somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কানাডা দিলাম পাড়ি - ছবিব্লগ - ১

২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি ভ্রমন জাতীয় একটা সিরিজ লেখছিলাম। সিরিজটির নাম "আমার বিদেশ ভ্রমন" - ক্রমানুসারে এক এক করে লিখব ভেবেই শুরু করেছিলাম। কিন্তু এখন হঠাৎ করেই কানাডা চলে আসতে হলো। তো এখন ভাবছি, কানাডা নিয়েই কিছু লিখি। তাছাড়া মাত্র কিছুদিন আগে এসেছি বলে, সবকিছু এখনও স্মৃতিতে স্পষ্ট আছে। কিছুদিন পর লিখতে বসলে দেখব অনেক কিছুই মনে পড়ছে না।

এই সিরিজে আমি চেষ্টা করব, কানাডা সম্পর্কে কিছু বলার। সিরিজটি ছবি ও তার সাথে একান্তই নিজস্ব ভাবনার উপরই লেখা হবে। আমি একেবারেই নতুন এই দেশে। তাই পড়ার সময় এই ব্যাপারটা মনে রাখতে হবে। :)

*************************************************

ইমিগ্রেশন ভিসার জন্য এ্যাপ্লাই করার পর, দিন-মাস সব চলে গেল কিন্তু কোন খবর নাই। ব্যাটারা ভিসা দিবে নাকি দিবে না, সেটাও বুঝতে পারছিলাম না। এর মাঝে হঠাৎ তাদের একটা ম্যাসেজ পেলাম "জরুরী ভিত্তিতে পাসপোর্ট পাঠাও, ভিসা তৈরি। আর দেরি করা সম্ভব নয়"। আমি তো ভাবলাম 'আরে বাহ!' - কিন্তু কিসের কি! পাসপোর্ট পাঠানোর পর আবার সেই আগের কাহিনী। কোন খবর নাই। শেষেতো মনে হলো - কিসের কি ভিসা দিবে না, নিশ্চয়ই কোন গোলমাল লেগেছে, মাঝখান দিয়ে আমার পাসপোর্টটা হাওয়া হয়ে গেছে।

প্রায় ২ মাস পর ফেরত পেলাম পাসপোর্ট। কানাডার সব কাগজপত্র এখন ভিএফএস করে থাকে। তাদের অফিস গুলশান-২ গোলচক্করের ডেলটা বিল্ডিং-এ (অনেক উচু বিল্ডিং, উপরে ডেলটা লেখা আছে)। ভিএফএসে গিয়ে নিজের নাম বললাম (পাসপোর্ট ফেরত আসলে ওরা আপনার মোবাইলে এসএমএস করে জানায়)। একটু পরেই ভিএফএস এজেন্ট আমার হলুদ খামটি দিল - কিছুটা ভয় লাগছিল, না জানি ভিতরে কি আছে। খুুলে দেখলাম ভিসা পেয়েছি - ১ বছরের মাঝে কানাডাতে ঢুকতে হবে, আর একবার ঢুকে যাবার ২ মাসের মাঝেই পিআর কার্ড পাব (এটাকে আমেরিকাতে গ্রীন কার্ডও বলা হয়)।

সত্যি কথা বলতে কি, অনেক দিন ধরে আশা করতে করতে কবে যে আশাটা মরে গিয়ে, সেখানে একটা শুন্যস্থান তৈরি হয়েছে - বুঝতে পারিনি। প্রায় ৪ বছর চেষ্টার পর, আমার হাতে সেই কানাডা যাবার ভিসা - তাও আবার যেন তেন নয়, একদম পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি ভিসা। পাসপোর্ট হাতে নিয়ে তাই খুব একটা উল্লাস বোধ করি নি, খুশি হয়েছি, কিন্তু অনেকটাই সাদামাটা। হয়ত ভ্রুর সাথে সাথে চেহারাটাও একটু কুচকে ছিল।

অগাস্ট ২০১৪র এক ভোরে রওনা দিলাম কানাডার উদ্দেশ্যে।

ইমিগ্রেশন এসে দাড়ালাম। অফিসার আমাকে ছোটখাট কিছু প্রশ্ন করলেন:

"কোথায় যাচ্ছেন?"
"কানাডা"।
"পড়তে?"
"না, পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি"।

