি সকাল, সুন্দর একটি সুর্য, সুন্দর একটি দিন আর সুন্দর একটি চাঁদ। কিন্তু জানো সেই বিদায়ের রাতে কি ঘটেছিলো?
সেই ৩১-১২-২০১৮ সালে!!!! এই রাতে এক মর্মতান্তিক ঘটনা ঘটে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে এই ভিকটিম ছিল ৪ সন্তানের জননী পারুল বেগম। ৩১-১২-২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট ছিল সারাদিন। পারুল বেগম ধানের শীষে ভোট দেয়ায় আওয়ামী লীগ নেতারা গণধর্ষণ করে সেই বিদায়ের রাতে পারুল বেগমনকে। আর সেই কুত্তার দল ছিল ৯ জন। কিন্তু পারুল বেগম সেই অবিচারের কোন সত্যিকার বিচার পায়নি আজও ১৩-১২-২০১৯ সালে। সেইদিন দেশে নতুন সূর্য দেখে আনন্দে মনটা সূর্যের মতো চকচক করেছিল। কিন্তু যখন মনে একরাশ আশা নিয়ে কম্পিউটার ওপেন করলাম ভালো কিছু দেখার অপেক্ষায়। কিন্তু জানো, সেই আনন্দ এক সেকেন্ডেই ভেঙ্গেচুরে খানখান করে দিলো, পারুল বেগমের ঘটনায়। সেই দিন থেকেই এই একটি বছর নারী, মেয়ে শিশু, ছেলে শিশু, গৃহবধু, গৃহকর্মী প্রত্যেক দিন, প্রতিটি দিন টিভি চ্যানেলে, পেপার-পত্রিকায়, সামাজিক মিয়িডিয়াতে গুনতে হলো নির্যাতনে শিকারের সংখ্যা।
২০২০ তুমি জানো? বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের হিসাবে বাংলাদেশে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৯৬৯টি শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে। ফেনীর সোনাগাজীতে নুসরাত রাফি। নুসরাত রাফিকে ওরা নির্মম ভাবে হত্যা করেছে সেটা দেশ-বিদেশ সবাই জানে। ওয়ারীর ছোট্ট সায়মার কথা মনে আছে? ৭ বছরের সামিয়া আক্তার সায়মাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিল। বাসে ইবনে সিনা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স (সেবিকা) শাহীনূর আক্তার তানিয়াকে গণধর্ষণ শেষে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে ধর্ষকরা মেয়েটাকে মাথা থেঁতলে মারে। এই ২০১৯ সালটিতে স্বস্তি পায়নি কোন নারী, শিশু। চলতি গাড়িতে, চলতি পথে, ঘরের ভেতর, শিক্ষাঙ্গন, কর্মস্থল, প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীরা ওদের কালো, মন্দ ঘৃণিত, পাপি হাত থেকে রক্ষা পায়নি। এখনো থামেনি ধর্ষণ, বাল্যবিবাহ, নির্যাতন, যৌতুকের অভিশাপ রক্ষা পায়নি মেয়েরা।
ফিটনেস বিহীন গাড়ি, অবৈধ মালিক, অশিক্ষিত ড্রাইভার-হেলপার, এদের কারণে জীবন হারাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। নির্মম ভাবে প্রাণ দিতে হয়েছে বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে। আবরারকে হত্যা শেষে মাদক দিয়ে ‘গণপিটুনির নাটক’ সাজাতে চেয়েছিল ছাত্রলীগরা। আবরার ফাহাদের মতো শত শত মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে সরকার দলের নেতাদের হাতে। সেই ২০১৯ কে আমরা কি করে এতো তারাতারি ভুলে যাই বলো? শত শত মানুষ অন্যায় ছাড়া জেলে পচে মরছে, শত শত মানুষকে মুখ বুঝে সহ্য করতে হচ্ছে অন্যায়, অবিচার, শত শত মানুষ সরকার দলের নেতাদের হাতে মর খেয়ে পঙ্গু হয়ে আছে, শত শত মানুষ আজ অন্যায় দেখে মুখ বুঝে আছে, সেই ২০১৯ কে আমরা কি করে ভুলে যাই বলো?
শুধু কি তাই ২০২০!! ২০১৯ যে কত কেলেঙ্কারি ঘটিয়েছে তা বলে কি শেষ করা যায়। অর্থ কেলেঙ্কারি, কালো টাকার বাজার, অবৈধ অসাধু ব্যবসা, খাদ্য ভেজাল, চিকিৎসা দুর্নীতি, চিকিৎসা নিয়ে নাটকবাজি, শিক্ষা নিয়ে নাটকবাজি, শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা, শিক্ষা নিয়ে দুর্নীতি দুর্নীতি খেলা, কোটি কোটি টাকা এক শ্রেনীর হতে বন্দি হয়ে আছে। বাংলাদেশে তাঁরা অবৈধ ক্যাসিনো খুলে বসেছে। ক্যাসিনো অবৈধ অর্থ বাড়ির ভল্টে রাখে আ’লীগ নেতা। যখন ভল্টে টাকার জায়গা হতো না, তখন তা দিয়ে স্বর্ণ কিনে রাখতো ওরা। কি করো ভুলবো বলো ২০১৯ কে? অবৈধ গ্যাস, অসাবধানতার কারণে ঢাকার চকবাজারে যেভাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে সেটাকে কি করে আমরা ভুলে যাই বলো।
কি করে তোমাকেই বা বিশ্বাস করবো বলো। এই যে তোমাকে নিয়ে এতো আনন্দ, হইহুল্লা, ফানুস, আতশবাজি, বেলুন আলোতে আলোতে ছেয়ে দিয়েছে পুরো বাংলাদেশটা। তুমি বা কি করে ২০১৯ এর মতো হবে না, তা কি গেরান্টি আছে বলো? ঠিক তোমার মতোই ২০১৯ কে স্বাগত জানিয়েছিলাম। কিন্তু কি লাভ হলো তাতে, সবই তো অন্ধকারে ঢেকে দিয়ে গেছে। কারো কারো জীবন এমন অন্ধকারে ফেলে দিয়ে গেছে যে তার আর আলোর দেখাই পাবে না। কারো কারো মা-বাবা, ভাই-বোনের কলিজাটাও ছিড়ে নিয়ে গেছে, কারো কারো দুনিয়াটা কে মিথ্যে দুনিয়া বানিয়ে দিয়ে গেছে, কারো কারো হাসিটাকে কান্না বানিয়ে রেখে গেছে, কারো কারো মুখের বুলি কেরে নিয়ে গেছে যা আর কখনো ফিরে পাবেনা। ২০২০ তুমি কি বার্তা নিয়ে এসেছো আমাদের মাজে? কি মঙ্গল নিয়ে এসেছো আমাদের জন্য? আমরা তো সব হারিয়েছি আর কি হারাবো বলতে পারো তুমি, আর কি বা নেওয়া আছে তোমার এদেশের মাটি থেকে, এদেশের মায়েদের কাছ থেকে।
২০২০ ফিরে যাও তুমি!!! আর যদি তুমি থাকতে চাও তাহলে আমাদের সাধারণ মানুষদের জীবনটাকে আগলে রেখো। বাঁচতে দিও আমাদের সাধারণ মানুষদের, এইটুক তোমার কাছে মিনতি, আর বেশি কিছু চাই না। আমরা সাধারণ মানুষেরা অনেক কিছু হারিয়ে ফেলি যা আর কখনোই ফিরে পাবোনা। আমরা আর হারাতে চাই না, আর না।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৪০