somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তপু চলে যাচ্ছে

২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিগত কয়েক ঘন্টার বৈচিত্রময় ঘটনা প্রবাহে তপু অনেকটাই হতভম্ব।এই বৈচিত্রময় ঘটনাগুলো তপুর ভবিষ্যত জীবনে কি ধরনের প্রভাব রাখতে যাচ্ছে তা ভাবার মানসিক শক্তি এখন তপুর নেই।তাই ভাবতে যেয়েই থেমে যেতে হল।ঘটনা পরবর্তী করনীয় নির্ধারনের জন্য সে নিজের মনকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগল।কিন্তু খুব একটা সফল হলো না।এমনিতেই সারা রাত জার্নি করে সে সকালে বাড়ি ফিরেছে।একটুও ঘুম হয়নি রাতে।এখন বিকেল হয়ে এল প্রায়।বিশ্রামের অভাবে শরীর পুরোপুরি অবসাদগ্রস্থ।তার উপর এখন রিক্সায় তার পাশে যে মেয়েটি বসে আছে সে সর্বশক্তি দিয়ে তপুর হাত ধরে রেখেছে। মেয়েটি তপুর চিরপরিচিতা হলেও এখন খুবই অচেনা কেও বলেই মনে হচ্ছে।তুলি নামের এই মেয়েটি রিক্সায় উঠার পর থেকে নিঃশব্দে কেঁদেই যাচ্ছে।রিক্সার উপরের অংশ টা উঠানো ছিল বলেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা পরিচিত কেউ ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না।এমনকি রিক্সাওয়ালা লোকটাও না।বুঝতে পারলে বিপদ হত।এতক্ষনে বাড়িতে পৌছেঁ যাওয়ার কথা ছিল তাদের।কিন্তু তুলি কিছুক্ষন পরপর একটু স্বাভাবিক হয়ে রিক্সাওয়ালাকে গন্তব্যে পৌছাঁনোর সময় সাপেক্ষ রাস্তা দেখিয়ে সেদিকে যাবার নির্দেশনা দিচ্ছে।তপু বুঝতে পারছে না এতে আসলে কি লাভ হচ্ছে।সে চুপচাপ বসে আছে।এইমুহুর্তে তপুর পছন্দের কিছু গান যা সে তার নিজের জীবনের অংশ বলেই মনে করেছে গতকাল পর্যন্ত ,সেই গান এবং গানের কথাগুলো এখন পুরোপুরি ভিত্তিহীন এবং অবান্তর মনে হচ্ছে তার কাছে।বাড়ির কাছাকাছি এসে তপু একরকম জোর করে তুলির হাত ছাড়িয়ে রিক্সা থেকে নেমে গেল।
তখন রাত প্রায় দশটা।তপু এখনো বাসায় ফিরেনি।তপুর ভাই ভাবল,এতদিন পরে বাড়ি এসেছে তাই হয়ত বন্ধুদের সাথেই আছে এখনো।আবার ভাবল, তপু হয়ত এখনো রেগেই আছে তার উপর।কারনে অকারনে বড় ভাইয়ের উপর রাগ করা তপুর ছোটবেলার অভ্যাস।এখন সে ইউনিভার্সিটিতে পরে তবুও ছোটবেলার সেই অভ্যাস রয়েই গেছে।ছোটবেলায় বাবা মারা যাবার পর থেকে তার বড় ভাই তপুকে আগলে রেখেছে।তপু দ্বিতীয়বার বলার পূর্বেই তার সব চাওয়া পূরন করেছে।এস এস সি [তখনকার মেট্রিক] পাশ করে ব্যাবসা চালিয়ে যেতে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিল তপুর ভাই।আর সবই তপুর ভবিষ্যতের কথা ভেবে।তপুর ভাইও জানে তপু তাকে কতটা ভালবাসে।যাকে ভালবাসে মানুষতো তার উপরেই অকারনে এত রাগ দেখাতে পারে।শুধু শেষবার রাগ করে শহরে চলে যাওয়াটাই সব এলোমেলো করে দিল।
তপু বাসায় ফিরল ।ফিরেই ভাইকে বলল,কাল চলে যাচ্ছি।তপুর কথা এবং আচরন একেবারেই অন্যরকম ঠেকল তার ভাইয়ের কাছে।তপুর ভাই বলল,''কি বলিস্‌ তুই?আমি তো অনুষ্ঠানের সব আয়োজন করে ফেলেছি।তুই না আসাতে বিয়ের অনুষ্ঠান ছাড়াই বিয়ে করলাম।এমন করিস্‌ না ভাই।''
তপু কথা শুনল না।সে কাজ আছে বলে পরদিন চলে যাবার কথা বলল।তপুর ভাই বরাবরের মতই পেরে উঠল না তপুর সাথে।সে তার স্ত্রী তুলিকে ডাকতে লাগল তপুকে বোঝতে।
তপুর বড় ভাই তপুর কথা ভেবে এতদিন বিয়েতে আগ্রহী ছিল না।কিন্তু বিয়ের বয়স তো পেরিয়ে যাচ্ছিল।তাই তপু সহ সবার চাপে বিয়ে করতে রাজি হল।তপুকে নিয়ে বেশ কয়েক যায়গায় পাত্রীও দেখা হল।তপুর ভাইয়ের একটাই কথা ছিল,সে তপুর পছন্দের পাত্রী ছাড়া বিয়ে করবে না।কিন্তু তপু যে পাত্রীই পছন্দ করত,সব ঠিকঠাক থাকলেও কোন না কোন কারনে বিয়েটা আর হত না।তাই একদিন তপুর ভাই মজা করে বলল,তুই পাত্রী দেখলে আমার আর বিয়ে করা হবে না।একথা শুনেই তপু রেগে গেল।সে বলল ,তোমার বিয়ে তুমি কর ,আমি যাই।তপু সেদিনই ভার্সিটিতে ফিরে গেল।