এটা শোনার পর, মনে হলো, তার কাজ করার গতি আরো অনেক ধীর হয়ে গেল। হয়ত আমার বোঝা ভুল। তিনি চশমা খুলে মুছতে থাকলেন, পাশের বুথে থাকা অফিসারের সাথে একটা-দুটা কথা বললেন। পাশের অফিসারও বলল "ভাই বসে থাকতে থাকতে কোমর ব্যাথা হয়ে গেছে"। আবার প্রশ্ন:

"চোখ জ্বালা করে বুঝলেন, সেই রাত ১০টার সময় ডিউটি শুরু, এখন কয়টা বাজে?"
"ভোর ৫টা"
"ভোর ৫টা, তাহলে বুঝতে পারেন ৭ ঘন্টা এই মনিটরের সামনে বসা"
"সেই জন্যই মনে হয় সব অফিসারের চোখে চশমা"

বুঝলাম না উনি আমার শেষের কথা মাইন্ড করলেন কিনা, আমার পাসপোর্ট টা পাশের অফিসারের হাতে দিলেন পরীক্ষা করার জন্য। ঐ অফিসার পাসপোর্ট টি স্ক্যান মেশিনে রাখতেই মনিটরে ভিসাটা উঠে আসল (উনার মনিটর টা আমার দিকে ঘোরানো থাকায় সব দেখতে পারছিলাম)। উনি ২/৩ টি বিভিন্ন বোতাম টিপতেই মনিটরের পর্দায় ভিসাটির রং বদলাতে লাগল - একবার সাদাকালো, একবার একবারেই কালো হয়ে গেল কিন্তু ভিসার নিচে থাকা লাল/নীল/বেগুনী রংগুলো স্পষ্ট ফুটে উঠল, যেন কোন শিল্পীর কারুকার্য, এই রংগুলো খালি চোখে কিন্তু দেখা যায়নি। এটা দেখার পরই অফিসার বললেন "আরে ইমিগ্রেশন ভিসা তো, এইগুলার নকল নাই"। তারপর কোন ঝামেলা ছাড়াই পার হয়ে গেলাম ইমিগ্রেশন।

আগের সিরিজগুলোতে নিজের তোলা ছবি দিতে পারিনি, তাই এবার ছবি তুলেছি। :)

ইমিগ্রেশন পার হয়ে গেটের দিকে যাচ্ছি



টার্কিশ এয়ারলাইন্স গেট ৪



আমার বাহন, যেটা আমকে ইস্তানবুল নিয়ে যায়



জেট ব্রিজের মাঝ দিয়ে প্লেনে ঢুকছি



প্লেনের দরজার সামনে



টার্কিশ এর বসার সিট গুলো কিছুটা ছোট, পা রাখার জায়গা কম। আপনার উচ্চতা যদি ৬'' এর কাছাকাছি হয়, তাহলে আপনাকে একটু এদিকসেদিক করে বসতে হবে। আমি মোটামুটি আড়াআড়ি ভাবে জানালার দিকে হেলেই কাটিয়েছি।

নিজের সিটে প্রতিবিম্ব :P



জানালা দিয়ে বাংলাদেশ এয়ারলাইনস



প্লেন ধীরে ধীরে যাত্রা শুরু করছে



ঢাকার আকাশ (মাত্র রেডিসন হোটেল পার হয়ে এলাম)



মেঘের মাঝে যাত্রা



এক ঘন্টা পরই সকালের নাস্তা দেয়া হলো। সত্যিকার অর্থে খুবই জঘন্য ছিল নাস্তাটা। নাস্তা হিসেবে দেয়া হলো রুটি (একেবারেই শুকনো, মনে হচ্ছিল এটা রুটি না, পাথর), পাস্তা (এটার উপরিভাগটাও শুকনো), দই, জুস, একটা মিস্টি (কাস্টার্ড জাতীয়, ভালোই)।



যতদূর চোখ যায়



নাস্তা খেতে খেতে হঠাৎ বাবা-মা-ভাইয়ের কথা ভেবে মনটা কেমন করে উঠল। /:)
অনেক লিখে ফেললাম। আজকে আর না। কাল আবার বাকিটুকু।

(চলবে)
২৩টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×