মেয়েটিকে আমি প্রথম দেখি আমাদের পিকনিকের বাসে।মাথাই অনেক লম্বা চুল আর সাদা একটি ড্রেসে একদম পরির মত লাগছিল।পিকনিকের সারাটা সময় ই আড়চোখে তাকিয়েছি সুযোগ পেলেই।খারাপ কোন উদ্দেশ্য নিয়ে নয়,প্রথম দেখায় প্রেমে পরেছিলাম বলে।চোরের মত আড়চোখে তাকিয়েছি সারাটা দিন কিন্তু কথা বলতে পারিনি, কারন সাহস হয়নি।তারপর বেশকিছুদিন পার হয়ে গেলেও আমি মেয়েটিকে আর খুঁজে পাইনি।অনেক চেষ্টা করেছি, অনেক। তারপর কষ্ট গুলো বুকে চেপে চুপ করে গিয়েছি।বুঝতাম না একটা নাম না জানা অচেনা মেয়ের জন্য এত কষ্ট লাগে কেনো। আমার এক বন্ধু ছিলো,আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নাম সুমন।ও একটা মেয়েকে খুব ভালবাসতো।সারাদিন মেয়েটার কথা বলে মাথা ধরিয়ে দিত।ও থিয়েটার করতো।আমি মাঝে মাঝে ওদের নাটকের কাজে সাহায্য করতাম।একদিন একটা নাটক শুরু হওয়ার আগে আমি অতিথিদের বসার জন্য নিদিষ্ট জায়গা দেখিয়ে দিচ্ছিলাম,সেই সময় মিষ্টি করে কেউ বলল," এক্সকিউজ মি, নাটক কখন শুরু হবে??আমি পেছনে তাকালাম, আমার পরী দাড়িয়ে আছে।লাল একটা শাড়ীতে ওকে অপ্সরীর মত লাগছে।কি বলবো,মুখে কোন কথা আসছে না,গলা শুকিয়ে কাঠ।বুকের মাঝে হৃতপিন্ড বাড়ি দিচ্ছে দিমদিম দিমদিম, আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি।কোন মতে বললাম," ৬ টায়"।ও একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো।কিছুক্ষণ পর একটু স্বাভাবিক হলাম।সুমন কে খুজতে লাগলাম ওকে পেলাম স্টেজ এর এক কোনে দর্শক সারির দিকে তাকিয়ে আছে।কাছে গেলাম ও বলল,"দোস্ত মেয়েটাকে না পেলে আমি মারা যাব"আমি বললাম,"কোন মেয়ে?ও বলল দ্বিতিয় সারির ৫ নাম্বার চেয়ার।আমি তাকিয়ে দেখি সেখানে আমার পরী বসে আছে।সাবধানে বললাম,"লাল শাড়ি পরা মেয়েটার কোন পাশে"ও বলল,"লাল শাড়ি পরা মেয়েটায়"।আমি বললাম,"কি বলছিস যা তা?" ও বলল,"মেয়েটির নাম লাবন্য,আমি যার কথা রোজ বলি,ওই সেই মেয়ে"।আমি সুমন এর দিকে তাকালাম ও এক ঘোর লাগা চোখে লাবন্যর দিকে তাকিয়ে আছে,তাতে ভালবাসার কোন কমতি নেই।আমি সুমন কে বললাম," আমার খুব মাথা ধরেছে বাসায় গেলাম"।সারারাত ঘুম হলনা।কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না।জীবনে প্রথম বারের মত খুব কান্না পাচ্ছিলো।মেয়েরা তো আর যায়হোক প্রান খুলে কাঁদতে পারে আমরা তাও পারিনা।ওটা ছিলো আমার জীবনের সব চাইতে বড় রাত।তারপর বুকে পাথর রেখে ডিসিশন নিলাম আমি সরে দড়াবো।একটা মেয়ের জন্য তো আর বন্ধুত্ব নষ্ট করা যায় না।তারপর একদিন নাটকের রিহ্যাসেল দেখার সময় লাবন্যর সাথে পরিচয় হল।পরিচয়টা করিয়ে দিল ওর ছোট বোন,আমি একটা মেয়েকে খুব আদর করতাম পরে দেখা গেল ওটা ওর ছোট বোন আর ছোট বোনের নাটকের রিহ্যাসেল দেখার জন্য ও প্রতিদিন আসতো।টুকটাক কথা হত।সুমন এর সাথে মাঝে মাঝে ওদের বাসার সামনে যেতাম,ওকে মাঝে মাঝে বারান্দাই দেখতাম।একা একা দীর্ঘশ্বাস ফেলতাম।প্রথম দিনের পর থেকে আর কোন দিন ওর চোখের দিকে তাকাতে পারিনি পাছে আবার ওকে ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়।মাঝে মাঝে সুমনের চাপে পরে ও যেখানে প্রাইভেট পড়ে তার সামনে গিয়ে দাড়াতাম। ও দেখতো,প্রথম প্রথম ও দেখে শুধু মিষ্টি করে হাসতো।তারপর থেকে কথা বলতো।প্রতিদিন রিহ্যাসেলে যেতাম ওকে শুধু একবার দেখার জন্য।এভাবে আমার এবং সুমন এর সাথে ওর একটা খুব মিষ্টি সম্পর্ক শুরু হল।তারপর একদিন সুমন বলল,"দোস্ত এবার প্রপোজ টা করে ফেলি?আমি বললাম," কর"।পরদিন আমি ওর ছোট বোনকে ডাকলাম।তার পর ওর হাতে একটা চিঠি দিলাম,তাতে লেখা ছিল"কেউ একজন একটা মেয়েকে অনেক ভালবাসে,সারাদিন তার কথাই ভাবে,মেয়েটা তার কাছে অক্সিজেনের মত,মেয়েটা তুমি,আর ছেলেটা আমি... (সুমন)...।চিঠিটা দিয়ে আমরা দূরে দাড়িয়ে ছিলাম।সত্যি কথা বলতে কি আমার ভেতর অল রেডি রক্ত ক্ষরণ শুরু হয়ে গিয়েছে,আমি মনে প্রানে চাইছিলাম যে ও সুমন কে না বলুক।কিছুক্ষণ পর আরেক টা চিঠি এলো তাতে লেখা ছিলো" কেউ একজন একটা ছেলেকে অনেক ভালবাসে,সারাদিন তার কথাই ভাবে,ছেলেটা তার কাছে অক্সিজেনের মত,মেয়েটা আমি আর ছেলেটা তুমি... (আমার নাম)..।আমি কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থাকলাম চিঠির দিকে।বুঝতে পারছিলাম না কি করবো।পাশে দেখি সুমন নেই,ও উলটো দিকে হাটা শুরু করেছে অল রেডি।এরপর সুমন আমার সাথে আর কোন দিন কথা বলেনি।সুমন মনে করতো আমি ওর সাথে চিটিং করেছি।আমি আর কোন দিন লাবণ্যর সামনে যায়নি।মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে,এখনো আমাকে ক্ষমা করেনি।
(এই লেখাটা আগে একবার প্রকাশ হয়েছিল,কেন জানিনা আরও একবার করতে ইচ্ছে হল।)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