আগে গ্রামে বিয়ের পাত্রী দেখতে গিয়ে দুইপক্ষের সবদিকে বনিবানা হলেই কোন পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া কাজী ডেকে বিয়ে পড়ানোর কাজটা সম্পন্ন করানো হত।ঐ যে কথা ছিল ,শুভ কাজে দেরি করতে নেই।কত বিয়েতে দুইপক্ষের বনিবানা হতে হতে গভীর রাত হয়ে গেছে।তারপর ঘুমন্ত পাত্রীকে উঠিয়ে বিয়ের জন্য বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।এক্ষেত্রে বিয়ের খাওয়া দাওয়ার অনুষ্ঠান প্রয়োজনে পরবর্তীতে আয়োজন করা হত।তাই হয়েছে তপুর ভাইয়ের ক্ষেত্রে।তপু উপস্থিত না থাকাতে তার ভাই সেদিনই বিয়ে করতে চায়নি।কিন্তু সবার চাপাচাপিতে রাজি হতে হল।তাছাড়া তখনও চিঠির যুগ চলছিল।মোবাইল ফোন তখনও চালু হয়নি দেশে।তাই তপুকে সাথেসাথে জানানো গেল না।
তপু আজ বাড়ি আসতেই তার ভাই বলল ,আগে যেয়ে তোর ভাবিকে নিয়ে আয়।পরে অন্য কাজ।তপুর বড় ভাইয়ের শশুরবাড়ি তিন,চার কিলোমিটার
দূরে।তপুও খুশীমনে রিক্সায় করে যেতে লাগল।
তপু খামখেয়ালী স্বভাবের ছেলে।এতদিন ধরে যে মেয়েটার সাথে তার গভীর প্রেম চলছে তার বাড়ি পর্যন্ত সে চেনে না।চেনার চেষ্টাও করেনি কখনও।বাড়ি আসলে শুধু প্রেমিকার কলেজে গিয়েই দেখা করত।তাদের প্রেমের শুরু থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজে তার প্রেমিকার যে বান্ধবী গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছিল তারও কিছুদিন হল বিয়ে হয়েছে অন্য এলাকায়।এর পর থেকে প্রেম করতে খুব ঝামেলা হচ্ছিল তাদের।শেষ বার দেখা করার সময় তার প্রেমিকা ভয়ে বলেছিল যে তার বাড়ির এক বড়ভাই তপুকে দেখে ফেলেছে এবং ব্যাপারটা কিছুটা জেনে গেছে।তপু খেয়ালীভাবে বলেছিল,এখন কি হবে?তোমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে?এমন কথা শুনে তার প্রেমিকা কেঁদে বলছিল ,আমার বিয়ে হলেই তো তুমি খুশী ,বেঁচে যাও তাহলে।
বিয়ে তো হয়েছেই।কিন্তু তপু বেঁচে যেতে পারেনি।তার নিজের ভাইয়ের বৌ হয়ে তুলি তার চোখের সামনে থেকেই তাকে কাঁদিয়ে যাবে সারাজীবন।তপু তুলিকে বলত ,তোমার আমার নামের কত মিল দেখেছো।তপু ,তুলি।তাই আমরা একসাথেই থাকব সবসময়। কিন্তু এমন একসাথে থাকা তো তপু চায়নি।

তুলির যে ভাই তাদের প্রেমের ব্যাপারে জেনে গিয়েছিল সেই প্রথম দেখল তপুকে।দেখে সেও অবাক তপুও অবাক।ব্যাপারটা পুরোপুরি বোঝার পর তপু তার করনীয় কিছুই খুঁজে পাচ্ছিল না।ঐদিকে তুলি তো তপুকে দেখার পর থেকে কেঁদেই যাচ্ছে।তুলির এক ভাবি মজা করে বলল ,বিয়ের রাতে তো অনেক কাঁদলি।এখন আবার কাঁদতেছিস কেন?রিক্সায় উঠার আগে তুলির ঐ ভাই তপুকে ডেকে নিয়ে হাত জোর করে বলল ,ভাই ,যা হবার হয়েছে ,তোমার হাতে ধরে বলছি ,আমাদের সম্মানটা বাঁচাও ,কয়েক বছর বাইরেই থাকো,অবস্থা স্বাভাবিক হলে এসো।তপু তাই সিদ্ধান্ত নিল।সে চলে যাবে।
.........................................

তিন বছর পর তপু বাড়িতে ফিরল।এর ভেতরে তার ভাই অনেকবার তার সাথে দেখা করে এসেছে।কিন্তু তপু একবারও আসেনি।তাকে আসতে বললেই সে শুধু বলত ,ব্যাস্ত।বাড়িতে এসেই সে দেখল ,তুলি একটা ফুটফুটে বাচ্চা কোলে দাঁড়িয়ে আছে।তপুকে দেখেই এগিয়ে এল।তপু বলল,ভাইয়া কোথায়?তুলি জবাব দিল ,তোমার বিদেশে যাবার টাকার ব্যাপারে কথা বলতে গেল ,এসে যাবে।তারপর আবার বলল ,বিদেশ গেলে কি আর কখনও আসবা না।তপু এখনো ভাবেনি।তাই জবাব না দিয়ে চলে গেল।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×