আজ দুবর্ৃত্তের হাতে নিহত সাংবাদিক গৌতম দাসের প্রথম মৃতু্যবার্ষিকী। 2005 সালের 17 নভেম্ব্বর সত্য প্রকাশের দায়ে সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন তিনি। মাত্র 35 বছর বয়সে সময়ের সাহসী সন্তান গৌতম দৈনিক সমকালের ফরিদপুর বু্যরো প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একের পর এক বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ ও তাদের গডফাদারদের মুখোশ উন্মোচন করে সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় তাদের চশুলে পরিণত হন গৌতম দাস। চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা সংঘবদ্ধভাবে পাশবিক নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের এক বছর পুর্তির এ দিনটি ফরিদপুরসহ সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। বাংলা 1337 সনের 20 বৈশাখ (1970 খ্রিস্ট্রাব্দ) ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার চণ্ডিদাসী গ্রামে গৌতম দাস জন্মগ্রহণ করেন। 1988 সালে তিনি ভাঙ্গা পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। গৌতম ভাঙ্গা কেএম কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ছাত্রাবস্থাতেই কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। 1993 সালে দৈনিক ভোরের কাগজের ভাঙ্গা উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন তিনি। সাংবাদিকতার সুত্র ধরে ফরিদপুর শহরে তার পদচারণা ঘটে। 1998 সালের নভেম্ব্বরে দৈনিক প্রথম আলোর ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। বয়সের নিরিখে অপোকৃত তরুণ হয়েও মেধা ও নিষ্ঠায় একাগ্র গৌতম দাস ফরিদপুরের খ্যাতিমান সংবাদকর্মী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি 2005 সালের আগস্টে দৈনিক সমকালের ফরিদপুর বু্যরো প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। 2002 সালে 27 ডিসেম্ব্বর ফরিদপুর শহরের বিনয় চৌধুরীর একমাত্র কন্যা দীপালী চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন গৌতম দাস। 2005 সালের 17 নভেম্ব্বর সকালে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা শহরের সমকাল কার্যালয়ে তাকে নির্মমভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ওই দিনই সমকাল পত্রিকার প থেকে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি এখন দ্রুতবিচার আদালতে বিচারাধীন। মামলার আইও 19 জানুয়ারি 2006 সালে প্রণীত চার্জশিটের তদন্ত মন্তব্যে বলেন, 'ফরিদপুর জেলায় দৈনিক সমকাল পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে নিহত গৌতম দাসই একমাত্র ব্যক্তি যিনি বহু পূর্ব হইতে এই মামলার পলাতক আসামী বুলু-মুরাদ বাহিনীর গাড়ী চুরির তথ্য, অবৈধ অস্ত্র ভাণ্ডারের তথ্য, বিভিন্ন অপরাপর খুনের তথ্যসহ ইদানীংকালের সর্বশেষ পর্যায়ে মুজিব সড়কের সংস্কার কার্যে অনিয়ম, দুর্নীতি, গাফিলতি ও অবহেলার সংবাদ ফাঁস করিয়া তাহাদের (পলাতক ও গ্রেফতারকৃত জড়িত আসামীদের) মুখোশ উন্মোচন করাতে ও ঠিকাদারী কাজে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে জবাবদিহিতার মুখে ফেলিলে আসামী ইমরান, বুলু, মুরাদের নেতৃত্বে এবং সক্রিয় অংশগ্রহণে অপরাপর আসামীগণ সাংবাদিক গৌতম দাসকে সুপরিকল্পিতভাবে সংঘবদ্ধাকারে হিংসাবশতঃ হিংস্রতার সহিত খুন করে এবং চিরতরে তাহার লেখনী শক্তি বন্ধ করে এই ফরিদপুর জেলায় আসামীদের অপকর্মের দ্বার উন্মুক্ত করিয়াছে মর্মে প্রকাশ পায়।' সাংবাদিক গৌতম দাস হত্যাকা-ে অভিযুক্তরা হলো আসিফ ইমরান, সিদ্দিক মিয়া, আসাদ বিন কাদির, রাজীব হাসান মনা, এপোলো বিশ্বাস, তামজিদ হোসেন বাবু, আসিফ ইমতিয়াজ বুলু, কাজী মুরাদ ও কামরুল ইসলাম আপন। প্রথমোক্ত 6 জন বর্তমানে জামিনে এবং শেষোক্ত 3 জন পলাতক। মামলার অপর আসামি জাহিদ খান 12 অক্টোবর ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
গৌতম দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে পর উত্তাল হয়ে উঠেছিল গোটা ফরিদপুর। প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল সারাদেশে। দেশের বাইরেও মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকরা ঘটনার নিন্দা জানিয়ে কলম ধরেছিলেন। ঘটনার পর বসা জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে সাংবাদিক গৌতমসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হত্যাকাণ্ডে বিষয়ে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। বিুব্ধ সাংবাদিক সমাজের ব্যানারে ফরিদপুরে সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘট, অনশন, মানববন্ধন ফরিদপুরসহ বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করা হয়। গত 4 সেপ্টেম্ব্বর মামলার বিচারকার্যের ওপর 3 মাসের স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়, যা এখন পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে। বাদীপ েমামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী স্পেশাল পিপি আবদুল লতিফ তালুকদার জানান, 'রাষ্ট্রপ আবেদন করে 18 অক্টোবর পর্যন্ত স্টে-অর্ডার ভ্যাকেট করলেও এর মধ্যে বিচারকার্য এগোয়নি। সমকালের তরফ থেকে রোববার (19 নভেম্ব্বর) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলার কার্যক্রম পুনরায় শুরুর আবেদন জানানো হবে।'
কিন্তু এভাবে কি শুধু সাংবাদিক হত্যার বিচার চেয়ে রাস্তায় মিছিল-মিটিং, আন্দোলন করেই শেষ। আমরা চাই গৌতম দাস হত্যার পাশাপাশি সারাবিশ্বের সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার হোক। সকল অপরাধী আসুক আইনের আওতায়।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০